‘কাশফ’ মূলতঃ কোন বুযুর্গী নয়
----------------------
হযরত থানবী (রহঃ) ইরশাদ করেন, গায়েবী বস্তুসমূহ কিংবা ভবিষ্যৎ কোন বিষয়ে আগাম কিছু বলতে পারা বা কাশফ হওয়া দ্বীনী ব্যাপারে পূর্ণতার যেমন কোন প্রমাণ নয় তেমনি এমনটি আল্লাহ পাকের নৈকট্যপ্রাপ্তিরও কোন নিদর্শন নয়। এ ধরনের কাশফ হওয়ার জন্য মুসলমান হওয়া কিংবা সুস্থ জ্ঞানের অধিকারী হওয়াও শর্ত নয় বরং এমনটি অমুসলিমের এবং পাগলেরও হতে পারে।
ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'শরহে আসবাব' এর মধ্যে মস্তিষ্কের রোগ অধ্যায়ে লিখেছে, অনেক পাগলেরও কাশফ বা ভবিষ্যত বাণী শুদ্ধ হয়ে যায়। আর কাফের এবং ফাসেকদের কাশফ শুদ্ধ হওয়ার
তো শত শত ঘটনা দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ রয়েছে।
এক ব্যক্তি ছিলো, যার নাম কুদরতুল্লাহ। তার একবার অবস্থা এই হলো যে, এমনিতেই তার কবরের কাশফ হতে শুরু করলো এবং তার অধিকাংশ কাশফই শুদ্ধ হতে থাকলো। কিন্তু সে ঠিকমত নামাযও পড়তো না। সে একবার এক কবরের কাছে গিয়ে বললো, এ কবরের লোকটি কবরের মধ্যে দাঁড়িয়ে চন্দন কাঠের তাসবীহ পাঠ করছে। বিষয়টি যখন তাহকীক করা হলো এবং এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হলো তখন ঐ কবরবাসীর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি জানালো, আসলেই আমার ঐ কবরবাসী বন্ধু চন্দন কাঠের তাসবীহ বেশী পসন্দ করতেন এবং সর্বদা তা সাথেই রাখতেন এবং তিনি ইন্তেকালের পূর্বে আমাকে বলে রেখেছিলেন যে, আমার দাফনের সময় আমার কবরের মধ্যে চন্দন
কাঠের এই তাসবীহ রেখে দিবেন। তার সে কথামত ঐ তাসবীহ তার কবরের মধ্যে রেখে দেয়া হয়েছিলো।
একবার ঐ কুদরতুল্লাহ নামের লোকটি একটি কবরের কাছে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে শুরু করলো। হঠাৎ সে চমকে উঠে বললো, এ কবরের মুর্দার ব্যক্তির আযাব হচ্ছে। আর তার আযাবের কারণ হলো, তার কাছে
এক ব্যক্তির কিছু আমানত ছিলো। যখন সে লোকটি তার আমানতের বস্তু ফেরত চাইলো, তখন সে তার সাথে প্রতারণা করে তা তাকে ফেরত দেয়নি। অথচ এই কুদরতুল্লাহ সাহেব ঐ মুর্দা ব্যক্তি সম্পর্কে ইতিপূর্বে
কিছুই জানতো না। এ বিষয়টি সম্পর্কে যখন খোঁজ খবর নেয়া হলো তখন ঐ মুর্দার ব্যক্তির স্ত্রী তার স্বামীর আমানতের খেয়ানত করার বিষয়টি স্বীকার করলো। সে বললো, হাঁ ঐ কবরের ব্যক্তি আমার স্বামী। সে অমুক ব্যক্তির আমানত গ্রহণ করে তা ফেরত দিতে অস্বীকার করেছিলো।
সারকথা হলো, অদৃশ্য বস্তুসমূহের এসব কাশফ শরীরের একটি অদৃশ্য শক্তির অধীনে হয়ে থাকে। যা কাফের, ফাসেক ও পাগল ব্যক্তিরও হতে পারে এবং তারাও বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে কাশফের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারে এবং তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুদ্ধও হয়ে থাকে। সুতরাং এসব জিনিসের কারণে কাউকে আল্লাহ পাকের নৈকট্যপ্রাপ্ত কিংবা বুযুর্গ ব্যক্তি বলে মনে করা যাবে না। বর্তমানে লোকেরা আশ্চর্য বস্তুকে খুব পসন্দ করে। কেউ কোন অদৃশ্য বিষয়ে কিছু বলে দিতে পারলেই লোকেরা তার ভক্ত হয়ে যায়। অথচ এ ধরনের অদৃশ্য সংবাদ দাতাদের মধ্যে অনেকে নিজেও হয়ে থাকে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ এবং অন্যকেও তারা অনুরূপ পথভ্রষ্ট করে দেয়।
হক—বাতিল এবং গ্রহণযোগ্য ও উপেক্ষিত হওয়ার প্রকৃত মাপকাঠি হচ্ছে, শরীয়ত ও সুন্নাতের অনুসরণ। এ মৌলিক মাপকাঠির বিচারে যে সঠিক ও যথার্থ বলে বিবেচিত না হবে সে কখনো ওলী বা অনুসরণযোগ্য
নয় বরং পথভ্রষ্ট-গোমরাহ। এক্ষেত্রে তার যতই কাশফ হোক না কেন এবং তা যতই শুদ্ধ ও সঠিক হোক না কেন তা সে ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে ন্যূনতম প্রমাণও বহন করবে না।
📖 মাজালিসে হাকীমুল উম্মত ||| পৃষ্ঠাঃ ১০১