জিজ্ঞাসা-১২৩০৫: আসসালামু আলাইকুম। বাইআত কত প্রকার । গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও আত্মশুদ্ধির জন্য কোন খাঁটি শায়েখের হাতে বাইআত হওয়া কি বিদআত? পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে সমাধান দিলে উপকৃত হতাম। তারিখ-১৪/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন লালমনিহাট থেকে----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানা-দরুদের পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য দুভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। বাইআত কত প্রকার।
উত্তর: ক। বাইআত কত প্রকার এ ব্যাপারে উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেমেদ্বীন শাহ ওলীউল্লাহ দেহলভি (রহ.) স্বীয় কিতাব ‘আল কাওলুল জামিল’ এ বলেন,
فالحق ان البيعة على اقسام، منها بيعة الخلافة، ومنها بيعة الاسلام، ومنها بيعة التمسك بحبل التقوى، ومنها بيعة الهجرة والجهاد، ومنها بيعة التوثق فى الجهاد، (القول الجميل مع شرح شفاء العليل-1/6
অর্থাৎ বাইয়াত ৫ প্রকার। যথা:
(০১) খিলাফাতের বাইয়াত।
(০২) বাইয়াতে ইসলাম। তথা ইসলাম গ্রহণের জন্য বাইয়াত নেয়া।
(০৩) তাকওয়া পরহেযগারীতে অগ্রগামী হবার শপথের বাইয়াত।
(০৪) বাইয়াতে জিহাদ ও হিজরত।
(০৫) জিহাদের ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াত। সূত্র: আল-কওলুল জামিল মাআ শারহি শিফায়িল আলিল- ১ম খণ্ড, ৬ পৃ.
(০১) খিলাফাতের বাইয়াত: যা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্বের প্রতীক হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ فُرَاتٍ الْقَزَّازِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا حَازِمٍ، قَالَ قَاعَدْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ خَمْسَ سِنِينَ، فَسَمِعْتُهُ يُحَدِّثُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمُ الأَنْبِيَاءُ، كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ، وَإِنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي، وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ. قَالُوا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ فُوا بِبَيْعَةِ الأَوَّلِ فَالأَوَّلِ، أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ، فَإِنَّ اللَّهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ ”( )
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, বনী ইসরাইলের নবিগণ তাদের উম্মতগণকে শাসন করতেন এবং যখন কোন নবি ইন্তেকাল করতেন তখন আরেকজন তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোন নবি আসবে না তবে অনেক খলিফা হবে সাহাবারা আরজ করলেন ইয়া রাসূল (ﷺ) আপনি আমাদের কি নির্দেশ করছেন। তিনি বললেন তোমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের বাইয়াতের হক আদায় করবে তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ওই সব বিষয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন যার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পন করা হয়েছিল । তাখরিজ: বুখারী-৩৪৫৫, মুসলিম-১৮৪২
হাদিস নং-০২
عَنْ مُعَاوِيَةَ أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ عَلَيْهِ إِمَامٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً হযরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ তার কোন ইমাম নেই, সে আসলে জাহেলিয়াতের মরণ মারা গেল। মাজমাউল জাওয়ায়িদ-৫/২২৪,২২৫
হাদিস নং-০৩
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : جَاءَ ابْنُ عُمَرَ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُطِيعٍ ، فَلَمَّا رَآهُ قَالَ : هَاتُوا وِسَادَةً لأَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، قَالَ : إِنِّي لَمْ أَجِئْكَ لأَجْلِسَ ، إِنَّمَا جِئْتُكَ لأُحَدِّثَكَ بِحَدِيثٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، سَمِعْتُهُ يَقُولُ : ” مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لا حُجَّةَ لَهُ ” . قَالَ : ” وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيَّةً ( )
“যে ব্যক্তি আনুগত্যের হাত উঠিয়ে নিল সে ব্যক্তি এমন অবস্থায় কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিত হবে যে, তার মুক্তির স্বপক্ষে কোনও যুক্তি-প্রমান থাকবেনা, আর যে ব্যাক্তি এমন অবস্থায় মারা যাবে যার ঘাড়ে বায়আত নেই। সে যেন জাহিলিয়্যাতের অর্থাৎ অজ্ঞতার যুগের মৃত্যুবরন করল। তাখরিজ: মুসলিম-১৮৫১
(০২) বাইয়াতে ইসলাম। তথা ইসলাম গ্রহণের জন্য বাইয়াত নেয়া। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَبَّاسٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرٍ ـ رضى الله عنه ـ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَبَايَعَهُ عَلَى الإِسْلاَمِ، فَجَاءَ مِنَ الْغَدِ مَحْمُومًا، فَقَالَ أَقِلْنِي، فَأَبَى ثَلاَثَ مِرَارٍ، فَقَالَ " الْمَدِينَةُ كَالْكِيرِ، تَنْفِي خَبَثَهَا، وَيَنْصَعُ طَيِّبُهَا ".
