আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮৮৫: মেয়ে বাচ্চার নাম কি সাফা রাখা ইসলাম সম্মত?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৮৮৫: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মেয়ে বাচ্চার নাম কি সাফা রাখা ইসলাম সম্মত? উত্তর কামনা করছি। 


তারিখ:  ১৮/০১/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা   মো: রুকুনুজ্জামান, সিলেট থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

"সাফা" বাংলাদেশের বহুল ব্যবহৃত সুন্দর অর্থবহ একটি নাম, জনপ্রিয়তায় শীর্ষ নামগুলোর মধ্যে এটিও একটি। আপনার শিশুর জন্য একটি সুন্দর নাম হতে পারে ‘সাফা ’। সাফা নামটি মূলত মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।উচ্চারণে সাবলীল এই নামটি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়।




পবিত্র কুরআনে যেসকল বিষয়গুলোকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজস্ব নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন, "সাফা" শব্দটি তার মাঝে অন্যতম।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 


إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّه

“নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা বাকারা: ১৫৮]


সাফা (صفاء), আরবি শব্দ। এর অর্থ: পরিচ্ছন্নতা, নিষ্কলুষতা, নির্মলতা, সরলতা, শ্বেত শুভ্রতা, হৃদ্যতা, অকৃত্রিমতা, আন্তরিকতা, আন্তরিক বন্ধুত্ব ইত্যাদি।


এই শেষ অর্থের দিকে লক্ষ্য করেই মানব জাতির আদিপতা হজরত আদম (আঃ) প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ 

حدثنا (يعلى) بن عبيد قال ثنا أبو (سنان) عن عبد اللَّه بن مالك عن مكحول قال: كان لعمر.....

آدم صفي الله الخ ( افمصنف - ابن أبي شيبة - ت الشثري ١٧/‏٤٨٣ — أبو بكر بن أبي شيبة (ت ٢٣٥)


অর্থাৎ, আদম হলো আল্লাহর নির্বাচিত অকৃত্রিম বন্ধু।


একটি কথা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য, শব্দের শেষাক্ষরে "আ-কার" জুড়ে দিয়ে

নারী-পুরুষের নামের পার্থক্য সূচিত করার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করার প্রচলন আবহমানকাল জুড়েই ভারত উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলসহ আরববিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। বাংলা ও আরবী উভয় ব্যাকরণেই এই নিয়মটি সমানতালে প্রয়োগ হয়ে আসছে। যেমনঃ নাবীলা, খালেদা, রহীমা, ফাতিমা, আয়েশা (তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও রয়েছে, যেমন- মারয়াম, নাসরীন, শারমীন, নওরীন ইত্যাদি।)

সেই বিবেচনায় "সাফা" নামটি দিয়েও মেয়ে শিশুদের নামকরণ করা যেতে পারে। কারণ শব্দের শেষে আ-কার রয়েছে। 

 এই নামের প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে, 

صفا اسم علم عربي مؤنث، ويستعمل للمذكر أيضاً. 

অর্থাৎ, "সাফা" নামটি আরবী। মেয়েদেরকে এই নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটি কখনো কখনো ছেলেদের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।


তবে বাংলাদেশের চলমান প্রেক্ষাপটে একটি কথা না বললেই নয় যে, আমাদের দেশে এমন কিছু নামের প্রচলন রয়েছে, যে নামগুলো উভলিঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ নামটি শোনামাত্রই ঠাহর করা বেজায় মুশকিল হয়ে পড়ে- নামটি কার? ছেলের, না মেয়ের। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি নাম উল্লেখ করা যেতে পারে- শাওন ( মেহের আফরোজ), কাজল, মীম ( আমার একাধিক বন্ধুর নাম মীম, অথচ এই নামেই অসংখ্য মেয়ের নাম রয়েছে), রুমি ( জালালুদ্দিন রুমী। আবার রুমি নামের অসংখ্যা নারীরও দেখা মেলে)। বাপ্পী ( আমার এক দূর সম্পর্কীয়া আত্মীয়ার নাম। অথচ এই নামের ছেলের অভাব নাই), বকুল, তাহসীন, তাসনীম, মনি ( এনামুল হক মনি), বাঁধন।


উল্লেখ্য যে, "সাফা" নামটিও নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের নামকরণের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, আমার এক বাল্যবন্ধুর নাম, সাফা। এছাড়া আমার বর্তমান কর্মস্থলে মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম "আলী সাফা"। এছাড়া বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আহমদ সফা এর নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। অন্যদিকে "সাফা" নামবিশিষ্ট রমনীর সংখ্যাও কিন্তু অজস্র, অগণিত। যেমনঃ সাফা কবির। তাই তথ্যবিভ্রাটের সমূহ সম্ভাবনা থাকায় বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই নামের পরিবর্তে ভিন্ন কোন নাম চয়ন করা যেতে পারে।  


সারকথা হলো,  কাগজে- কলমে, তথ্যে-উপাত্তে "সাফা" নামটি নারীদের জন্য অধিকতর মানানসই ও অর্থবহ হলেও কতক ক্ষেত্রে পুরুষ ব্যক্তিরাও এই নাম ধারণ করে থাকেন বিধায় নারী-পুরুষের বিভাজনের ক্ষেত্রে তথ্যবিভ্রাটের আশংকা অংকুরেই বিনষ্ট করে ফেলার লক্ষ্যে, শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এমন সুন্দর অর্থবহ বিকল্প ভিন্ন কোন নাম রাখার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করা হলো।



  والله اعلم بالصواب