আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩২১০: রোযা অবস্থায় রক্ত প্রদান করা যাবে কিনা

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩২১০: 

আসসালামু আলাইকুম। আসসালামু আলাইকুম। রোযা অবস্থায় রক্ত প্রদান করা যাবে কিনা এবিষয়ে শরয়ী বিধান কি,মুফতি সাহেবগন দয়া করে  জানাবেন। বিষয়টি জরুরি। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম জাযা দান করুন। 

 আসসালামু আলাইকুম।

তারিখ:১৩/০৩/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা মনিরুল ইসলাম রাজশাহী থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যুগে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মত রক্তদান পদ্ধতি ছিল না, তবে শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে শরীর থেকে রক্ত বের করতেন এর ওপর কিয়াস করে ফোকাহায়ে কেরাম ফতোয়া প্রদান করেছেন।

  দ্বিতীয় কথা হলো, এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

প্রথম মত: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর মতে, শিঙ্গা লাগালে বা রক্ত বের /দান করলে রোজা ভঙ্গ হয়। দলিল-

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَبِي الأَشْعَثِ، عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَتَى عَلَى رَجُلٍ بِالْبَقِيعِ وَهُوَ يَحْتَجِمُ وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِي لِثَمَانَ عَشْرَةَ خَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ " أَفْطَرَ الْحَاجِمُ وَالْمَحْجُومُ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى خَالِدٌ الْحَذَّاءُ عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ بِإِسْنَادِ أَيُّوبَ مِثْلَهُ .


২৩৬১. মুসা ইবনে ইসমাঈল ..... শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বাকী’ নামক স্থানে এক ব্যক্তির নিকট গমন করে তাকে শিংগা লাগাতে দেখেন। এ সময় তিনি রমযানের আঠার তারিখ অতিক্রান্ত হওয়ার বিষয় গণনা করে বলেনঃ যে ব্যক্তি শিংগা লাগায় এবং যাকে লাগায় তারা উভয়ে রোযা ভঙ্গ করল।

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৬১ (আন্তর্জাতিক নং ২৩৬৯)


 দ্বিতীয় মত: ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক ও ইমাম শাফি রহ এর মতে শিঙ্গা লাগালে বা রক্ত বের /দান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। দলিল-


بَابُ الحِجَامَةِ وَالقَيْءِ لِلصَّائِمِ وَقَالَ لِي يَحْيَى بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ سَلَّامٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُمَرَ بْنِ الحَكَمِ بْنِ ثَوْبَانَ: سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «إِذَا قَاءَ فَلاَ يُفْطِرُ إِنَّمَا يُخْرِجُ وَلاَ يُولِجُ» ، وَيُذْكَرُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: «أَنَّهُ يُفْطِرُ» وَالأَوَّلُ أَصَحُّ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ، وَعِكْرِمَةُ: «الصَّوْمُ مِمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِمَّا خَرَجَ» وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَحْتَجِمُ وَهُوَ صَائِمٌ، ثُمَّ تَرَكَهُ، فَكَانَ يَحْتَجِمُ بِاللَّيْلِ وَاحْتَجَمَ أَبُو مُوسَى لَيْلًا وَيُذْكَرُ عَنْ سَعْدٍ، وَزَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، وَأُمِّ سَلَمَةَ: احْتَجَمُوا صِيَامًا وَقَالَ بُكَيْرٌ، عَنْ أُمِّ عَلْقَمَةَ: كُنَّا نَحْتَجِمُ عِنْدَ عَائِشَةَ «فَلاَ تَنْهَى» وَيُرْوَى عَنِ الحَسَنِ عَنْ غَيْرِ وَاحِدٍ مَرْفُوعًا فَقَالَ: «أَفْطَرَ الحَاجِمُ وَالمَحْجُومُ» وَقَالَ لِي عَيَّاشٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا يُونُسُ، عَنِ الحَسَنِ مِثْلَهُ، قِيلَ لَهُ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: نَعَمْ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ


1938 - حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ احْتَجَمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ، وَاحْتَجَمَ وَهُوَ صَائِمٌ

ইমাম বুখারী রহঃ বলেন, ইয়াহয়া ইবনে সালিহ রহঃ আমাকে বলেছেন ...... আব হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বমি করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। কেননা এতে কিছু বের হয়, ভিতরে প্রবেশ করে না। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে এও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। প্রথম উক্তিটি বেশী সহীহ। 

ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এবং ইকরিমা (রাহঃ) বলেন, কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা নষ্ট হয়; কিন্তু বের হওয়ার কারণে নয়। 

ইবনে উমর (রাযিঃ) রোযাদার অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন। অবশ্য পরবর্তী সময়ে তিনি দিনে শিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দিয়ে রাতে লাগাতেন। 

আবু মুসা (রাযিঃ) রাতে শিঙ্গা লাগাতেন। 

সা’দ, যায়দ ইবনে আরকাম এবং উম্মে সালামা (রাযিঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তারা সকলেই রোযা পালনকারী অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন। 

বুকায়র (রাহঃ) উম্মে আলকামা (রাহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আমরা আয়িশা (রাযিঃ) এর সামনে শিঙ্গা লাগাতাম, তিনি আমাদের নিষেধ করতেন না। 

১৮১৪। মুআল্লা ইবনে আসাদ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং রোযাদার অবস্থায়ও শিঙ্গা লাগিয়েছেন।


Narrated Ibn `Abbas:

The Prophet (ﷺ) was cupped while he was in the state of lhram, and also while he was observing a fast.

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮১৪ (আন্তর্জাতিক নং ১৯৩৮)


প্রাধান্য মত: 

তিন ইমাম তথা জমহুরের মত অধিক শক্তিশালী, কেননা রোজা ভঙ্গের হাদিস শরিফটি মানসুখ। দলিল-

قال: قال ابن عبد البر وغيره: فيه دليل على أن حديث: أفطر الحاجم والمحجوم، منسوخ لأنه جاء في بعض طرقه أن ذلك كان في حجة الوداع

অর্থাৎ আল্লামা ইবনে আব্দুল বার ও অনেকেই বলছেন, যে ব্যক্তি শিংগা লাগায় এবং যাকে লাগায় তারা উভয়ে রোযা ভঙ্গ হয়, এই হাদিসটি মানসুখ বা রহিত।

কারণ এটি তার কয়েকটি উপায়ে এসেছিল যে এটি হজ্জে বিদায়  ছিল।


সারকথা হলো,  রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে রোযা ভাঙ্গে না। তাই টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যাবে। তবে এ পরিমাণ রক্ত দেওয়া মাকরুহ যার কারণে শরীর অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোযা রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই দুর্বল লোকদের জন্য রোযা অবস্থায় অন্য রোগীকে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়। আর এমন সবল ব্যক্তি যে রোযা অবস্থায় অন্যকে রক্ত দিলে রোযা রাখা তার জন্য কষ্টকর হবে না সে রক্ত দিতে পারবে। এতে কোন অসুবিধা নেই।


  والله اعلم بالصواب