❌আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার মূল্য:
পাহাড়ের সাথে ক্ষুদ্র বস্ত্ত এবং সমুদ্রের সাথে এক বিন্দু পানির সম্পর্ক যেমন, আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার সম্পর্ক তেমনই। দুনিয়া ধ্বংসশীল আর আখেরাত চিরস্থায়ী। আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের মূল্য স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ
১. সত্তাগতভাবে দুনিয়ার মূল্য: আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখেরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত’ (সূরা আল-‘আনকাবূত: ৬৪)।
২. সময়ের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও, তখন তোমরা মাটি জড়িয়ে ধর? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য’ (সূরা আত-তাওবা: ৩৮)।
৩. পরিমাপ গত দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য : বানূ ফিহরের ভাই মুসতাওরিদ হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: আল্লাহর শপথ! ইহকাল-পরকালেন তুলনা অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখল যে, কতটুকু পরিমাণ এতে পানি লেগেছে। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন’(সহীহ মুসলিম, হা/২৮৫৮)।
৪. অর্থ সম্পদের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য: জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলিয়া অঞ্চল থেকে মদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তার কাছে গিয়ে এর কান ধরে বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী’। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিকে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: ‘বিনা পয়সায় তোমরা কি সেটা নিতে আগ্রহী?’ তারা বললেন, এ যদি জীবিত হত, তবুও তো এটা ত্রুটিযুক্ত। কেননা এর কান ছোট। আর এখন সেটা তো মৃত, আমরা কিভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! এটা তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশী নগণ্য’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৯৫৭)।
৫. আয়তনের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য: সাহল ইবনু সা‘দ আস্-সা‘ঈদী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘জান্নাতে চাবুক পরিমাণ সামান্য জায়গাও দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে, তার থেকে উত্তম’ (সহীহ বুখারী, হা/৩২৫০, সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮১, হাদীছের শব্দ ইমাম বুখারী কর্তৃক চয়নকৃত)।
৬. উপভোগের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘তুমি বল, দুনিয়ার সুখ সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে, তার জন্য আখেরাত উত্তম এবং তোমাদের প্রতি সূতা পরিমাণ যুলমও করা হবে না’ (সূরা আন-নিসা: ৭৭)।
৭. ব্যবসায়িকভাবে দুনিয়ার মূল্য:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘যারা কুফরী করেছে, নগরসমূহে তাদের বিচরণ তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। (এগুলি) অল্প ভোগ্যসামগ্রী। এরপর তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম আর তা কতইনা মন্দ বিছানা’(সূরা আলে ইমরান: ১৯৬-১৯৭)।
✅আল্লাহর কাছে এ দুনিয়ার মূল্য কতটুকু এ বিষয়ে জামে তিরমিযীর একটি হাদীসে (হাদীস নং ২৩২০) আছে, ‘দুনিয়া যদি আল্লাহ তাআলার কাছে মাছির ডানার বরাবর মূল্য রাখত তাহলে আল্লাহ তাআলা কোনো কাফেরকে (আল্লাহ-দ্রোহীকে) এক ঢোক পানি পান করতে দিতেন না।’
কিন্তু বৈধ পন্থায় দুনিয়া অর্জন এবং হালাল উপার্জন কখনোই দোষণীয় নয়। বরং সৎ ও সত্যবাদী ব্যবসায়ী আখেরাতে নবীদের সঙ্গী হবে। তেমনি দুনিয়া উপার্জন যাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে বিমুখ করে না, কুরআনে কারীমে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। আসলে দোষণীয় হল, আল্লাহর নাফরমানীর মাধ্যমে আল্লাহকে ভুলে শুধু দুনিয়ার পিছনে পড়ে থাকা। দুনিয়া উপার্জনে হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করা।