জিজ্ঞাসা-১২৪৬৬:
আসসালামু আলাইকুম। একটা প্রশ্নের জবাব দরকার। ইনশাআল্লাহ পাবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি মিরাজে যাওয়ার সময় নবী (আ) গণকে নিয়ে যে দূ রাকাত সালাত আদায় করছিলেন তার কেবলা কোন দিকে ছিল। তারিখ: ১৪/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাঃ শামছুল হুদা আনছারী চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মিরাজের রজনীতে উত্তর -দক্ষিণ,পূর্ব- পশ্চিম কোন দিকে নামাজ পড়েছেন এরকম কোন নস নেই। আর স্বয়ং কাবা/বায়তুল মুকাদ্দাস এর ভেতরে নামাজ আদায় করলে কোন দিক ফিরে নামাজ আদায় করা জরুরি নয়। বিস্তারিত সামনে আসছে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবা ঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর, তদীয় পুত্র হজরত ইসহাক (আ.)–এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে আল আকসা মসজিদটি নির্মাণ করেন।
عن أبي ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْه، قال: ((قلتُ: يا رسولَ الله، أيُّ مسجدٍ وُضِعَ في الأرض أوَّلُ؟ قال: المسجدُ الحرامُ، قال: قلتُ: ثم أيُّ؟ قال: المسجدُ الأقصى، قلتُ: كم كان بينهما؟ قال: أَرْبَعُونَ سَنةً، ثم أينما أدركتْك الصَّلاةُ بعدُ فَصلِّهْ؛ فإنَّ الفضلَ فيه ))
অর্থাৎ কাবার ৪০ বছর পর বায়তুল মুকাদ্দাসকে তৈরি করা হয়েছে। তাখরিজ: বুখারি-৩৩৬৬; মুসলিম-৫২০
অতঃপর তদীয় পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)–এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)–এর সন্তান হজরত সুলাইমান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, অনেক নবির কাবা হলো বায়তুল মুকাদ্দাস এবং হিজরতের পর ১৬ মাস বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন।
তৃতীয় কথা হলো,
القِبلة في اللغة هي الجهة، أمّا في الاصطلاح فهي الوجهة التي يستقبلها المسلمون في صلاتهم، وهي الكعبة المشرّفة،[١]
অর্থাৎ কেবলা শব্দের অর্থ হল দিক। পরিভাষা বলা হয়, মুসলমানগণ তাদের নামাজের সময় যে দিক করে সালাত আদায় করেন। সূত্র: আলমাআনি
চতুর্থ কথা হলো,
বায়তুল হারাম বা বায়তুল মুকাদ্দাস এর এর বাইরে সালাত আদায় করলে, কিবলাকে সামনে রাখতে হবে।
তবে কেউ যদি কাবা বা বায়তুল মোকাদ্দাস এর ভেতরে নামাজ আদায় করে, তাহলে তার জন্য কোন দিক শর্ত নাই, যেদিকে ইচ্ছা সেদিক করে আদায় করতে পারবে।
দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ الْكَعْبَةَ وَأُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ وَبِلاَلٌ وَعُثْمَانُ بْنُ طَلْحَةَ الْحَجَبِيُّ فَأَغْلَقَهَا عَلَيْهِ وَمَكَثَ فِيهَا، فَسَأَلْتُ بِلاَلاً حِينَ خَرَجَ مَا صَنَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ جَعَلَ عَمُودًا عَنْ يَسَارِهِ، وَعَمُودًا عَنْ يَمِينِهِ، وَثَلاَثَةَ أَعْمِدَةٍ وَرَاءَهُ، وَكَانَ الْبَيْتُ يَوْمَئِذٍ عَلَى سِتَّةِ أَعْمِدَةٍ، ثُمَّ صَلَّى. وَقَالَ لَنَا إِسْمَاعِيلُ حَدَّثَنِي مَالِكٌ وَقَالَ عَمُودَيْنِ عَنْ يَمِينِهِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আর উসামা ইবনে যায়েদ, বিলাল এবং উসমান ইবনে তালহা হাজাবী (রাযিঃ) কাবায় প্রবেশ করলেন। নবী (ﷺ) এর প্রবেশের সাথে সাথে উসমান (রাযিঃ) কাবার দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ ভিতরে ছিলেন। বিলাল (রাযিঃ) বের হলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ নবী (ﷺ) কি করলেন? তিনি জওয়াব দিলেনঃ একটা স্তম্ভ বামদিকে, আর স্তম্ভ ডানদিকে আর তিনটা স্তম্ভ পেছনে রাখলেন। আর তখন বায়তুল্লাহ ছিল ছয় স্তম্ভ বিশিষ্ট। তারপর তিনি নামায আদায় করলেন। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮১ (আন্তর্জাতিক নং ৫০৫)
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ইমাম নববি রহ. বলেন,
وقال النووي : ... وإذا صلى في الكعبة فله أن يستقبل أي جدار شاء، وله أن يستقبل الباب إن كان مردوداً أو مفتوحاً، وله عتبة قدر ثلثي ذراع تقريباً.
অর্থাৎ যদি সে কাবাতে নামাজ পড়ে, তবে সে তার ইচ্ছামত যে কোন দেয়ালের মুখোমুখি হতে পারে, এবং দরজাটি ফিরিয়ে বা খোলা থাকলে সে তার মুখোমুখি হতে পারে এবং তার প্রায় একটি প্রান্তিক এক হাতের দুই-তৃতীয়াংশ। সূত্র: কিবলাতুল মসল্লি দাখিলুল কাবা, ফতোয়া নং -২৯২৭১
পঞ্চম কথা হলো, বাইতুল মুকাদ্দাস যেহেতু নিজেই কাবা তাই তার ভেতরে কেউ আমার আদায় করলে, কোন দিকে বা বায়তুল হারামের দিকে ফিরে সালাত আদায় করা জরুরি নয়। যেদিকে ইচ্ছা সেদিক করে আদায় করতে পারবে। যেমন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ( أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ، قَالَ: فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ قَالَ فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِها الْأَنْبِيَاءُ، قَالَ: ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ
আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা, গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে তার পা রাখে, তিনি বলেন: আমি তাতে সওয়ার হলাম, অবশেষে আমাকে বায়তুল মাকদিস নিয়ে আসা হল, তিনি বলেন: আমি তাকে সে খুঁটির সাথে বাঁধলাম যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করি, তাতে দু’রাকাত সালাত আদায় করি, অতঃপর বের হই। তাখরিজ: মুসলিম -৯৯
উপরোক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসের ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন। সুতরাং তার জন্য জরুরী ছিল না কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা।
والله اعلم بالصواب