আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩২২৮: বাম হাতের উপর ভর বসার হুকুম কী

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১৩২২৮: 

আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত মুফতিয়ানে কেরামের নিকট জানার বিষয় হলো, আমরা অনেক সময় নামাজ শেষ করে বা অন্য সময়েও বাম হাতের উপর ভর করে ( ঠেক লাগিয়ে) বসে তাসবীহ তাহলিল পাঠ করি।  এভাবে বাম হাতের উপর ভর করে বসা জায়েজ আছে কিনা??  জানালে উপকৃত হতাম।

তারিখ:১৯/০৪/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা শফিউল ইসলাম সিরাজগঞ্জ থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, বাম হাতের উপর ভর করে বসা আহলে এলেমগণ মাকরুহ বলেছেন। দলিল- 


باب فِي الْجِلْسَةِ الْمَكْرُوهَةِ

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ بَحْرٍ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ، عَنْ أَبِيهِ الشَّرِيدِ بْنِ سُوَيْدٍ، قَالَ مَرَّ بِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا جَالِسٌ هَكَذَا وَقَدْ وَضَعْتُ يَدِيَ الْيُسْرَى خَلْفَ ظَهْرِي وَاتَّكَأْتُ عَلَى أَلْيَةِ يَدِي فَقَالَ " أَتَقْعُدُ قِعْدَةَ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ " .

২৬. দৃষ্টিকটু অবস্থায় বসা

৪৭৭৩. আলী ইবনে বাহর (রাহঃ) .... শারীদ ইবনে সুওয়াদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে এমন অবস্থায় উপবিষ্ট দেখেন যে, আমি আমার বাম-হাত পিঠের দিকে রেখে নিতম্বের উপর ভর দিয়ে বসে আছি। তখন তিনি বলেনঃ তুমি তাদের মত বসেছ, যাদের উপর মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট।


’Amr b. al-Sharid quoted his father al-Sharid b. Suwaid as saying:

The Messenger of Allah (ﷺ) came upon me when I was sitting thus: having my left hand behind my back and leaning on the fleshy part of it, and said: Are you sitting in the manner of those with whom Allah is angry?

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৭৩ (আন্তর্জাতিক নং ৪৮৪৮)


হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে বসার একটি বিশেষ ভঙ্গিকে অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের বসার ভঙ্গি সাব্যস্ত করা হয়েছে। হযরত শারীদ রাযি. কে সে ভঙ্গিতে বসা দেখে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে তিরস্কার করেন যে, কেন তিনি অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের বসার মতো করে বসেছেন। ভঙ্গিটি ছিল এরকম যে, তিনি তাঁর বাম হাত পিঠের সঙ্গে লাগিয়ে রেখে ডান হাতের মাংসল স্থানে ভর করে বসা ছিলেন।


অভিশপ্ত সম্প্রদায় বলে ইহুদিদের বোঝানো হয়েছে। সূরা ফাতিহার শেষে যে আছে- 

غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

(তাদের পথে নয়, যারা অভিশপ্ত এবং যারা পথভ্রষ্ট), হাদীছে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, অভিশপ্ত হল ইহুদি সম্প্রদায় আর পথভ্রষ্ট খ্রিষ্ট সম্প্রদায়। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে ইহুদি জাতির প্রতি আল্লাহ তা'আলার লা'নত ও অভিশাপ বর্ষণের কথা জানানো হয়েছে। কাজেই আলোচ্য হাদীছে অভিশপ্ত জাতি বলতে ইহুদি জাতিকেই বোঝানো হবে। তারা যেহেতু এ ভঙ্গিতে বসত, তাই আমাদেরকে এভাবে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

যে ব্যক্তি কোনও সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন (অনুকরণ) করে, সে সেই সম্প্রদায়ের একজন। 

(সুনানে আবূ দাউদ: ৪০৩১; মুসনাদে আহমাদ: ৫১১৫; মুসনাদুল বাযযার: ৮৬০৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার : ২৩১; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৮৩২৭; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ১১৫৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৯৪০১; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ : ২০৯৮৬; সুনানে সা'ঈদ ইবন মানসূর: ২৩৭০;)


এতে সতর্ক করা হয়েছে আমরা যেন আমাদের কাজকর্ম, ভাবভঙ্গি, ধরন-ধারণ তথা কোনওকিছুতেই অন্য কোনও সম্প্রদায়ের অনুকরণ না করি। আমাদের রয়েছে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতই আমাদের মর্যাদাপূর্ণ সংস্কৃতি। তাই কোনওকিছুতেই অন্য কোনও সম্প্রদায়ের অনুকরণ করার প্রয়োজন আমাদের নেই। ইহুদি সম্প্রদায় যেহেতু অভিশপ্ত জাতি, তাই তাদের অনুকরণ অধিকতর নিন্দনীয় হবে। এজন্যই তাদের মতো করে বসায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত শারীদ রাযি.-কে তিরস্কার করেছেন।


হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ 

ক. বসার ভঙ্গিসহ কোনওকিছুতেই অন্য কোনও জাতির অনুকরণ করা যাবে না। ইহুদি সম্প্রদায়ের অনুসরণ অধিকতর নিন্দনীয়।

খ. আমরা সবকিছুতেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করে চলব।

রেফারেন্স: ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


প্রশ্ন: ১। ডান বা উভয় হাতের উপর ভর বসার হুকুম কি একই?

উত্তর: ২। রাতের উপর ঠেস লাগিয়ে বসা শুধু বাম হাতের জন্য খাস, অন্য হাতের জন্য নয়। যেমন-

এবিষয়ে শায়েখ উসাইমিন রহ কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন,


ومنهم من خص المنع باليد اليسرى، قال الشيخ ابن عثيمين -رحمه الله تعالى-: الاتكاء على اليدين من الخلف لا بأس به إذا كانت اليدان كلتاهما، أما إذا كانت اليمنى فلا بأس أيضًا، أما الاتكاء على اليسرى على بطنها، فقد ورد أن هذه جلسة المغضوب عليهم. اهـ.

অর্থাৎ উভয় হাতের উপর বসতে সমস্যা নেই, যখন দুই হাত হবে। আর শুধু ডান হাতের উপর ভর করে বসতেও অসুবিধা নেই। শুধুমাত্র বাম হাতের উপর বসা নিষেধ, যেমনটি বর্ণিত হয়েছে। নিশ্চয়ই এই রকম বসা অভিশাপ্ত তথা ইয়াহুদিরা বসে।


সারকথা হলো,  বাম হাতের উপর ভর করে বসা ইয়াহুদিদের সাথে মিলে যায়, তাই এ রকম বসা নিষেধ তথা মাকরুহ। তবে কেউ যদি শারীরিক সমস্যার কারণে বসতে বাধ্য হয়, তাহলে অসুবিধা নেই।



  والله اعلم بالصواب