জিজ্ঞাসা-১২৪৫৩:
আসসালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম,
হাদিয়া কাকে বলে, হাদিয়া ও ঘুষের মধ্যে পার্থক্য কি? কুরআন সুন্নাহ আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো। জাযাকাল্লাহু খয়রান। তারিখ: ০১/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ মফিদুল ইসলাম ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
প্রশ্ন: ক। হাদিয়া কাকে বলে?
উত্তর: ক। হাদিয়া আরবি শব্দ, বাংলায় এর প্রতিশব্দ হচ্ছে উপঢৌকন, উপহার, অর্পিত, নিবেদিত, সংগৃহীত
আহুত আর ইংরেজিতে প্রতিশব্দ হচ্ছে Gift, donation, present, presentation,contribution, offering, freebie, prize, donative.
হাদিয়া হল যা অন্য কাউকে খুশি করা এবং তার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ভালো প্রকাশ করার জন্য দেয়া হয়। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকে।
কুরআন- হাদিসের আলোকে হাদিয়া:
وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ
অর্থ: আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। সূরা বাকারা-১৭৭
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، (عَنْ أَبِيهِ،) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا، وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ ".
আসিম ইবনু আলী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনী (প্রদত্ত হাদিয়া) তুচ্ছ মনে না করে, এমন কি স্বল্প গোশত বিশিষ্ট বকরীর হাঁড় হলেও। তাখরিজ: বুখারি আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৬
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ’আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত।তাখরিজ: বুখারি,আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৪
প্রশ্ন: খ। হারাম টাকার হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ আছে কি?
উত্তর: খ। হারাম টাকার হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নেই। সন্দেহ হলে তাহকীক করে নিবে। না জেনে গ্রহণ করলে পরে জানলে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবে। যদি জানা না যায়, তাহলে গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই।
দলিল:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَوْ دُعِيتُ إِلَى ذِرَاعٍ أَوْ كُرَاعٍ لأَجَبْتُ، وَلَوْ أُهْدِيَ إِلَىَّ ذِرَاعٌ أَوْ كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমাকে হালাল পশুর পায়া বা হাতা খেতে আহবান করা হয়, তবু তা আমি গ্রহণ করব আর যদি আমাকে পায়া বা হাতা হাদিয়া দেওয়া হয়, তবে আমি তা গ্রহণ করব। তাখরিজ: বুখারি আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৮
فى الفتاوى الهندية– أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، كتاب الكراهية-5/342، رد المحتار-6/247
প্রশ্ন: গ। হাদিয়া দাতার আয়ের উৎস হারাম হলে করণীয় কি?
উত্তর: গ। হাদিয়া দাতার আয়ের সব উৎস হারাম হলে তার হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েজ নয়। যদি তার বেশির ভাগ আয় হারাম হয় এবং সে হাদিয়া দেয়ার সময় উল্লেখ না করে যে হালাল আয় থেকে দিচ্ছে না হারাম আয় থেকে, তাহলেও তা গ্রহণ করা জায়েজ নয়। যদি স্পষ্ট উল্লেখ করে যে এ হাদিয়া হালাল আয় থেকে, তাহলে তা গ্রহণ করার অবকাশ আছে। যদি বেশির ভাগ আয় হালাল হয়, তাহলে হালাল-হারাম স্পষ্ট না করলেও হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েজ আছে। তবে বেশির ভাগ আয় হালাল— এমন ব্যক্তির হাদিয়ার ব্যাপারে যদি জানা যায় যে হাদিয়া হারাম আয় থেকে দিচ্ছে তাহলে তা গ্রহণ করা বৈধ নয়। সূত্র: ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/২৪২-৪
প্রশ্ন: ঘ। হাদিয়া ও ঘুষের পার্থক্য কি?
উত্তর: ঘ। হাদিয়া ও ঘুসের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। হাদিয়া দেয়ার নিয়তের মধ্যে পারস্পরিক মহব্বত থাকে। পার্থিব কোনো স্বার্থ হাসিল বা কোনোরূপ সাহায্য পাওয়ার আশা থাকে না। পক্ষান্তরে ঘুষ দেয়ার উদ্দেশ্য হয় কোনো স্বার্থ হাসিল করা বা সাহায্য পাওয়া। সাধারণত কর্তব্যরত কোনো ব্যক্তির কাছে থেকে কাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিছু দেয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। যেমন হাদিসে শরিফে এসেছে-
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ اسْتَعْمَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً مِنَ الأَزْدِ يُقَالُ لَهُ ابْنُ اللُّتْبِيَّةِ عَلَى الصَّدَقَةِ، فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ هَذَا لَكُمْ، وَهَذَا أُهْدِيَ لِي. قَالَ " فَهَلاَّ جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ بَيْتِ أُمِّهِ، فَيَنْظُرَ يُهْدَى لَهُ أَمْ لاَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْهُ شَيْئًا إِلاَّ جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى رَقَبَتِهِ، إِنْ كَانَ بَعِيرًا لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ أَوْ شَاةً تَيْعَرُ ـ ثُمَّ رَفَعَ بِيَدِهِ، حَتَّى رَأَيْنَا عُفْرَةَ إِبْطَيْهِ ـ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ ثَلاَثًا ".
আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ... আবু হুমায়দ সাঈদী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) আযদ গোত্রের ইবনে লুত্বিয়া নামক এক ব্যক্তিকে (সাদ্কা সংগ্রহের কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের (অর্থাৎ সাদ্কার মাল) আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে তার বাবার ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে কেন বসে থাকল না? তখন সে দেখত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয়া কিনা? যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সাদ্কার মাল থেকে সামান্য পরিমাণও যে আত্মসাৎ করবে, সে তা কাঁধে করে কিয়ামতের দিন হাযির হবে। সে মাল যদি উট হয় তাহলে তা তার আওয়াজে, আর যদি গাভী হয় তাহলে হাম্বা হাম্বা রবে আর বকরী হয় তাহলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ রবে (আওয়াজ করতে থাকবে)। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার দু’হাত এতটুকু উত্তোলন করলেন যে, আমরা তার উভয় বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি তিন বার বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌছে দিয়েছি। হে আল্লাহ্ আমি কি পৌছে দিয়েছি? তাখরিজ: বুখারি, আন্তর্জাতিক নং ২৫৯৭
والله اعلم بالصواب