জিজ্ঞাসা-১২৬০৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
একজন জানতে চেয়েছিলেন, একজনের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল থেকে অল্প পরিমাণে সবসময় রক্ত পড়তেই থাকে, সেক্ষেত্রে তার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি কি হবে❓ উল্লেখ্য বেশি পরিমাণে রক্ত আসে না জন্য তিনি চাচ্ছেন bandage না লাগিয়েই থাকার জন্য, সেক্ষেত্রে বিধান কি❓
একই ব্যক্তির হঠাৎ হঠাৎ দাঁত দিয়ে হাল্কা পরিমাণে রক্ত আসে কিন্তু মুখ ভর্তি হয় না, সেক্ষেত্রে নামাজের কোন ক্ষতি হবে কি না ❓
তারিখ: ২৯/০৫/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য দুইটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। অনবরত রক্ত বের হলে পবিত্রতা হওয়ার উপায় কি?
উত্তর: ক। অনবরত রক্ত বের হলে শরীয়তের দৃষ্টিতে উক্ত ব্যক্তি মাজুর হিসেবে গণ্য হবে। আর মাজুর ব্যক্তির জন্য পবিত্রতার বিধান হল প্রত্যেক ওয়াক্তে অজু করতে হবে অর্থাৎ এক অজু দিয়ে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারবে।
ফিকহি হানাফী নিচের হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেছেন:
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِي حُبَيْشٍ إِلَى النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي امْرَأَةٌ أُسْتَحَاضُ فَلاَ أَطْهُرُ أَفَأَدَعُ الصَّلاَةَ قَالَ " لاَ إِنَّمَا ذَلِكَ عِرْقٌ وَلَيْسَ بِالْحَيْضَةِ اجْتَنِبِي الصَّلاَةَ أَيَّامَ مَحِيضِكِ ثُمَّ اغْتَسِلِي وَتَوَضَّئِي لِكُلِّ صَلاَةٍ وَإِنْ قَطَرَ الدَّمُ عَلَى الْحَصِيرِ " .
'আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা ফাতিমা বিনতে আবু হুবায়শ (রাযিঃ) নবী (ﷺ)-এর কাছে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি এমন এক মহিলা যার ইস্তিহাযা লেগেই থাকে এবং কখনো পবিত্র হই না। আমি কি সালাত ছেড়ে দেব? তিনি বললেনঃ না। বরং এতো এক প্রকার শিরাজনিত রোগ, এ হায়যের রক্ত নয়। তুমি তোমার হায়যের ইদ্দতকালীন সময়ে সালাত থেকে বিরত থাকবে। এরপর গোসল করবে এবং প্রত্যেক সালাতের জন্য উযূ করে নেবে যদিও সালাতের পাটিতে রক্ত ঝরে পড়ে।
হাদীসের ব্যখ্যা:
হায়েয বা নিফাস ব্যতীত কোন রোগের কারণে মহিলাদের যে রক্ত দেখা যায় তাকে ইস্তিহাযা বলে। এ হাদীসে ইস্তিহাযা রোগে আক্রান্ত মহিলার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য নতুন করে অযু করবে। এ বিধানটি শুধু ইস্তিহাযা রোগে আক্রান্ত মহিলার জন্যই নয়। বরং শরীর হতে সার্বক্ষণিক নাপাক বের হতে থাকা যে কোন মা’জুর তথা রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্যই এটা প্রযোজ্য হবে। (শামী: ১/৩০৬)
—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ৬২৪ (আন্তর্জাতিক নং ৬২৪)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ব্যান্ডেজ রাখা বা রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। প্রয়োজন না হলে ব্যান্ডেজ রাখা যাবে না। এতে ওযু পানি পৌছতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যে কারণে অজু হবে না।
প্রশ্ন: খ। নামাজের মধ্যে দাঁত দিয়ে রক্ত আসলে নামাজ ভঙ্গ হবে কি?
উত্তর: খ। থুতুর সাথে রক্তের পরিমাণ বেশি হলে ওযু ভেঙ্গে যাবে এবং নামাজটি পুনরায় আদায় করতে হবে আর যদি রক্তের পরিমাণ কম থাকে তাহলে নামাজটি পুনরায় পড়তে হবে না।
দলিল:
عَنْ إِبْرَاهِيمَ فِي الرَّجُلِ يَبْزُقُ فَيَكُونُ فِي بُزَاقِهِ الدَّمُ، قَالَ: «إِذَا غَلَبَتِ الْحُمْرَةُ الْبَيَاضَ تَوَضَّأَ، وَإِذَا غَلَبَ الْبَيَاضُ الْحُمْرَةَ لَمْ يَتَوَضَّأْ
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি থুথু ফেললো, তখন সে তার থুথুতে রক্ত দেখলো, তাহলে যদি লাল বর্ণ শুভ্রতার উপর প্রাধান্য দেখে, তাহলে অজু করবে। আর যদি শুভ্রতা লাল বর্ণের উপর প্রাধান্য দেখতে পায়, তাহলে অজু করতে হবে না। তাখরিজ: মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩৩২
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে উক্ত ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের সময় ওযু করবে এবং প্রয়োজন না হলে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলবে। আর নামাজের মধ্যে দাঁত দিয়ে রক্তের পরিমাণ বেশি হলে নামাজ পুনরায় আদায় করবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক