জিজ্ঞাসা-১৩১৯০:
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম, আশা করি মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ভালো আছেন। প্রশ্ন শুনে রাগ না করার জন্য ধন্যবাদ। মুরুব্বি শব্দের বিস্তারিত বিবরন জানার জন্য আগ্রহী। কাউকে কি মুরুব্বি বলে সম্বোধন করা যাবে? কত বছর বয়স হলে মুরুব্বি বলে সম্বোধন করা যাবে। যাতে ঐ ব্যক্তি রাগান্বিত না হন।
আচ্ছালামু আলাইকুম।
তারিখ:১৫/০২/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম ভোলা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মুরুব্বী এর বাংলা অর্থ
[মুরোব্(বিশেষ্য), মুরোব্(বিশেষ্য), মুরুব্(বিশেষ্য), মুরুব্বি] (বিশেষ্য) ১ অভিভাবক।
২ পৃষ্টপোষক।
৩ রক্ষক।
৪ উপদেশক; উপদেষ্টা; সহায়ক।
মুরব্বিয়ানা (বিশেষ্য) (ব্যঙ্গার্থ) মুরব্বির ব্যবহার বা আচরণ; মাতব্বরি; খবরদারি; অভিভাবকত্ব।
(আরবি) মুরব্বী। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
দ্বিতীয় কথা হলো, পারস্পরিক সম্মোধনের ক্ষেত্রে উরফ বা সামাজিক প্রথা-রীতিনীতি দেশ-কাল-পাত্র ভেদে এক নয়। তবে সর্বক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো কারও ইজ্জত নষ্ট না করা, তাচ্ছিল্য না করা এবং মন্দ নামে না ডাকা। দলিল-
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ بْنِ قَعْنَبٍ، حَدَّثَنَا دَاوُدُ، - يَعْنِي ابْنَ قَيْسٍ - عَنْ أَبِي، سَعِيدٍ مَوْلَى عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَنَاجَشُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا . الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ . التَّقْوَى هَا هُنَا " . وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ " بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ " .
১০. মুসলমানের উপর যুলুম করা, তাকে অপদস্থ করা, তুচ্ছ জ্ঞান করা হারাম এবং তার খুন, ইযযত-আবরু ও মালও (অমর্যাদাপূর্ণ হারাম)
৬৩০৯। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা ইবনে কানাব (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে হিংসা পোষণ করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজী করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না। একে অপরের (ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে) পশ্চাতে শক্রতা করো না এবং একের বেচাকেনার উপর অন্যে বেচা-কেনার চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা রূপে ভাই ভাই হয়ে থাক।
এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং হেয় করবে না। তাকওয়া এইখানে, এই কথা বলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার সীনার প্রতি ইশারা করলেন তিনবার। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় করে। কোন মুসলমানের উপর (প্রত্যেক) মুসলমানের সবকিছু জান-মাল ও ইযযত-আবরু হারাম।
Abu Huraira reported Allah’s Messenger (ﷺ) as saying:
Don’t nurse grudge and don’t bid him out for raising the price and don’t nurse aversion or enmity and don’t enter into a transaction when the others have entered into that transaction and be as fellow-brothers and servants of Allah. A Muslim is the brother of a Muslim. He neither oppresses him nor humiliates him nor looks down upon him. The piety is here, (and while saying so) he pointed towards his chest thrice. It is a serious evil for a Muslim that he should look down upon his brother Muslim. All things of a Muslim are inviolable for his brother in faith: his blood, his wealth and his honour.
তাখরিজ: বুখারি-৬০৬৪; মুসলিম-২৫৬৪
তৃতীয় কথা হলো, কত বছর বয়সে মুরুব্বি বলে সম্বোধন করা যাবে, এ বিষয়ে শরয়ি কোন নির্দেশনা নেই। তবে চল্লিশ বছর বয়সে মানুষের পূর্ণতা আসে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইঙ্গিত আছে। যেমন,
Surah Al-Ahqaf, Verse 15:
وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম। সূরা আহকাফ-১৫
আয়াতে উল্লিখিত ‘চল্লিশ বছর’ প্রসঙ্গে ফাতহুল কাদিরে বলা হয়েছে, এ বয়স হলো- জ্ঞান ও বিবেকশক্তির পূর্ণতা ও পক্বতার বয়স। এ জন্যই মুফাসসিরদের মতে, সব নবীকে চল্লিশ বছর বয়সের পরে নবুয়ত দানে ধন্য করা হয়।
আবার আমলে ও ইলেমে পরিপক্কতায় অল্প বয়সের ব্যক্তিকেই শায়েখ-মুরুব্বি বলে সম্বোধন করা যাবে। যেমন হজরত ওমর রা হজরত ইবনে আব্বাস রা. কে প্রবীণ তরুণ বলে সম্বোধন করতেন। যেমন,
عن الزهري، قال: قال المهاجرون لعمر: ألا تدعون أبناءنا كما تدعو ابن عباس؟ قال: ذاكم فتى الكهول، إن له لسانا سؤولا، وقلبا عقولا
অর্থাৎ, হজরত জুহরী (রাহি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, মুহাজিরগণ উমর ( রাযি.) কে বললেন, আপনারা যেভাবে ইবনে আব্বাসকে ডাকেন, ঠিক সেভাবে আমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকেও কি ডাকতে পারেননা?
এর জবাবে তিনি বললেন, "ইবনে আব্বাস (রাযি.) তো হলেন ইলমের ভারে ন্যুজ একজন প্রতিভাবান (প্রবীণ ) তরুণ, যার রয়েছে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব সম্বলিত অনুসন্ধিৎসু বাকশক্তি এবং প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত বোধশক্তি। সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/৩৪৫ পৃষ্ঠা, ইমাম যাহাবি রহ.
সারকথা হলো, হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভি রহ বলেন, সমস্ত ভালো ব্যবহারের খোলাসা (সারমর্ম) হলো, আমার আচরণে যেন কেউ কষ্ট না পায়।
তাই মুরুব্বি বলে সম্বোধন করার কারণে কেউ যদি কষ্ট না পায়, সম্মানহানি না হয়, তাচ্ছিল্য না হয় তাহলে বলতে কোন অসুবিধা নেই।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَلْعُونٌ مَنْ صَارٌ مُؤْمِنًا أَوْ مَكَرَ بِه
‘ওই ব্যক্তি অভিশপ্ত, যে কোনও মুমিনকে কষ্ট দেয় বা তার সঙ্গে প্রতারণা করে। তাখরিজ: তিরমিজি-১৯৪১