আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।
No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৪৮৬:

মোটিভেশন ক্লাস: ০৫

আসসালামু আলাইকুম

"কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যভিচারের শাস্তিপরিনামও প্রতিকার" এই বিষয় লেসন প্ল্যান থাকলে ওয়ার্ড এবং পিডিএফ ফাইল শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

তারিখ:  ৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা মো: কামরুল হাসান যশোর থেকে


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো,

 

কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যভিচারের শাস্তিপরিনামও প্রতিকার"

ব্যভিচার চরিত্রহীনতা ও এক মহা অপরাধ। এ অপরাধ-রাজ্যে বাস করে মানুষ যে সব সময় আনন্দ পায় তা নয়। যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও স্মরণে মন প্রশান্ত থাকেতেমনি তাঁর অবাধ্যাচরণ ও পাপ-পঙ্কিলতাময় জীবনে মন বিক্ষিপ্ত ও অশান্তিময় থাকে।

 

ব্যভিচারের কী?

যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায় ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধন ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ করাকে। ইসলামী শরীয়াতে অবৈধ পন্থায় যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

কারণসমুহ:

১- যুবক-যুবতীর নির্জনতা অবলম্বনএকান্তে গমন-ভ্রমণকোনো বাড়ি বা রুমে একাকী উভয়ের বসবাস বা গাড়িতে চালকের সাথে একাকিনী যাতায়াতদোকানে দোকানদারের কাছে একাকিনী মার্কেট করাদর্জির কাছে একান্তে পোশাকের মাপ দেওয়াডাক্তারের সহিত নার্সের অথবা রোগিণীর একান্তে চিকিৎসা কাজপ্রাইভেট টিউটরের কাছে একাকিনী পড়াশোনা করা ইত্যাদি। এগুলি ব্যভিচারের এক একটি সূক্ষ্ম ছিদ্রপথ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনকোন মহিলার সাথে কোনো পুরুষ যখন নির্জনতা অবলম্বন করেতখন শয়তান তাদের তৃতীয় জন (কুটনা) হয়।তাখরিজ: তিরমিজি-১১৭১

আর এই কারণেই মহিলার জন্য স্বামীর ভাই ইত্যাদি বেগানা আত্মীয়কে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাখরিজ: বুখারি- ৫২৩২

২- অবাধ মেলামেশা। পর্দার সাথে হলেও পাশাপাশি নারী-পুরুষের অবস্থান ব্যভিচারের এক বিপজ্জনক ছিদ্রপথ। একই বাড়িতে চাচাতো প্রভৃতি ভাই-বোনস্কুল-কলেজে ও চাকুরী-ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীর অবাধ দেখা-সাক্ষাৎঅনুরূপ মার্কেটেমেলা-খেলায়বিয়েবাড়িমরা-বাড়িহাসপাতাল প্রভৃতি জায়গায় নারী-পুরুষের বারবার সাক্ষাতের ফলে পরিচয় এবং প্রেমআর তারপরই শুরু হয় ব্যভিচার।

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনতোমাদের কি শরম নেইতোমাদের কি ঈর্ষা নেইতোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে পর-পুরুষদের মাঝে যেতে ছেড়ে দাও এবং এরা ওদেরকে ও ওরা এদেরকে দেখাদেখি করে! তাখরিজ: হাকাযা তুদাম্মিরু জারীমাতুল জিনসিয়াতু আহলাহা-২২ পৃষ্ঠা 

৩- বিবাহে বিলম্ব। সঠিক ও উপযুক্ত বয়সে বা প্রয়োজন-সময়ে বিয়ে না হলে যৌন ক্ষুধা নিবারণের জন্য ব্যভিচার ঘটা স্বাভাবিক। অধ্যয়ন শেষ করার আশায় অথবা চাকুরী পাওয়ার অপেক্ষায় অথবা সামাজিক কোনো বাধায় (বিধবা) বিবাহ না হওয়ার ফলে ব্যভিচারের এক চোরা পথ খোলা যায়।

৪- অতিরিক্ত মহর অথবা পণ ও যৌতুক-প্রথাও ব্যভিচারের একটি কারণ। কেননাউভয় প্রথাই বিবাহের পথে বড় বাধা।

৫- মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা। ব্যভিচার ও ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক। ছিলা লেবু বা খোলা তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনাঅর্ধ নগ্না ও প্রায় পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক। আর এ জন্যই ইসলামে পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য বেগানা পুরুষকে প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা নূরআয়াত: ৩১)

আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,

«الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ»

নারী হলো গোপনীয় জিনিস। তাই যখন সে (গোপনীয়তা থেকে) বের হয়তখন শয়তান তাকে পুরুষের চোখে শোভনীয়া ও লোভনীয়া করে তোলে। ”  তাখরিজ: তিরমিজি-১১৭৩

৬- নোংরা ফিল্ম দেখাঅশ্লীল পত্র-পত্রিকা পড়া এবং গান শোনা। যৌবনের কামনায় যৌন-চেতনা বা উত্তেজনা বলে একটা জিনিস আছে। যার অর্থ এই যেযৌন-কামনা ঘুমিয়ে থাকে বা তাকে সুপ্ত রাখা যায় এবং কখনো কখনো তা প্রশান্ত থাকে বা তাকে প্রশমিত রাখা সম্ভব। বলা বাহুল্য নোংরা ফিল্মপত্র-পত্রিকা এবং গান হলো এমন জিনিসযা সুপ্ত যৌনকামনাকে জাগ্রত করে এবং প্রশান্ত যৌন-বাসনাকে উত্তেজিত করে। এ ছাড়া এ উম্মতের সম্মানিত উত্তরসূরীগণ বলতেন যেগান হলো ব্যভিচারের মন্ত্র।

৭- বেশ্যাবৃত্তির স্বীকৃতি ও সমাজে তাদের পেশাদারীর অনুমতি। তাদেরকে যৌনকর্মী বলে আখ্যায়িত করে তাদের বৃত্তিকে অর্থোপার্জনের এক পেশা বলে স্বীকার করে নেওয়া ব্যভিচার প্রসার লাভের অন্যতম কারণ।

৮- মদ ও মাদক-দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার। মদহিরোইন প্রভৃতির নেশায় নারীর নেশা ও চাহিদা সৃষ্টি হয় মাতাল মনে। ফলে এর কারণেও ব্যভিচার ব্যাপক হয়।

৯- আর সবচেয়ে বড় ও প্রধান কারণ হলদ্বীন ও ঈমানের দুর্বলতানৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। যার মাঝে ঈমান ও তাকওয়া নেইসে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারে না। এমন ব্যক্তির মনের ডোর শয়তানের হাতে থাকে। অথবা নিজের খেয়াল-খুশী মত চালাতে থাকে নিজের জীবন ও যৌবনকে।

বলা বাহুল্যযুবক যদি উল্লেখিত ব্যভিচারের কারণসমূহ থেকে দূরে থাকতে পারেতাহলে অবশ্যই সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারবে। পক্ষান্তরে উপরোক্ত কারণসমূহের কোনো একটির কাছাকাছি গেলেই ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ে পড়বে। আর মহান আল্লাহর ঘোষণা হল,

﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [الاسراء: ٣٢]

তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ তা হলো অশ্লীল এবং নোংরা পথ। সূরা ইসরা-৩২

 

ব্যভিচার ব্যাপক আকারে প্রসার লাভ করা এই কথার ইঙ্গিত যেকিয়ামত অতি নিকটে আসছে।

অতএব যত দিন যাবেব্যভিচার পৃথিবীময় তত আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ঈমানদাররা ঈমান নিয়ে অবশ্যই সর্বদা সে অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকবে।

 

ব্যভিচারের শাস্তি:

ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশ ছড়ি মারা হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই শাস্তি।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

 Surah An-Noor, Verse 2:

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ

ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষতাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। সূরা নূর-০

 

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,

 

হাদিস নং-০১

 

 حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا أَبُو ضَمْرَةَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ،

 عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ الْيَهُودَ، جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِرَجُلٍ مِنْهُمْ وَامْرَأَةٍ زَنَيَا، فَأَمَرَ بِهِمَا فَرُجِمَا قَرِيبًا مِنْ مَوْضِعِ الْجَنَائِزِ عِنْدَ الْمَسْجِدِ‏.‏

 

আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

 

নবী  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ইয়াহূদীরা তাদের এক পুরুষ ও এক স্ত্রীলোককে হাযির করলযারা ব্যভিচার করেছিল। তখন তিনি তাদের উভয়কে রজমের (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) নির্দেশ দেন। মসজিদের পাশে জানাযার স্থানের নিকটে তাদের দুজনকে রজম করা হল। তাখরিজ: সহিহ বুখারীহাদিস নং ১৩২৯

 

এই হাদিসের আলোকে অন্য মাজহাবের ইসলামি স্কলাররা বলেছেনব্যভিচারী অবিবাহিত হলে তার শাস্তি দুটো। ১. একশ বেত্রাঘাত২. এক বছরের জন্য দেশান্তর। 

 

হাদিস নং-০২

 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي سَعِيدٌ الْمَقْبُرِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا زَنَتِ الأَمَةُ فَتَبَيَّنَ زِنَاهَا فَلْيَجْلِدْهَا، وَلاَ يُثَرِّبْ، ثُمَّ إِنْ زَنَتْ فَلْيَجْلِدْهَا، وَلاَ يُثَرِّبْ، ثُمَّ إِنْ زَنَتِ الثَّالِثَةَ فَلْيَبِعْهَا، وَلَوْ بِحَبْلٍ مِنْ شَعَرٍ ‏"‏‏.‏

 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেননবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনযদি বাঁদী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয়তবে তাকে বেত্রাঘাত করবে। আর তিরস্কার করবে না। তারপর যদি আবার ব্যভিচার করে তবে তাকে বিক্রি করে দিবেযদিও পশমের রশির (ন্যায় সামান্য বস্তুর) বিনিময়েও হয়।  তাখরিজ:  বুখারি,হাদিস নং ২১৫২

 

হাদিস নং-০৩

 

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ ـ رضى الله عنه ـ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ أَمَرَ فِيمَنْ زَنَى وَلَمْ يُحْصِنْ بِجَلْدِ مِائَةٍ وَتَغْرِيبِ عَامٍ‏.‏

যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবিবাহিত ব্যভিচারী সম্পর্কে একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাখরিজ: বুখারি-৬৮৩১

 

আর হানাফি মাজহাবের বিশেষজ্ঞরা বলেনএক্ষেত্রে হদ (শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) হলো- একশ বেত্রাঘাত। আর দেশান্তরের বিষয়টি বিচারকের বিবেচনাধীন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে তা প্রয়োগ করতে পারেন।

 

ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণের নীতিমালা:

ব্যভিচার প্রমাণের জন্য ইসলামে দুটোর যে কোনোটি জরুরি। ক. ৪ জন সাক্ষীখ. ধর্ষকের স্বীকারোক্তি।

তবে সাক্ষী না পাওয়া গেলে আধুনিক ডিএনএ টেস্টসিসি ক্যামেরামোবাইল ভিডিওধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে স্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা হবে। 

ইসলামে ধর্ষণ ও ব্যভিচারসম্মতি-অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। তবে নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষিতা হলে কোনো শাস্তি নেইসম্মতিতে হলে শাস্তি আছে। যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজনরেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট।

 

প্রতিকার:

১- পর্দাহীনতা দূর করেসমাজে পবিত্র পর্দা-আইন চালু করা। আর এ দায়িত্ব হলো প্রত্যেক মুসলিমেরনারী ও পুরুষযুবক ও বৃদ্ধরাজা ও প্রজা সকলের।

২- ব্যভিচারের হদ্দ্ দণ্ডবিধি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চালু করা। এমন শাস্তি প্রয়োগ করাযাতে কোনো লম্পট তার লাম্পট্যে সুযোগ ও সাহস না পায়।

৩- মহিলাকে কোনো মাহরাম বা স্বামী ছাড়া একাকিনী বাড়ির বাইরে না ছাড়া।

৪- কোনো বেগানা (দেওরবুনাইনন্দাইবন্ধু প্রভৃতি) পুরুষের সাথে নারীকে নির্জনতা অবলম্বন করার সুযোগ না দেওয়া। সে বেগানা পুরুষ ফিরিশতা তুল্য হলেও তার সহিত মহিলাকে নির্জন বাস বা সফর করতে না দেওয়া।

