আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।
No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৪৯৫

আসসালামু আলাইকুম 

আমার জানার বিষয় হলো 

তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত নাকি ২০রাকাত?

প্রতিবছর একশ্রেণির মানুষ রামাদান আসলে এটা নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে তাই এই ব্যাপারে দালিলিক আলোচনা থাকলে শেয়ার করার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইলো। 

 

তারিখ:  ১৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা কামরুল হাসান যশোর থেকে। 

   জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়, 


 ০১. চার ইমামের মতামত: 


,قال السرخسي وهو من أئمة المذهب الحنفي :

فإنها عشرون ركعة سوى الوتر عندنا .

" المبسوط " ( 2 / 145 ) .


وقال ابن قدامة :


والمختار عند أبي عبد الله ( يعني الإمام أحمد ) رحمه الله ، فيها عشرون ركعة ، وبهذا قال الثوري ، وأبو حنيفة ، والشافعي ، وقال مالك : ستة وثلاثون .

" المغني " ( 1 / 457 )


শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ বলেনঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চার মাযহাবে সীমাবদ্ধ। এ চার ইমামের মাঝে প্রথম ইমাম হলেন ইমাম আবু হানীফা রহঃ [মৃত্যু ১৫০ হিজরী] ও বিশ রাকাত তারাবীহের প্রবক্তা। [ফাতাওয়া কাজীখান-১/১১২} ইমাম মালিক রহঃ এর একটি বক্তব্য বিশ রাকাতের পক্ষে, দ্বিতীয় বক্তব্য ৩৬ রাকাতের পক্ষে। [যাতে বিশ তারাবীহ আর ১৬ রাকাত নফল]  হেদায়াতুল মুজতাহিদ-১/১৬৭}


ইমাম শাফেয়ী রহঃ বিশ রাকাতের প্রবক্তা। {আলমুগনী-১/৪৫৭}


ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ এর মুখতার বক্তব্যও বিশ রাকাতের পক্ষে। [আলমুগনী-২/১৬৭}


চার মাযহাবের ফিক্বহের ইবারতের মাঝে কোন একটি ইবারতেও শুধু আট রাকাত তারাবীহকে সুন্নত আর বিশ রাকাততে বিদআত বলা হয়নি।


০২. আহলে হাদিসের মতামত: তারাবির নামাজ ৮ রাকাত।


প্রশ্ন: ক।  বিশ রাকাত তারাবিহর তথা তিন ইমামের দলিল কি?


উত্তর: ক। বিশ রাকাত তারাবিহর দলিল নিম্নরূপ


হাদিস নং -০১

عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৫, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}


হাদিস নং -০২

عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة

হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}


খুলাফায়ে রাশেদীনের তথা  হজরত ওমর রা এর নির্দেশ:


০১.

عن ابى بن كعب ان عمر بن الخطاب امره ان يصلى باليل فى رمضان فصلى بهم عشرين ركعة

হযরত উবায় বিন কাব রাঃ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ আমাকে এই মর্মে আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত পড়া হতো। {কানযুল উম্মাল-৮/২৬৪}


০২.

عن يحيى بن سعيد ان عمر بن الخطاب امر رجلا يصلى بهم عشرين ركعة

হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৩}


০৩.


وروى مالك من طريق يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد عشرين ركعة

হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ ছিল। {ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬} যার সনদ বুখারীতে দুই স্থানে আছে।


০৪. আলী রাঃ এর শাসনামল


عن ابى عبد الرحمن السلمى عن على قال دعى القراء فى رمضان فامر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة قال وكان على يوتر بهم

হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত হযরত আলী রাঃ রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন। {বায়হাকী-৪/৪৯৬}


আসার নং-০১

عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب يصلى بالناس فى رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاثة

হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত উবায় বিন কাব রাঃ লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির নামায পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৪}


আসার নং-০২

মক্কা মুকাররমায় হযরত আতা বিন আবী রাবাহ রহঃ [মৃত্যু ১১৪হিজরী] বলেনঃ ادركت الناس وهم يصلون ثلاثة وعشرون ركعة بالوتر তথা আমি লোকদের [সাহাবা ও তাবেয়ীগণ] বেতের নামাযসহ ২৩ রাকাত পড়তে দেখেছি। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}


আসার নং-৩

عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ ” أَمَرَ رَجُلًا أَنْ يُصَلِّيَ، بِالنَّاسِ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً “

হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে পাঁচ তারবীহা এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২৯২, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}


আসার নং-০৪

عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ عَبْدِ الْمَلِكِ قَالَ: «كَانَ سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ يَؤُمُّنَا فِي شَهْرِ رَمَضَانَ، فَكَانَ يَقْرَأُ بِالْقَرَاءَتَيْنِ جَمِيعًا، يَقْرَأُ لَيْلَةً بِقِرَاءَةِ ابْنِ مَسْعُودٍ فَكَانَ يُصَلِّي خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ،

হযরত ইসমাইল বিন আব্দিল মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত সাঈদ বিন যুবায়ের রমজান মাসে আমাদের ইমামতি করতেন।তিনি দুই কিরাতেই তিলাওয়াত করতেন। এক রাতে পড়তেন ইবনে মাসঈদ রাঃ কিরাতে। তিনি পাঁচ তারবীহায় নামায পড়াতেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, বর্ণনা নং-৭৭৪৯]


প্রশ্ন: খ। হজরত ওমর রা এর সুন্নাহ কি আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ, এর দলিল কি?


উত্তর: খ। হ্যা, বলতে দ্বিধা নেই,  খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ মানে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ। দলিল:


হাদিস নং-০১

إِنّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنّتِي وَسُنّةِ الْخُلَفَاءِ الرّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسّكُوا بِهَا، وَعَضّوا عَلَيْهَا بِالنّوَاجِذِ.

قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

কোনো সন্দেহ নেই, আমার পর যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক এখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাহ এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে গ্রহণ করবে। এই আদর্শকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং মাঢ়ীর দাঁত দিয়ে কামড়ে থাকবে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৭


হাদিস নং-০২

مَا نَزَلَ بِالنّاسِ أَمْرٌ قَطّ فَقَالُوا فِيهِ: وَقَالَ فِيهِ عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ: أَوْ قَالَ عُمَرُ إِلّا نَزَلَ الْقُرْآنُ عَلَى نَحْوٍ مِمّا قَالَ عُمَرُ

قال الترمذي: وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, যখনই মুসলমানদের কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে আর সাহাবায়ে কেরাম কোনো মত দিয়েছেন, কিন্তু উমর ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন তখন দেখা যেত উমরের মত অনুযায়ীই কুরআন নাযিল হয়েছে। তাখরিজ: জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৬৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৬৯৭


হাদিস নং-০৩

বেশ কিছু ক্ষেত্রে উমর রা. যেমনটা ভেবেছেন দেখা গেছে পরে ঐভাবেই কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। উমর রা. বলেন,


وَافَقْتُ رَبِّي فِي ثَلَاثٍ، فِي مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ، وَفِي الْحِجَابِ، وَفِي أُسَارَى بَدْرٍ.

তিনটি বিষয়ে আমার রবের ইচ্ছার সাথে আমার ইচ্ছা এক হয়েছে। ১. মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান বানানোর ক্ষেত্রে। ২. হিজাবের বিধান নাযিল হওয়ার বিষয়ে। ৩. বদরের বন্দীদের বিষয়ে ফয়সালা দেওয়ার ব্যাপারে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৯৯


হাদিস নং-০৪

لَقَدْ كَانَ فِيمَا قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ مُحَدّثُونَ، فَإِنْ يَكُ فِي أُمّتِي أَحَدٌ، فَإِنّهُ عُمَرُ.

পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে কিছু মুহাদ্দাস থাকতেন। এই উম্মতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস থেকে থাকে তাহলে সে লোকটি হল উমর। Ñসহীহ বুখারী ৩৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৮৯

 নোট: হুমায়দী রাহ. বলেন,

الْمُحَدَّثُ الْمُلْهَمُ لِلصَّوَابِ.

