জিজ্ঞাসা-১৩২২২:
আসসালামু আলাইকুম। আসসালামু আলাইকুম, একজন স্ত্রী চাকুরী করেন । তার ২.৫ ভরি স্বর্ণ আছে । আর শুধু ডিপি এসএ ২৪ হাজার টাকা আছে যা এক বছর পূর্ণ হয়েছে। উক্ত স্ত্রীর স্বামী ঋণগ্রস্ত I প্রশ্ন হলো-
১| উক্ত স্ত্রীর উপর যাকাত ফরয কিনা?
21 ফরয হলে উক্ত টাকা স্বামীকে দিতে পারবে কিনা ঋণ পরিশোধের জন্য ?
তারিখ:৩০/০৩/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামাল হোসেন বরিশাল থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের মোতাবেক যেহেতু স্বর্ণের সাথে নগদ টাকা তাই তাকে যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, যষ শুধু স্বর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করা লাগতো না।
জমহুর ওলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত হলো, সোনা, রূপা, ব্যবসায়ী পণ্য, নগদ টাকা পয়সা সব কিছু মিলিয়ে যদি রুপার নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তাকে জাকাত আদায় করতে হবে। দলিল-
হাদিস নং-০১
١٠٧٣١ - حدثنا جرير عن عبد الحميد عن ليث عن عطاء أن عمر كان يأخذ العروض في الصدقة من الورق.
হযরত ওমর (রাযিঃ) যাকাতের নিসাব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সকল পণ্যসামগ্রীর মূল্যমানকে রৌপ্যমূল্য হতে ধার্য করতেন। অর্থাৎ রুপাকে সকল প্রকার পণ্যসামগ্রীর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের মূল মানদণ্ড / নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করেই যাকাতের নিসাব ধার্য করতেন। তাখরিজ: মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা- ১০৭৩১
হাদিস নং-০২
[٧٠٦٣] عبد الرزاق، عَنِ الثَّوْريِّ قَالَ: فَمَا كَانَ مِنَ الْبَقَرِ لِتِجَارَةٍ فَإِنَّهُ يُقَوَّمُ قِيمَةً لَا يُؤْخَذُ عَلَى هَذَا الْحِسَابِ، إِنَّمَا يُقَوَّمُ قِيمَةً، فَإِذَا بَلَغَ مِائَتَيْ دِرْهَمٍ فَفِيهَا الزَّكَاةُ.
অর্থাৎ কোন গরুর পাল যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লালন-পালন করা হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো ব্যবসায়িক অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর আওতাভুক্ত হয়ে যাবে। গৃহপালিত গরুর ক্ষেত্রে গতানুগতিক যাকাতের যে নিসাব প্রচলিত আছে, তা এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা, বরং তখন রূপাকে প্রকৃত মানদন্ড ধরে সেগুলোর বাজারমূল্য নির্ধারণ করতঃ যাকাতের নিসাব ধার্য করা হবে। সেগুলোর বাজারমূল্য দুইশত দিরহাম তথা রুপার নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আবশ্যক হয়ে যাবে। ( মুসন্নাফে আব্দুর রাযযাক- ৭০৬৩)
দ্বিতীয় কথা হল স্বামী তার স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারবেনা এ বিষয়ে সকল ইমাম একমত। তবে স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে কিনা এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
ইমাম মালেক, শাফি, হাম্বলী রহ এবং সাহেবানী এর মতে স্বামী গরিব হলে স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে।
অপর পক্ষে ইমাম আবু হানিফা রহ মতে, স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না। এটাই হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত। দলিল-
لَا تَفْعَلُوا لَو كنت آمُر أحد أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ لِمَا جَعَلَ اللَّهُ لَهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ حق» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, (কস্মিনকালেও) করো না। কেননা আমি যদি (আল্লাহ ব্যতিরেকে) অপর কাউকে সিজদা করতে বলতাম তবে স্বামীদের জন্য রমণীদেরকে সিজদা করার নির্দেশ করতাম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-২১৪০
ব্যাখ্যা: স্বামীর সম্মানের কারণে তাকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে না। নফল দান বা সহযোগিতা করা যেতে পারে।
عن أبى بكر قال: سمعت وكيعا يذكر عن سفيان أنه قال: لا يعطيها من يجبر على نفقته (المصنف لابن أبى شيبة-6\546، رقم-10644)
قوله: وزوجته وزوجها أى لا يجوز الدفع لزوجته ولا دفع المرأة لزوجها لما قدمنا من عدم قطع المنفعة عنه من كل وجه (البحر الرائق، كتاب الزكاة، باب المصرف، كرتاشى-2\244)
অর্থাৎ আবু বকর, ওয়াকী, সুফিয়ান (রাহি.) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, নিজের অধিনস্থ যেসকল ব্যক্তির ভরণপোষণ বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করা লাগে, তাদেরকে যাকাতের সম্পত্তি হতে অনুদান দেয়া যাবেনা। ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; ৫৪৬/৬, নং ১০৬৪৪।
উল্লেখ্য যে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত প্রদান করা বৈধ নয়। কারণ একে অপরের থেকে আর্থিক উপকার লাভের সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে নাকচ করা যায়না, বরং কোন না কোন ভাবে রয়েই যায়। যার ফলশ্রুতিতে নিজের যাকাতের অর্থ নিজেরই ভোগ করে ফেলার আশংকা কোনভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায়না। (যাকাতের অর্থ ব্যায়ের খাতের অনুচ্ছেদ, যাকাত অধ্যায়, আল-বাহরুর-রায়েক; করাচী'র সংস্করণ -২৪৪/২)
সারকথা হলো, উক্ত স্ত্রী লোকের যাকাত আদায় করতে হবে আর ফিকহি হানাফির মতে স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না।
والله اعلم بالصواب