আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ। মৃত্যু মানুষের কঙ্কাল চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা। এ ব্যাপারে ইসলামের শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
তারিখ: ১২/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কাপ্তাই
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
وروى أحمد (24730) وأبو داود (3207) وابن ماجه (1616) عن عائشة رضي الله عنها أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا ) وصححه الألباني في صحيح أبي داود .
ইসলামী শারীয়াহ'র সর্বজন স্বীকৃত একটি মূলনীতি হলো, জীবিত কিংবা মৃত উভয় অবস্থায় মুসলমান ব্যক্তির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা। এবং কোনক্রমেই যেন তার মর্যাদার হানি না হয়, এবিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা। দলিল:
ولقد كرمنا بني آدم( سوررة الإسراء -٧٠)
অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে আমি আদম সন্তানদেরকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করেছি। ( সূরা ইসরা-৭০)
তার ইন্তিকাল হয়ে গেলে যথাযথ মর্যাদায় তাকে কবরে সমাহিত করা। এমনকি তার মরদেহের সম্পূর্ণ অংশ পাওয়া না গেলেও তার দেহাবশেষকেও কবরস্থ করে দেয়া। দলিল:
আয়াত নং-০১
ثم أماته فأقبره( سورة عبس ٢١)
অর্থাৎ তিনিই মানুষের মৃত্যু ঘটান, অতঃপর তাকে কবরস্থ করেন। (সূরা আবাসা-২১)
আয়াত নং -০২
ألم نجعل الأرض كفاتا، أحياء وأمواتا ( سورة المرسلات- (٢٥،٢٦)
অর্থাৎ আমি কি পৃথিবীকে ধারণকারী রূপে সৃষ্টি করিনি? যা জীবিতদেরকে ধারণ করে (তার ভূপৃষ্ঠে) এবং মৃতদেরকে ধারণ করে ( তার ভূগর্ভে)! ( সূরা মুরসালাত- ২৫,২৬)
আয়াত নং -০৩
منها خلقناكم وفيها نعيدكم ومنها نخرجكم تارة أخرى ( سورة طه - ٥٥)
আমি মৃত্তিকা হতে তোমাদের সৃজন করেছি, সেই ভূগর্ভেই ( কবরে) তোমাদেরকে ফেরত পাঠাবো।আবার সেই মাটি হতেই তোমাদের পুনরুত্থান ঘটাবো। ( সূরা ত্বহা-৫৫)
উপরিউক্ত প্রতিটি আয়াতের মূলভাষ্য একটাই, তা হলো- মৃতব্যক্তিকে দাফন করে ফেলতে হবে। তার লাশে কোন প্রকার অযাচিত হস্তক্ষেপ করা চলবেনা।
এছাড়া নিথর প্রাণহীন প্রতিটি মরদেহকেই জীবন্ত প্রাণবন্ত দেহের মতোই মূল্যায়ন করার নির্দেশনা জারি করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا ".رواه أبو داؤد: ٣٢٠٧
অর্থাৎ মৃতব্যক্তির হাড় চূর্ণ করা, জীবিত অবস্থায় তার হাড্ডি ভেঙে ফেলার নামান্তর। (আবূ দাঊদ- ৩২০৭)
প্রশ্ন: ক। লাশের পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত করা জায়েজ?
উত্তর: ক। এ ব্যাপারে শায়েখ ইবনে বাজ রহ কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন,
كما جاء في "مجموع فتاوى ابن باز" (22/349) ما يلي :
" إذا كان الميت معصوما في حياته - سواء كان مسلما أو كافرا ، وسواء كان رجلا أو امرأة - فإنه لا يجوز تشريحه ، لما في ذلك من الإساءة إليه وانتهاك حرمته ، وقد ثبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال : ( كسر عظم الميت ككسره حيا ) رواه أبو داود (3207) .
أما إذا كان غير معصوم كالمرتد والحربي فلا أعلم حرجا في تشريحه للمصلحة الطبية " انتهى .
والله أعلم .
কেউ যদি কোন প্রকার মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত কিংবা পরোয়ানাভুক্ত না হয়ে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করে, ( চাই সে মুসলিম হোক কিংবা কাফের, নারী হোক কিংবা পুরুষ) তাহলে কোনভাবেই তার মরদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা বৈধ হবেনা। কারণ এতে তার মরদেহকে অবমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। অথচ প্রতিটি মরদেহকেই জীবন্ত প্রাণবন্ত দেহের মতোই মূল্যায়ন করার নির্দেশনা জারি করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا ".رواه أبو داؤد: ٣٢٠٧
অর্থাৎ মৃতব্যক্তির হাড় চূর্ণ করা, জীবিত অবস্থায় তার হাড্ডি ভেঙে ফেলার নামান্তর। (আবূ দাঊদ- ৩২০৭)
পক্ষান্তরে সে যদি মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত কিংবা মৃত্যুপরোয়ানাভুক্ত হয়ে থাকে, ( যেমন ধর্মাদ্রোহী, শত্রুদলের সদস্য) তাহলে সার্বজনীন কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করে তার মরদেহকে কর্তন করাতে কোন সমস্যা আছে বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়নি। আল্লাহই ভালো জানেন। সূত্র: মাজমাউল ফাতওয়া-২২/২৪৯
প্রশ্ন: খ। মৃত্যু মানুষের কঙ্কাল চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা। এ ব্যাপারে ইসলামের শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
উত্তর: খ।
وأما بالنسبة لتشريح الجثة لقصد التعليم كما ورد في السؤال ، وكما يقال إنه أصبح الآن ضرورة لتعلم الطب ونفع الأحياء بذلك ، فهذا إن أمكن الاستغناء عنه فإنه لا يجوز بحال من الأحوال ، وإذا لم يمكن وتوقف الأمر عليه فإن جثة المسلم لا يجوز أن تشرح أبداً لأجل الطب ...
فالمسلم لا يجوز أن يتلاعب بجثته ، ولا أن تشرح ، بل يجب دفنه واحترامه ، أما بالنسبة لجثة الكافر فقد رخص بعض العلماء المعاصرين بتشريح جثته لأجل الطب والله أعلم .
তবে চিকিৎসা শাস্ত্রের ব্যবচ্ছেদ (পরীক্ষা করার জন্য খণ্ড খণ্ড করা) বিদ্যায় ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ ( যেমন প্লাস্টিক বা অন্য কোন উপাদান দিয়ে কৃত্রিমভাবে মানব দেহ তৈরি করা) করা অসম্ভবপর হয়ে উঠলে বিশেষ বিবেচনায় বৃহৎ স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে অমুসলিম ব্যক্তির মরদেহ কাটাছেড়া করার অবকাশ রয়েছে। তবে কোন অবস্থাতেই মুসলিম মরদেহের উপর ছুরি বা ধাঁরালো বস্তুর সামান্য আঁচড় লাগিয়ে তার মরদেহকে অবমূল্যায়ন করা যাবেনা। কিতাবু মাওকউল ইসলামি, আলইসতিফাদাতু মিন ইজামিল মাওতা লিদিরাসাতি- ৫ খণ্ড,৮২২৭ পৃষ্ঠা
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক,
সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম