জিজ্ঞাসা-১৩২০৯:
আসসালামু আলাইকুম। الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
অর্থ : যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে। সূরা হামীম সিজদা-০৭
এ আয়াতে কারিমা দ্বারা বোঝা যায় কাফির তথা অমুসলিমদের ওপরও যাকাত আদায় করা ফরজ। আসলে আয়াতের ব্যাখ্যা কী? দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান।
তারিখ:১২/০৩/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী নাটোর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে, অমুসলিমদের উপর শরিয়তের হুকুম তথা ইবাদত প্রযোজ্য নয়। যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত- ফিতরা ইত্যাদি। দলিল-
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ جَمِيعًا عَنْ وَكِيعٍ، - قَالَ أَبُو بَكْرٍ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، - عَنْ زَكَرِيَّاءَ بْنِ إِسْحَاقَ، قَالَ حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ صَيْفِيٍّ، عَنْ أَبِي مَعْبَدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، - قَالَ أَبُو بَكْرٍ رُبَّمَا قَالَ وَكِيعٌ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ مُعَاذًا، - قَالَ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ . فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ فِي فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ " .
২৯। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা, আবু কুরায়ব ও ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, মু’আয (রাযিঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে ইয়ামানের প্রশাসক নিযুক্ত করে পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ তাদের সাথে সাক্ষাত হলে এ কথার আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। যদি তারা তা মেনে নেয় তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে দিনে এবং রাতে আল্লাহ তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্তের নামায ফরয করেছেন। যদি তারা তা মেনে নেয়, তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন। ধনীদের থেকে তা আদায় করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করা হবে। তারা এ কথাটি মেনে নিলে, সাবধান, যাকাত হিসেবে তুমি তাদের থেকে বাছাই করে উত্তমগুলো নিবে না। আর মযলুমের (বদ) দুআ থেকে সাবধান! কেননা আল্লাহর ও মযলূমের দুআর মধ্যে কোন অন্তরায় নেই।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯ (আন্তর্জাতিক নং ১৯-১)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রথমে তাদেরকে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দিতে বলবে। এটা মেনে নিলে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা বলবে। যদি তাও মেনে নেয়, তবে তৃতীয় পর্যায়ে বলবে যাকাতের কথা। সুতরাং বোঝা গেল ঈমান আনার পর অন্যান্য বিধান প্রযোজ্য হবে।
দ্বিতীয় কথা হলো, উল্লেখিত আয়াত কারিমায় জাকাত শব্দ যারা প্রচলিত অর্থ উদ্দেশ্য নয়। এর অর্থ হলো কালেমা, যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতা অর্থাৎ শিরক ও কুকুর থেকে পবিত্র হওয়া, যাকাত অস্বীকার করা ইত্যাদি ব্যাখ্যা করেছেন।
( الذين لا يؤتون الزكاة )
قال ابن عباس : الذين لا يقولون لا إله إلا الله وهي زكاة الأنفس .
والمعنى : لا يطهرون أنفسهم من الشرك بالتوحيد .
وقال الحسن وقتادة : لا يقرون بالزكاة ، ولا يرون إيتاءها واجبا .
وقال الضحاك ومقاتل : لا ينفقون في الطاعة ولا يتصدقون .
وقال مجاهد : لا يزكون أعمالهم ( وهم بالآخرة هم كافرون ) .
অর্থাৎ যারা যাকাত দেয় না, রঈসুল মুফাসসিরীন হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেন, এর অর্থ হল তারা বলে না 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' আর এটা অন্তরের পবিত্রতা।
এর অর্থ হলো: তারা নিজেদেরকে তাওহীদ দ্বারা শিরকে পবিত্র করে না।
ইমাম হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন, তারা যাকাতকে স্বীকার করে না। এটা আদায় করা ফরজ করে না।
ইমাম আয-যহহাক ও মাকাতিল রহ বলেন, হে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে না এবং সদকা করে না।
ইমাম মুজাহিদ রহ বলেন, তাদের আমলকে পরিশুদ্ধ করে না।
সূত্র: তাফসিরে বাগাবি ইমাম আল হুসাইন ইবনে মাসউদ আলবাগাবি- ৭ খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো,
والله اعلم بالصواب