জিজ্ঞাসা-১৩২০২:
আসসালামু আলাইকুম।
আল বুরহানের মুফতি সাহেবগনের নিকট জানার বিষয় হলোঃ স্বর্ণের নেসাব কি মানসুখ হয়ে গেছ? শুধু রুপার নেসাবটাই ধরতে হবে এটা কি ওয়াজিব বিধান? দলিল সহ জানতে চাই।
তারিখ:০৫/০৩/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জামিউল ঢাকা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর যুগে ৫২.৫ তলা রুপা এবং ৭.৫ ভরি সোনা মূল্য সমান সমান ছিল।
কিন্তু বর্তমানে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ফোকাহায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, রুপার নিসাব অনুসারে যাকাত দিতে হবে।
দলিল:
١٠٧٣١ - حدثنا جرير عن عبد الحميد عن ليث عن عطاء أن عمر كان يأخذ العروض في الصدقة من الورق.
হযরত ওমর (রাযিঃ) যাকাতের নিসাব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সকল পণ্যসামগ্রীর মূল্যমানকে রৌপ্যমূল্য হতে ধার্য করতেন।
অর্থাৎ রুপাকে সকল প্রকার পণ্যসামগ্রীর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের মূল মানদণ্ড / নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করেই যাকাতের নিসাব ধার্য করতেন। তাখরিজ: মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা- ১০৭৩১
হাদিস নং-০২
[٧٠٦٣] عبد الرزاق، عَنِ الثَّوْريِّ قَالَ: فَمَا كَانَ مِنَ الْبَقَرِ لِتِجَارَةٍ فَإِنَّهُ يُقَوَّمُ قِيمَةً لَا يُؤْخَذُ عَلَى هَذَا الْحِسَابِ، إِنَّمَا يُقَوَّمُ قِيمَةً، فَإِذَا بَلَغَ مِائَتَيْ دِرْهَمٍ فَفِيهَا الزَّكَاةُ.
অর্থাৎ কোন গরুর পাল যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লালন-পালন করা হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো ব্যবসায়িক অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর আওতাভুক্ত হয়ে যাবে। গৃহপালিত গরুর ক্ষেত্রে গতানুগতিক যাকাতের যে নিসাব প্রচলিত আছে, তা এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা, বরং তখন রূপাকে প্রকৃত মানদন্ড ধরে সেগুলোর বাজারমূল্য নির্ধারণ করতঃ যাকাতের নিসাব ধার্য করা হবে। সেগুলোর বাজারমূল্য দুইশত দিরহাম তথা রুপার নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আবশ্যক হয়ে যাবে। ( মুসন্নাফে আব্দুর রাযযাক- ৭০৬৩)
উপরিউক্ত আছার থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বপ্রকার পণ্যসামগ্রীর মূল্যমান রৌপ্যমুদ্রাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে, রূপাকে মূল মানদণ্ড বিবেচনা করেই পণ্যসামগ্রীর মূল্য ধার্য করা হবে। সেগুলোর মূল্য দুইশত দিরহামের সমপরিমাণ কিংবা তদূর্ধ্ব হলে বছর অতিক্রান্ত হওয়া মাত্রই যথানিয়মে যাকাত আবশ্যক হবে।
হাদীসের সুপ্রাচীন প্রামাণ্য গ্রন্থদুটির বক্তব্যের আলোকে দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলা যায়, যাকাত আবশ্যক হওয়ার ক্ষেত্রে স্বর্ণের নিসাব হল, সাড়ে সাত ভরি। রূপার নেসাব হল, সাড়ে বায়ান্ন ভরি। এছাড়া অন্য সকল পণ্যসামগ্রীর ( যেমন, কাগুজে মুদ্রা, ব্যবসায়িক পণ্য সামগ্রী, প্রয়োজনাতিরিক্ত আসবাবপত্র ইত্যাদির) নিসাবকে রূপার মূল্যমান তথা সাড়ে বায়ান্ন ভরি ধরেই যাকাতের নিসাবের হিসাব করতে হবে।
সৌদী আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড "ফাতাওয়া আল-লাজনাহ-আদ-দাঈমাহ" সংকলনের ৯ম খন্ডের ২৫৪ পৃষ্ঠার বক্তব্যেও এই মতের সমর্থন মেলে-
فتقدر بالأحظ للفقراء منهما لكونه أنفع لهم
অর্থাৎ স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রার মধ্য হতে যেই মূল্যমানটি যাকাতের নিসাব হিসেবে বিবেচনায় আনলে দরিদ্র-অসহায়-অভাবী-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অধিকতর উপকার বয়ে আনে এবং তাদের ভাগ্যন্নোতি ঘটায়,সেই মুদ্রাকেই নিসাবের মূল্য নির্ধারণের মূল মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হবে।
আর স্বভাবতই রৌপ্যমুদ্রা অনুসারে যাকাতের নিসাব হিসেব করাটা ফকির-মিসকিনদের জন্য বেশী লাভজনক। কারণ এটি তুলনামূলক অধিক সংখ্যক মানুষের উপর যাকাত আবশ্যক করে। এবং এর ফলে স্বর্ণের নিসাবের চাইতেই অপেক্ষাকৃত আরো স্বল্প সম্পত্তির মালিক হলেও যাকাত অবধারিত হয়ে যায়।। যা নিঃসন্দেহে দরিদ্রশ্রেণীর লোকদের অনুদানপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে বহুগুণে তরান্বিত করে দেয়।
সারকথা হলো, স্বর্ণের নিসাব মানসুখ হয়নি। গরিবের উপকার্থে রুপার নিসাব ধার্য করা হয়েছে।
প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে। সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭
আর কারও কাছে শুধু সোনা বা রূপা থাকে, নগদ টাকা পয়সা না থাকে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আলহামদুলিল্লাহ আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -১২৫২৬ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। সেটা দেখা যেতে পারে। লিংকটি শেয়ার করা হলো:
https://al-burhanbd.blogspot.com/2024/03/blog-post_71.html
والله اعلم بالصواب