✅মানবজীবনে গুনাহের কুপ্রভাব: পর্ব ৪ (সর্বশেষ পর্ব)
🟢লজ্জা-শরম কমে যাওয়া :
গুনাহের কাজ করলে ধীরে ধীরে লজ্জা-শরম কমে যেতে থাকে। তখন সে যা ইচ্ছা তা-ই বলতে পারে, করতে পারে। হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘‘যখন তোমার থেকে লজ্জা চলে যাবে তখন তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করো।’’[সহীহুল বুখারী : ৬১২০।]
অর্থাৎ লজ্জাহীন মানুষ যা ইচছা তা-ই করতে পারে। আর লজ্জার পুরোটুকুই কল্যাণ। যার লজ্জা নাই তার কাছে কল্যাণও থাকার কথা না। তাই লজ্জাহীন মানুষ কল্যাণহীন হতে পারে। আর যখন কারো মধ্যে কল্যাণ থাকবে না তখন তার কর্মকা- বিপথে পরিচালিত হবে। এগুলো সবই তার গুনাহের কুপ্রভাবে হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেছেন :
وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ ‘‘লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।’’[সহীহুল বুখারী : ৯।]
🟢আল্লাহর নি‘আমত থেকে বঞ্চিত হওয়া :
গুনাহের কারণে ব্যক্তি আল্লাহর অনেক নি‘আমত থেকে বঞ্চিত হয়। ‘আলী বলেন, ‘‘যদি তুমি আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে থাকো তাহলে তার যত্ন নাও। কারণ গুনাহ নি‘আমতকে দূর করে দেয়।’’
🟢গুনাহের কারণে গুনাহগার ও তার রবের মাঝে এবং তার ও অন্যান্য মানুষের মধ্যে দূরত্ব ও দুঃসম্পর্ক তৈরি হয় :
কোন এক পূর্ববর্তী বিদ্বান বলেছেন, ‘‘আমি যখন আল্লাহর অবাধ্য হই তখন তার কুপ্রভাব আমি আমার বাহন ও আমার স্ত্রীর আচার-আচরণে দেখতে পাই।’’
🟢দৈনন্দিন কাজে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া ও সমস্যায় পড়া :
গুনাহের কুপ্রভাবে গুনাহগার যখনই কোনো কাজ করতে যায় তখনই সে তাতে বাধাপ্রাপ্ত ও সমস্যায় পতিত হয়। তার উপরে কাজটি কঠিন হয়ে যায়। এর বিপরীতে মুত্তাকী ব্যক্তি যখন কোনো কাজ করতে যায় তখন আল্লাহ তার জন্য সে কাজকে সহজ করে দেন। তবে তাকে আল্লাহ কখনো কখনো পরীক্ষাও করেন।
🟢গুনাহ গুনাহগারের জীবনকে অন্ধকারময় করে দেয় :
গুনাহগার ব্যক্তি তার অন্তরে অন্ধকার অনুভব করে। রাতের অন্ধকারে আলোহীন পথিকের যে অবস্থা হয় গুনাহের ভারে নিমজ্জিত ব্যক্তিরও তেমন অবস্থা হয়।
চোখ না থাকার কারণে যেমন অন্ধ ব্যক্তির সামনে দুনিয়ার সবকিছু অন্ধকার মনে হয় তেমনি গুনাহের কারণে চামড়ার চোখ থাকার পরও গুনাহের অন্ধকারে গুনাহগারও হাবুডুবু খায়। কারণ আল্লাহর আনুগত্য করাই হচ্ছে আসল আলো। আর তাঁর অবাধ্যতাই হচ্ছে অন্ধকার।
অন্ধকার যত বাড়তে থাকে আলোহীন পথিক যেমন বেশি পথ হারায় তেমনি গুনাহগারও যখন গুনাহ মাফ না করিয়ে নতুন নতুন গুনাহ করতে থাকে তখন ধীরে ধীরে সে বিদ্‘আত, বিভ্রান্তি ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অথচ সে বুঝতেই পারে না যে সে বিপথে চলছে। একসময় সে কোন কিছুকেই গুনাহ মনে করে না। সবকিছুকেই বৈধ ও সঠিক কাজ মনে করে।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস বলেন, ‘‘সাওয়াবের কাজ হলো চেহারা উজ্জ্বলতা, অন্তরের আলো, রিয্ক্বের প্রশস্তি, শরীরের শক্তি এবং মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টিকারী। আর গুনাহ হচ্ছে চেহারার কলুষতা, অন্তরের অন্ধকার, শরীরের দুর্বলতা, রিয্ক্বের সংকট ও মানুষের অন্তরে বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী।’’
🟢গুনাহের কারণে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হতে হয় :
আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়া গুনাহের আর যদি কোনো কুপ্রভাব না থাকতো তাহলে শাস্তি হিসেবে এটাই যথেষ্ট হতো। আমরা যদি একবার চিন্তা করে দেখি যে, গুনাহের শাস্তি হিসেবে আমরা আর আল্লাহর আনুগত্য করতে পারবো না- এমন যদি হতো তাহলে তা কতই না ভয়াবহ একটি ব্যাপার হতো। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন, আ-মীন।)
গুনাহের কারণে আল্লাহর আনুগত্যের পথ ও সুযোগ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে একটি, দু’টি, তিনটি করতে করতে আনুগত্যের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এসব আনুগত্যের পথগুলোর এক একটি দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকে উত্তম ছিল।
🟢গুনাহ চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় :
গুনাহ ধীরে ধীরে গুনাহগারের অন্তরে গুনাহ থেকে বাঁচার ইচ্ছাকে দুর্বল করে দেয়। আর আরো বেশি গুনাহ করার ইচ্ছাকে শক্তিশালী ও বৃদ্ধি করে দেয়। তার অন্তর থেকে তাওবার ইচ্ছাকে দূর করে দেয়। একসময় সে পুরোপুরিভাবে তাওবাকে পরিত্যাগ করে।
🟢গুনাহের কাজের প্রতি ঘৃণাভাব দূর হয়ে যায় :
নিয়মিত গুনাহ করতে থাকলে গুনাহ গুনাহগারের অন্তর থেকে গুনাহের প্রতি ঘৃণাভাব দূর করে দেয়। ফলে সে আর গুনাহকে খারাপ কিছু মনে করে না।
🟢গুনাহ অন্তরকে গাফিল করে দেয় :
গুনাহগার যখন অতিমাত্রায় গুনাহ করতে থাকে তখন তার অন্তরে মোহর পড়ে যায়। ফলে তার অন্তরে ভালো কিছুর প্রভাব পড়ে না। তখন সে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।[https ://islamqa.info/ar/23425; ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) তার ‘‘আল জাওয়াব আল কাফী’’ গ্রন্থে উক্ত কুপ্রভাবগুলোর অনেকগুলো উল্লেখ করেছেন।]
উপরোল্লিখিত কুপ্রভাবগুলো ছাড়াও গুনাহের আরো অনেক কুপ্রভাব মানবজীবনে রয়েছে। অনেক প্রভাব রয়েছে যেগুলো শুধু ভুক্তভোগীই জানে এবং অনুভব করে। গুনাহের কুপ্রভাবে যেমন জীবন সংকীর্ণ ও কষ্টকর হয়ে যায় তেমনি গুনাহ থেকে মুক্তি জীবনকে করে উচ্ছ্বল, সফল ও সুখময়।