৫- সৎ-চরিত্র গঠন করার সামাজিক ভূমিকা পালন করাঅশ্লীল ছবিপত্র-পত্রিকাগানবাজনাযাত্রা-থিয়েটার প্রভৃতি বন্ধ করা এবং রেডিওটিভি ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি প্রচারমাধ্যমে সচ্চরিত্র গঠনের উপর তাকীদ প্রচার করা।

৬- সর্বতোভাবে বিবাহের সকল উপায়-উপকরণ সহজ করা। সহজে বিবাহ হওয়ার পথে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করা।

৭- স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা বন্ধ করে বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। অবিবাহিত তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীকে যৌন-শিক্ষা না দেওয়া।

৮- নারীর জন্য পৃথক চাকুরী-ক্ষেত্র তৈরী করা।

৯- সকল প্রকার বেশ্যাবৃত্তি ও যৌন-ব্যবসা বন্ধ করা।

কিন্তু বন্ধু! তুমি যদি কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রে বাস করতাহলে নোংরামির স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজেকে ও নিজের পরিবার-পরিজনকে বাঁচানোর জন্য নিম্নের উপদেশমালা গ্রহণ করঃ-

 

উপদেশমালা:-

১- তোমার পরিবার ও পরিবেশের মাঝে একটি স্বায়ত্ত-শাসনভুক্ত রাষ্ট্র গঠন কর এবং সেই রাষ্ট্রে যথা-সম্ভব ইসলামী আইন চালু কর।

 

২- অশ্লীলতার মোকাবিলা করার জন্য নিজের আত্মাকে ট্রেনিং দাও। আল্লাহ-ভীতি ও তাকওয়া মনের মাঝে সঞ্চিত রাখ। শয়তান ও খেয়াল-খুশীর দাসত্ব করা থেকে বহু ক্রোশ দূরে থাক। নাফসে আম্মারাহকে সর্বদা দমন করে রাখ। মনে-প্রাণে আল্লাহর স্মরণ রাখ। মন প্রশান্ত থাকবে।

 

৩- পরিপূর্ণ মুমিন হলো সেই ব্যক্তিযে তার চরিত্রে সবচেয়ে সুন্দর। অতএব তুমি তোমার চরিত্রকে সুন্দর ও পবিত্র কর।

 

৪- নোংরা পরিবেশে ধৈর্যশীলতা অবলম্বন কর। ধৈর্যের ফল বড় মিঠা হয়। অতএব ধৈর্যের সাথে অশ্লীলতার মোকাবিলা কর।

৫- মন্দ পরিণামকে ভয় কর। দুনিয়া ও আখেরাতের লাঞ্ছনা ও শাস্তির ভয় রাখ।

 

৬- অশ্লীলতা ও ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারলে তাতে যে সওয়াব ও মর্যাদা লাভ হয়তার লোভ ও আশা রাখ। কিয়ামতে ছায়াহীন মাঠে আরশের ছায়া লাভ এবং বেহেশতে হুরীদের সহিত ইচ্ছাসুখের সম্ভোগের কথা মনে রাখ।

 

৭- মনে রেখো যেতুমি যেমন চাও নাতোমার মা-বোন বা স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথবা ধর্ষিতা হোকতেমনি অন্য কেউই তা চায় না। অতএব সকলের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখ।

৮- লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অংশ ও শাখা। মুমিন হিসাবে তুমি সে মহৎ গুণকে তোমার হƒদয় থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিও না। লজ্জাশীলতা তোমার মনের প্রতি অশ্লীলতার সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করুক।

 

৯- হিম্মত উঁচু রাখ। নিজের সচ্চরিত্রতা নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে কর। আর মনে রেখো যেসচ্চরিত্র এক অমূল্য ধনযা আর কারো না থাকলে তোমার আছে।

 

১০- সেই সকল অশ্লীল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়া অবশ্যই ত্যাগ করযা পড়ে তোমার হƒদয়ে কামনার উদ্রেক হয়যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় দেহ-মনে। আর সেই সকল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়যাতে এ সব পাপ ও তার শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছেযাতে রয়েছে আল্লাহ-ভীতির কথা।

 

১১- ইসলাম ও তার শরীয়তকে তোমার জীবনের সকল ক্ষেত্রে জীবন-বিধান বলে জানো ও মানো। দেখবেসকল সমস্যার সমাধান রয়েছে ইসলামে।

