জিজ্ঞাসা-১২৫৮৮:
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুললাহ, দু'আ করার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসিলা চাওয়া বা তার ওসিলায় দু'আ কবুল করুন বলা কতটুকু শরি'আত সম্মত? অনুগ্রহ করে জানাবেন। তারিখ: ১৩/০৫/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শামসুল ইসলাম চৌধুরী, সিলেট থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে দুটি মতামত পাওয়া যায়,
প্রথম মত: জমহুর উলামা-ফুকাহা তথা মালেকী, হাম্বলী, শাফিঈ এবং মুতাআখখিরীন হানাফিয়্যাহগণ শরী‘আতের দৃষ্টিতে তাওয়াসসুল বা ওয়াসিলা ধরাকে বৈধ বলেছেন।
দ্বিতীয় মত: শায়েখ ইবনে তায়মিয়া, শায়েখ ইবনে বাজ, শায়েখ উসাইমিন রহ এবং প্রচলিত আহলে হাদিসের মতে দুআতে ওসিলা জায়েজ নেই।
প্রশ্ন: ক। জমহুর ওলামাদের দলিল কি?
উত্তর: ক। ওলামায়ে জমহুর বলেন, ইসলামের যে সকল বিষয় সূত্র পরম্পরায় আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং উম্মতের একটি বৃহৎ অংশ প্রত্যেক যুগে অবিচ্ছিন্নভাবে যে সকল আমলের ধারা চালু রেখেছে, সেগুলোর একটি হলো দু‘আতে ওয়াসিলা ধরা, বা মাধ্যম গ্রহণ করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। বিষয়টি কুরআন, হাদীস এবং সাহাবীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
আয়াত নং -০১
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ ابۡتَغُوۡۤا اِلَیۡہِ الۡوَسِیۡلَۃَ وَ جَاہِدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِہٖ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۳۵﴾
ترجمہ:
اے ایمان والو ڈرتے رہو اللہ سے اور ڈھونڈو اس تک وسیلہ ف ١٠ اور جہاد کرو اس کی راہ میں تاکہ تمہارا بھلا ہو. تفسير عثماني
(সূত্র: তাফসীরুল আলূসী: ৬/১২৪)
পারিভাষিক অর্থে ওয়াসিলা: আল্লাহর গুণবাচক নাম, বা কোনো নেক আমল, কিংবা আল্লাহর কোনো নেক বান্দাকে দু‘আর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম বানানো, অর্থাৎ এভাবে দু‘আ করা যে, হে আল্লাহ! অমুক নেক আমল, বা অমুক নেক বান্দার ওয়াসিলায় আমার দু‘আ কবূল করুন। সূত্র: তুহফাতুল ক্বারী: ৩/৩৩৭
আয়াত নং -০২
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا ﴿البقرة: ٨٩
যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং যা দিয়ে তারা ইতোপূর্বে কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করতো। {সূরা বাকারা-৮৯}
বাগদাদের মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ মাহমুদ আলুসী রহঃ বলেনঃ
نزلت في بني قريظة والنضير كانوا يستفتحون على الأوس والخزرج برسول الله صلى الله عليه وسلم قبل مبعثه قاله ابن عباس رضي الله تعالى عنهما وقتادة والمعنى يطلبون من الله تعالى أن ينصرهم به على المشركين ، كما روى السدي أنهم كانوا إذا اشتد الحرب بينهم وبين المشركين أخرجوا التوراة ووضعوا أيديهم على موضع ذكر النبي صلى الله عليه وسلم وقالوا : اللهم إنا نسألك بحق نبيك الذي وعدتنا أن تبعثه في آخر الزمان أن تنصرنا اليوم على عدوّنا فينصرون
এ আয়াত নাজীল হয়েছে বনী কুরাইজা ও বনী নজীরের ব্যাপারে। রাসূল সাঃ এর আগমণের পূর্বে যারা আওস ও খাজরাজের বিরুদ্ধে রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে দুআ করতো। এ বক্তব্যটি ইবনে আব্বাস রাঃ এবং কাতাদা এর।
আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার মানে হল, তারা এর দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতো। যেমন সিদ্দী বর্ণনা করেন যে, যখন তাদের ও মুশরিকদের মাঝে ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যেত, তখন তারা তাওরাত কিতাব বের করত, এবং তাদের হাত যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম আছে তার উপর রাখতো, আর বলতো-“হে আল্লাহ! আমরা আজকে আপনার সাহায্য কামনা করছি আমাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে ঐ সত্য নবীর ওসীলায় শেষ জমানায় যার আগমনের ওয়াদা আপনি করেছেন। তারপর তাদের সাহায্য করা হতো। {তাফসীরে রুহুল মাআনী-১/৩২০}
আল্লামা মহল্লী রহঃ উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের পূর্বে ইহুদীরা কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য পার্থনা করে বলতো- اللهم انصرنا عليهم باالنبى المبعوث آخر الزمان তথা হে আল্লাহ! শেষ জমানায় আগমনকারী নবীর ওসীলায় আমাদের সাহায্য করুন। সূত্র: তাফসীরে জালালাইন-১/১২; তাফসীরে কাবীর-৩/১৮০; তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী-১/৪৫৫
হাদিস নং -০১
1010 - حَدَّثَنَا الحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ المُثَنَّى، عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا» ، قَالَ: فَيُسْقَوْنَ
আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাযিঃ) এর উসীলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দুআ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! (প্রথমে) আমরা আমাদের নবী (ﷺ) এর উসীলা দিয়ে দু'আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের নবী (ﷺ) এর চাচার উসীলা* দিয়ে দুআ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দুআর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হতো। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০১০
*আলোচ্য সহীহ হাদীস দ্বারা কত সুস্পষ্টভাবে নবী, সাহাবী, এঁদের অবর্তমানে ওলীগণ, নেককার মুসলমানদের উসীলা গ্রহণ করে দু'আ ইত্যাদি প্রমাণিত। অথচ এক শ্রেণির চরমপন্থীরা এটাকে শিরক বলে প্রচার করে থাকে।
বিশেষ কথা:
উসুলে ফিক্বহ এ লিখা আছে যে, আল্লাহ তাআলা ও জনাবে রাসূল সাঃ যদি পর্ববর্তীদের শরীয়ত সমালোচনা বা নিষেধ করা ছাড়া বর্ণনা করে থাকেন, তাহলে সেটি আমাদের উপরও লাযেম হয়ে যায়। সূত্র: নূরুল আনওয়ার-২১৬, তাসকীনুল কুলুব-৭৬, নেদায়ে হক্ব-১০১
নোট:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে বিদ্যমান ছিলেন না। সে সময় ইহুদীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওসীলা দিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করতো। আর এ বিষয়কে আল্লাহ তাআলা সমালোচনাহীনভাবে উদ্ধৃতি করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও এ ওসীলার কোন বিরোধীতা বর্ণিত নেই। তাই রাসূল সাঃ এখনো দুনিয়াতে নেই। তাই এ আয়াত অনুপাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওসীলা গ্রহণ এখনো জায়েজ আছে।
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ، أَنَّ رَجُلاً، ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي . قَالَ " إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ " . قَالَ فَادْعُهُ . قَالَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ " اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِي اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ " . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيثِ أَبِي جَعْفَرٍ وَهُوَ غَيْرُ الْخَطْمِيِّ وَعُثْمَانُ بْنُ حُنَيْفٍ هُوَ أَخُو سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ .
মাহমূদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) .... উছমান ইবনে হুনায়ফ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বললঃ আল্লাহর কাছে দুআ করুন আমাকে যেন তিনি সুস্থ করে দেন। তিনি বললেনঃ তুমি যদি চাও তবে আমি দুআ করতে পারি। যদি চাও এর উপর সবর করতে পার। আর তা হবে তোমার জন্য কল্যাণকর। লোকটি বললঃ দুআ করে দিন। তখন তিনি খুব উত্তমরূপে উযু করে এই দুআটি পড়তে তাকে নির্দেশ দিলেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِي اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ
হে আল্লাহ! আমি তো তোমার কাছেই প্রার্থনা করছি, তোমার দিকেই মনোনিবেশ করছি রহমতের নবী তোমার নবী মুহাম্মাদের ওসীলায়। আমি তো মনোনিবেশ করছি তোমার ওসীলায় আমার এই প্রয়োজনে আমার রব্বের কাছেই যেন পূরণ হয় আমার এই প্রয়োজন। হে আল্লাহ! আমার বিষয়ে তাঁর সুপারিশ কবুল কর। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী, হাদিস নং ৩৫৭৮, ইবনে মাজাহ
নোট: ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান-সহীহ-গারীব।
পূর্ববর্তী সালাফদের মতামত:
০১. চার ইমাম রহ এর মত:
التوسل بجاه النبي (صلى الله عليه وآله) جائز في مذهب جمهور أهل العلم من الحنفية والمالكية والحنابلة في المعتمد من كتبهم، وذلك لأن مقام النبي (صلى الله عليه وآله) العظيم ومنزلته الرفيعة عند الله عز وجل ثابتة في الكتاب والسنة، ومن توسل بأمر ثابت فلا حرج عليه لعموم
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দোহাই দিয়ে তাওয়াসসুল/অসিলা করা হানাফী, মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ আলেমের মতবাদে তাদের অনুমোদিত কিতাবে জায়েয, কারণ নবী (সা.) এর মহান অবস্থান। আল্লাহ তাকে এবং তার পরিবারকে আশীর্বাদ করুন) এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে তার উচ্চ মর্যাদা কিতাব ও সুন্নাতে প্রতিষ্ঠিত, এবং যে ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠিত আদেশে প্রার্থনা করে, তার কথার সাধারণতার জন্য তার জন্য কোন দোষ নেই। সূত্র আলইফতা, আজকার ও দুআ- ৫৭৯ ( ফতোয়া নং)
০২.
يقول الإمام النووي رحمه الله -في معرض حديثه عن آداب زيارة قبر النبي صلى الله عليه وسلم-: "ثم يرجع إلى موقفه الأول قبالة وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم، فيتوسل به في حق نفسه، ويتشفَّع به إلى ربه سبحانه وتعالى" انتهى. [الأذكار ص/205].
অর্থাৎ ইমাম নববি রহ বলেছেন - নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতের শিষ্টাচার সম্পর্কে তাঁর “তারপর সে সামনে তার প্রথম অবস্থানে ফিরে আসে। আল্লাহর রসূলের জাত এবং তাঁর অসিলা দুআ করুন নিজের প্রয়োজনে এবং তাঁর রবের কাছে তাঁর মাধ্যমে সুপারিশ করুন, তিনি পবিত্র, উচ্চ। সূত্র: কিতাবুল আজকার -২০৫ পৃষ্ঠা
০৩.
ويقول الكمال ابن الهمام رحمه الله: "يسأل الله تعالى حاجته متوسلا إلى الله بحضرة نبيه عليه الصلاة والسلام" انتهى. [فتح القدير 3 /181].
অর্থাৎ আল-কামাল ইবন আল-হাম্মাম রহ. বলেছেন: "তিনি তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপস্থিতিতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তাঁর প্রয়োজনের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন৷” সূত্র: ফাতহুল কাদির ৩/১৮১
০৪.
ويقول البهوتي رحمه الله: "ولا بأس بالتوسل بالصالحين، ونصه -يعني الإمام أحمد- في منسكه الذي كتبه للمروذي أنه يتوسل بالنبي صلى الله عليه وسلم في دعائه، وجزم به في المستوعب وغيره" انتهى. [كشاف القناع 2 /73].
