আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮৯১: পীর প্রথা সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে কোনো নির্দেশনা আছে কী না?

No Comments

 



প্রশ্ন-১২৮৯১: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাত নেটওয়ার্ক। প্রথা সম্পর্কে ও হাদিসে কোন নির্দেশ আছে কি না জানালে উপকৃত হতাম


তারিখ : ২৭ /০১/ ২৪ ঈসায়ী / ইংরেজি                       

 মাওলানা আহসা ন হাবীব নীলফামারী থেকে।


 ব্যক্তি

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته  حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم               


তাসলিম ও হামদ - সানার পর   প্রথম কথা , পীর শব্দটি ফার্সি ব্যক্তিআন-হাদিসে নেই। কারণ পীর শব্দটি ফার্সি ভাষা বাংলা এসেছে। কুরআনে সালিহীন, সাদিকীন শব্দ  এসেছে।

যেমনঃ নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা, খোদা, ইত্যাদি শব্দগুলো কোরআন শরীফে-এ নেই। কারণ উহা ফার্শ শব্দ, তবে এর ফার্সি শব্দেরই প্রতিশব্দ কোরআন শরীফে আছে,

. যেমনঃ নামাজ-সালাত, রোজা-সাওম, ফিরিশ্তা-মালাকুন ইত্যাদি।

দ্বিতীয় কথা, পীর বা পির (ফার্সি: পর, অনুবাদ 'বয়োজেষ্ঠ') সুফি গুরু বা আধ্যাত্মিক শিক্ষকদের একটি উপাধি। তাদের হজরত (আরবি: হাضرة, প্রতিবর্ণীকৃত: হাদরা থেকে) এবং শাইখ বা শাইখপও ডাকা হয়, যা সত্য এর আরবি প্রতিশব্দ। প্ল্যাগ প্রায় সময় সেইন্টো বা সাধু এবং খ্রিস্টান পরিভাষা "এল্ডার" হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়। পির বলতে অপর যে শব্দগুলো গ্রহণ করা হয় মুর্শিদ (আরবি: মরশদ, অনুবাদ 'শিক্ষক, নির্দেশক')। বাংলা উইকিপিডিয়া


তিনচার কথা বলা , তাজিয়া বা আত্মশুদ্ধি এবং নেক লোকের সাহচর্যের বিষয়ে নির্দেশ ও বর্ণনা। যেমন,

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ

অনুবাদ-আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়া মতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ। {সূরা ফাতিহা-৬,৭}


সূরায়ে ফাতিয়া মহান রাব্বুল আলিয়া তাঁর নিয়ামাতপ্রাপ্ত বান্দারা যে বোকালামীন দেখেছেন সাব্যস্ত সব্যস্ত মুস্তাকিম।


আর তার নিয়া মত প্রাপ্ত বান্দা-

الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ

তার উপর আল্লাহ তাআলা নিয়া মত ব্রাহ্মণ, তাজরা হল নেতা গণ, সিদ্দিক গণ, বক্তব্য গণ, ও নেকার বান্দাগণ। {সূরা নিসা-৬৯}


সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত 119:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

হে জ্ঞানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।

সুরা তাওবা -১১

এ দু' আয়াত একথা মতই বলছে যে নিয়া প্রাপ্ত বান্দা নেভা গণ, সিদ্দিক গণ, গণ, আর তাদের পথককার গণ, আর তাদের পথিক গণ, সরল সঠিক সত্যে মুস্তাকিম। তাদের অনুসরণ করতেই সীরাতে মুস্তাকিমের উপর ব্যাখ্যা করা যাবে।


عن أبي موسى رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم و سلم قال ( مثل الجليس الصالح والسوء كحامل المسك ونافخ الكير فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحا طيبة وإما أن تجد منه ريحا طيبة ونافخ الصالح والسواء

হযরত আবু মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-সৎসঙ্গ আর অসৎ সঙ্গের উদাহরণ হচ্ছে মেশক বহনকারী আর আগুনের পাত্রে ফুঁকদানকারীর মত। মেশক বহনকারী হয় তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তুমি নিজে কিছু খরীদ করবে। আর যে ব্যক্তি আগুনের পাত্রে ফুঁক দেয় সে হয়তো তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে, অথবা ধোঁয়ার গন্ধ ছাড়া তুমি আর কিছুই পাবে না। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫২১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৮৬০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩১৯০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬১


এসলাহে নফসের ব্যাপারে কুরআন মাজিদের বর্ণনা নিম্নরূপ:

আয়াত নং -০১

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا . وَقَدْ خَابَ مَن

 دَسَّاهَا

যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয় এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। সূরা শামস,৯-১০


আয়াত নং -০২

قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ

নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়। সূরা আলা-১৪


আয়াত নং -০৩

يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ. إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ

যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোন উপকারে আসবে না;কিন্তু যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে। সূরা শুরা,৮৮-৮৯


আয়াত নং -০৪

هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ

তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। সূরা জুমুআ-০২


আয়াত নং -০৫

رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। সূরা বাকারা-১২৯



হজরত থানভি রহ. এর মতামত: ১-৩ নং আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো আত্মশুদ্ধি ফরজ। থানবী রাহমাতুল্লাহ উসূলে ফিকহি সূত্র আলোচনা করেছেন। তাহলো


مقدمة واجب واجب

অর্থাৎ ইসলামে যে কাজটি ওয়াজিব সে কাজের শুরু ওয়াজিব। সূত্র: কিতাবু উসূলুল ফিকহি -২৭৫ পৃষ্ঠা


ইসলাহে নফস ফরজ, মুসলিহ তথা শায়েখ ছাড়া আত্মশুদ্ধি সম্ভব নয়, ইসলাহি তাওয়াল্লুক তথা ডাক্তারের সাথে সম্পর্ক কায়েম করা ফরজ।


জনৈক আলেম হযরত থানভী রহ.কে বললেন, আমি আমার নাফসের নিজে নিজে ইসলাহ করবো, শায়েখের প্রয়োজন কেন? জবাবে হজরত থানভি রহ. বললেন মাওলানা তাযকিয়া শব্দটি فعل لازم او متعدي

ফেলে লাযেয না মুতাআদ্দি (শুধু ফায়েল হলে হবে না, মাফউলও লাগবে) না। তখন মাওলানা খামোশ হয়ে গেলেন।



সারকথা হলো,  প্রচলিত পীর-মুরিদি নবী-সাহাবায়ে কেরাম এর যুগে ছিলো না, পরবর্তীতে এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে গাফিলতি দেখা দিলে ওলামায়ে দ্বীন একটি আলাদা ফন (বিষয়) রুপ দান করেছেন।


মনে রাখতে হবে যে, দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু বিদআত কিন্তু দ্বীনের জন্য হলে বিদআত নয়। নবীর যুগে কুরআন লিপিবদ্ধ ছিল না, কুরআনে হরকত (যের-যবর-পেশ) ছিল, মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, বুখারি মুসলিম তথা হাদিসের কিতাব ছিল না, আলেম হওয়ার জন্য মাদ্রাসায় যে সিলিবাস তৈরি করা হয়েছে, তা ছিল না।


পরবর্তীতে ওয়ালামায়ে দ্বীন মুসলমানদের দ্বীন- ঈমান হেফাজতের জন্য এই ফন চালু করেছে, যদিও মূল বিষয় ছিল, কিন্তু পদ্ধতি ছিল না।


বাইআত কত প্রকার । গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও আত্মশুদ্ধির জন্য কোন খাঁটি শায়েখের হাতে বাইআত হওয়া কি বিদআত? এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা -১২৩০৫ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে।

সারকথা হলো, বিদআত, শিরক, কবরপূজা, মাজারপূজা, বাউল গান, বেপর্দা, গান-বাজনাসহ কুরআন ও হাদীস বিরোধী মতবাদ, রূসুমাত, রীতিনীতি মুক্ত থেকে আল্লাহ তাআলার বিধান ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতের পরিপূর্ণ পাবন্দ হোন, তাহলে উক্ত পীর মাশায়েখকে মানতে কোন সমস্যা নেই।



  والله اعلم بالصواب