জিজ্ঞাসা-১২৮৮১:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আচ্ছালামু আলাইকুম, মুহতারাম আশা করি আপনারা সকলে মহান আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। জানার বিষয় হল গোসলের ফরয গড়গড়া সহ কুলি করা এর দলীল জানানোর জন্য আপনাদের সুপরামর্শ কামনা করছি। আচ্ছালামু আলাইকুম।
তারিখ: ১৩/০১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম ভোলা থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, গোসলের ফরজ তিনটি। যথআ-
১। কুলি করা,
২। নাকে পানি দেওয়া,
৩। সমস্ত শরীর ধৌত করা।
নিচের হাদিস থেকে ফোকাহায়ে কেরাম দলিল গ্রহণ করেছেন -
عن ميمونةَ رَضِيَ اللهُ عنها: ((وَضعتُ للنبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم ماءً للغُسل، فغسل يديه مرَّتين- أو ثلاثًا- ثمَّ أفرَغَ على شِمالِه فغَسَل مذاكيرَه، ثم مسحَ يدَه بالأرض، ثم مضمَضَ واستنشَقَ، وغسَل وجهَه ويدَيه، ثمَّ أفاض على جسَدِه، ثمَّ تحوَّلَ مِن مكانِه، فغسَلَ قَدَميه
ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাইমূনা (রা.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি তাঁর হাত দু’বার বা তিনবার ধুয়ে নিলেন। পরে তাঁর বাম হাতে পানি নিয়ে তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তাঁর চেহারা ও দু’হাত ধুয়ে নিলেন। অতঃপর তাঁর সারা দেহে পানি ঢাললেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫৭]
وجه الدَّلالة:
أنَّ غُسلَ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم وقَع بيانًا لمُجَمل الكتاب، وقد تمضمَضَ فيه واستنشَقَ، فدلَّ على لُزومِه
হাদীসটি দ্বারা আলোচ্য বিষয়ের স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করার পদ্ধতি হলো এরূপ- পবিত্র কুরআনের বর্ণনাধারা হলো সংক্ষিপ্ত, তদুপরি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ । আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্মপন্থা হলো সেই সারকথামালার বাস্তবিক বিবরণ ও সবিস্তারিত প্রায়োগিক বিশদায়ন। আলোচ্য হাদীসটির মর্ম একথারই সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসল করার সময় নিয়মতান্ত্রিকভাবে কুলিও করেছেন, আবার নাকেও পানি দিয়েছেন। সুতরাং গোসলের সময় এই কাজগুলো করার আবশ্যকীয়তা স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয় ও যৌক্তিকভাবেই প্রতীয়মান হয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়া কুলি করা সুন্নাত, ফরজ নয়। দলিল -
ومنها المبالغة فى المضمضة والاستنشاق إلا فى حال الصوم فيرفق، لأن المبالغة فيهما من باب التكميل فى التطهير فكانت مسنونة إلا فى حال الصوم لما فيها من تعريض الصوم للفساد (بدائع الصنائع-1/112، الفتاوى التاتارخانية-1/276، رقم-377)
অর্থাৎ নাকে ও মুখে পানি দেবার ক্ষেত্রে মুবালাগা তথা গভীরে পানি পৌঁছানো এটি গোসলের সময় ফরজ নয়, বরং সুন্নত। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে -১/১১২
তৃতীয় কথা হলো, রোজাদার ব্যক্তি নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ও গড়গড়া কুলি করা মাকরুহ অর্থাৎ স্বাভাবিক কুলি ও নাকে পানি দিবে। দলিল -
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ لَقِيطِ بْنِ صَبِرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، لَقِيطِ بْنِ صَبِرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا " .
. কুতায়বা ইবনে সাঈদ ....... লাকীত ইবনে সাবুরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা রোযা থাকাবস্থায় ব্যতীত অন্য সময়ে নাকে অধিক পানি প্রবেশ করাবে।
Narrated Laqit ibn Saburah:
The Prophet (ﷺ) said: Snuff up water freely unless you are fasting.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৮ (আন্তর্জাতিক নং ২৩৬৬)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদীসের বর্ননাকারী: লাকীত ইবনে সাবরাহ (রাঃ)
فالمبالغة في المضمضة مكروهة للصائم؛ لأنها قد تؤدي إلى وصول الماء إلى الجوف، وهذا الذي حدث لك، قال البهوتي في كشاف القناع: (وتكره) المبالغة في المضمضة والاستنشاق (له) أي: الصائم؛ لأنها مظنة إيصال الماء إلى جوفه. انتهى
অর্থাৎ সিয়ামরত অবস্থায় কুলি করার সময় অতিমাত্রায় জলসঞ্চালন করা মাকরুহ। কারণ এটি উদরের অভ্যন্তরে পানি পৌঁছে যাওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি করে।
আল্লামা বাহুতি কাশশাফুল কনা' গ্রন্থে বলেন, কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার সময় অধিক
হারে জলসঞ্চালন করা মাকরূহ। কারণ এটি গলদেশে পানি প্রবেশের আশংকার জন্ম দেয়।
সারকথা হলো, গোসলের ফরজ তিনটি। নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়া কুলি করা সুন্নাত, কিন্তু রোজাদার ব্যক্তি তা করবে না।
والله اعلم بالصواب