জিজ্ঞাসা-১২৬৫২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মুফতি সাহেবের কাছে জানার বিষয় যে, যদি কোন পশুতে কয়েক ভাগ মানুষের এবং ৭ ভাগের অবশিষ্ট কয়েক ভাগ কোন সংস্থা (Battalion) এর পক্ষ থেকে দেয়া হয় তাহলে যে কয়জন ব্যক্তি কুরবানীর শরীক হয়েছেন, তাদের কুরবানী সহিহ হবে❓
তারিখ: ২৮/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান, সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, কোরবানি একটি পবিত্র ইবাদত। এ ইবাদত ব্যক্তি কেন্দ্রিক, কোন সংস্থা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের নয়।
শরিয়তের দৃষ্টিতে সাহেবে নেসাব ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব। কোন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সংঘের উপর নয়। সুতরাং ৬ ভাগ ব্যক্তি এক ভাগ কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যাটেলিয়ন/ইউনিট এর নামে হলে কুরবানি কারও সহিহ হবে না। দলিল-
«مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا»
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ ১৬/৪৬৬; ইবনু মাজাহ- ৩১২৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৩১২৩
ব্যাখ্যা: এই হাদিস শরিফে ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কথা বলা হয়নি।
প্রশ্ন: ক। কোন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, ইউনিটের নামে বিকল্প কোন পদ্ধতি আছে কি?
উত্তর: ক। এটি একটি কিয়াসি মাসয়ালা, ফোকাহায়ে কেরাম বলেন,
কোন প্রতিষ্ঠান/সংস্থা/ ইউনিটের কর্তৃপক্ষ এক ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দিবে, সে ব্যক্তি নিজের নামে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামে কুরবানি করবে, অথবা ইউনিট কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য অবদানকারী ব্যক্তির নামে কুরবানি দিলে সহিহ হবে। নিচের হাদিস দ্বারা দলিল গ্রহণ করেছেন:
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، - يَعْنِي الإِسْكَنْدَرَانِيَّ - عَنْ عَمْرٍو، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الأَضْحَى بِالْمُصَلَّى فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وَأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ وَقَالَ " بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي " .
কুতায়বা ইবনে সা‘ঈদ (রাহঃ) ..... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ঈদুল আযহার দিন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সঙ্গে ঈদগাহে উপস্থিত হই। তিনি খুতবা শেষ করার পর যখন মিম্বর হতে অবতরণ করেন, তখন তাঁর নিকট একটি বকরী আনা হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নিজ হাতে সেটি যবেহ করেন এবং এ সময় বলেনঃ বিসমিল্লাহ-হি আল্লাহু আকবার। এটি আমার তরফ হতে এবং আমার উম্মতের ঐ ব্যক্তিদের পক্ষ হতে, যারা কুরবানী করেনি।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮০১ (আন্তর্জাতিক নং ২৮১০)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
ব্যাখ্যা:
وأما قدره فلا يجوز الشاة والمعز إلا عن واحد وإن كانت عظيمة سمينة تساوى شاتين مما يجوز أن يضحى بهما لان القياس في الإبل والبقر ان لا يجوز فيهما الاشتراك لان القربة في هذا الباب إراقة الدم وانها لا تحتمل التجزئة لأنها ذبح واحد وإنما عرفنا جواز ذلك بالخبر فبقي الامر في الغنم على أصل القياس فان قيل أليس انه روى أن رسول الله صلى الله عليه وسلم ضحى بكبشين أملحين أحدهما عن نفسه والآخر عمن لا يذبح من أمته فكيف ضحى بشاة واحدة عن أمته عليه الصلاة والسلام (فالجواب) أنه عليه الصلاة والسلام إنما فعل ذلك لأجل الثواب وهو انه جعل ثواب تضحيته بشاة واحدة لامته لا للاجزاء وسقوط التعبد عنهم ولا يجوز بعير واحد ولا بقرة واحدة عن أكثر من سبعة ويجوز ذلك عن سبعة أو أقل من ذلك وهذا قول عامة العلماء وقال مالك رحمه الله يجزى ذلك عن أهل بيت واحد وان زادوا على سبعة ولا يجزى عن أهل بيتين وإن كانوا أقل من سبعة والصحيح قول العامة لما روى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم البدنة تجزى عن سبعة
