আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩২৩০: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনকাম সোর্স কি ছিল ? ধন্য

No Comments


 


জিজ্ঞাসা-১৩২৩০: 

আসসালামু আলাইকুম। জানার ইচ্ছা -

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনকাম সোর্স কি ছিল ? ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইলো

তারিখ:২০/০৪/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  নূরে আলম সিদ্দিকী থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীকে দুভাগে ভাগ করা যায়। 

১। নবুয়াতের পূর্বে 

২। নবুয়াতের পরে 


১। নবুয়াতের পূর্বের জীবন উপার্জনের মাধ্যম:  এ জীবনে উপার্জনের মাধ্যম ছিল ছাগল চড়ানো এবং ব্যবসা। দলিল- 

 ما بعثَ اللهُ نبيًا إلا ورعى الغنمَ قالوا : وأنت يا رسولَ اللهِ ؟ قالَ : نعم كنتُ أرعاها على قراريطَ لأهلِ مكة 

অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যত নবি রাসূল পাঠিয়েছেন সকলে ছাগল চরিয়েছেন। সাহাবিগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল আপনিও কি চরিয়েছেন ? তখন রাসুল (ﷺ) বললেন হ্যাঁ! আমি কয়েক কেরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরিয়েছি (শ্রম খেটেছি)। বুখারি-২০৭২


وَالْعِشْرِينَ مِنْ سِنِّهِ خَرَجَ تَاجِرًا إِلَى الشَّامِ فِي مَالِ خَدِيجَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا. قَالَ اِبْنُ إِسْحَاقَ: كَانَتْ خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ اِمْرَأَةً تَاجِرَةً ذَاتَ شَرَفٍ وَمَالٍ، تَسْتَأْجِرُ الرِّجَالَ فِي مَالِهَا وَتُضَارِبُهُمْ إِيَّاهُ بِشَيْءٍ تَجْعَلُهُ لَهُمْ....فَلَمَّا بَلَغَهَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا بَلَغَهَا مِنْ صِدْقِ حَدِيثِهِ وَعِظَمِ أمَانَتِهِ وَكَرَمِ أخْلاَقِهِ بَعَثَتْ إِلَيهِ، فَعَرَضَتْ عَلَيْهِ أَنْ يَخْرُجَ فِي مَالٍ لَهَا إِلَى الشَّامِ تَاجِرًا، وَتُعْطِيَهُ أفْضَلَ مَا كَانَتْ تُعْطِي غَيْرَهُ مِنَ التُّجَّارِ».

[الرحيق المختوم للمباركفوري ص:50 - 51 بتصرف].

অর্থাৎ ২০ বছর বয়সে তিনি খাদিযা (রাযি) এর সম্পত্তি নিয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়া গমন করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক ( রাহি.) বলেন: খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ ( রাযি.) ছিলেন অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও প্রচুর সম্পদশালী ব্যবসায়ী ছিলেন। নিজের সম্পদ বিনিয়োগ করার জন্য তিনি লোকদেরকে নিয়োগ দিতেন। এবং তাদের শ্রমের বিনময়ে নিজের পুঁজিকে বর্ধিত করতেন। যখন তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সততা, আমানতদারিতা ও চারিত্রিক মাধুর্যতার কথা শুনতে পেলেন, তখন তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন। এবং তাকে এই বলে প্রস্তাব করলেন যে, তিনি খাদীজা ( রাযি.) এর প্রতিনিধি হয়ে সিরিয়াতে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাবেন। এবং অন্য সকল ব্যবসায়ীর চাইতেও বেশী পরিমাণে পারিশ্রমিক তিনি তাঁর জন্য ধার্য করবেন। (  পরিমার্জিত, আর-রাহিকুল মাখতুম; মুবারকপুরী; ৫০-৫১)


২। নবুয়াতের পরের জীবন উপার্জনের মাধ্যম: মুসলমানদের হাদিয়া, মাঝে মাঝে অমুসলিমদের হাদিয়ার মাল, গণিমত-ফাই থেকে প্রাপ্ত সম্পদ। দলিল- 

আয়াত নং-০১ 

Surah Al-Anfal, Verse 1:

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنفَالِ قُلِ الْأَنفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। সূরা আনফাল-০১


আয়াত নং-০২ 

وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَا غَنِمۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَ لِلرَّسُوۡلِ وَ لِذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ اِنۡ کُنۡتُمۡ اٰمَنۡتُمۡ بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلٰی عَبۡدِنَا یَوۡمَ الۡفُرۡقَانِ یَوۡمَ الۡتَقَی الۡجَمۡعٰنِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

‘আর জেনে রেখ! যুদ্ধে যা কিছু তোমরা (গনিমত হিসেবে) লাভ কর, তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রাসুলের, রাসুলের নিকটাত্মীয়, পিতৃহীন এতিম, দরিদ্র এবং পথচারীদের জন্য। যদি তোমরা আল্লাহ ও সেই জিনিসে বিশ্বাসী হও, যা ফয়সালার দিন (বদর প্রান্তরে) আমি আমার বান্দার প্রতি নাজিল করেছিলাম; যেদিন দু’দল (মুসলিম ও কাফের) পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল। আর আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।’ (সুরা আনফাল: আয়াত ৪১)


হাদিস নং-০১

1825 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ مَسْعُودٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ الصَّعْبِ بْنِ جَثَّامَةَ اللَّيْثِيِّ، أَنَّهُ أَهْدَى لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِمَارًا وَحْشِيًّا، وَهُوَ بِالأَبْوَاءِ، أَوْ بِوَدَّانَ، فَرَدَّهُ عَلَيْهِ، فَلَمَّا رَأَى مَا فِي وَجْهِهِ قَالَ: «إِنَّا لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلَّا أَنَّا حُرُمٌ»

১৭০৮। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... সা’ব ইবনে জাসসামা লায়সী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আবওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থানকালে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে একটি জংলী গাধা হাদিয়া দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর নবী (ﷺ) তাঁর চেহারায় মলিনতা লক্ষ্য করে বললেনঃ তা আমি কখনো তোমার নিকট ফিরিয়ে দিতাম না যদি আমি মুহরিম না হতাম।


Narrated `Abdullah bin `Abbas:

From As-Sa’b bin Jath-thama Al-Laithi that the latter presented an onager to Allah’s Messenger (ﷺ) while he was at Al-Abwa’ or at Waddan, and he refused it. On noticing the signs of some unpleasant feeling of disappointment on his (As-Sab’s) face, the Prophet (ﷺ) said to him, "I have only returned it because I am Muhrim."


সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭০৮ (আন্তর্জাতিক নং ১৮২৫)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফরে ছিলেন। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হযরত সা'ব ইবন জাছ্ছামা রাযি. একটি বন্য গাধা, সম্ভবত জেব্রা, তাঁকে হাদিয়া দিলেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় সেটি জবাই করা ছিল এবং তিনি তার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে তা গ্রহণ করলেন না। এতে হযরত সা'ব রাযি. দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তবে কি কোনও কারণে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি নারাজ? না হয় তার হাদিয়া ফেরত দিলেন কেন? খুবসম্ভব তখনও পর্যন্ত তার এ মাসআলা জানা ছিল না যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা কিংবা শিকারের কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নয়। এমনিভাবে এভাবে পশু শিকার করে তার গোশত খাওয়াও তার জন্য হালাল নয়।


হাদিস নং-০২ 

باب قَبُولِ الْهَدِيَّةِ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " هَاجَرَ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بِسَارَةَ، فَدَخَلَ قَرْيَةً فِيهَا مَلِكٌ أَوْ جَبَّارٌ، فَقَالَ: أَعْطُوهَا آجَرَ " وَأُهْدِيَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سُمٌّ وَقَالَ أَبُو حُمَيْدٍ: أَهْدَى مَلِكُ أَيْلَةَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَغْلَةً بَيْضَاءَ، وَكَسَاهُ بُرْدًا، وَكَتَبَ لَهُ بِبَحْرِهِمْ

১৬৩২. মুশরিকদের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা। আবু হুরাইরা (রাযিঃ) নবী (ﷺ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) (স্ত্রী) সারাকে নিয়ে হিজরতকালে এমন এক জনপদে উপস্থিত হলেন, যেখানে ছিল এক বাদশাহ অথবা রাবী বলেন, প্রতাপশালী শাসক। সে বলল, সারার কাছে উপহার স্বরূপ হাজিরাকে দিয়ে দাও। নবী (ﷺ)কে বিষ মিশানো বকরীর গোশত হাদিয়া দেয়া হয়েছিল। আবু হুমাইদ (রাহঃ) বলেন, আয়েলার শাসক নবী (ﷺ)কে একটি সাদা খচ্চর উপহার দিয়েছিলেন, প্রতিদানে তিনি তাকে একটি চাদর দিয়েছিলেন আর সেখানকার শাসক হিসাবে তাকে নিয়োগ পত্র লিখে দিয়েছিলেন।

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪০ (আন্তর্জাতিক নং ২৬১৫-২৬১৬)


সারকথা হলো,  ব্যবসা, মজুরি, হাদিয়া ও গণিমত-ফাই থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইনকাম সোর্স।



  والله اعلم بالصواب