১২- সম্ভব হলে সত্বর বিবাহ করে ফেল। কারণবিবাহই হলো এ সমস্যার সবচেয়ে উত্তম সমাধান। বিবাহ হলো অর্ধেক দ্বীন। বিবাহ হলো শান্তির মলম। বিবাহিতকে আল্লাহ সাহায্য করে থাকেন। সুতরাং চাকুরী না হলেওনিজের পায়ে না দাঁড়ালেওপড়া শেষ না হলেও তুমি বিবাহ কর। তোমার জন্য আল্লাহর সাহায্য আছে। আর জেনে রেখো যেব্যভিচারে পড়ার ভয় থাকলে তোমার জন্য বিবাহ করা ফরয।

১৩- মনের খেয়াল-খুশী ও প্রবৃত্তির ডোর নিজের হাতে ধরে থেকো এবং শয়তানের হাতে ছেড়ে দিও না। তোমার মনকে পবিত্র রেখো। কারণ,

﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠ ﴾ [الشمس: ٩، ١٠]

যে তার মনকে পবিত্র করবেসে হবে সফলকাম এবং যে তা কলুষিত করবেসেই হবে অসফল।  সূরা আস-শামসআয়াত: ৯-১০

১৪- মনকে নিয়ন্ত্রিত ও সংযত করার জন্য রোযা রাখ। এই রোযা তোমার যৌন-কামনাও দমন করবে।

১৫- ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য চোখের ব্যভিচার থেকে দূরে থাক। আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত করো না। হারামের সামনে নজর ঝুঁকিয়ে চল।

১৬- সকল প্রকার যৌন-চিন্তা মন থেকে তুলে ফেল। আর এর জন্য ইসলামী ক্যাসেট শোনবই পড়। নেক বন্ধুর কাছে গিয়ে বস এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা আলোচনা কর। একা থাকলে কুরআন ও তার অর্থ পড়।

 

১৭- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সকল উপায় ও উপকরণ থেকে দূরে থাক। ভাবী ও চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুফাতো বোনরা বেপর্দা হলে তাদেরকে নিজের বোনের মত দেখো। বন্ধুর বউ বেপর্দা হলে তার সাথে বন্ধুত্ব বর্জন কর। প্রয়োজন ছাড়া বেড়াবার উদ্দেশ্যে এমন স্থানে (হাটে-বাজারে) বেড়াতে যেও নাযেখানে নেংটা মহিলা নজরে আসে। টিভি-সিনেমানাটক-যাত্রা-থিয়েটার দেখা বন্ধ কর। ব্যভিচারের মন্ত্র গান শোনা বর্জন কর। স্কুল-কলেজে সহপাঠিনী থেকে দূরে থাক এবং ধৈর্যের সাথে দৃষ্টি সংযত রাখ।

১৮- সুশীল বন্ধু গ্রহণ কর এবং এমন বন্ধুর সংসর্গ ত্যাগ করযে যৌন ও নারীর কথা আলোচনা করে মজা নেয় ও আসর জমায়।

 

১৯- নির্জনতা ত্যাগ কর। বেকারত্ব দূর কর। কোনো একটা কাজ ধরে নাও এবং সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক।

 

২০- যদি তুমি এমন দেশে থাকযে দেশে ব্যভিচার কোনো পাপ বা অপরাধ নয় অথবা এমন জায়গায় চাকুরী করযেখানে মহিলা সহকর্মীরা অযাচিতভাবে তোমার গায়ে পড়তে আসেতাহলে সম্ভব হলে তুমি সে দেশপরিবেশ ও চাকুরী ত্যাগ করে বিকল্প ব্যবস্থা নাও। অর্থের জন্য নিজের চরিত্র ও ঈমান হারিয়ো না। আল্লাহ তোমার সহায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করেআল্লাহ তাকে বিনিময়ে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করেন।

 

২১- তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাক। নারীর ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। আল্লাহ তোমাকে নোংরামি থেকে রক্ষা করবেন।

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [الاعراف: ٢٠٠]

অবশ্যই যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছেতাদেরকে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা-শক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে। (তারা হয় আত্ম সচেতন মানুষ। সূরা আরাফআয়াত: ২০১

 

 

 

  1. والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে, মাওলানা জুনাইদ

সম্পাদনায়, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক