জিজ্ঞাসা-১৩২০০:
আসসালামু আলাইকুম। মানুষের মৃত্যুর পরে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উইল করার বিধান কী?
তারিখ:০১/০৩/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুল হামিদ নওগাঁ থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে দুটি মতামত রয়েছে।
প্রথম মত:
নাজায়েজ। উপমহাদেশের অধিকাংশ আলেম, সৌদি আরবের শায়েখ ইবনে বাজ এবং উসাইমিন রহ. এই মতের পক্ষে। দলিল-
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا
নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। সূরা ইসরা-৭০
হাদিস নং-০১
وعن عائشة رضي الله عنها: أن رسول الله ﷺ قال: كسر عظم الميت ككسره حيًّا.
رواه أبو داود بإسنادٍ على شرط مسلم.
অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, লাশের হাড্ডি ভাঙ্গা জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার সমান। তাখরিজ: আবু দাউদ-৩২০৭
অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মুমিনের সম্মান মৃত্যুর পরেও অবশিষ্ট থাকে যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল’ (ফাৎহুল বারী ৯/১১৩)
হাদিস নং-০২
وقد أخرج ابن أبي شيبة عن ابن مسعود قال " أذى المؤمن في موته كأذاه في حياته "
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘মৃত মুমিনকে কষ্ট দেওয়া তাকে জীবিত অবস্থায় কষ্ট দেওয়ার ন্যায়’ । আওনুল মা‘বূদ হা/৩১৯১, ৯/২৪ পৃঃ ; মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা
দ্বিতীয় মত:
জীবন বাঁচানোর জন্য জায়েজ। মিশরের ফতোয়া বিভাগ, দারুল উলুম করাচি এবং সৌদি আরবে দু একজন আলেমের পক্ষে। তবে অঙ্গ দান ও প্রতিস্থাপন জায়েজ হওয়ার জন্য তাঁরা যেসব শর্ত উল্লেখ করেছেন তা হলো:
» অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া সুস্থ হওয়া অসম্ভব—এ কথা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষ থেকে আসতে হবে।
» অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, তার নিশ্চয়তা বা প্রবল ধারণা থাকতে হবে।
» মুসলিমের অঙ্গ অমুসলিমের শরীরে, তদ্রূপ অমুসলিমের অঙ্গ মুসলিমের শরীরে প্রতিস্থাপন থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকতে হবে।
» মৃত ব্যক্তি কর্তৃক মৃত্যুর আগে লিখিত অনুমতি দিয়ে যেতে হবে। অবশ্য অপারগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির বৈধ ওয়ারিশদের অনুমতি যথেষ্ট গণ্য হবে।
» অঙ্গ নেওয়ার জন্য দেহের মূল কাঠামো বিকৃত করা যাবে না।
» দাফনের আগেই অঙ্গ নিতে হবে।
» অঙ্গ সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দিতে হবে।
উল্লিখিত শর্তগুলো জীবিত ও মৃত উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। জীবিত ব্যক্তি থেকে অঙ্গ নেওয়ার জন্য এ ছাড়া আরও চারটি শর্ত আবশ্যক। তা হলো:
» অঙ্গ দান করার কারণে তার স্বাস্থ্য বড় ধরনের কোনো ঝুঁকির সম্মুখীন না হওয়া।
» এমন কোনো অঙ্গ দান করা যাবে না, যার ওপর মানুষের জীবন নির্ভর করে, যেমন—হৃদয়, উভয় কিডনি ইত্যাদি।
» এমন অঙ্গ দেওয়া যাবে না, যার কারণে মানুষ তার কোনো একটি মৌলিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, উভয় চক্ষু দান করা যাবে না।
» শুধু এমন অঙ্গ দান করা যাবে, যার ব্যাপারে অভিজ্ঞ চিকিৎসক আশ্বস্ত করবেন যে ওই অঙ্গ ছাড়া সে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।
তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শর্ত সাপেক্ষে বৈধ হওয়ার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছেন, তাঁরা এ-ও বলেছেন যে যথাসম্ভব এই পদ্ধতি এড়িয়ে চলা আবশ্যক।
সূত্র: মাজাল্লাতুল মাজমায়িল ফিকহিদ দুয়ালি, চতুর্থ সংখ্যা: ১/ ৮৯ (৬-১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২); দারুল ইফতা, দারুল উলুম করাচি, ফতোয়া: ১৭/ ১৮৬৩।
সারকথা হলো,
والله اعلم بالصواب