জিজ্ঞাসা-১৩২০৭:
আসসালামু আলাইকুম। কোন ব্যক্তি যদি স্বর্ণের নিসাব ধরে যাকাত আদায় করতে চায়, তাহলে সে গুনাহগার হবে কিনা মেহেরবানী করে জানালে উপকৃত হব।
তারিখ: ১১/০৩/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ শরিফুল ইসলাম, রাজশাহী থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর যুগে ৫২.৫ তলা রুপা এবং ৭.৫ ভরি সোনা মূল্য সমান সমান ছিল।
কিন্তু বর্তমানে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই জমহুর ফোকাহায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, রুপার নিসাব অনুসারে যাকাত দিতে হবে।
দলিল:
١٠٧٣١ - حدثنا جرير عن عبد الحميد عن ليث عن عطاء أن عمر كان يأخذ العروض في الصدقة من الورق.
হযরত ওমর (রাযিঃ) যাকাতের নিসাব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সকল পণ্যসামগ্রীর মূল্যমানকে রৌপ্যমূল্য হতে ধার্য করতেন।
অর্থাৎ রুপাকে সকল প্রকার পণ্যসামগ্রীর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের মূল মানদণ্ড / নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করেই যাকাতের নিসাব ধার্য করতেন। তাখরিজ: মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা- ১০৭৩১
হাদিস নং-০২
[٧٠٦٣] عبد الرزاق، عَنِ الثَّوْريِّ قَالَ: فَمَا كَانَ مِنَ الْبَقَرِ لِتِجَارَةٍ فَإِنَّهُ يُقَوَّمُ قِيمَةً لَا يُؤْخَذُ عَلَى هَذَا الْحِسَابِ، إِنَّمَا يُقَوَّمُ قِيمَةً، فَإِذَا بَلَغَ مِائَتَيْ دِرْهَمٍ فَفِيهَا الزَّكَاةُ.
অর্থাৎ কোন গরুর পাল যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লালন-পালন করা হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো ব্যবসায়িক অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর আওতাভুক্ত হয়ে যাবে। গৃহপালিত গরুর ক্ষেত্রে গতানুগতিক যাকাতের যে নিসাব প্রচলিত আছে, তা এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা, বরং তখন রূপাকে প্রকৃত মানদন্ড ধরে সেগুলোর বাজারমূল্য নির্ধারণ করতঃ যাকাতের নিসাব ধার্য করা হবে। সেগুলোর বাজারমূল্য দুইশত দিরহাম তথা রুপার নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আবশ্যক হয়ে যাবে। ( মুসন্নাফে আব্দুর রাযযাক- ৭০৬৩)
দ্বিতীয় কথা হলো, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হাদিসে স্বর্ণের নেসাবের আলোচনা খুবই কম এসেছে। রুপার নেসাবের কথাই অধিক এসেছে। অধিক আলোচিত হয়েছে। হাদিসের বার বার যে নেসাবের কথা এসেছে, সেটা ছিল রুপার নেসাব; সোনার নেসাব নয়। যদিও সাহাবা ও তাবেয়ীগণ থেকে স্বর্ণের নেসাব প্রমাণিত; তদুপরি তৎকালীন ব্যাপাক আমল ছিল রুপার নেসাব অনুযায়ী। এ কারণেই শাইখ আহমদ খলিল বলেন,
أن الأصل في النصاب هو الفضة ويقدر به الذهب والمتاع لأن النبي - صلى الله عليه وسلم - لما سرق الرجل المجن قدره بالفضة ولم
يقدره بالذهب.
'নেসাবের ক্ষেত্রে রুপার নেসাব-ই মূল। রুপার মাধ্যমেই স্বর্ণ ও অন্যান্য সম্পদের নেসাব নির্ধারণ করা হবে। কারণ নবিজি সা. ঢাল চুরির বেলায় চোরের হাত কাটার ক্ষেত্রে রুপার নেসাবই নির্ধারণ করেছিলেন, স্বর্ণের নেসাব নির্ধারণ করেননি।' [শরহু যাদিল মুসতাকনা ৬/২০১]
بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا} وَفِي كَمْ يُقْطَعُ.
6795 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، حَدَّثَنِي مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنْ نَافِعٍ، مَوْلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «قَطَعَ فِي مِجَنٍّ ثَمَنُهُ ثَلاَثَةُ دَرَاهِمَ» تَابَعَهُ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ وَقَالَ اللَّيْثُ: حَدَّثَنِي نَافِعٌ قِيمَتهُ
২৮৩৩. আল্লাহর বাণীঃ পুরুষ কিংবা নারী চুরি করলে তাদের হস্ত কর্তন কর (৫ঃ ৩৮)। কি পরিমাণ মাল চুরি করলে হাত কাটা যাবে।
৬৩৩৯। ইসমাঈল (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঢাল চুরির ক্ষেত্রে হাত কর্তন করেছেন, যার মূল্য ছিল তিন দিরহাম।
অন্যসূত্রেও বর্ণিত হয়েছে।
Narrated Ibn `Umar:
Allah’s Messenger (ﷺ) cut off the hand of a thief for stealing a shield that was worth three Dirhams.
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৩৯;
মুসলিম ১৬৮৬]
মুফতিয়ে আযম রফি উসমানি রহ. বলেন, 'এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, নবিজি সা. প্রথমে স্বর্ণের নেসাব নির্ধারণ করেছেন, এরপর মূল্যের দিকে লক্ষ রেখে রুপার নেসাব ঘোষণা করেছেন। অতচ বাস্তবে বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ এর উল্টো। প্রথমে রুপার নেসাবই ঘোষণা করা হয়েছে। এর উপরই সাহাবায়ে কেরামের আমল ছিল। অতএব এ ধারণা সঠিক নয় যে, আমরা স্বর্ণের নেসাবকে মূল সাব্যস্ত করে রুপার নেসাবকে এর অনুগামী করে দেবো।
তৃতীয় কথা হলো, সৌদী আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড "ফাতাওয়া আল-লাজনাহ-আদ-দাঈমাহ" এর ফতোয়া:
فتقدر بالأحظ للفقراء منهما لكونه أنفع لهم أما إذا بلغت مقدار نصاب أحدهما دون الآخر فيجب تقديرها بما بلغته منهما.
অর্থাৎ স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রার মধ্য হতে যেই মূল্যমানটি যাকাতের নিসাব হিসেবে বিবেচনায় আনলে দরিদ্র-অসহায়-অভাবী-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অধিকতর উপকার বয়ে আনে এবং তাদের ভাগ্যন্নোতি ঘটায়,সেই মুদ্রাকেই নিসাবের মূল্য নির্ধারণের মূল মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। সূত্র: ফাতাওয়া আল-লাজনাহ-আদ-দাঈমাহ" -৯/২৫৪
সারকথা হলো, জমহুরের মতে রূপার নিসাব ধরে যাকাত দিতে হবে, স্বর্ণের নিসাব ধরলে গুনাহগার হবে।
তবে শুধু যদি স্বর্ণ থাকে অন্য কোন সম্পদ না থাকে, তাহলে ৭.৫ ভরির আগে যাকাত আদায় করতে হবে না। কিন্তু কিছু স্বর্ণ, কিছু রৌপ্য, নগদ টাকা ইত্যাদি মিলে ৫২.৫ তোলার সমপরিমাণ টাকা হলে, যাকাত আদায় করতে হবে।
والله اعلم بالصواب