আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৪৪২: আল্লাহ ছাড়া অপর কারও কাছে সাহায্য চাওয়া কি জায়েয ? সব চাওয়া কি শিরক ? কুরআন সুন্নাহ আলোকে সমাধান কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৪৪২:

সম্মানিত মুফতি সাহেব আসসালামু আলাইকুম আমার প্রশ্ন হল اياك نعبد واياك نستعين (আমরা একমাত্র আপনার ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনার সাহায্য প্রার্থনা করি) এখানে কোন ধরনের সাহায্য প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে? আমরা তো মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য প্রার্থনা করে থাকি। তাহলে এটা বৈধ হচ্ছে কিনা? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান ওয়া আহসানাল জাযা।  তারিখ: ২৫/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি

 মাওলানা  আনোয়ার হোসেন সিলেট থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, মহান আল্লাহ এখানে مفعول (কর্মপদকে) فعل (ক্রিয়াপদ)-এর আগে এনে [إيَاكَ نَعْبُدَ وَإيَاكَ نَسْتَعِيْنُ] বলেছেন। আর এর উদ্দেশ্য বিশেষত্ব সৃষ্টি করা। ( আরবি ব্যকরণে مفعول কে  পূর্বে আনা  করা হলে বিশেষত্বের অর্থ দিয়ে থাকে, হসর বা সীমাবদ্ধতার অর্থ দিবে।) সুতরাং এর অর্থ হবে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং কেবল তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ এখানে স্পষ্ট যে, ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য জায়েয নয়, যেমন সাহায্য কামনা করাও তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে বৈধ নয়।দ্বিতীয় কথা হলো, ইস্তিআনা" ক্রিয়াটির অর্থ হলো, সাহায্য কামনা করা। ক্ষমতা দুই প্রকার। 


প্রথম প্রকার:  যে সকল বিষয় বাস্তবায়নের নিরংকুশ ও একচ্ছত্র ক্ষমতা রাখেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, সে সকল বিষয় কামনা করে অন্য কারো দ্বারস্থ / শরণাপন্ন হওয়াকে " শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ" বলে। এসকল বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য কামনা করতে হবে, অন্য কারো কাছে নয়। উদাহরণ:

কোন মৃত ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করা, তাকে বিপদ থেকে মুক্তিদাতা এবং প্রয়োজন পূরণকারী মনে করা, তাকে ভাল-মন্দের মালিক ভাবা এবং বিশ্বাস করা যে, সে দূর এবং নিকট থেকে সকলের ফরিয়াদ শোনার ক্ষমতা রাখে। এর নাম হল, অলৌকিক পন্থায় সাহায্য চাওয়া এবং তাকে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করা। আর এরই নাম হল সেই শির্ক।


মাজারে গিয়ে দুআ করার ব্যাপারে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. বলেন-

كل من ذهب إلى بلدة أجمير أو قبر سالار مسعود، أو ما ضاهاها لأجل حاجة يطلبها فإنه آثم إثما أكبر من القتل والزنا، أليس مثله إلا مثل من كان يعبد المصنوعات أو مثل من كان يعبد اللات والعزى.

যারা আজমীর, সালার মাসউদ প্রমুখ বুযুর্গদের মাজারে গিয়ে স্বীয় উদ্দেশ্য ( উক্ত বুযুর্গ এর কাছে সন্তান লাভ, বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করা)  লাভের জন্য প্রার্থনা করে তারা হত্যা ও ব্যভিচারের চাইতে জঘন্য পাপ করে। তাদের উপমা হল ঐ মুশরিকদের ন্যায়, যারা স্বহস্তে বানানো মূর্তির পূজা করে এবং লাত উযযার পূজা করে। -তাফহীমাতে ইলাহিয়্যাহ ২/৪৯


দলিল: 

আয়াত নং-০১

إياك نعبد وإياك تستعين.

অর্থাৎ,  আমরা আপনারই ইবাদাত করি এবং একমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।  সূরা ফাতিহা-০৫


আয়াত নং-০২

Surah Yunus, Verse 106:

وَلَا تَدْعُ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ

আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মন্দও করবে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সূরা ইউনুস -১০৬


হাদিস নং-০১

عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : كُنْتُ خَلْفَ النَّبيِّ ﷺ يَوماً فَقَالَ يَا غُلامُ إنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ : احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَألْتَ فَاسأَلِ الله وإِذَا اسْتَعَنتَ فَاسْتَعَن باللهِ

অর্থ: ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি একদা (সওয়ারীর উপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে (বসে) ছিলাম। তিনি বললেন, ওহে কিশোর! আমি তোমাকে কয়েকটি (গুরুত্বপূর্ণ) কথা (শিক্ষা দেব (তুমি সেগুলো স্মরণ রেখো)। তুমি আল্লাহর (বিধানসমূহের) রক্ষণাবেক্ষণ কর (তাহলে) আল্লাহও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর (অধিকারসমূহ) স্মরণ রাখো, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর।  তাখরিজ:২৫১৬;  মুসনাদে আহমাদ-২৬৬৯


নোট: হাদীসের মান- সহীহ


হাদিস নং-০২

حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، عَنْ أَبِي حَمْزَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم كَلِمَةً وَقُلْتُ أُخْرَى قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ ". وَقُلْتُ أَنَا مَنْ مَاتَ وَهْوَ لاَ يَدْعُو لِلَّهِ نِدًّا دَخَلَ الْجَنَّةَ.

আবদান (রাহঃ) ... আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) একটি কথা বললেন, আর আমি আর একটি বললাম। নবী (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে তাঁর সমকক্ষে স্থাপন করতঃ মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে। আর আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক ও সমকক্ষ স্থাপন না করা অবস্থায় মারা যায়, (তখন তিনি বললেন) সে জান্নাতে যাবে। তাখরিজ: বুখারি-৪৪৯৭



দ্বিতীয় প্রকার:


 যে  বিষয়গুলো আল্লাহ ছাড়া অন্য মানুষও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, এমন কোন বিষয়ে অন্য কারো সাহায্য কামনা করা যেতে পারে। যা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।


আয়াত নং-০১

 [مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللهِ] অর্থাৎ, কারা আছে যারা আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? সূরা আলে ইমরান ৫২ 

নোট: এ আয়াতে কারিমা থেকে বুঝা গেল যে, এ রকম সাহায্য (চাওয়া ও করা) নিষেধও নয় এবং শির্কও নয়। বরং তা বাঞ্ছনীয় ও প্রশংনীয় কাজ।

আল্লাহর নবি হজরত ঈসা (আঃ) সাহায্য চেয়েছেন।


আয়াত নং-০২

 [وَتَعَاوَنُوا عَلَى البِرِّ وَالتَّقْوَى]

 অর্থাৎ, তোমরা নেকী এবং আল্লাহভীতির কাজে একে যঅন্যের সাহায্য কর। (সূরা মায়েদা- ০২


নোট: আর আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনদেরকে ভাল নেক কাজে পরস্পরকে সাহায্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন।


আয়াত নং-০৩

Surah Al-Qasas, Verse 15:

وَدَخَلَ الْمَدِينَةَ عَلَىٰ حِينِ غَفْلَةٍ مِّنْ أَهْلِهَا فَوَجَدَ فِيهَا رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِ هَٰذَا مِن شِيعَتِهِ وَهَٰذَا مِنْ عَدُوِّهِ فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِي مِن شِيعَتِهِ عَلَى الَّذِي مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوسَىٰ فَقَضَىٰ عَلَيْهِ قَالَ هَٰذَا مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ عَدُوٌّ مُّضِلٌّ مُّبِينٌ

তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবর। তথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেন। এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। সূরা কসাস-১৫


নোট: এ আয়াতে মুসা আ. এর বংশের লোক মুসা আ. এর কাছে সাহায্য চেয়েছেন এবং তিনি সাহায্য করেছেন।


হাদিস নং-০১

والله في عون العبد مادام العبد في عون أخيه

অর্থাৎ,  বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত অপর ব্যক্তির সহায়তায় নিমগ্ন থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্যের হাত তার উপর বিস্তৃত থাকে। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম- ২৬৯৯, হাদীসের মান- সহীহ


হাদিস নং -০২

قال: جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: الرجل يأتيني فيريد مالي، قال: ذكره بالله، قال: فإن لم يذكر؟ قال: فاستعن عليه بمن حولك من المسلمين، قال: فإن لم يكن حولي أحد من المسلمين؟ قال: فاستعن عليه بالسلطان....

অর্থাৎ,  জনৈক ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেব বললো, " এক ব্যাক্তি আমার কাছে এসে আমার অর্থসম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চায়। এক্ষেত্রে আমার কী করণীয় রয়েছে? তখন তিনি বললেন, তাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করাও। সে বললো, তার মাঝে যদি আল্লাহর স্মরণও না আসে, তখন কী করণীয় আছে? তিনি বললেন, তাহলে তোমার আশেপাশের মুসলানদের কাছে সাহায্য চাও। তাদের সাহায্যে তাকে প্রতিহত করো। তখন সেই লোকটি বলে উঠলো, " আমার আশেপাশে যদি কোন মুসলমান ব্যক্তির সন্ধান না মেলে, তখন কী করবো?" তিনি বললেন, তাহলে শাসকের শরণাপন্ন হয়ে তার কাছে সাহায্য  চাইবে। শাসকের সাহায্যেই তাকে ঘায়েল করবে। ( সুনানে নাসায়ী- ৪০৮১, হাদীসের মান- হাসান সহীহ)



হাদিস নং -০৩

إنا لا نستعين بمشرك

অর্থাৎ, কোন বিষয়ে আমরা মুশরিকদের কাছে সাহায্য চাইবোনা। ( সুনানে আবূ দাঊদ-২৭৩২, সুনানে ইবনে মাজা-২৮৩২

হাদীসের মান - সহীহ)


 নোট: হাদীসটির অবধারিত অর্থ হলো, মানুষের সাধ্যানুকূল কোন বিষয়ে সাহায্য চাইতে হলে মুসলমানের দ্বারস্থ হতে হবে, মুশরিকের কাছে নয়।


সারকথা হলো,

 [إيَاكَ نَعْبُدَ وَإيَاكَ نَسْتَعِيْنُ]  

 ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং কেবল তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’

এই বাক্য দ্বারা শির্কের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত আর লৌকিক সাহায্য এক নয়। মুশরিকগণ দুই সাহায্য এক মনে করে। তাই তো তারা বিভিন্ন জিনিসের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।


শেষ কথা হলো, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য কামনা করা যাবে কিনা- 

لسؤال:

أما سؤاله الثالث يقول: هل تجوز الاستعانة بغير الله؟ وهل يجوز الحلف بغير الله؟

الجواب:

الشيخ: الاستعانة بغير الله جائزة إذا كان المستعان ممن يمكنه أن يعين فيما سؤل فيه؛ ولهذا قال النبي صلى الله عليه وسلم في ذكر الصدقات: «وتعين الرجل في دابته إذ تحمله عليها أو ترفع له عليها متاعاً». وأما استعانته بغير الله فيما لا يقدر عليه إلا الله فهذا لا يجوز، وهو من الشرك. وأما الحلف بغير الله فهو محرم، بل نوع من الشرك لقول النبي صلى الله عليه وسلم: «من حلف بغير الله فقد كفر أو أشرك»، ولقول النبي صلى الله عليه وسلم: «لا تحلفوا بآبائكم، من كان حالفاً فليحلف بالله أو ليصمت».

এ প্রশ্নের জবাবে শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন বলেন, "যে ব্যক্তির কাছে সাহায্য কামনা করা হয়েছে, সেই ব্যক্তির সাধ্যানুকূলে তা বাস্তবায়ন যদি সম্ভবপর হয়ে থাকে, তাহলে তার কাছে সহায়তা কামনা করাতে কোন সমস্যা নেই।

তবে যে সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহর হাতে, যে বিষয়টি বাস্তবায়নে কোন মনুষ্য শক্তির কিঞ্চিৎ ক্ষমতাও নেই, সেই জাতীয় সমস্যার নিরসনকল্পে আল্লাহ ছাড়া অন্যকারো দ্বারস্থ হয়ে সাহায্যের ফরিয়াদ করা যাবেনা। কারণ এটা সুস্পষ্ট শিরক।" সূত্র: ফাতওয়া নূরুল আলা দারব-৩৪ নং ফাতওয়া

 


والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক


সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল্লাহ তানয়িম