আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

শীতে গৃহপালিত পশু-পাখির জন্য করণীয়ঃ কোনো মাখলুককে অনর্থক কষ্ট না দেয়া চাই-*

No Comments

 




*শীতে গৃহপালিত পশু-পাখির জন্য করণীয়ঃ কোনো মাখলুককে অনর্থক কষ্ট না দেয়া চাই-*


বিসমিল্লাহি ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু 'আলা রাসূলিল্লাহ।


আল্লাহ তা'আলার সীমাহীন মেহেরবানিতে স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রুপে আমাদের লাস্ট পোস্ট হয়েছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্র অভ্যাস “দ্রুত হাটা” সম্পর্কে। *বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল ﷺ দ্রুত হাটতেন। এতটা দ্রুত যে, সাহাবায়ে কেরাম সাথে পেরে উঠতেন না। তো দ্রুত হাটার অনেক ফায়দা। ঐ পোস্টে ৭ টা ফায়দা বলা হয়েছে।*


তো আমাদের "আলোকিত জীবন" হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের যে সকল সম্মানিত সদস্য "স্বাস্থ্য পরামর্শ" গ্রুপে জয়েন করেননি, আপনারা ঐ গ্রুপটাতে জয়েন হতে পারেন। ইনশাআল্লাহ ফায়দা হবে।


স্বাস্থ্য আল্লাহ তা'আলার দেয়া বহুত বড় নেআমত। স্বাস্থ্য যদি ঠিক না থাকে তাহলে দ্বীনি কাজ, দুনিয়াবি কাজ সুন্দরভাবে আঞ্জাম দেওয়া মুশকিল হয়ে যায়। তো স্বাস্থ্যের জন্য সচেতন থাকা, কি কি করণীয়, কি কি বর্জনীয়, যা করলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে, আর যা করলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে; এই বিষয়গুলোই মূলত আলোচনা করা হয়ে থাকে ইসলামের আলোকে স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রুপে। 


বাহারহাল তো বেশ শীত পড়েছে। তো যারা পশু পালেন, গরু ছাগল অনেকেই পালেন। এদের যেন শীতে কষ্ট না হয়, সেদিকে নজর রাখা। ইসলাম এত সুন্দর, এতটা পূর্ণাঙ্গ যে পশুপাখির কি হক, সেটাও আল্লাহর রাসূল ﷺ সাহাবায়ে কেরামকে বলে গিয়েছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম এর মাধ্যমে আমরা পেয়েছি। 


আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল। অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। এ কারণে ঐ মহিলা জাহান্নামে প্রবেশ করল। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল

সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ ভালো জানেন, বাঁধা থাকাকালীন তুমি তাকে; না খেতে দিয়েছিলে, না পান করতে দিয়েছিলে

এবং না তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে, তাহলে সে জমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত। 

- সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২২০৯


আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মনযিলে অবতরণ করলেন। এক ব্যক্তি হুম্মারা পাখির ডিম তুলে আনলো। পাখিটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার উপর এসে উড়তে লাগলো। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে তার ডিম তুলে এনে একে শংকিত করেছে? এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তার ডিম তুলে এনেছি। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ডিম রেখে আসো। আবু দাউদ, আহমাদ


সনদ সহিহ


حَدَّثَنَا طَلْقُ بْنُ غَنَّامٍ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا الْمَسْعُودِيُّ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَزَلَ مَنْزِلاً فَأَخَذَ رَجُلٌ بَيْضَ حُمَّرَةٍ، فَجَاءَتْ تَرِفُّ عَلَى رَأْسِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ‏:‏ أَيُّكُمْ فَجَعَ هَذِهِ بِبَيْضَتِهَا‏؟‏ فَقَالَ رَجُلٌ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، أَنَا أَخَذْتُ بَيْضَتَهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم‏:‏ ارْدُدْ، رَحْمَةً لَهَا‏.‏


ইসলামে পশু পাখির হক কতটা তা উপরের হাদিস দুটি থেকে সহজেই প্রতিয়মান হয়।


ইসলাম কতটা সুন্দর! কতটা পূর্ণাঙ্গ! একটা পশু, জানোয়ার, তারও হক আছে। সেটার হকও বর্ণনা করতেও ছাড়েননি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম।


বাহার হাল শীতে যেন গরু-ছাগল, পশু-পাখির কষ্ট না হয়।

হাঁস মুরগি তো খোঁয়াড়ে রাখে। আমাদের ময়মনসিংহে বলে খরা। একেবারে গ্রাম্য ভাষা খরা। তো শুদ্ধ সম্ভবত খোঁয়াড় হবে। তো যাই হোক, যে খোঁয়াড়ের মধ্যে হাঁস-মুরগি রাখা হয়, সেটা ওই হাঁস মুরগির জন্য কতটা উপযোগী আরামদায়ক কিনা *সেদিকে লক্ষ্য রাখা কর্তব্য। খেয়াল রাখা জরুরী যে, সেখানে খুব ঠান্ডা পরিবেশ কি না?*


অনেক সময় এমন হয় যে, খোঁয়াড় অনেক বছর আগে বানানো হয়েছে। ফলে খোয়ারে যথেষ্ট ফাঁক ফোকর সৃষ্টি হয়েছে, যা দিয়ে ভিতরে বাতাস যায়, ঠান্ডা লাগে। সেদিকে খেয়াল রাখা কর্তব্য।


তো আল্লাহ তা'আলার আচরণ বান্দার সাথে বড় বিস্ময়কর। বান্দা এতটুকু যদি খেয়াল করে যে, আমার তো একটা খোঁয়াড় আছে। এখানে হাস মুরগি আছে। *ওই খোয়ারের যে দেয়াল, (আমরা যতটুকু দেখেছি, গ্রামে খোঁয়াড় গুলো সাধারণত তৈরি হয় কাঠের দেয়াল আর উপরে থাকে টিনের ছাওনি দিয়ে) *দেয়ালটা* অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে বা কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে, যা দিয়ে অনেক ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করে। এতে হাঁস মুরগির কষ্ট হয়। এটা ভেবে সে খোঁয়াড় মেরামত করলো, মেরামতের ব্যবস্থা করলো। মিস্ত্রী আনল, কিছু টাকা পয়সা খরচ করলো; এই খেয়ালে যে, আল্লাহর এক মাখলুকের কষ্ট হচ্ছে।* আমার তো এটা করার সুযোগ আছে। আর অনেক বেশি টাকা-পয়সা লাগতেছে, এমন তো না। এই খেয়াল নিয়ে সে কাজটা করল। তো অনেক বড় নেক আমল সে করে ফেলল। এই যে অন্তরের ইচ্ছা, খেয়াল; এটা কেউ দেখলো না, বুঝলো না। কিন্তু এক আল্লাহ জানেন। তো এর দ্বারা বান্দার সাথে আল্লাহ পাকের সম্পর্ক বেড়ে যায়, মহব্বত বেড়ে যায়।  


আর *মহব্বতই হচ্ছে ইসলামের প্রাণ, দ্বীনের প্রাণ। মহব্বত থাকলে কোনো কাজই আর কঠিন থাকে না। মহব্বত থাকলে প্রত্যেক আমল হয়ে যায় নেশাময়।* আল্লাহ তা'আলা আমাদের প্রত্যেককে আল্লাহর মহব্বত, আল্লাহর রাসূলের মহব্বত, দ্বীনের মহব্বত খুব দান করেন।


অনুরূপভাবে যারা গরু-ছাগল পালেন, তো যেখানে গরু-ছাগল থাকে, গোয়াল ঘর, সেদিকে খেয়াল রাখা যে, এটা কতটুকু ভাল ব্যবস্থাপনায় আছে। ব্যবস্থাপনাটা কেমন? কোনো দেয়ালের বেড়ায় ফাঁকা আছে কিনা? আমরা তো গ্রামে ছোট সময় দেখেছি যে, গোয়াল ঘর হতো কাঁচা। বেড়া দিত বাঁশের বা অন্য কোন কিছু দিয়ে। উপরে ছনের চালা থাকতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো বা টিনের চালা থাকতো।


*তো খেয়াল করা যে, আমি যে পশু পালতেছি, পশুর কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা? খেয়াল রাখা ও আল্লাহকে ভয় করা।* এই খেয়াল করা যে, আল্লাহ তা'আলা যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার তো তিনটা গরু ছিল, পাঁচটা গরু ছিল। এদের তো শীতে কষ্ট হয়েছে। তুমি এর কি প্রতিকার করেছিলা? *তুমিতো আরামে তোষকের উপর থেকেছো। নিচে তোষক উপরে লেপ কম্বল। আবার গায়ে কাপড় দিয়েছ কয়েকটা। তো নিজের জন্য এত আরাম করেছ। তোমার যে পশু ছিল, তোমার খোঁয়াড়ে মুরগি ছিল, হাস ছিল।এদের জন্য তুমি কি আরামের ব্যবস্থা করেছিলা?”*


তো আল্লাহ তা'আলা যদি এই জিজ্ঞাসা করেন তখন আমার কি জবাব হবে? এজন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা। আল্লাহর মাখলুক, এই পশু পাখির যে হক সেদিকে খেয়াল রাখা । তাদের যেন কষ্ট না হয়। 


অনেকে আছে যে, পশু এমন জায়গায় রাখছে যেখানে মশা আর মশা। কামড়াচ্ছে সমানে। বাহারহাল তাদের যেন কষ্ট লাঘব হয়, এজন্য আরামের ব্যবস্থা করা। এটা অনেক বড় নেক আমল।

 

নামাজ পড়লে তো মানুষ দেখতেছে, নামাজ পড়তেছে। তসবি টিপতেছে জিকির করতেছে। এটা দেখা যায়। কিন্তু এতক্ষণ যা বলা হলো, মোমিন অন্তরের এই খেয়াল নিয়ে, আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর মহব্বতে যদি পশু পাখির আরামের ব্যবস্থা করে তাহলে এটা কত বড় নেক আমল হবে! এতে আল্লাহ তা'আলার মহব্বত কতটা বাড়বে! আল্লাহ তা'আলা আমাদের প্রত্যেককে বুঝার বহুত তৌফিক দান করেন।


8 January 2024


মুহাম্মাদ রবিউল আকরাম


সহযোগিতায়ঃ ইনামুল হাসান এবং রাকিবুর রহমান