মুহাদ্দাস এমন ব্যক্তি, যার হৃদয়ে সত্য ও সঠিক বিষয় ঢেলে দেওয়া হয়। Ñশরহু মাযাহিবি আহলিস সুন্নাহ, ইবনে শাহীন, পৃ. ৯৮ (৮৫); ফাযাইলুল খুলাফাইর রাশিদীন, আবু নুআইম, পৃ. ৪২ (১৫)


ইজমায়ে সাহাবা: 

ইবনে আবদুল বার রাহ. ও ইবনে কুদামা রাহ.-এর বক্তব্যও পড়েছেন যে, তারা বিশ রাকাত তারাবীর বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের ইজমার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ইবনে হাজার হায়তামী রাহ. বলেনÑ


أَجْمَعَ الصّحَابَةُ عَلَى أَنّ التّرَاوِيحَ عِشْرُونَ رَكْعَةً.

এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ইজমা প্রতিষ্ঠিত যে, তারাবীর নামায বিশ রাকাত। Ñফতহুল ইলাহ ফী শারহিল মিশকাহ ৫/১৩০; মিরকাতুল মাফতীহ ৩/৯৭৩



উম্মতে মুসলিমার ইজমা: 


১২৮৪ হিজরীর ইংরেজ আমলের আগে পৃথিবীর কোন মসজিদে রমজানের পুরো মাস মসজিদে আট রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়ার কোন নজীর নেই। একটি মসজিদের নাম কোন কথিত আহলে হাদীস দেখাতে পারবে না। না মসজিদে নববীতে কোনদিন আট রাকাত তারাবীহ পড়া হয়েছে। না বাইতুল্লায়। না পৃথিবীর কোন মুসলিম পল্লিতে। রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে সর্বপ্রথম এ বিদআতের সূচনা হয়।




বিজ্ঞ ফুকাহা-ওলামাদের মতামত: 


০১. ইমাম শাফিঈ রাহ. বলেছেন,


رَأَيْتُ النّاسَ يَقُومُونَ بِالْمَدِينَةِ تِسْعًا وَثَلَاثِينَ رَكْعَةً قَالَ: وَأَحَبّ إِلَيّ عِشْرُونَ، قَالَ: وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكّةَ، قَالَ: وَلَيْسَ فِي شَيْءٍ مِنْ هَذَا ضِيقٌ وَلَا حَدّ يَنْتَهِي إِلَيْه.

মদীনাবাসীদের দেখেছি, উনচল্লিশ রাকাত নামায পড়ে। আমার নিকট তারাবী বিশ রাকাত পড়া উত্তম। কেননা, মক্কাবাসীরা বিশ রাকাত পড়ে। তবে এসব সংখ্যার কোনটি নির্ধারিত নেই যে, এর বেশি পড়া যাবে না। Ñমুখতাছারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ২০২; মারিফাতুস সুনান, বায়হাকী ৪/৩৯,৪২


০২. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,


إِنّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنّ أُبَيّ بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُومُ بِالنّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ، وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ. فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ الْعُلَمَاءِ أَنّ ذَلِكَ هُوَ السّنّةُ؛ لِأَنّهُ أَقَامَهُ بَيْنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ، وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ.


وَاسْتَحَبّ آخَرُونَ: تِسْعَةً وَثَلَاثِينَ رَكْعَةً؛ بِنَاءً عَلَى أَنّهُ عَمَلُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ الْقَدِيمُ. وَقَالَ طَائِفَةٌ: قَدْ ثَبَتَ فِي الصّحِيحِ عَنْ عَائِشَةَ أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَمْ يَكُنْ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا غَيْرِهِ عَلَى ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً.


এ কথা সুপ্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা‘ব রা. সাহাবাদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। এ জন্য অনেক উলামায়ে কেরাম বলেছেন, বিশ রাকাত তারাবীই সুন্নাহ। কেননা, উবাই ইবনে কাব রা. বিশ রাকাত তারাবী পড়িয়েছেন মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের উপস্থিতিতে। তখন তাঁদের কেউই এর উপর কোনো আপত্তি করেননি।


খোদ তারাবিহ শব্দই ২০ রাকাতের দালালত করে:

তারাবীহ : মূল ধাতু رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ(রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة (তারবীহাতুন)অর্থ :সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসেতারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح) ‘তারা-বীহ’ অর্থ :প্রশান্তির বৈঠকসমূহ(আল-মুনজিদ)

নোট: আট রাকাত হলে বৈঠক হয় একটি, তারাবিহ মানে বৈঠক সমূহ কমপক্ষে তিন বৈঠক।



 প্রশ্ন: গ। ৮ রাকাত তারাবিহর তথা আহলে হাদিসের দলিল ও খণ্ডন?


