*যিকরে নাফাসি তথা পাস আনফাস বা শ্বাস প্রশ্বাসের যিকিরের কি কোন ভিত্তি নেই?*
যিকরে কলবির পাশাপাশি আরেক প্রকারের যিকির হচ্ছে যিকরে নাফাসি। অর্থাৎ শ্বাস গ্রহণ ও শ্বাস বের করার সময় উচ্চারণ না করে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ইত্যাদির যিকির করা। সুফিয়ায়ে কেরামের কাছে এটি প্রসিদ্ধ একটি বিষয়। অনেকে মনে করেন এর কোন ভিত্তি নেই। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবি রহ. বলেন, এটি উত্তম এক যিকির। এর দ্বারা ফেরেশতাদের সাথে সাদৃশ্য অর্জন হয়। কেননা আল্লাহর বাণী يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ প্রসঙ্গে আবুশ শায়েখ রহ. হাসান রহ. থেকে এর ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন এভাবে- “আমি তাদের (ফেরেশতাদের) শ্বাসকে তাদের জন্য তাসবিহ বানিয়েছি”।
তেমনিভাবে বায়হাকির শুআবুল ঈমানে (১/১৭৮) আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ ইবনে নওফল থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন- আমি কা‘ব রা. কে বললাম, আল্লাহর বাণী-"يسبحون الليل و النهار لا يفترون " সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? রিসালতের দায়িত্ব কি তাদের ব্যস্ত করে না? কোনো কাজ কি তাদের ব্যস্ত করে না? তিনি বললেন, কে এই লোক? আমি বললাম, আমি বনু আব্দুল মুত্তালিবের এক গোলাম। তখন তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ভাতিজা! আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য যেমন শ্বাস দিয়েছেন তেমনিভাবে তাদের জন্য তাসবিহ দিয়েছেন (অর্থাৎ তাদের তাসবিহ তোমাদের শ্বাসের ন্যায়)। তুমি কি খাও না, পান কর না, যাওয়া আসা কর না, কথা বল না? সবই তো কর শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে (এসব কাজে তো তোমার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয় না) তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা (শ্বাস প্রশ্বাসকে) তাদের তাসবিহ বানিয়েছেন (তাই তাদের তাসবিহ আদায় তাদের কোনো কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায় না)।
উপরিউক্ত রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করার পর লাখনবি রহ. বলেন, হাদিসটি নাফাসি যিকিরের মূল উৎস ও আসল সূত্র সুতরাং তা ভালো করে সংরক্ষণ করো। সিবাহাতুল ফিকর 69-70
আর ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন- “তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সকল সময় ও সকল অবস্থায় আল্লাহর যিকিরকারী ছিলেন। তার শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে আল্লাহর যিকির চালু হতো; চাই তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় থাকুন, চাই বসা অবস্থায়, চাই শোয়া অবস্থায়, চাই হাঁটা ও বাহনে থাকা অবস্থায়, চাই চলা ও যাত্রাবিরতি করা অবস্থায়, চাই ভ্রমনে কিংবা বাড়িতে থাকাবস্থায় হোন”। যাদুল মাআদ: 2/332