আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৫৮৭: কখন গর্ভাপাত করা জায়েজ?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৫৮৭:


আসসালামু আলাইকুম। মুহতারামের নিকট আমার একটি জানার বিষয়।

একজন মেয়ে তিন মাসের হামেলাহ। কিন্তু তাঁর শরীর অত্যন্ত দূর্বল। যদি তিনি সন্তান জন্ম দান করেন তাহলে তাঁর মৃত্যু শংকা আছে। এই অবস্থায় তাঁর করনীয় সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক মাসয়ালা প্রয়োজন।

জাঝাকাল্লাহ। তারিখ:  ১৩/০৫/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা আবু মুহাম্মাদ, কুমিল্লা থেকে


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ডাক্তারের নিরপেক্ষ মতামতের ভিত্তিতে চার মাসের পূর্বে গর্ভাপাত জায়েজ আছে। যেমন,


فإن إسقاط الجنين بعد مضي مائة وعشرين يوما يعد قتلاً للنفس التي حرم الله إلا بالحق، وقد ثبت في الحديث أن نفخ الروح يتم بعد مائة وعشرين يوماً، ولا يجوز إسقاط حمل مضت عليه هذه المدة -بالإجماع- إلا في حالة واحدة من حالتين : وهي ما إذا ثبت بتقرير طبي موثوق أن حياة الأم في خطر داهم إذا لم يسقط الجنين، أو ثبت أن الجنين قد مات في بطن أمه، وأما اسقاطه قبل هذه المدة فهو محرم أيضا وإن كان لا يرتقي إلى درجة قتل النفس ، ودليل تحريمه ـ والحالة هذه ـ هو أنه إفساد للنسل والله جل وعلا يقول: ( وإذا تولى سعى في الأرض ليفسد فيها ويهلك الحرث والنسل والله لا يحب الفساد)[البقرة:205] وعلى هذا فلا يجوز هو الآخر إلا بتقرير طبي موثوق يفيد أن حياة الأم في خطر داهم ما لم يسقط . وذهب بعض أهل العلم الى جواز إسقاط النطفة قبل مضي أربعين يوما ، والمختار ما قدمناه. ثم يجب التنبه إلى أنه يزداد الإثم ويعظم الجرم إذا كان الباعث على الإسقاط هو مجرد التخلص من معرة الزنى فإنه إثم في الأول واعتداء في الآخر.

অর্থ: একশত বিশ দিন অর্থাৎ চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ভ্রূণকে গর্ভপাত করাকে আল্লাহ যে আত্মাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তাকে হত্যা বলে গণ্য করা হয়, এবং হাদিসে প্রমাণিত যে, একশত বিশ দিন পর রূহ ফুঁকে ফেলা হয় এবং তা যে গর্ভধারণটি এই সময়কাল অতিক্রম করেছে তা গর্ভপাত করা জায়েয নয় - সর্বসম্মতিক্রমে - দুটি ক্ষেত্রের একটি ছাড়া: যা যদি একটি নির্ভরযোগ্য মেডিকেল রিপোর্ট দ্বারা প্রমাণিত হয় যে ভ্রূণ গর্ভপাত না করা হলে মায়ের জীবন আসন্ন বিপদে রয়েছে, অথবা এটা প্রমাণিত যে ভ্রূণটি তার মায়ের গর্ভে মারা গেছে।


দলিল:

 

Surah Al-Baqara, Verse 205:

وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ

যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না। সূরা বাকারা-২০৫


إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِيْ بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِيْنَ يَوْمَاً نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُوْنُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ،ثُمَّ يَكُوْنُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ،ثُمَّ يُرْسَلُ إِلَيْهِ المَلَكُ فَيَنفُخُ فِيْهِ الرٌّوْحَ،وَيَؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ: بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيْدٌ

‘আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন গোশতপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফিরিশ্‌তা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।’ তাখরিজ: বুখারি- ৩২০৮


আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, উম্মতে মুসলিমার সকল ফুকাহা এ ব্যাপারে একমত, রূহ আসার পর গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ এটা الوأد (সূক্ষ সমাহিত) এর অন্তর্ভুক্ত; যে ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ ‘যখন (কেয়ামতের দিন) জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে…….।’ (তাকবীর ৮-৯) সূত্র: ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ৪/২১৭


 অতএব, এটি একটি নির্ভরযোগ্য মেডিকেল রিপোর্ট ছাড়া জায়েয নয় যে যতক্ষণ না গর্ভপাত না হয় ততক্ষণ মায়ের জীবন আসন্ন বিপদের মধ্যে রয়েছে। কোন কোন আলেম মনে করেন যে, চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে বীর্যপাত করা জায়েয এবং তবে প্রথম মতটা অগ্রগামী।

সূত্র: ফিকহুল ইসরাতুল মুসলিমা, আল আযল ওয়া তাহদিদুন নসলি ওয়াল ইজহাদ-৯৯১

 

সারকথা হলো, গর্ভের সন্তানের বয়স চার মাস পূর্ণ হওয়ার পূর্বে অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতামতের ভিত্তিতে গর্ভাপাত জায়েজ, এর পরে কোনোক্রমেই জায়েজ নেই। 


সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে উক্ত মহিলার গর্ভাপাত জায়েজ হবে।

 

 

 

 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক