*কুরআন হাদিস বোঝা আর আর সেই অনুযায়ী আমল করা ভিন্ন বিষয়।*
কোরআন হাদিস তো আমল করার জন্য শেখা হয়, যদি আমল-ই না থাকে তাহলে বুঝে লাভ কি। অনেক ইহুদী-খ্রিস্টানও আছে খুব ভালো আরবি বোঝে তো লাভ কি হইল। আসল হলো তাকাক্কুহ ফিদ্বীন এবং আমল করার তৌফিক। বেআমল পন্ডিত হইয়া লাভ কি? যদি তাকওয়া না থাকে। আর আমলের তৌফিক এবং তাকওয়া আসে আল্লাহ ওয়ালাদের সহবতের দ্বারা। আর আল্লাহ ওয়ালাদের লিখিত কিতাব অধিকাংশই ফার্সিতে। থানভী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলতেন,পূর্ববর্তী আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবতের বিকল্প হল তাদের লিখিত কিতাব পড়া।
থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নসিহত:
শুধু পড়াশোনা করলেই কিছু হয় নাঃ
(হাকিমুল উম্মত থানভী রহমাতুল্লহি আলায়হি বলেন) আমি প্রায় সময় বলে থাকি, শুধু । লেখাপড়া দিয়ে কী হবে? কারো জুতা সোজা করা ছাড়া কিছু হওয়া যায় না। আমি তো একথাও বলি যে, দ্বীনদার মূর্খ মানুষ ঐ আলেমের চেয়ে উত্তম যার মাঝে দ্বীনদারী নেই। আর রসূলুল্লহ সল্লাল্লহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের অশিক্ষিত হওয়া এবং হিসাব-নিকাশ না জানার ওপর গর্ব করে বলেছেন,
نحن أمة أمية لا تكتب ولا تحسب
‘আমরা উম্মী জাতি, লেখালেখি ও হিসাব-নিকাশ জানি না।'
অনেক সাহাবী তো এমনও ছিলেন যারা জানতেন না যে, কয় সংখ্যা হলে একশ হয়। তারপরও তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কী কারণ ছিলো? লেখা-পড়ার দিক দিয়ে তাঁরা অগ্রসর না হলেও মর্যাদায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। ওয়াইস কারনী বলুন, উমর ইবনে আব্দুল আযীয বলুন কিংবা বায়জীদ বোস্তামী বলুন; কেউ সাহাবীদের সমপর্যায়ের নন।
আসল রহস্য হলো, সাহাবায়ে কেরাম রযিয়াল্লহু আনহুম রসূলুল্লহ সল্লাল্লহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সোহবত ও সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন। সেই সান্নিধ্যের পরশে তাঁদের দ্বীন ও ঈমান খাঁটি এবং পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং সোহবতই হলো, আসল জিনিস। কোনো মানুষ যতো বড় শিক্ষিতই হোক না কেনো; যদি সে সোহবতের দৌলত থেকে বঞ্চিত থাকে, তাহলে সে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।
[দাওয়াতে আবদিয়াত-১২/৫৬, থানভী রহ.।
★দ্বীনের ওপর আমল করার ভিত্তি হলো, সালফে সালেহীন তথা পূর্ববর্তী বুযুর্গগণের প্রতি ‘আযমত' ও শ্রদ্ধা-ভক্তি রাখা। এজন্য যথাসম্ভব তাঁদের ব্যাপারে আপত্তি ও সমালোচনা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। (আপ ইফাজাত -২/২৬৫।)
★মৌলভী হওয়া কোনো খুশির ব্যাপার নয়; বরং দ্বীনদার হওয়া খুশির ব্যাপার। (মাজীদুল মাজীদ-৯১, থানভী রহ.।)
★ইলমের পাশাপাশি সোহবতের খুব প্রয়োজন রয়েছে। সোহবত দ্বারা ইলমও হয় এবং আমলের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এজন্য শায়খের বড় প্রয়োজন রয়েছে। নিছক কিতাব পড়া যথেষ্ট নয়।
[হিসুল আযীয়-৩/৮৯, থানভী রহ.]
★মাওলানা মোহাম্মদ কাসেম নানুতবী রহমাতুল্লহি আলায়হি বলতেন, পড়ার চেয়ে বেশি বোঝা উচিত। যে ব্যক্তি কেবল পড়ে আর যে বোঝে উভয়ের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আর অনুভবশক্তি আসে সোহবতের মাধ্যমে।
[হুসুনল আযীয-৩/৯০, থানভী রহ.]