অর্থাৎ ছাগল কিংবা বকরীর ক্ষেত্রে কুরবানীর বিধান হলো, তা যতোই মোটাতাজা, হৃষ্টপুষ্ট ও দীর্ঘাকৃতির বৃহতায়তাকার হোকনা কেন, সেটি দিয়ে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকেই কুরবানী আদায় করা যাবে। একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবেনা। কেননা উট-গরুসহ সকল প্রকার কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে শেয়ারে কুরবানী বৈধ না হওয়াটাই ছিলো যুক্তিযুক্ত। । কারণ কুরবানীর ক্ষেত্রে মূল ইবাদাত হলো, পশুর শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত করা। আর রক্ত প্রবাহের এই ইবাদতটি শরীকদের মাঝে বিভাজনযোগ্য নয়। কারণ জবেহ হলো অবিভাজ্য একটি কর্ম। তাই প্রতিটি জবাই শুধুমাত্র একজনের পক্ষ থেকে আদায় হওয়াটাই হলো স্বাভাবিক। তবে যেহেতু উট ও গরুর ক্ষেত্রে অংশীদারীত্বের অবকাশ থাকার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তাই এই দুইটি পশুর ক্ষেত্রে যুক্তি বা কিয়াসের দাবীকে ত্যাগ করে সর্বসাকুল্যে সপ্তভাগে কুরবানী করার অবকাশ দিয়ে বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বকরী ও ছাগলের ক্ষেত্রে যেহেতু উট ও গরুর মতো শরীয়াহ কর্তৃক ভিন্ন কোন নির্দেশনা আসেনি, তাই এক্ষেত্রে মূল যুক্তি/ কিয়াস বা বুদ্ধিবৃত্তিক দলীল ( কুরবানী নামক রক্ত প্রবাহ জনিত এই ইবাদতটি বিভাজনযোগ্য নয়) স্বপদে বহাল থাকবে। যার ফলে একটি ছাগল বা বকরীতে একাধিক ব্যক্তির অংশগ্রহণের কোন সুযোগ রইলোনা।
যদি প্রশ্ন তোলা হয় যে, সহীহ হাদীসের ভাষ্যমতে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুইটি হৃষ্টপুষ্ট বকরী দিয়ে কুরবানী দিয়েছেন- একটি নিজের পক্ষ থেকে, অপরটি তাঁর উম্মাতের মধ্য হতে যারা কুরবানী দিতে পারেনি, তাদের সকলের পক্ষ থেকে। বকরীর ক্ষেত্রে সত্যিই যদি শরীকানা প্রযোজ্য না হতো, তাহলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া কুরবানীতে সমগ্র উম্মাহর পক্ষ থেকে কিভাবে একটি ছাগল যথেষ্ঠ হলো?
তার উত্তর হলো, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায়ের উদ্দেশ্যে বকরী জবাই দেননি। বরং সকলের পক্ষ থেকে সাদাকাহ স্বরূপ সাওয়াব অর্জনের জন্য জবাই দিয়েছেন।
সুতরাং উত্থাপিত আপত্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য যে, গরু বা উট দিয়ে কুরবানী করলে সর্বোচ্চ সাতজনের পক্ষ থেকে আদায় করা যাবে। এটাই হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিকহবেত্তাগণের মতামত। তবে ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, "একটি গরু কিংবা উটকে সাত ভাগে এমনকি তার চাইতেও বেশী শেয়ারে কুরবানী দেয়া যাবে। তবে তার জন্য শর্ত হলো, অংশীদার ব্যাক্তিবর্গ সকলেই একই পরিবারভুক্ত হতে হবে। পক্ষান্তরে শরীকদারগণ যদি ভিন্ন পরিবারভুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এই শরীকানা কুরবানী কোনভাবেই শুদ্ধ হবেনা।"
তবে গ্রহণযোগ্য মতামত হলো সেটিই, যার উপর সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকিহগণ ফাতাওয়া প্রদান করেছেন। কারণ একই পরিবারভুক্ত কিংবা পরিবারবহির্ভুত ব্যক্তিবর্গের মাঝে কোন প্রকার পার্থক্য না করে বরং সার্বজনীন ও ব্যাপকভাবে কুরবানীর বিধান বর্ণনা করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , "সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উটই যথেষ্ঠ হবে।"
আলোচ্য হাদীসের বর্ণিত বিধানটি ব্যাপক। যা পরিবারভুক্ত-পরিবারবহির্ভুত নির্বিশেষে ব্যাপকভাবে সকলকেই অন্তর্ভুক্ত করেছে। সুতরাং শরীকানা কুরবানীর জন্য- একই পরিবারভুক্ত হওয়ার অতিরিক্ত শর্ত জুড়ে দেয়াটা হলো দলীলবিহীন সংযোজন, এহেন অনুপ্রবেশ ইসলামী শরীয়তে মোটেই সমীচীন নয়। সূত্র: বাদাউস সানায়িআ-৫/৭০
সারকথা হলো, সরাসরি ইউনিট/ সংস্থা/ প্রতিষ্ঠান নামে কুরবানি সহিহ হবে না, কর্তৃপক্ষ কাউকে মালিক বানিয়ে দিলে, তার নাম করলে কুরবানি সহিহ হবে। এবং বাকি শরিকদের কুরবানি সহিহ হবে, অন্যথায় কারও কুরবানি সহিহ হবে না।
والله اعلم بالصواب