জিজ্ঞাসা-১৩১৭৮: আসসালামু আলাইকুম। দুখুলুল মসজিদ আদায় না করে মসজিদে বসা যাবে কি
তারিখ:০২/০২/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন রংপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে তিনটি মতামত পাওয়া যায়। যেমন , ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ও মুস্তাহাব।
নামায বা যে কোন কাজে মাসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বে তাহিয়্যাতুল মাসজিদের দু’রাকাত নামায আদায় করা জমহুরের নিকট মুস্তাহাব বা সুন্নাত। দাউদে জাহিরি ও তার অনুসারীদের মতে ওয়াজিব।
وقال ابن حجر: (اتَّفق أئمَّة الفتوى على أنَّ الأمر في ذلك للندب، ونقل ابن بطَّال عن أهل الظاهر الوجوبَ، والذي صرَّح به ابن حزم عدمُه). ((فتح الباري)) (1/537، 538). وقال ابنُ عبد البَرِّ: (لا يختلف العلماءُ أنَّ كلَّ مَن دخل المسجد في وقت يجوز فيه التطوُّعُ بالصلاة، أنَّه يُستحبُّ له أن يركع فيه عند دخوله ركعتين، قالوا: فيهما تحيةُ المسجد، وليس ذلك بواجبٍ عند أحدٍ على ما قال مالك رحمه الله إلَّا أهلَ الظاهر، فإنَّهم يوجبونهما، والفقهاءُ بأجمعهم لا يُوجبونهما) ((التمهيد)) (20/100).
অর্থাৎ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন, ইমামগণ এই ফতোয়ার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছেন, এই আদেশটি মুস্তাহাবের জন্য। আল্লামা ইবনে বাত্তাল রহ আহলে জাহের থেকে ওয়াজিব বর্ণনা করেছেন। সূত্র: আল-তামহিদ-২০/১০০
দাউদে জাহিরির দলিল:
444 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ سُلَيْمٍ الزُّرَقِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ السَّلَمِيِّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ المَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ»
৪৩১। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) .... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকআত নামায আদায় করে নেয়। তাখরিজ: বুখারি-৪৪৪
মুস্তাহাব হওয়ার দলিল -
প্রথম দলিল:
আর দৈনন্দিন ১২ রাকাত ছুন্নাতে মুআক্কাদার তালিকায়ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নামাযের নাম উল্লেখ করেননি।
আর দৈনন্দিন আবশ্যকীয় নামাযের তালিকায়ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. এ নামাযের নাম উল্লেখ করেননি। দলিল-
باب مَا جَاءَ فِيمَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً مِنَ السُّنَّةِ وَمَا لَهُ فِيهِ مِنَ الْفَضْلِ
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا مُؤَمَّلٌ، - هُوَ ابْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْمُسَيَّبِ بْنِ رَافِعٍ، عَنْ عَنْبَسَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى وَحَدِيثُ عَنْبَسَةَ عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ فِي هَذَا الْبَابِ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَقَدْ رُوِيَ عَنْ عَنْبَسَةَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ . .
রাত-দিনে বার রাকআত সুন্নত নামায আদায়ের ফযীলত।
৪১৫. মাহমুদ ইবনে গাইলান (রাহঃ) .... উম্মে হাবীবা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রাত-দিনের বার রাকআত (সুন্নত) নামায আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবেঃ যোহরের পূর্বে চার রাকআত, এরপর দু’রাকআত, মাগরিবের পর দু’রাকআত, এশার পর দু’রাকআত, ভোরের নামায ফজরের পূর্বে দু’রাকআত। তাখরিজ: তিরমিজি-৩১৬
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, দৈনন্দিন ছুন্নাতে মুআক্কাদা বা গুরুত্বপূর্ণ ছুন্নাত হলো ১২ রাকাত। যোহরের পূর্বের ৪ রাকাত ছুন্নাতের স্থলে রসূলুল্লাহ স. কখনো কখনো ২ রাকাতও পড়তেন। সে হিসেবে দৈনন্দিন ছুন্নাতে মুআক্কাদা ১০ রাকাত হয়। (বুখারী: ১১১০) এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ২/১২, ১৩)
তাই এ সবকিছু সামনে রেখে ইমামগণ এটাকে মুস্তাহাব নির্দেশ হিসেবে গণ্য করেছেন।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন,
وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا الحَدِيثِ عِنْدَ أَصْحَابِنَا: اسْتَحَبُّوا إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ المَسْجِدَ أَنْ لَا يَجْلِسَ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ لَهُ عُذْرٌ এ হাদীসের উপর আমাদের সাথীদের আমল রয়েছে। কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বে তার উপর দু’রাকাত নামায আদায় করাকে তারা মুস্তাহাব মনে করেন। তবে ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। (তিরমিযী-৩১৬)
ইমাম তিরমিযী রহ.-এর উক্তি থেকেও প্রমাণিত হয় যে, এটা মুস্তাহাব।
দ্বিতীয় দলিল-
সাথে সাথে সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈদের আমল থেকেও পরিস্কার হয়ে যায় যে, এটা আবশ্যকীয় নামায নয়। এ বিষয়ের প্রমাণ তুলে ধরতে সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈদের আমল সংক্রান্ত কিছু বর্ণনা নিম্নে পেশ করা হলো:
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ مُعَاوِيَةَ يَعْنِي ابْنَ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَجَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَالَ: اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ، وَآنَيْتَ.
অনুবাদ : হযরত আবু যাহরিয়া রহ. বলেন, জুমআর দিনে আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা.-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি বললেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. খুৎবারত অবস্থায় এক লোক মানুষের গর্দান ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলো। তখন রসূলুল্লাহ স. তাকে বললেন: তুমি বসে পড়ো। তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছো এবং বিলম্ব করে ফেলেছো। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৯৭, আবু দাউদ: ১১১৮, নাসাঈ: ১৪০২, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৫১, হাদীস নং-২১৫৬)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. বলেন, إسناده صحيح على شرط مسلم. “হাদীসটির সনদ মুসলিমের শর্তে সহীহ”। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৯৭ নং হাদীসের আলোচনায়) হাকেম এবং ইমাম জাহাবী রহ.ও এ হাদীসের ব্যাপারে অনুরূপ মনত্মব্য করেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১০৬১)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদের নামায পড়া জরুরী নয়। অন্যথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগত লোকটিকে বসতে না বলে আগে দু’রাকাত নামায পড়তে বলতেন।
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ الدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُونَ الْمَسْجِدَ، ثُمَّ يَخْرُجُونَ وَلاَ يُصَلُّونَ، قَالَ: وَرَأَيْت ابْنَ عُمَرَ يَفْعَلُهُ.
অনুবাদ : হযরত যায়েদ বিন আসলাম রহ. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ মাসজিদে প্রবেশ করতেন, অতঃপর বের হয়ে আসতেন। অথচ কোন নামায আদায় করতেন না। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে উমার রা.কে এমন করতে দেখেছি। (ইবনে আবী শাইবা: ৩৪৪৭)
হাদীসটির স্তর: সহীহ মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ نَافِعٍ؛ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يَمُرُّ فِي الْمَسْجِدِ، وَلاَ يُصَلِّي فِيهِ.
অনুবাদ : হযরত নাফে’ রহ. বলেন, হযরত ইবনে উমার রা. মাসজিদের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করতেন অথচ সেখানে নামায পড়তেন না। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৪৮)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، قَالَ: مَرَرْتُ مَعَ الشَّعْبِيِّ فِي مَسْجِدِ الْكُوفَةِ، فَقُلْتُ لَهُ: أَلاَّ تُصَلِّي ؟ قَالَ: إذنْ وَرَبِّي لاَ نَزَالُ نُصَلِّي.
অনুবাদ : হযরত আব্দুলস্নাহ বিন আওন রহ. বলেন, আমি ইমাম শা’বী রহ.-এর সাথে কুফার মাসজিদের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমি তাঁকে বললাম, আপনি নামায পড়বেন না? তিনি বললেন, রবের কসম, তাহলে তো আমি সর্বদা নামাযই পড়তে থাকবো। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৪৯)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
সারকথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি দিবারাত্রির গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেননি। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবিঈগণের উপরিউক্ত আমল ও মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ নামায পড়া জরুরী নয়।
সুতরাং দুখুলুল মসজিদ আদায় না বসা যাবে না, এ কথাটি সঠিক নয়। ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যথাযথ সময়ে আদায় করতে না পারলে, পরবর্তীতে তা আদায় করার দলিল আছে। কিন্তু দুখুলুল মসজিদ পরবর্তীতে আদায় করার কোন দলিল নেই।
والله اعلم بالصواب