আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২১৪: মসজিদর মেহরব বানানো জায়েজ কিনা?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-২১৪: আমি একটা বড় সমস্যায় পড়েছি এজন্য বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের কাছে আমার একটা জিজ্ঞাসা, আর সেটা হল : মসজিদের মেহরাব রাখা কি বৈধ না অবৈধ? ইদানিং আমাদের মসজিদের মেহরাব নিয়ে ইমাম সাহেব প্রশ্ন তুলছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মসজিদগুলোতে মেহরাব ছিলনা মেম্বার ছিল কাঠের তৈরি অতএব মসজিদের মেহরাব ভাঙতে হবে এবং মেম্বার কাঠের তৈরি করতে হবে বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলিল চাই, যাতে করে আমার এলাকাবাসী বড় ফিতনা থেকে বাঁচতে পারে / জাযাকাল্লাহু খাইরান। তারিখ-৩০/-৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি


 মাওলানা রফিকুল ইসলাম বগুড়া থেকে-----


জবাব: সম্মানিত শায়েখ ইতিপূর্বে আল-বুরহানে মেহরাবের সংজ্ঞা, বর্তমান যুগের মেহরাব মসজিদের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনার প্রশ্নকে সহজে বুঝার জন্য কয়েকভাবে ভাগ করছি।


প্রশ্ন: ক। মেহরাবের পরিচয়।


উত্তর: ক। মেহরাবকে মেহরাব নামকরণ করার ব্যাপারে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। মেহরাবের আভিধানিক অর্থ মজলিসের অগ্রভাগ, , অস্ত্রাগার, অস্ত্র রাখার স্হান, যন্ত্রাংশ রাখার স্হান ইত্যাদি।


মেহরাব যেহেতু মসজিদের অগ্রভাগেই অবস্থিত, যা কিবলার দিকে দেয়ালের মধ্যখানে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান নির্ধারণ করার জন্য নির্মাণ করা হয়। তাই মেহরাবকে মেহরাব বলে নামকরণ করা হয়েছে।


প্রশ্ন: খ। আমাদের মসজিদের মেহরাব নিয়ে ইমাম সাহেব প্রশ্ন তুলছেন যে রাসূল (ﷺ)-এর র যুগের মসজিদগুলোতে মেহরাব ছিলনা ?


উত্তর: খ। রাসূল যুগে ছিল না মানে তা বিদআত। এখন আমরা বিদআতের সংজ্ঞা জানি, বিদআত অর্থ নতুন সৃষ্টি। শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে কোন নতুন সৃষ্টিকে, অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে ইবাদত মনে করে এবং অতিরিক্ত ছওয়াবের আশায় এমন কিছু আকীদা বা আমল সংযোজন ও বৃদ্ধি করা, যা রাসূল (সাঃ) সাহাবী ও তাবেঈদের যুগে অর্থাৎ আদর্শ যুগে ছিল না। সূত্র: আহকামে জিন্দাগি।


 কোন কিছু বৈধ হতে হলে সবকিছু রসূলের যুগে থাকা জরুরি নয়। সাহাবা-তাবেয়িদের যুগে থাকলেও চলবে। এখন আমরা দেখবো এই তিন যুগে বর্তমান মেহরাব ছিল কিনা? 


আসার-০১


عَنْ عَلِيٍّ، ‌أَنَّهُ ‌كَرِهَ ‌الصَّلَاةَ ‌فِي ‌الطَّاقِ

‘আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি পুরোপুরি মেহরাবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াকে অপছন্দ করতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস: ৪৬৯৩


নোট: এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাহাবাদের জামানায় ইমাম মেহরাবের মধ্যে নামাজ আদায় করতেন, অর্থাৎ বর্তমান মেহরাব। 


আসার-০২


রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে প্রচলিত মেহরাবের অস্তিত্ব ছিল কি না, এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে, রাসুল (ﷺ) এর যুগে বর্তমান যুগের মতো মেহরাব ছিল না; বরং এজাতীয় মেহরাবের প্রচলন শুরু হয় ৯১ হিজরিতে ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.)-এর যুগে। তিনি যখন ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালেক কর্তৃক মদিনার গভর্নর নিযুক্ত হয়ে মসজিদ-ই-নববীর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন, তখনই মেহরাবসহ মসজিদ নির্মাণ করেন। সূত্র: আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়্যাহ : ৩৬/১৯৫


উপরোক্ত দুটি আসার দ্বারা প্রমাণিত হলো, বর্তমান যুগের মেহরাব খুলাফা-সাহাবা-তাবেয়ির যুগে ছিল। সুতরাং তা বিদআতের সংজ্ঞায় পড়ে না।


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন :

فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ

‘তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাহ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নাহ অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। তাখরিজ: সুনানে আবি দাউদ : ৪৬০৭; সুনানুত তিরমিজি : ২৬৭৬


وَعَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، أنّه قَالَ : «خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ». قَالَ عِمْرَانُ: فَمَا أدْري قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَرَّتَيْنِ أَو ثَلاَثاً« ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهمُ السَّمَنُ ». متفقٌ عَلَيْهِ 

বাংলা অনুবাদ: ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবিদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়িদের) যুগ।’’ ইমরান বলেন, নবি (ﷺ) তাঁর যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করেছেন, না তিন যুগ তা আমার জানা (স্মরণ) নেই।’ অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদেরকে সাক্ষী মানা হবে না। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করবে কিন্তু তা পুরা করবে না। আর তাদের দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পাবে।’’ তাখরিজ: বুখারি ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম ২৫৩৫, তিরমিযি ২২২১, ২২২২, নাসায়ি৩৮০৯


প্রশ্ন: খ। রসূল (ﷺ)-এর যুগে মেম্বার ছিল কাঠের তৈরি অতএব মসজিদের মেহরাব ভাঙতে হবে এবং মেম্বার কাঠের তৈরি করতে হবে?

উত্তর: খ। মুহতারাম, এ প্রসঙ্গে আল-বুরহানে,জিজ্ঞাসা-১৮৯: মসজিদের মেম্বার কি ইট সিমেন্ট বালি দ্বারা তৈরি করা জায়েজ? শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে। উপকার্থে আবার শেয়ার হবে ইনশাল্লাহ।



والله اعلم بالصواب