উত্তর: গ। আহলে হাদিসের দলিল নিম্নরূপ:


হাদিস নং -০১

عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه أخبره : أنه سأل عائشة رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ . فقال يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي (صحيح البخارى- أبواب التهجد، باب قيام النبي صلى الله عليه و سلم بالليل في رمضان وغيره1

হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪)


প্রথম হাদিস খণ্ডন:

খোদ হযরত আয়েশা রাঃ থেকে ১৩ রাকাত তারাবীহের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। সুতরাং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা দূর করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন-“সঠিক কথা হল এ ব্যাপারে আমি যা উল্লেখ করেছি এগুলো সব ভিন্ন সময় ও ভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল” অর্থাৎ নবীজী একেক সময় একেক রাকাত নামায পড়েছেন তারাবীহের ক্ষেত্রে।(ফাতহুল বারী-৩/১৭)


হাদিসের শব্দ ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره (নবীজী সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা) এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা?


হাদিস নং -০২

عن جابر بن عبد الله قال : صلى بنا رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ثمان ركعات والوتر فلما كان من القابلة اجتمعنا في المسجد ورجونا أن يخرج إلينا فلم نزل في المسجد حتى أصبحنا فدخلنا على رسول الله صلى الله عليه و سلم فقلنا له : يا رسول الله رجونا أن تخرج إلينا فتصل بنا فقال : كرهت أن يكتب عليكم الوتر (قيام الليل-90)


হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূল সাঃ আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী সাঃ আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী সাঃ এর কাছে। তাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।(কিয়ামুল লাইল-৯০)


দ্বিতীয় হাদিস খণ্ডন:


শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।

ইবনে হুমাইদ রাজী নামক রাবি সম্পর্কে

 হাফেজ জাহাবী রহঃ বলেন-তিনি দুর্বল



সারকথা হলো ,এই হারামাইন শরীফাইনে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কত রাকাত তারাবী চলে আসছে? এ দুই মসজিদ, যেখান থেকে সারা বিশ্বের মসজিদগুলোতে ঈমান ও আমলের আলো ছড়িয়েছে, সেখানে কি যুগ যুগ ধরে বিশ রাকাত তারাবী পড়া হচ্ছে না?


‘বিশ রাকাত তারাবী’ যদি বিদআত হত তাহলে কি এটা সম্ভব যে, দ্বীনের মধ্যে একটা মুনকার ও বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটবে আর সকল মুসলমান একমত হয়ে তা গ্রহণ করে নেবে; এমনকি এর উপর সমস্ত ফকীহ, মুহাদ্দিস ও অন্যান্য উলামায়ে কেরামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

তারীখুল খুলাফা তথা খুলাফায়ে রাশেদীনের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত ওমর রাঃ ১৫তম হিজরীতে তারাবীহ নামাযের জামাতের শুরু করেন। আর হযরত সাইয়্যেদা আয়শা রাঃ ৫৭হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। পুরো ৪২ বছর আম্মাজান আয়শা রাঃ হুজরার নিকটবর্তী মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহের বেদআত জারী হল, অথচ যেই আম্মাজান আয়শা সিদ্দিকা রাঃ চুপচাপ থাকবে?


এটা কীভাবে সম্ভব যে, নবীজীর সমস্ত উম্মত বিদআত ও গোমরাহির উপর একমত হয়ে যাবে। অথচ নবীজীর ঘোষণা,


إِنّ أُمّتِي لَا تَجْتَمِعُ عَلَى ضَلَالَةٍ.

এটা নিশ্চিত যে, আমার গোটা উম্মত গোমরাহির উপর একমত হবে না।২  Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২৫৩: সুনানে তিরমিযী, হাদীস ২১৬৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৫০


  1. والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক