জিজ্ঞাসা-১৩২৫৬:
আসসালামু আলাইকুম। কুরআনের যিনি অনুবাদ করলেন,তিনি সকল শব্দের অর্থ পাইলেন কিন্তূ সালাত,নবী,আমানু এসব শব্দের বাংলা করলেন না কেন?
তারিখ:২৫/০৬/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনাব আরিফ সিরাজগঞ্জ থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, কুরআনের অনুবাদকগণ যেমন — সালাত (صلاة), নবী (نبي), আমানু (آمنوا) — এসব শব্দের বাংলা অনুবাদ না করে আরবিতেই রেখে দিয়েছেন কারণ এগুলোর পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ অর্থ বাংলা ভাষায় একক শব্দে প্রকাশ করা কঠিন, কিংবা বাংলা প্রতিশব্দ দিয়ে মূল আরবি শব্দের গভীরতা ও প্রেক্ষাপট বোঝানো যায় না। কারণ-
১. সালাত (صلاة):
"সালাত" শব্দটি সাধারণভাবে আমরা নামাজ অর্থে বুঝি, কিন্তু কুরআনে সালাতের অর্থ শুধুমাত্র নামাজ নয়:
দোয়া (رحمة): যেমন, إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَـٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّ – এখানে "يصلون" মানে দোয়া বা প্রশংসা।
নিয়মিত ইবাদত, বিনয়, আনুগত্যের প্রতীকও সালাত।
যদি শুধু “নামাজ” বলি, তাহলে কিছু আয়াতে ভুল বোঝা যেতে পারে। এজন্য অনেকে “সালাত” শব্দ রেখে দেন।
২. নবী (نبي):
নবী শব্দের সাধারণ বাংলা “বার্তাবাহক” বা “দূত” হলেও, তা কুরআনের "نبي" শব্দের গভীরতা প্রকাশ করে না।
নবী হলেন, যাঁকে আল্লাহ ওহি দিয়ে নির্দেশ দেন, পথ দেখান, তিনি শুধুই বার্তাবাহক নন — তিনি আদর্শ, নেতা, বিচারক, শাসক, শিক্ষাদানকারীও।
"রসূল" ও "নবী" শব্দের মধ্যে পার্থক্যও আছে, যেটা অনুবাদে হারিয়ে যায়।
এজন্য অনেকে শব্দটি হুবহু রেখে দেন।
৩. আমানু (آمنوا):
বাংলা করলে হয়: “যারা ঈমান এনেছে” বা “যারা বিশ্বাস করে”।
কিন্তু "ঈমান" শব্দটি শুধু “বিশ্বাস” নয় — এতে আছে:
ভিতর থেকে স্বীকার, প্রকাশে আনুগত্য, এবং আচরণে অনুসরণ।
কুরআনের ভাষায় ঈমান মানে শুধু মানা নয়, মানার ফলেও জীবনের পরিবর্তন।
“যারা ঈমান এনেছে” বললে অনেক সময় সেটা কাঙ্ক্ষিত অর্থ বহন করে না, তাই অনেক অনুবাদক “آمنوا” শব্দটিই রেখে দেন।
সারকথা হলো, এই শব্দগুলো শুধু ধর্মীয় পরিভাষা নয়, বরং ভাব-গভীরতা, বিশুদ্ধতা এবং কুরআনিক পরিপ্রেক্ষিত বহন করে, যেগুলো সরাসরি বাংলা করলে তা হারিয়ে যেতে পারে।
তাই অনেক অনুবাদে এসব শব্দ হুবহু রেখে, পাশে বা পাদটীকায় অর্থ বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয় — যেন পাঠক শব্দের মূল রূপ বুঝে তার প্রেক্ষাপটে গভীরতা ধরতে পারেন।
والله اعلم بالصواب