অর্থাৎ "
এবং আল-বাহুতি রহ বলেছেন: “নেককার ব্যক্তিদের উসিলা গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই এবং উত্তম। ইমাম আহমদ - তার আচার-অনুষ্ঠানে যা তিনি আল-মারওয়াধিকে লিখেছিলেন যে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর উসিলা দিয়ে দোয়া করেছেন এবং অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চিত। সূত্র: কাশফুল কনা-২/৭৩
প্রশ্ন: খ। অনেকে বলেন জীবিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওসিলা জায়েজ ছিল, এখন তিনি নেই তাই তার ওসিলায় দুআ জায়েজ নেই।
উত্তর: খ। এ মতের অন্যতম প্রবক্তা হলেন শায়েখ ইবনে বাজ রহ. । তাদের মত সঠিক নয়। দলিল:
হাদিস নং -০১
اغْفِرْ لِأُمِّي فَاطِمَةَ بِنْتِ أَسَدٍ، وَوَسِّعْ عَلَيْهَا مُدْخَلَهَا، بِحَقِّ نَبِيِّكَ وَالْأَنْبِيَاءِ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِي، فَإِنَّكَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ. اخرجه الطبرانى فى الكبيروالاوسط كما فىمجمع الزوائد للهيثمى:9/257
অর্থ: ‘আমার মা ফাতেমা বিনতে আসাদের মাগফেরাত করুন এবং আপনার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আমার পূর্বে গত নবীগণের ওয়াসিলায় তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন... । তাখরিজ: আল মু’জামুল কাবীর তবারানী: ২৪/৩৫৯, হা. নং ৮৭১; আল মু’জামুল আওসাত তবারানী: ১/৬৭, হা. নং ১৮৯
ব্যাখ্যা: এ হাদিসে স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পূর্ববর্তী নবীগণের ওয়াসিলা দিয়ে দু‘আ করেছেন, যারা দুনিয়া থেকে অনেক পূর্বেই ইন্তেকাল করে গেছেন।
হাদিস/আসার -০২
حديث مالك الدار: قَالَ أَصَابَ النَّاسَ قَحْطٌ فِي زَمَنِ عُمَرَ فَجَاءَ رَجُلٌ إِلَى قَبْرِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اسْتَسْقِ لِأُمَّتِكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ هَلَكُوا...ألخ
أخرجه البيهقى و بطريقه أخرجه التقى السبكى فى شفاء السقاح وأخرجه البخارى فى تاريخه بطريق أبى صالح ذكوان، وأخرجه ابن خيثمة، أخرجه أيضا ابن أبى شيبة باسناد صحيح كما نص عليه ابن حجر
অর্থ: ‘মালেক আদ্দার রা. থেকে বর্ণিত, উমর বিন খাত্তাব রা.-এর খিলাফতকালে মুসলমানগণ বৃষ্টি খরার শিকার হয়েছিলো। একব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কবরের নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলার কাছে উম্মতের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন, তারা-তো বৃষ্টি খরায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে...।’ (ফাতহুল বারী: ২/৬১১)
ব্যাখ্যা: হাদীস বিশারদদের ইমাম ইবনে হাজার রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে তার ইন্তেকালের পর বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়েছে। প্রার্থনাকারী ছিলো বিলাল বিন হারেস। কোনো সাহাবী থেকে এ কাজের বিরোধিতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুতরাং তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতিকে অস্বীকার করা কুরআন-হাদীস অস্বীকার করার নামান্তর।
প্রশ্ন: গ। শায়েখ ইবনে তায়মিয়া রহ যে নাজায়েজ বলেছেন এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর: গ। এ সম্পর্কে বিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলেছেন, আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. যে তাওয়াসসুলকে না-জায়িয বলেছেন সেটা হলো:
التوسل بمعنى الاقسام على الله بغير أسمائه
‘তাওয়াসসুল অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো নামে কসম দিয়ে দু‘আ করা’। আর এ প্রকারের তাওয়াসসুলকে আমরাও না-জায়িয বলি। কিন্তু তাওয়াসসুল যদি উক্ত পদ্ধতিতে না হয় তাহলে সেটা জায়িয হবে। ফায়যুল বারী: ৩/১০৫
উদাহরণ: কোনো বুযূর্গের কবরে গিয়ে তার কাছে অনুরোধ করা যে, ‘তিনি যেনো তার জন্য আল্লাহর কাছে তার কোনো প্রয়োজন পূরণের দু‘আ করেন’- তাওয়াসসুলের এ পদ্ধতিটিও না-জায়িয। সূত্র: ইখতিলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম: পৃ. ৪৯-৬০
সারকথা হলো, হজরত থানভি রহ বলেন, والثالث دعاء الله ببركاته هذا المخلوق المقبول وهذا قد جوزه الجمهور الخ তথা তাওয়াসসুলের তৃতীয় পদ্ধতি হল, কোন মকবুল বান্দার বরকতের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আর জমহুর ওলামাগণ এটাকে জায়েজ বলেছেন। সূত্র: বাওয়াদেরুন নাওয়াদের-৭৬১
সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে, দু'আ করার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসিলা চাওয়া বা তার ওসিলায় দু'আ কবুল করুন বলা শরি'আত সম্মত, অসুবিধা নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক