আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩২৫৪: চার খলিফা ব্যতীত অন্য কাউকে আমিরুল মুমিনীন বলা জায়েজ কি

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১৩২৫৪: 

আসসালামু আলাইকুম। আসসালামু আলাইকুম। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, চার খলিফা ব্যতীত অন্য কাউকে আমিরুল মোমেনীন বলা জায়েজ আছে কিনা বা বলা যায় কিনা দলিল সহ উত্তর দিবেন। অগ্রিম জাযাকাল্লাহ।

তারিখ:০২/০৬/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  নূরুল আলম জামালপুর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আমিরুল মু’মিনিন ( أمير المؤمنين) হচ্ছে মুসলিম খলিফার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি সম্মানসূচক উপাধি। এর অর্থ হচ্ছে "বিশ্বাসীদের নেতা"।

প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রা কে খলিফাতুর রসূল বলা হতো। আর

 রাশিদুন খিলাফতের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের সময় থেকে খলিফাদের ক্ষেত্রে এই উপাধি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


 এছাড়াও খলিফাদের বাইরেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুসলিম শাসক এই উপাধি ব্যবহার করেছেন এবং বর্তমানেও কিছু ইসলামি রাষ্ট্রের শাসকদের মাঝে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।


দ্বিতীয় কথা হলো, মুসলিম শাসককে আমিরুল মুমিনীন বলা যাবে, এ বিষয়ে আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। দলিল- 

اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى جَوَازِ تَسْمِيَةِ الإِْمَامِ: خَلِيفَةً، وَإِمَامًا، وَأَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ.

অর্থাৎ ফোকাহায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত পোষণ করছেন যে,  শাসককে খলিফা, ইমাম ও আমিরুল মুমিনীন নামকরণ জায়েজ। সূত্র: আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যা কুয়িতিয়্যা-৬/৩১৬


فكل من توفرت فيه شروط صحة الإمامة العظمى وتولى حكم المسلمين أو طائفة منهم ـ فهو أميرهم، فيصح تلقيبه بأمير المؤمنين أو طائفة منهم. فالسلطة المعتبرة شرعا هي السلطة التي تقوم في الأساس على إقامة الدين وعقد الإسلام وسيادة الشريعة والانقياد لكتاب الله تعالى في الجملة

অর্থাৎ ব্যক্তি ইসলামী খিলাফতের জন্য নির্ধারিত শর্তসমূহ যার মাঝে পরিপূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে এবং যিনি মুসলমানদের অথবা তাদের কোনো একটি দলের শাসনভার গ্রহণ করেন— তিনি-ই তাদের শাসক এবং তাঁকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ উপাধি দেয়া বৈধ। শরিয়তের দৃষ্টিতে যে শাসনব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য, তা হলো সেই শাসনব্যবস্থা, যা মূলত দ্বীন প্রতিষ্ঠা, ইসলামের চুক্তি বজায় রাখা, শরিয়তের আধিপত্য কায়েম করা। সর্বোপরি যার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে আল্লাহর কিতাবের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সূত্র: আল-ফাতওয়া সিয়াসাতু শারইয়্যা-৮৬৯৬;১৫২৭০৯


তৃতীয় কথা হলো, শুধু মুসলিম শাসককেই আমিরুল মুমিনীন বলা হয় না, বরং হাদিস শাস্ত্রে পণ্ডিতগণকেও আমিরুল মুমিনীন ফি হাদিস বলা হয়। যেমন,

 فقد جمع الشيخ عبد الفتاح أبو غدة -رحمه الله- في رسالته: (أمراء المؤمنين في الحديث) الملقبين بلقب أمير المؤمنين في الحديث، فأوصلهم إلى ستة وعشرين أميرا.

وهذا سرد أسمائهم مرتبين على سني وفياتهم، كما ذكرهم المؤلف.

1. أبو الزناد عبد الله بن ذكوان المدني التابعي.

2. أبو بكر محمد بن إسحاق المطلبي المدني، صاحب المغازي.

অর্থাৎ  শাইখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর প্রসিদ্ধ পুস্তিকা "হাদীসের আমীরুল মুমিনীনগণ"-তে সেসকল আলিমগণের নাম একত্র করেছেন, যাঁরা "আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস" উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তিনি এই তালিকায় মোট ছাব্বিশজন মহান ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।


তিনি তাঁদের নাম ওফাতের (মৃত্যুর) সাল অনুযায়ী ক্রমানুসারে সাজিয়েছেন। এখানে আমরা সে অনুযায়ী তাঁদের নাম উল্লেখ করছি, যেমনভাবে তিনি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন: (তাদের মধ্যে শুধু দুইজনের নাম উল্লেখ করা হলো )


১. আবু যিনাদ আবদুল্লাহ ইবনু যাকওয়ান আল-মাদানী, একজন তাবেঈ।


২. আবু বকর মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক আল-মুত্তালিবী আল-মাদানী, 'মাগাজী' বা গাজওয়ার ইতিহাসের বিখ্যাত লেখক। সূত্র : উলূমুল হাদীস; মাসায়িলু ফি মুসতালিয়িল হাদিস-৪৩০২৩


সারকথা হলো,  খোলাফায়ে রাশেদীন  ব্যতীত মুসলিম শাসকের আমিরুল মুমিনীন বলা জায়েজ আছে। তবে আমিরের বিভিন্ন শর্ত আছে। যেমন: মুসলিম হওয়া, পুরুষ হওয়া, ন্যায় পরায়ণ হওয়া ইত্যাদি।



  والله اعلم بالصواب