✅রমযান ও উম্মাহর নেককার বান্দাগণ:
নবীজীর ইবাদত-বন্দেগীর কোনো তুলনা হয় না। বিশেষ করে রমযানে তাঁর ইবাদত-বন্দেগীর কোনো সীমা থাকত না। নবীজী নিজেও রমযান মাসে সীমাহীন আমল করতেন এবং পরিবার পরিজনকেও আমলে উদ্বুদ্ধ করতেন।
(এটা নিয়ে আমরা সন্ধ্যায় লিখব ইন শা আল্লাহ)
🟢আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কুরআনের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। রমযান মাসে তিনি প্রতি তিন দিনে একবার কুরআন খতম করতেন। (দ্রষ্টব্য : ফাযায়েলে কুরআন, আবু উবাইদ, পৃ. ১৮০; ফাযায়েলে কুরআন, ইবনে কাছীর, পৃ. ২৫৫)
বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম আসওয়াদ নাখাঈ রাহ. মাগরিব এবং এশার মাঝে সামান্য ঘুমিয়ে নিতেন। সারারাত নামায-তিলাওয়াতে মশগুল থাকতেন। রমযান মাসে প্রতি দুই রাতে তিনি এক খতম কুরআন পড়তেন। রমযান ব্যতীত অন্য সময় ছয় রাতে এক খতম পড়তেন। (দ্রষ্টব্য : ফাযায়েলে কুরআন, আবু উবাইদ, পৃ. ১৮০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৪/৫১)
বিখ্যাত তাবেঈ ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. রমযান মাসে প্রতি তিন দিনে একবার কুরআন খতম করতেন। রমযানের শেষ দশকে দুই রাতে একবার খতম করতেন। (দ্র. মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৬১২৮)
আবু যর রা. বলেন, যখন তুমি রোযা রাখবে তখন তা হেফাজতের ব্যাপারেও সতর্ক থাকবে। বর্ণনাকারী তলীক ইবনে কায়সের অবস্থা ছিল, তিনি রমযান মাসে ঘরে ঢুকতেন, নামাযের সময় ছাড়া আর বের হতেন না। এভাবে তারা রোযা হেফাজতে সচেষ্ট থাকতেন এবং কোনোভাবে যেন কোনো অনর্থক বিষয়ে জড়িয়ে না পড়েন- সে ব্যাপারে সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। (দ্রষ্টব্য : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯১২২)
কাতাদা রাহ.-এর বছরব্যাপী আমল ছিল, তিনি তাহাজ্জুদ নামাযে প্রতি সাত দিনে এক খতম কুরআন পড়তেন। রমযান এলে প্রতি তিন রাতে এক খতম পড়তেন। যখন রমযানের শেষ দশক আসত তিনি প্রতি রাতে এক খতম করে পড়তেন। (দ্রষ্টব্য : হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/৩৩৮-৩৩৯; লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ১৭১)
রমযান শুরু হতেই ইমাম যুহরী রাহ. হাদীস চর্চা ও অন্যান্য ইলমী ব্যস্ততা স্থগিত করে তিলাওয়াতে মশগুল হয়ে যেতেন। তিনি বলতেন, এখন তিলাওয়াতের মাস উপস্থিত হয়েছে এবং মানুষের মেহমানদারী করার সময় এসেছে। (দ্রষ্টব্য : লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ১৭১)
তেমনিভাবে ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহ. রমযান এলে অন্যান্য নফল ইবাদতের চেয়ে তিলাওয়াতের প্রতি অধিক মনোনিবেশ করতেন। (দ্রষ্টব্য : লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ১৭১)
রমযান শুরু হতেই ইমাম যুহরী রাহ. হাদীস চর্চা ও অন্যান্য ইলমী ব্যস্ততা স্থগিত করে তিলাওয়াতে মশগুল হয়ে যেতেন। তিনি বলতেন, এখন তিলাওয়াতের মাস উপস্থিত হয়েছে এবং মানুষের মেহমানদারী করার সময় এসেছে। (দ্রষ্টব্য : লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ১৭১)
তেমনিভাবে ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহ. রমযান এলে অন্যান্য নফল ইবাদতের চেয়ে তিলাওয়াতের প্রতি অধিক মনোনিবেশ করতেন। (দ্রষ্টব্য : লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ১৭১)
ইমাম মালেক রাহ.-ও রমযান শুরু হলে সকল ইলমী ব্যস্ততা স্থগিত রেখে তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করতেন। (দ্রষ্টব্য : লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ১৭১)
ইমাম বুখারী রাহ. তাহাজ্জুদে এক তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াত করতেন। এভাবে প্রতি তিন রাতে একটি করে খতম করতেন। (দ্রষ্টব্য : তবাকাতে হানাবেলা ১/২৭৫)
ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেন- নবীজীর অনুসরণে এ মাসে দান-খয়রাত বাড়িয়ে দেওয়া চাই। কেননা মানুষের অনেক প্রয়োজন থাকে। আর অনেকে এ মাসে ইবাদতে অধিক মশগুল থাকার ফলে তাদের আয় রোযগার কম হয়। (দ্রষ্টব্য : মুখতাছারুল মুযানী, বর্ণনা ৭৮৮)
হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান রাহ. রমযানে প্রতি রাতে পঞ্চাশ জনের মেহমানদারি করতেন। ঈদ এলে তাদের পোশাক পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করতেন। আর ঈদের দিন তাদেরকে একশ দেরহাম করে হাদিয়া দিতেন। (দ্রষ্টব্য : আলকামেল, ইবনে আদী, ৩/৭; মুখতাছারুল মুযানী, বর্ণনা ৭৮৮)
হযরত যাকারিয়া রাহ. বলেন, কান্ধালায় আমাদের ঐতিহ্য ছিল- ইফতারের আগে এক ডেগ পোলাও প্রস্তুত হত। তারপর ছোট ছোট পাত্রে পরিমাণ মতো বিভিন্ন ঘরে নারীদের জন্য পাঠানো হত। অবশিষ্টগুলো নিয়ে বাড়ির উঠানে বসা হত। মুরব্বিরা সবাই এখানে শরীক হতেন। রাস্তা দিয়ে যারাই যেত সবাইকে ডেকে এনে ইফতার করানো হত। সবাই ইফতার করে মাগরিবের নামাযে শরীক হতেন এবং প্রায় এশা পর্যন্ত নফলে মশগুল থাকতেন। (দ্রষ্টব্য : আকাবির কা রমযান, পৃ. ৬২)
✨রমযানুল মুবারক শুরু হয়। বুদ্ধিমানেরা আগে থেকেই মানসিক প্রস্ত্ততি নেয়, কর্মের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে, আলাদা নিযামুল আওকাত তৈরি করে। এরপর রমযানের শুরু থেকেই প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগায়। আর কিছু মানুষ প্রথম দশক পর্যন্ত মনে করে, কেবল তো রমযান শুরু হল। আর অধিকাংশ মানুষ তো প্রথম দুই-চার দিনেই তাদের সব আগ্রহ-উৎসাহ শেষ করে ফেলে...