জিজ্ঞাসা-১২৬০৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হলো, মুসাফির অবস্থায় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সুন্নাত নামাজ আদায় নিষেধ নাকি কেউ চাইলে আদায় করতে পারবেন? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।
তারিখ: ০৩/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ শফিউল ইসলাম সিরাজগঞ্জ।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ফিকহি হানাফির মতে,
মুসাফির ব্যক্তির জন্য চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নত নামাজ আদায় করবে। সূত্র: ইলাউস্ সুনান: ৭/১৯১, রদ্দুল মুহতার : ১/৭৪২
দলিল:
আয়াত নং -০১
Surah Al-Baqara, Verse 184:
فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। সূরা বাকারা-১৮৪
ব্যাখ্যা: সফররত অবস্থায় সাওম না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও অসুবিধা না হলে রোজা রাখাই উত্তম।
সুতরাং সফর অবস্থায় রোজা যদি উত্তম হয়, তাহলে নামাজ আরও উত্তম হবে।
হাদিস নং -০১
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تتركوا ركعتي الفجر ولو طردتكم الخيل
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ অশ্বারোহী বাহিনী তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেও তোমরা ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] ছেড়ো না। তাহাবী শরীফ-১৬৪৭, সুনানে আবু দাউদ-১২৬০, সুনানে বায়হাকী কুবরা-৪২৫৭, মুসনাদে আহমাদ-৯২৫৩
হাদিস নং -০২
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، وَيَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، كِلاَهُمَا عَنْ يَحْيَى، - قَالَ ابْنُ حَاتِمٍ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، - حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ كَيْسَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ عَرَّسْنَا مَعَ نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ نَسْتَيْقِظْ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لِيَأْخُذْ كُلُّ رَجُلٍ بِرَأْسِ رَاحِلَتِهِ فَإِنَّ هَذَا مَنْزِلٌ حَضَرَنَا فِيهِ الشَّيْطَانُ " . قَالَ فَفَعَلْنَا ثُمَّ دَعَا بِالْمَاءِ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ - وَقَالَ يَعْقُوبُ ثُمَّ صَلَّى سَجْدَتَيْنِ - ثُمَّ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَصَلَّى الْغَدَاةَ .
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে আমরা একবার শেষ রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লাম। সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা জাগতে পারলাম না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমরা সকলেই নিজ সওয়ারীর মাথায় ধরে নিয়ে চল। কেননা এই মনযিলে আমাদের কাছে শয়তান এসে পড়েছে। বর্ণনাকারী বলেন,-আমরা তা-ই করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পানি আনিয়ে উযু করলেন এবং দুটি সিজদা করলেন; আর ইয়াকুব বলেন, দু’রাকআত সুন্নাত নামায আদায় করলেন। এরপর নামাযের ইকামত দেয়া হলো এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের নামায আদায় করলেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩৪ (আন্তর্জাতিক নং ৬৮০-২)
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. সফরেও ফজরের ছুন্নাত পড়েছেন। হযরত আয়েশা রা. থেকে সহীহ সনদে আরো বর্ণিত আছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ বা অসুস্থ অবস্থায়, সফর বা মুকীম অবস্থায় এবং উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে যা ছাড়তেন না, তা-হলো ফজরের পূর্বের দু’রাকাত। (ইবনে আবী শাইবা-৩৯২৯) ইবনে উমার রা.-এর ব্যাপারে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তিনি সফরেও ফজরের পূর্বের দু’রাকাত ছাড়তেন না। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ২/১৩১)
হাদিস নং -০৩
وَحَدَّثَنِي حَجَّاجُ بْنُ الشَّاعِرِ، حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا وُهَيْبُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي مُرَّةَ، مَوْلَى عَقِيلٍ عَنْ أُمِّ هَانِئٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى فِي بَيْتِهَا عَامَ الْفَتْحِ ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ قَدْ خَالَفَ بَيْنَ طَرَفَيْهِ .
উম্মে হানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ঘরে একটি কাপড় পরে আট রাকআত নামায আদায় করেন। তিনি সে কাপড়ের দুআঁচল বিপরীত দিকে জড়িয়েছিলেন।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৪৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৩৬-৭)
ব্যাখ্যা: মুসাফির অবস্থায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ নফল হুকুম হয়ে যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিনে মুসাফির অবস্থায় নফল নামাজ আদায় করেছেন। এ হাদিস থেকে সফর অবস্থায় সুন্নাত বা নফল নামাজ পড়ার অনুমতি প্রমাণ হয়।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে মুসাফির অবস্থায় সুযোগ থাকলে সুন্নাত নামাজ আদায় করা উত্তম আর ফজরের সুন্নত অবশ্যই আদায় করবেন।
والله اعلم بالصواب