জিজ্ঞাসা-২১১:
শাইখদের কাছে জানতে চাই, স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় সেই পরিবারে স্বামীর পক্ষ থেকে কুরবানী করা হলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা? আর স্ত্রী কুরবানী যে না করলে সে গুনাহগার হবে কিনা? একান্নবর্তী পরিবারে বাবা এবং সকল সন্তান সম্পদশালী হলে ওই পরিবারে বাবার পক্ষ থেকে একটি গরুর অংশ অথবা একটি ছাগল কুরবানী দিলে পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা? মেহেরবানী করে দলিলসহ জানাবেন। চাকরিজীবীর অনেক সদস্য পরিবার নিয়ে থাকেন, বাবাকে মাসে মাসে টাকা পাঠান, কুরবানিতেও টাকা পাঠান, কুরবানীর সময় দুটি কুরবানী দেওয়া তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। অতএব বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওই পরিবারের জন্য যথেষ্ট কিনা? তারিখ-২৯/০৬/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি।
মাওলানা শরীফুল ইসলাম সাউথ সুদান থেকে---
জবাব: জাযাকাল্লাহ খাইরান আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল করেছেন, যা অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে ভুলের মধ্যে রয়েছে। যাইহোক আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করেছি:
প্রশ্ন: ক। কুরবানি কার ওপর ও কখন ওয়াজিব হয়?
উত্তর: ক। কুরবানীর দিনসমূহে (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) যার কাছে আবশ্যকীয় প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
নেসাব পরিমাণ হল, সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা এর সমমূল্য পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ মজুদ থাকা। যা বর্তমান বাজার অনুপাতে ১৫১৬*৫২.৫=৭৯,৫৯০ (কথায় উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই )টাকা (বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত)
দলিল:
(وَأَمَّا) (شَرَائِطُ الْوُجُوبِ) : مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ الزَّكَاةِ،………. وَالْمُوسِرُ فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ مَنْ لَهُ مِائَتَا دِرْهَمٍ أَوْ عِشْرُونَ دِينَارًا أَوْ شَيْءٌ يَبْلُغُ ذَلِكَ سِوَى مَسْكَنِهِ وَمَتَاعِ مَسْكَنِهِ وَمَرْكُوبِهِ وَخَادِمِهِ فِي حَاجَتِهِ الَّتِي لَا يَسْتَغْنِي عَنْهَا، فَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ مِنْ سَائِمَةٍ أَوْ رَقِيقٍ أَوْ خَيْلٍ أَوْ مَتَاعٍ لِتِجَارَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَإِنَّهُ يُعْتَدُّ بِهِ مِنْ يَسَارِهِ،(الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، فصل شرائط الوجوب-5/292، رد المحتار، كتاب الاضحية-9/452-453، مجمع الانهر-4/167)
নোট: এখানে একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে যে, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমান সম্পদ একবছর মালিকানায় থাকা শর্ত; কিন্তু কুরবানির বেলায় তা নয়। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে হবে। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
প্রশ্ন: খ। স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় সেই পরিবারে স্বামীর পক্ষ থেকে কুরবানী করা হলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা?
উত্তর: খ। স্ত্রী সম্পদশালী এ বিষয় সুস্পষ্ট, কিন্তু আপনি উল্লেখ করেননি স্বামী কি সম্পদশালী অর্থাৎ সাহেবে নিসাব কিনা? শুধু স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় তাহলে স্বামী কোরবানি করলে আদায় হবে আর যদি স্বামীও সম্পদশালী হয় তবে আলাদা আলাদা কুরবানী দিতে হবে। স্ত্রী কুরবানীর মাধ্যমে সবার কুরবানী আদায় হবে না।
দলিল-
والأضحية إنما تشرع في حق القادر عليها -رجلا كان أو امرأة
কুরবানী শুধুমাত্র তাদের জন্য নির্ধারিত যারা তা পালন করতে সক্ষম - পুরুষ হোক বা মহিলা। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত আল-হাদি ওয়াল উদহিয়া-৪৬০৭৭৪ (ফতোয়া নং)
যা ব্যক্তির উপর স্বতন্ত্রভাবে আবশ্যক হয়। একজনের আদায়ের দ্বারা অন্যজন দায়িত্বমুক্ত হয় না। পরিবারের যে সকল সদস্যের উপর কুরবানী আবশ্যক হবে তাদের প্রত্যেককেই স্বতন্ত্রভাবে কুরবানী করতে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من وجد سعة لأن يضحي فلم يضح فلا يقربن مصلانا.
‘যার কুরবানী করার সামর্থ্য আছে তবুও কুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ [মুসনাদে আহমাদ ২/৩২১; মুস্তাদরাকে হাকেম ৭৬৩৯] সুতরাং হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় একজনের কুরবানী সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
প্রশ্ন: গ। একান্নবর্তী পরিবারে বাবা এবং সকল সন্তান সম্পদশালী হলে ওই পরিবারে বাবার পক্ষ থেকে একটি গরুর অংশ অথবা একটি ছাগল কুরবানী দিলে পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা?
উত্তর: গ। একক পরিবার হোক আর যৌথ পরিবারের হোক প্রত্যেককে যদি সাহেবে নিসাব হয়, তাহলে প্রত্যেকের ওপরই আলাদা আলাদা কোরবানি করা আবশ্যক।
সুতরাং উক্ত যৌথ পরিবারে যাদের উপর কুরবানী আবশ্যক হবে তাদের প্রত্যেককেই কুরবানী করতে হবে। সূত্র: রদ্দুল মুহতার ৯/৪৫৩; হেদায়া ৪/৪৪৩
তাই পরিবারের যতজন সদস্য রয়েছেন। তাদের প্রতিজনের আলাদাভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে, প্রতিজনের উপরই কুরবানী করা আবশ্যক হবে। একজনের কুরবানী দ্বারা অন্যের কুরবানী আদায় হবে না। সূত্র: হিদায়া-৪ খন্ড,৪৪৪পৃষ্ঠা, মাজমুউল আনহার-২/৫১৬
وإنما تجب على حر مسلم مقيم موسر عن نفسه، لأنه أصل فى الوجوب عليه (مجمع الأنهر-2/516، هداية-4/443-444
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ [٥٣:٣٨
অর্থাৎ এটি একজন স্বাধীন, মুকিম, স্বচ্ছল মুসলমানের জন্য তার নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব, কারণ এটি তার উপর এর বাধ্যবাধকতার ভিত্তি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
কোন ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। সূরা নাজম-৩৮
প্রশ্ন: ঘ। অনেক লোক পরিবার নিয়ে থাকেন, বাবাকে মাসে মাসে টাকা পাঠান, কুরবানিতেও টাকা পাঠান, কুরবানীর সময় দুটি কুরবানী দেওয়া তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। অতএব বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওই পরিবারের জন্য যথেষ্ট কিনা?
উত্তর: ঘ। আপনি একই ধরনের প্রশ্ন বারবার করেছেন, একথা স্পষ্ট নয় যে, পিতা সাহেবে নিসাব কিনা,কে বেতন পাঠায়, কে কি করে সেটা বিষয় নয়, ছেলে এবং পিতা যদি উভয়ই সাহেবে নিসাব হয়, তাহলে অবশ্যই আলাদা আলাদা কোরবানি করতে হবে আর যদি না হয় যে সাহেবে নিসাব সে কুরবানি দিবে। দলিল পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন,