আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩২০৫: কিবলার দিকে টয়লেট-বাথরুম নির্মাণ করা যাবে কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩২০৫: 

আসসালামু আলাইকুম।  আমার জানার বিষয় বাসা বাড়িতে নিরুপায় হয়ে কেবলার দিক মুখ করে টয়লেট নির্মাণ করা যাবে কিনা? আমিতো জানি যে পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে ফিরে পায়খানা পেশাব করা যায় না। দলিল সহ দিলে ভালো হতো। ধন্যবাদ।

তারিখ:০৯/০৩/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক সিলেট থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, উন্মুক্ত স্থানে ক্বিবলামুখী বা ক্বিবলার দিকে পিঠ করে পেশাব-পায়খানা করা ইমামদের সর্বসম্মতক্রমে হারাম। তবে আড়াল বা ঘেরাও জায়গায় নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।


প্রথম মত: ইমাম মালেক, ইমাম শাফি, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং বর্তমানে আহলে হাদিসের মতে পর্দা বা আড়াল জায়গায় কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে প্রসাব-পায়খানা করা জায়েয।

দ্বিতীয় মত: ইমাম আবু হানিফা, তার অনুসারীগণ এবং শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ. মতে সর্বাবস্থায় কেবলার দিকে পিঠ বা মুখ করে  প্রসাব-পায়খানা করা হারাম বা মাকরুহ। নিষেধাজ্ঞাটি আম।


তিন ইমামের দলিল:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالاَ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ أَبَانَ بْنِ صَالِحٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِبَوْلٍ فَرَأَيْتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْبَضَ بِعَامٍ يَسْتَقْبِلُهَا . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي قَتَادَةَ وَعَائِشَةَ وَعَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ جَابِرٍ فِي هَذَا الْبَابِ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ . 


৯. মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনে মুছন্না (রাহঃ) ..... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, পেশাবের সময় কিবলামুখী হয়ে বসতে রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু তাঁর ইন্‌তিকালের এক বছর পূর্বে তাঁকে আমি ঐ অবস্থায় কিবলামুখি হতে দেখেছি।

(7) Chapter: What Has Been Related About The Permission for That


Jabir bin Abdullah said:

"The Prophet prohibited us from facing the Qiblah while urinating. Then i saw him facing it a year before he died." (Hasan)


Abu Qatadah narrated that :

he saw the Prophet urinating while facing the Qiblah. Qutaibah narrated that to us, he said: "Ibn Lahi’ah informed us." Jabir’s Hadlth about the Prophet is more correct than the Hadith of Ibn Lahi’ah. Ibn Lahi’ah is weak according to the scholars of Hadith. He was graded weak by Yahya bin Sa’eed Al-Qattan, and others, [due to his memorization].

—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৯ (আন্তর্জাতিক নং ৯)


ইমাম আবু হানিফা ও শায়েখ ইবনে তাইমিয়ার দলিল:

394 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا أَتَيْتُمُ الغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوا القِبْلَةَ، وَلاَ تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا» قَالَ أَبُو أَيُّوبَ: «فَقَدِمْنَا الشَّأْمَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ بُنِيَتْ قِبَلَ القِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ، وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ تَعَالَى» ، وَعَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا أَيُّوبَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ

بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125]


394 - حدثنا علي بن عبد الله، قال: حدثنا سفيان، قال: حدثنا الزهري، عن عطاء بن يزيد الليثي، عن أبي أيوب الأنصاري، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «إذا أتيتم الغائط فلا تستقبلوا القبلة، ولا تستدبروها ولكن شرقوا أو غربوا» قال أبو أيوب: «فقدمنا الشأم فوجدنا مراحيض بنيت قبل القبلة فننحرف، ونستغفر الله تعالى» ، وعن الزهري، عن عطاء، قال: سمعت أبا أيوب، عن النبي صلى الله عليه وسلم مثله

باب قول الله تعالى: {واتخذوا من مقام إبراهيم مصلى} [البقرة: 125]


২৭০। মদীনা, সিরিয়া ও (মদীনার) পূর্ব দিকের অধিবাসীদের কিবলা। কিবলা পূর্বে বা পশ্চিমে নয়। কারণ নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা পায়খানা বা পেশাব করতে কিবলামুখী হবে না, বরং তোমরা (উত্তর অঞ্চলের অধিবাসীরা) পূর্বদিকে কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরাবে।


৩৮৬। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... আবু আইয়ুব আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠও দিবে না, বরং তোমরা পূর্বদিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। আবু আইয়ুব আনসারী (রাযিঃ) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতাম।


যুহরী (রাহঃ) আতা (রাহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আমি আবু আইয়ুব (রাযিঃ)-কে নবী (ﷺ) এর নিকট থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি।


Narrated Abu Aiyub Al-Ansari: The Prophet said, "While defecating, neither face nor turn your back to the Qibla but face either east or west." Abu Aiyub added. "When we arrived in Sham we came across some lavatories facing the Qibla; therefore we turned ourselves while using them and asked for Allah’s forgiveness."

 সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৬ (আন্তর্জাতিক নং ৩৯৪)



হানাফিদের পক্ষ থেকে জবাব:

প্রথমত: উন্মুক্ত স্থানে কেবলার দিকে প্রসাব-পায়খানা করা নিষেধ আর আড়াল-দেয়াল বা  প্রতিবন্ধক  থাকলে জায়েজ এটা কি আজ বিরোধী। উদাহরণ: কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার বিধান। এখন উপরোক্ত যুক্তি ধরলে তাহলে উন্মুক্ত জায়গায় নামাজ পড়লে শুধু নামাজ হবে মসজিদে বা ঘরের নামাজ পড়লে নামাজ হবে না কেননা পশ্চিম দিকে আড়াল বা প্রতিবন্ধক হয়েছে। সারকথা হলো , মসজিদে বা  ঘরে নামাজ পড়লে যদি নামাজ হয়, তাহলে দেয়াল বা ঘেরাও জায়গায় ইস্তেঞ্জা করলে নিষেধ হবে না কেন?


দ্বিতীয়ত:  হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা. হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ করেছেন যে, সিরিয়ার ইসিত্মঞ্জাখানাগুলো কিবলার দিকে ফিরিয়ে নির্মিত ছিল। তাঁরা তা ব্যবহারের সময় শরীর ঘুরিয়ে বসতেন, তার পরও আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এ থেকে বুঝা গেলো যে, খোলা ময়দানের মত ইসিত্মঞ্জাখানার ভেতরেও কিবলার প্রতি সম্মান দেখানো জরম্নরী এবং ওযর ব্যতীত কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করা মাকরূহ। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (আলমগিরী: ১/৫০)

এর বিপরীতে হযরত ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত হাফসার ঘরের ছাদে উঠে রসূল স.কে ইসিত্মঞ্জাখানার মধ্যে কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করতে দেখেছেন। (বুখারী-১৪৭) এ হাদীসের তুলনায় আমরা পূর্ববর্ণিত হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা.-এর হাদীসকে এ কারণে প্রাধান্য দিয়ে থাকি যে, কা’বার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সকলের জন্য ব্যাপক। আর হযরত ইবনে উমার রা. কর্তৃক বর্ণিত রসূল স.-এর উক্ত কাজটি তাঁর ব্যক্তিগত। সুতরাং হতে পারে এটা রসূল স.-এর বৈশিষ্ট্য যা অন্যদের জন্য বৈধ নয়। অথবা এটা তিনি কোন ওযরের কারণে করেছেন। উপরন্তু হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা.-এর হাদীস অনুসরণ করলে কা’বার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।


তৃতীয়ত: কেবলার দিকে থুতু ফেলা বা নিক্ষেপ করা নিষেধ। তাহলে প্রসাব পায়খানা তার চেয়েও মারাত্মক। সেটা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ তা সহজেই অনুমেয়। দলিল -

عَنْ حُذَيْفَةَ، أَظُنُّهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ تَفَلَ تُجَاهَ الْقِبْلَةِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَفْلُهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ

অর্থঃ হযরত হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কিবলাহর দিকে থুথু ফেলে কিয়ামাতের দিন সে ঐ থুথু নিজের দু’ চোখের মধ্যখানে পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে।

সূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৩৮২৪ সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৬৩৯ আত তারগীব খ:১ পৃ: ১৬১ (হাদিস সহিহ)


عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنّ رَسولَ اللَّهِ ﷺ رَأى في جِدارِ القِبْلَةِ مُخاطًا أوْ بُصاقًا أوْ نُخامَةً، فَحَكَّهُ


অর্থঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কিবলার দিকে দেওয়ালে থুথু অথবা কাশ বা নাকের পানি দেখিতে পাইলেন, তিনি উহা ঘষিয়া পরিষ্কার করিয়াছিলেন।

সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস:৪০৭ মুসলিম: ৫৪৯


সারকথা হলো, সুযোগ থাকলে পশ্চিম বা কিবলার দিকে টয়লেট নির্মাণ করবে না, একান্ত যদি করে ফেলে, তাহলে যখন প্রসাব-পায়খানা করবে তখন একটু ঘুরে বসবে অর্থাৎ মুখ ও পিঠ কিবলা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করব। কেননা আবু আইয়ূব আনসারী বলেন, সিরিয়ার ইসিত্মঞ্জাখানাগুলো কিবলার দিকে ফিরিয়ে নির্মিত ছিল। তাঁরা তা ব্যবহারের সময় শরীর ঘুরিয়ে বসতেন, তার পরও আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।



  والله اعلم بالصواب