জাবির ইবনি আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। এক বেদুঈন লোক রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর হাতে ইসলামের উপর বায়াত গ্রহণ করিল। পরে সে মদীনায় জ্বরে আক্রান্ত হলে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট উপস্থিত হল এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার বায়াত প্রত্যাহার করুন। তিনি তা করিলেন না। কিন্তু সে পুনরায় এসে বলিল, আমার বায়াত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও তা করিলেন না। এরপর সে চলে গেল, তখন রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, মদীনা কামারের হাপরের মত, যে এর ময়লা দূর করে এবং নিখুঁতটুকু রেখে দেয়। তাখরিজ: বুখারি-১৮৮৩
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنِي الْحَبِيبُ الْأَمِينُ، أَمَّا هُوَ فَحَبِيبٌ إِلَيَّ، وَأَمَّا هُوَ عِنْدِي، فَأَمِينٌ عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» قَالَ: فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ؟ قَالَ: «عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، وَتُطِيعُوا – وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً – وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا» فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ
আউফ বিন মালিক আশজাঈ বলেন, আমাদের সাত বা আট নয়জন লোকের উপস্থিতিতে রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? অথচ আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত গ্রহণের সময় তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত হয়েছি। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো ইতোপূর্বে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। এখন আবার আপনার কাছে কিসের বাইয়াত নিবো? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর এবং আল্লাহর আনুগত্ব কর। তিনি আর একটি কথা বললেন চুপে চুপে। তা হল-লোকের কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি দেখেছি, সেই বাইয়াত গ্রহণকারী দলের কারো কারো উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে চাবুক পরে গেছে কিন্তু সে কাউকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেনি, বরং সে নিজেই নিচে নেমে তুলে নিয়েছে। তাখরিজ: মুসলিম-১০৪৩
(০৩) তাকওয়া পরহেযগারীতে অগ্রগামী হবার শপথের বাইয়াত। যাকে বাইয়াতে তাসাওউফও বলা হয়।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ “হে নবি, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন র্গভজাত সন্তান বলে মথ্যিা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা র্প্রাথনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।” সূরা মুমতাহিনা- ১২
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَلَا تُبَايِعُونِي عَلَى مَا بَايَعَ عَلَيْهِ النِّسَاءُ أَنْ لَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا تَسْرِقُوا وَلَا تَزْنُوا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ وَلَا تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ وَلَا تَعْصُونِي فِي مَعْرُوفٍ قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَنْ أَصَابَ بَعْدَ ذَلِكَ شَيْئًا فَنَالَتْهُ عُقُوبَةٌ فَهُوَ كَفَّارَةٌ وَمَنْ لَمْ تَنَلْهُ عُقُوبَةٌ فَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ
উবাদা ইবনি সামিত (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সাহাবা বেষ্টিত অবস্থায় বললেন, তোমরা আমার নিকট এ কথার উপর বায়াত কর যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করিবে না, চুরি করিবে না, ব্যাভিচার করিবে না, স্বীয় সন্তানদের হত্যা করিবে না। আর তোমরা কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং ন্যায় কাজে আমার অবাধ্যতা প্রকাশ করিবে না; যে ব্যক্তি এরূপ বায়য়াত পূর্ণ করিবে, তার সওয়াব আল্লাহর যিম্মায়, আর যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে কোন অপরাধ করিবে, তারপর শাস্তি ভোগ করিবে, তা তার জন্য কাফ্ফারা হইয়া যাবে। আর কেউ যদি কোন অপরাধ করে এবং আল্লাহ তায়ালা তা ঢেকে রাখেন, তার ব্যাপার আল্লাহর ইচ্ছাধীন। যদি তিনি ইচ্ছে করেন, তবে তাকে ক্ষমাও করিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৪১৬১
(০৪) বাইয়াতে জিহাদ ও হিজরত। জিহাদ বা কাফেরদের জুলুমী রাষ্ট্র ছেড়ে দেয়ার বাইয়াত।
হাদিস নং-০১
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ أَصْحَابَ، مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم كَانُوا يَقُولُونَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا عَلَى الإِسْلاَمِ مَا بَقِينَا أَبَدًا أَوْ قَالَ عَلَى الْجِهَادِ . شَكَّ حَمَّادٌ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " اللَّهُمَّ إِنَّ الْخَيْرَ خَيْرُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ " .
অর্থ: হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসুল স. শীতের এক সকাল বেলা বের হলেন। মুহাজির ও আনসারগণ তখন পরীখা খননের কাজে লিপ্ত ছিলেন তখন নবি (ﷺ) বললেন, হে আল্লাহ তুমি আনসার ও মুজাহিরদের ক্ষমা করে দাও। তখন তারা সাড়া দিয়ে জবাব দিলেন আমরাও সেই জামায়াত যারা আজীবন জিহাদ করার জন্য মুহাম্মদ স. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। তাখরিজ: মুসলিম-১৮০৫; বুখারি-৭২০১
হাদিস নং-০২
أَنَّ يَعْلَى بْنَ أُمَيَّةَ قَالَ جِئْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَبِي أُمَيَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بَايِعْ أَبِي عَلَى الْهِجْرَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُبَايِعُهُ عَلَى الْجِهَادِ وَقَدْ انْقَطَعَتْ الْهِجْرَةُ
হজরত ইয়ালা ইবনি উমাইয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি আমার পিতা উমাইয়াকে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট নিয়ে আসলাম এবং বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার পিতা থেকে হিজরত করার উপর বায়য়াত গ্রহন করুন। তিনি বললেন, আমি তার থেকে জিহাদ করার বায়াত নেব। কারন হিজরত শেষ হইয়া গেছে। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৪১৬০
হাদিস নং-০৩
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي جِئْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَلَقَدْ تَرَكْتُ أَبَوَيَّ يَبْكِيَانِ قَالَ ارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا
হজরত আবদুল্লাহ ইবনি আমর (রা.)হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট উপস্থিত হইয়া বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমি আপনার নিকট হিজরতের উপর বায়য়াত গ্রহন করছি আর আমি আমার মাতাপিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেন, তুমি তাহাদের কাছে ফিরে যাও এবং তাহাদেরকে হাসাও যেমন তুমি তাহাদেরকে কাঁদিয়েছ। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৪১৬৩
(০৫) জিহাদের ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াত: অর্থাৎ যদি কখনো জিহাদের ময়দানে ভয়ে পালিয়ে যাবার শংকা দেখা দেয়, তখন আমীরে জিহাদের হাতে দৃঢ়তার বাইয়াত গ্রহণ করা। দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيْمٍ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ الْحَرَّةِ وَالنَّاسُ يُبَايِعُوْنَ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ فَقَالَ ابْنُ زَيْدٍ عَلَى مَا يُبَايِعُ ابْنُ حَنْظَلَةَ النَّاسَ قِيْلَ لَهُ عَلَى الْمَوْتِ
হজরত আববাদ ইবনে তামীম রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হারররার গটনার দিন যখন লোকজন আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন,তখন ইবনে জায়েদ রা. জিজ্ঞেস করলেন, ইবনে হানজালা লোকদের কিসের উপর বাইয়াত গ্রহণ করছেণ। তখন তাকে বলা হল দ্বীনের ওপর অটল থেকে মৃত্য বরণ করার উপর বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। বুখারি-৪১৬৭,১৯৫৯
হাদিস নং-০২
عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي عُبَيْدٍ قَالَ قُلْتُ لِسَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ عَلَى أَيِّ شَيْءٍ بَايَعْتُمْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ قَالَ عَلَى الْمَوْتِ
হজরত ইয়াযীদ ইবনি আবু উবায়দ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনি আকওয়া (রা.) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা হুদায়বিয়ার দিনে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট কোন কথার উপর বায়য়াত গ্রহন করেছিলেন? তিনি বলেন, মৃত্যুর উপর। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৪১৫৯
হুদাইবিয়ার দিনে বাইআত গ্রহণকারীদের সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا “হে রাসুল, যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করল, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করল। আল্লাহর কুদরতের হাত তাদরে হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার র্পূণ করে আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” সূরা ফাতাহ- ১০
আল্লাহ তাআলা আরও এরশাদ করেন, لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত যা তাদের অন্তরে বিদ্যমান। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন। সূরা ফাতাহ- ১৮
প্রশ্ন: খ। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও আত্মশুদ্ধির জন্য কোন খাঁটি শায়েখের হাতে বাইআত হওয়া কি বিদআত?
উত্তর: খ। উপরোক্ত আয়াতে কারিমা এবং হাদিস শরিফসমূহ প্রমাণ করে বাইয়াত গ্রহণ করা শরীয়ত সম্মত কাজ। দলিল:
حَدَّثَنِي الْحَبِيبُ الْأَمِينُ، أَمَّا هُوَ فَحَبِيبٌ إِلَيَّ، وَأَمَّا هُوَ عِنْدِي، فَأَمِينٌ عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» قَالَ: فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ؟ قَالَ: «عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، وَتُطِيعُوا – وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً – وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا» فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ
আউফ বিন মালিক আশজাঈ (রা.) বলেন, আমাদের সাত বা আট নয়জন লোকের উপস্থিতিতে রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? অথচ আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত গ্রহণের সময় তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত হয়েছি। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো ইতোপূর্বে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। এখন আবার আপনার কাছে কিসের বাইয়াত নিবো? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর এবং আল্লাহর আনুগত্ব কর। তিনি আর একটি কথা বললেন চুপে চুপে। তা হল-লোকের কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি দেখেছি, সেই বাইয়াত গ্রহণকারী দলের কারো কারো উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে চাবুক পরে গেছে কিন্তু সে কাউকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেনি, বরং সে নিজেই নিচে নেমে তুলে নিয়েছে। তাখরিজ: মুসলিম-১০৪৩
বাইয়াত হওয়ার বিধান: হজরত থানভি (রহ.) ও ইদ্রিস কান্ধলবী (রহ.) এ প্রসঙ্গে লেখেন, ‘কোরআনের বহু আয়াত ও রাসূল (ﷺ) এর হাদিসে বাইয়াতের বিষয়টি উল্লেখ থাকায়, বাইয়াত সুন্নাত, কল্যাণকর ও বরকতের বিষয় হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। রাসূল (ﷺ) উম্মতের শিক্ষক ও তাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধকারী ছিলেন। তেমনিভাবে তিনি ছিলেন ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান। অতএব, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি যে বাইয়াত নিয়েছিলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্যও ওই বাইয়াত সুন্নাত। তিনি উম্মতের অন্তরকে পরিশুদ্ধকারী হিসেবে উম্মত থেকে যে বাইয়াত নিয়েছিলেন, তার স্থলাভিষিক্ত হক্কানী রব্বানী উলামাদের জন্য সে বাইয়াত সুন্নাত। (তবে আত্মশুদ্ধি ফরজ, ইনশাল্লাহ পরে কখনও এ বিষয়ে আলোচনা হবে) সূত্র: সিরাতে মোস্তফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৯১, ইসলামিয়া লাইব্রেরি, বাংলাবাজার ঢাকা
সারকথা কথা হলো, উপরের হাদিসটিতে উক্ত সাহাবি বললেন, তিনি ইসলামের বাইয়াত নিয়েছেন তারপরও রাসূল (ﷺ) তাকে কয়েকটি গুনাহ না করার ব্যাপারে বাইআত বা অঙ্গীকার নিলেন। সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও আত্মশুদ্ধির জন্য কোন খাঁটি শায়েখের হাতে বাইআত হওয়াকে বিদআত বলার কোনো সুয়োগ নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক