আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৪২৩: মাছের রক্ত পাক না নাপাক। মাছ কাটার সময় যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে নামাজ আদায় হবে?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৪২৩:

আসসালামু আলাইকুম। শায়খ! 

আমার জানার বিষয় হচ্ছেঃ মাছের রক্ত পাক না নাপাক। মাছ কাটার সময়  যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে নামাজ আদায় হবে কি না? তারিখ: ১২/০১/ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা মুজাম্মিল খাগড়াছড়ি  থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলোএ বিষয়ে ইমামের মতভেদ রয়েছে।

 دم السمك طاهر لا يجب غسله إذا أصاب الأرض أو الثوب ، وذلك لأن طهارة ميتة السمك تدل على طهارة دمه ، لأنه لو كان نجسا لأمر الله بذبح السمك حتى يخرج دمه ، كما أمر بذبح سائر الحيوانات .

وهذا مذهب أبي حنيفة وأحمد ، وأحد الوجهين للشافعية ، واختاره بعض المالكية ، كابن العربي.

قال الكاساني في "بدائع الصنائع" (1/61) :

অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা এবং শাফিয়ি রহ এর মতে মাছের রক্ত পাকআর ইমাম আহমদ রহ. এর এক মতে পাক এবং মালিকি মাজহাবের কিছু ইমামের মতে পাক। সূত্র: বাদাউস সানায়িআ-১/৬১

 

وقال أبو حنيفة: طاهر] اهـ. وقال العلامة ابن عابدين الحنفي في "حاشية رد المحتار" (1/ 322): [والمذهب أن دم السمك طاهرٌ؛ لأنه دم صورة لا حقيقة] اهـ. واختتمت الأمانة العامة فتواها بقولها فيجوز الأخذ بمذهب الحنفية، وهو مقابل الأصح عند الشافعية أنه طاهر،

 অর্থ: আল্লামা ইবনে আবেদীন হানাফি রহ হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতারে বলেছেন, মাছের রক্ত পাক। সূত্র: রদ্দুল মুহতার-১/৩২২


دم السمك طاهر وليس بنجس لقوله صلى الله عليه وسلم : (( هو الطهور ماءه ، الحل ميتته )) يقصد ماء البحر ، فالسمك وحيوان البحر ليس بنجس ؛ لأنه إذا حلت ميتته حل الدم منه من باب أولى لأنه جزء منه .

 

وإن أصابه من دم السمك أو لعاب البغل أو الحمار أكثر من قدر الدرهم أجزأت الصلاة فيه، أما دم السمك فليس بدم على التحقيق. فلا يكون نجسا. وعن أبي يوسف - رَحِمَهُ اللَّهُ - أنه اعتبر فيه الكثير الفاحش فاعتبره نجسا.

وأما لعاب البغل والحمار فلأنه

 

ইমামদ্বয়ের দলিল: 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ سَلَمَةَ، - مِنْ آلِ ابْنِ الأَزْرَقِ - أَنَّ الْمُغِيرَةَ بْنَ أَبِي بُرْدَةَ، - وَهُوَ مِنْ بَنِي عَبْدِ الدَّارِ - أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نَرْكَبُ الْبَحْرَ وَنَحْمِلُ مَعَنَا الْقَلِيلَ مِنَ الْمَاءِ فَإِنْ تَوَضَّأْنَا بِهِ عَطِشْنَا أَفَنَتَوَضَّأُ بِمَاءِ الْبَحْرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ " .

التخريج : أخرجه أبو داود (83)، وابن ماجه (386)، وأحمد (8720) باختلاف يسير، والترمذي (69)، والنسائي (59) واللفظ لهما

অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনএকদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ ()কে প্রশ্ন করেছিলেনইয়া রাসূলাল্লাহ্আমরা সাগরে সফর করে থাকি এবং আমাদের সাথে (পানির) সামান্য (মিঠা) পানি রাখি। যদি আমরা তা দ্বারা উযু করি তবে আমরা পিপাসিত থাকবো এমতাবস্থায় আমরা সাগরের (লবণাক্ত) পানি দ্বারা উযু করতে পারি কিজবাবে রাসূলুল্লাহ্ () বলেনঃ সাগরের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) খাওয়া হালাল। তাখরিজ: আবু দাউদ-৮৩ইবনে মাজাহ-৩৮৬আহমদ-৮৭২০তিরমিজি-৬৯নাসায়ি-৫৯


ব্যাখ্যা:  এ হাদিসে مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُه অর্থাৎ এর মৃত প্রাণী তথা মাছ খাওয়া হালাল) শব্দ দ্বারা মাছের রক্ত পাক মাসয়ালা ইসতেমবাত করেছেন।

নোট: ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মতেসাগরের মৃত মাছই কেবল ভক্ষণ করা আমাদের জন্য হালাল। ইমাম শাফিঈইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ ইব্‌ন হাম্বল (রহঃ)-এর মতানুযায়ী সাগরের যাবতীয় প্রাণী ভক্ষণ করা জায়েয। 

 

সারকথা হলো,  মাছের রক্ত অপবিত্র নয় সুতরাং কাপড়ে মাছের রক্ত লাগলে কাপড় নাপাক হবে নাতা পরিধান করে নামায পড়া যাবে। তবে এমন ময়লা কাপড় নিয়ে নামায না পড়াই ভাল। তাই সম্ভব হলে ধুয়ে  কিংবা কাপড় বদলে নিবেন ( ময়লা আর নাপাক এক জিনিস নয়) সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাবর্ণনা ২০৩৬কিতাবুল আছল ১/৫৫;আলমাবসূতসারাখসী ১/৮৭খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৩আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৫রদ্দুল মুহতার ১/৩২২


والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা-১৩১৯৯: সূরা তওবার শেষ আয়াত সাত পাঠের ফজিলত সংক্রান্ত হাদিস শরিফ কি জাল?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১৯৯: 

আসসালামু আলাইকুম। সূরা তওবার শেষ আয়াত সাত পাঠের ফজিলত সংক্রান্ত হাদিস শরিফ কি জাল? তারিখ: ২৭/০২/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

     ইঞ্জিনিয়ার মামুন রুপপুর পাবনা থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, সুনানে আবু দাউদ, ইবনে আকাসির, তারহিব ওয়াত তারগিব, তাফসিরে ইবনে কাসিরে এ সংক্রান্ত হাদিস শরিফটি বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: مَنْ قَالَ إِذَا أَصْبَحَ وَإِذَا أَمْسَى، حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، سَبْعَ مَرَّاتٍ، كَفَاهُ اللَّهُ مَا أَهَمَّهُ صَادِقًا كَانَ بِهَا أَوْ كَاذِبًا

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ’’আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে বলুক না কেন। তাখরিজ: আবু দাউদ-৫০৮১


সনদের মান: আমাদের অনুসন্ধানে শায়েখ আলবানি রহ. ব্যতীত হাদিসটিকে কেউ জাল বলেননি। খোদ আরব আরব বিশ্বের অন্যতম আলেম শায়েখ ইবনে বাজ রহ. এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 


هذا الحديث جاء موقوفا على أبي الدرداء رضي الله عنه من رواية أبي داود في سننه بإسناد جيد ، ولفظه : (من قال إذا أصبح وإذا أمسى : حسبي الله لا إله إلا هو ، عليه توكلت ، وهو رب العرش العظيم ، سبع مرات كفاه الله ما أهمه) انتهى ، وليست فيه الزيادة المذكورة وهي : ( من أمر الدنيا والآخرة ) . وهو حديث موقوف على أبي الدرداء وليس حديثا مرفوعا إلى النبي صلى الله عليه وسلم ، ولكنه في حكم المرفوع ، لأن مثله ما يقال من جهة الرأي ، والله ولي التوفيق" انتهى .

"مجموع فتاوى ابن باز" (26/65)

অর্থাৎ আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি মাওকুফ। ইমাম আবু দাউদ রহ জায়্যিদ সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে হাদিসটির শেষ অংশ নিয়ে মতভেদ রয়েছে এটি হাদিসের অংশ কিনা। সূত্র: মাউমুউ ফাতাওয়া ইবনে বাজ -২৬/৬৫


সারকথা হলো, উসূলে হাদিস বা হাদিস যাচাই-বাছাই এর মানদণ্ড। এটা আলেমদের আবিষ্কৃত গবেষণা ফসল। তাই অনেক হাদিসের ক্ষেত্রে সনদের গুনাগুণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

প্রশ্নের উল্লেখিত হাদিস শরীফটি, বিষয়ে অধিকাংশ ওলামা কেরাম জায়্যিদ, মারফু, মাউকুফ বলেছেন। সুতরাং এর উপর আমল করতে কোন অসুবিধা নেই।

  والله اعلم بالصواب

জিজ্ঞাসা-১২৪২১: কোন প্রতিষ্ঠান/সংস্থা/সমিতিতে যাকাতের অর্থ দেওয়া জায়েজ আছে কি?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৪২১:

প্রশ্ন কয়েকজন দ্বীনি ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা সম্মিলিত ভাবে একটি দ্বিনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে ,এই উদ্দেশ্যে তারা ফান্ডও গড়ে তুলছেপ্রশ্ন হলো এই ফান্ডে জাকাতের অর্থ গ্রহণ করা যাবে কিনাজাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে কিনা। তারিখ: ০৯/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা আব্দুস সালাম, সাভার, ঢাকা   থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে যাকাতের খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাই এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করা জায়েয নয়। দলিল:

 

اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْعٰمِلِیْنَ عَلَیْهَا وَ الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الْغٰرِمِیْنَ وَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ ؕ فَرِیْضَةً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ۝۶۰

অর্থ: যাকাত তো কেবল নিঃস্বঅভাবগ্রস্ত ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্যযাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্যদাসমুক্তির জন্যঋণগ্রস্তদের জন্যআল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞপ্রজ্ঞাময়। সূরা তাওবা : ৬০

 

সুতরাং আপনার প্রশ্নেমতে  ফান্ডে জাকাতের অর্থ গ্রহণ করা জায়েজ নয় এবং যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। সূত্র: ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৮৮, ১৮৯; তাতারখানিয়া : ৩/২০৬; আদদুররুল মুখতার :৩/২৯৪, ২৯৫


والله اعلم بالصواب

মোটিভেশন ক্লাস-৩৫: দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তাকওয়ার গুরুত্ব

মোটিভেশন ক্লাস-৩৫: দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তাকওয়ার গুরুত্ব

No Comments

 


মোটিভেশান ক্লাস: ৩৫

 দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তাকওয়ার গুরুত্ব এ শিরোনামে লেসন প্লান দরকার। জাযাকাল্লাহ তারিখ৯/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা শামছুল আলম  ঢাকা থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর   কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে লেসন প্লান নিম্নে তুলে ধরা হলো,  

 

 

ভূমিকা:  পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-


قَالَتْ إِحْدَاهُمَا يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ

 

সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম কর্মীযে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল। সূরা কাসাস- ২৬


 প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি নারী-পৃরুষের রয়েছে দায়িত্ব-কর্তব্য। যদিও সবার দায়িত্ব এক নয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে নানা কাজকর্ম করতে হয়। হালাল উপায়ে সব কর্মই করার সুযোগ রয়েছে। তবে যেকোনো দায়িত্ব বা কাজই আসুকউপযুক্ত শ্রম ও কর্ম না করে ফাঁকিবাজির কোনো সুযোগ নেই ইসলাম ধর্মে। মূলত দায়িত্ব মুসলমানের ওপর আমানত হিসেবে অর্পিত হয়। এই আমানতের হক যে পালন করতে পারবে সে পুরস্কৃত হবে আর যে ঠিকমতো পালন না করে ফাঁকিবাজি করবে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

 

সুতরাং একমাত্র আল্লাহ তাআলার ভয়ই সব দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথ পালনে সহায়তা করবে।  প্রথমে দায়িত্ব-কর্তব্য ও তাকওয়ার সংজ্ঞা আলোচনা করবো।

 

 

 

দায়িত্ব ও কর্তব্য কাকে বলে?

 

দায়িত্ব হচ্ছে কোন যথোপযুক্ত ব্যক্তি বা সংষ্থা কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমাল বা বিধি নিষেধ যেটা করতে আপনি বাধ্য। সোজা কথায় আপনাকে ওগুলো করতেই হবে। না করলে জবাবদিহি করতে হবে। অন্যদিকেকর্তব্য হচ্ছে-যেটা আপনার করা উচিত কিন্তু না করলে সমস্যা হতে পারে বা নাও হতে পারে। অনেকটা ঐচ্ছিক।

 

তাকওয়ার পরিচয়:

التقوى لغةً: الوقاية، ومصدره: وقاء، بمعنى حِفْظ الشيء عما يؤذيه، ومنه: قوله تعالى: ﴿ وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ ﴾ [الدخان: 56].

 

ومعنى قولك: اتَّقِ الله: أي: اجعل بينك وبين عذاب الله وقاية، ومنه: قوله صلى الله عليه وسلم: «اتَّقوا النار ولو بشق تمرة»؛ رواه البخاري (1413)، ومسلم (2347) عن عدي بن حاتم.

 

ومعنى قولك: اتقى فلان كذا؛ أي: جعله وقاية.

 

وفي الاصطلاح: للتقوى أكثر من عشرةِ تعاريف: منها ما اقتُصِرَ فيه على تعريفِ جانبٍ دون آخر، ومن أحسن التعريفات ما قال طلق بن حبيب: إذا وقعت الفتن، فأطفئوها بالتقوى، قالوا: وما التقوى؟ قال: هي أن تعمل بطاعة الله على نورٍ من الله رجاءَ رحمة الله، والتقوى ترك معاصي الله على نورٍ من الله مخافةَ عذاب الله؛ رواه ابن أبي شيبة في "مصنفه" برقم (30993)، وهو أثر صحيح، والله أعلم.

 

شرح أثر طلق بن حبيب في تعريف التقوى:

 

قوله: التقوى هي العمل بطاعة الله: قال الله تعالى: ﴿ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ﴾ [آل عمران: 50]، وهذا في أكثر من عشرة مواضع من القرآن الكريم.


তাকওয়া শব্দের অর্থ বিরত থাকাবেঁচে থাকাভয় করানিজেকে রক্ষা করা। ব্যবহারিক অর্থে পরহেজগারিখোদাভীতিআত্মশুদ্ধি ইত্যাদি বোঝায়। ইসলামি পরিভাষায়আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায়অত্যাচার ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। অন্যকথায় সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন তাঁকে বলা হয় মুত্তাকি।

 

 

দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে তাকওয়ার ভূমিকা:

 

চাকরি/কর্ম ক্ষেত্রে ওয়াদা পালনের গুরুত্ব:

 প্রতিটি প্রতিষ্ঠানব্যক্তিসংস্থা তার কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে অঙ্গিকার নামা বা শপথ নামা বা দায়িত্ব পালনে ওয়াদাবদ্ধ হয়। আর এ ওয়াদা যথাযথ পালনে আল্লাহর নির্দেশ হলো,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ

অর্থ: মুমিনগণতোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর।  সূরা মায়েদা-০১

 

প্রতরণা না করা:

জনগণের সাথে যে প্রতারণা করবেতার জন্য বেহেশত হারাম।    যেমনরাসুল () বলেনযদি কোনো ব্যক্তি মুসলিম জনগণের শাসক নিযুক্ত হয়অতঃপর সে প্রতারক বা আত্মসাৎকারীরূপে মৃত্যুবরণ করেআল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।  বোখারিহাদিদস নং : ৭২৩৯মুসলিমহাদিস নং : ৩৮০

 

কাজে ফাঁকি না দেওয়া:

কাজে ফাঁকিবাজ পূর্ণ মুসলিম নয়। সব ক্ষেত্রে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। নামাজ-রোজার মতোই সেগুলো মেনে চলা ফরজ। যেমন ব্যবসায়ী কখনো ধোঁকা প্রতারণার আশ্রয় নেবেন নাভেজাল দেবেন না। চাকরিজীবী সময়মতো অফিসে আসবেনপূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং কাজে অলসতা করবেন না। কাজে যদি নিয়মবহির্ভূত সময়ক্ষেপণ করা হয়সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য হবে। ইসলাম এসবে কখনোই সমর্থন করে না। বরং নিয়মভঙ্গের জন্য শাস্তির কথা বলে। আল্লাহ বলেন,

 

وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ. وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ

 দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়যারা লোকের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় নেয় আর যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়তখন কম দেয়। (সুরা মুতাফফিফিনআয়াত : ১-৩)

 

ফিকাহ বিশারদদের মতেএখানে মাপে কম-বেশি করার অর্থ হলো পারিশ্রমিক পুরোপুরি আদায় করে নিয়ে কাজে গাফিলতি করা। কাজে ফাঁকি দিয়ে ওই সময় অন্য কাজ করা বা সময়টা অলস কাটিয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে।


একজন মুত্তাকি ব্যক্তি মনে প্রাণে ধারণ করে আল্লাহ আমাকে সর্বদা দেখছেন। সুতরাং সে  কাজে ফাঁকি দেয় না।

যেমন,

أَلَمْ يَعْلَم بِأَنَّ اللَّهَ يَرَىٰ

সে কি জানে না যেআল্লাহ দেখেন? সূরা আলাক-১৪

 

ঘ. দায়িত্বে অবহেলা করা গুনাহ:

সৎনিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীলরা ঠিক সময়ে অফিসে আসেন। কর্তব্য পালনে ফাঁকিঅবহেলা বা অলসতার আশ্রয় নেন না। সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। নিষ্ঠাআন্তরিকতাদক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে কাজের মান নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নেই। প্রতিটি ব্যক্তিকে তার কর্মপেশা ও দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।  আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 

 إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّواالْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যেতোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ করতখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারীদর্শনকারী। (সুরা নিসা : ৫৮)

 

ঙ. অপচয়/অপব্যয় না করা 

যারা ইচ্ছাপূর্বক অপব্যবহার করবেতাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। পৃথিবীতেও আসতে পারে যেকোনো বিপদাপদ। তাই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করনে ওয়ালা ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে/দায়িত্ব পালনে  অপচয় করতে পারে না। কুরআনে কারীমে অপচয়কারীকে বলা হয়েছে শয়তানের ভাই। দেখুন-

وَ اٰتِ ذَا الْقُرْبٰی حَقَّهٗ وَ الْمِسْكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ لَا تُبَذِّرْ تَبْذِیْرًا.  اِنَّ الْمُبَذِّرِیْنَ كَانُوْۤا اِخْوَانَ الشَّیٰطِیْنِ، وَ كَانَ الشَّیْطٰنُ لِرَبِّهٖ كَفُوْرًا.

আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেওতবে কিছুতেই অপব্যয় করো না। সন্দেহ নেইযারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাইআর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ! -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ২৬-২৭

 

চ. আমানত রক্ষা করা: 

জাতির সরদার তাদের জিম্মাদার হন। জাতির কল্যাণকামনাসব রকমের প্রয়োজনের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা এবং এর উৎকর্ষতার ফিকির করা শুধুমাত্র তার দায়িত্বই নয়বরং ফরজে আইন বা অবশ্য কর্তব্য। এর অনুভূতি একান্ত জরুরি। মহান আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ

এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে। সূরা মুমিনুন-০

 

আমানত আল্লাহর হোক আর মানুষের হোকঅঙ্গীকারও আল্লাহর হোক বা মানুষের হোক এর খেয়াল রাখা মুমিনের গুণ। দায়িত্ব গ্রহণ করাও আল্লাহ ও মানুষের সাথে অঙ্গীকার করার মতো। নবীজি ( বলেনযে আমানত রক্ষা করে না তার ঈমানের দাবি যথাযথ নয় এবং যে অঙ্গীকার পূরণ করে না তার দ্বীন যথাযথ নয়। (মুসনাদে আহমদহাদিস : ১৩১৯৯) হজরত আলী রা. বলেনকোনো ব্যক্তির কদর ও মূল্যায়ন অনুমিত হয় তার দায়িত্বশীলতার অনুভূতির মধ্য দিয়ে। প্রজ্ঞাপূর্ণ এই উক্তিটি নিয়ে যতই চিন্তা-ফিকির করা হবে সেটা কম হবে।

 

ছ. দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে:

যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য। আমানত রক্ষায় ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে কিয়ামতের ময়দানে জিজ্ঞাসা করা। যেমন পবিত্র হাদিসে এসেছে-

 

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " كُلُّكُمْ رَاعٍ فَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالأَمِيرُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهْىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ".

অর্থ মুসাদ্দদ (রাহঃ) ... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতনবী () বলেছেনতোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্তদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত  হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীলকাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত  হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীলকাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত  হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীলকাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর গোলাম আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত  হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্তদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। তাখরিজসহীহ বুখারীআন্তর্জাতিক নং ২৫৫৪

 

জ. দায়িত্ব একটি আমানত:

ইসলামে আমানতের পরিধি অনেক বিস্তৃত। চাকরিজীবীদের কাজের সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। কাজ রেখে গল্প-গুজবে মেতে ওঠা বা কাজে ফাঁকি দেওয়া খেয়ানতের শামিল। অফিসের জিনিসপত্রও কর্মীর কাছে আমানত। ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করা বা নষ্ট করা পুরোপুরি নিষেধ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী ( বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ‏"‏‏.‏

 মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তা হলো মিথ্যা কথা বলাপ্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা। (বুখারি : ৩৩)

 

উপসংহার: তাকওয়ারি গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত থানভি রহ-এর বর্ণিত একটি ঘটনা বর্ণনা করছি। একজন প্রথম গর্ভবতী নারী তার শাশুড়িকে বলল, মা, আমি তো প্রথম গর্ভধারণকারী। বাচ্চা হওয়ার অভিজ্ঞাতা আমার নেই। সুতরাং এমন যেন না হয় যে বাচ্চা হয়ে গেলে, আর আমি টের  পেলাম না। তখন শাশুড়ি বলল, বউ মা। তোমার তোমার যখন বাচ্চা হওয়ার সময় হবে, তখন তোমাকে জাগাতে হবে না, বরং তুমিই সারা মহল্লাকে জাগাবে।


ঠিক তেমনি কোন মানুষের আল্লাহর ভয় হাসিল হলে, তাকে কোন বিধান বা দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের বিষয়ে বলতে হবে না, বরয় সে নিজেই সব করবে। সুতরাং দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

 

 

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

 

Stylo

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের ওয়েব সাইটে আপনাকে স্বাগতম। পোষ্ট গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে করে যোগাযোগ করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর