মোটিভেশন ক্লাস-৩৪:
জিজ্ঞাসা-১২৪১৩:
"দেন মোহর সম্পর্কে সঠিক নিয়ম"--এটার লেসনপ্লান দরকার। তারিখ: ০৪/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোজাম্মেল হক কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামে মোহরের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। যেমন,
আয়াত নং-০১
Surah An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। সূরা নিসা -০৪
আয়াত নং-০২
أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থ: উল্লিখিত নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, যে স্বীয় সম্পদ দ্বারা প্রয়াসী হবে তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে, ব্যভিচারে নয়। অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা নিসা- ২৪
মোহর আদায় করা স্বামীর উপর ফরয এবং বিয়ের অপরিহার্য শর্ত। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। সূত্র: আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৪০-১৪৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ১/৩৮৪-৩৯০; তাফসীরে উছমানী পৃ. ১০৫
প্রশ্ন: ক। মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কত?
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ শরিয়ত নির্ধারণ করেনি। বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৩৫৮
তবে সর্বনিম্ন হাদিস-আসারে রয়েছে। ফিকহে হানাফী অনুসারে সর্বনিম্ন মোহর দশ দিরহাম।
দলিল:
হাদিস নং-০১
عن علي -رضي الله عنه- قال: «لا تُقطع اليدُ إلا في عَشرة دَراهِم, ولا يكون المهرُ أقلَّ مِن عشرة دَراهِمسنن الدارقطني, ت: شعيب الارنؤوط وجماعة, مؤسسة الرسالة، بيروت - الطبعة الأولى، 1424هـ.
হাদিস নং-০২
لا مَهْرَ أَقَلُّ مِنْ عَشْرَةِ دَرَاهِمَ
“দশ দিরহামের কম মহর নেই। ” তাখরিজ: দারা কুতনী-৩৯২
দশ দিরহামের পরিমাপ : প্রতি দিরহামে ৩ মাশা ০.৮.রতি হয়। ৮ রতিতে ১ মাশা, ১২ মাশায় ১ তোলা হয়। এ হিসেবে দশ দিরহামের পরিমাণ হলো ৩১ মাশা রূপা বা ২ তোলা ৭ মাশা (প্রায় আড়াই ভরি রূপা) অথবা তার সমমূল্য টাকা। এটাই বিবাহের মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ।
আজকের বাজারে প্রতি ভরি রুপার দাম, ১৫১৬ টাকা (১৩ সেপ্টেম্ব বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত) হয়, তাহলে দশ দিরহাম বা আড়াই ভরি রূপার মূল্য হবে (১৫১৬×২.৭)=৪০৯৩ টাকা।
সূত্র: শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/৩৯৮ আযীযুল ফাতাওয়া, ৪৫১/ ফাতাওয়া দারুল উলূম ৮ : ২৬৪/ আহসানুল ফাতাওয়া ৪ : ৩৮২; ৫/৩১২, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৬/২৪৩
প্রশ্ন: খ। কি দ্বারা মহর আদায় হবে?
উত্তর: খ। মোহর এমন কিছু হতে হবে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘মাল’ (সম্পদ) বলে গণ্য। টাকা-পয়সা হওয়া জরুরি নয়। দলিল:
لما تزوج عليٌّ رضيَ اللهُ عنهُ فاطمةَ رضيَ اللهُ عنها ، قال له رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّم : أعطِهَا شيئًا ، قال : ما عندي . قال : فأين درعُك الحطميَّةُ
الراوي : عبدالله بن عباس : صحيح النسائي
الصفحة أو الرقم: 3376 |
خلاصة حكم المحدث : صحيح
অর্থ: রাসূলে আকরাম (ﷺ) হযরত আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, কিছু দেয়ার আগে বিবির কাছে যেয়ো না। হযরত আলী (রা.) ওজরখাহি করলেন, আমার কাছে তো কিছুই নেই। রাসূলে কারিম (ﷺ) বললেন, তোমার কাছে যে লোহার বর্মটি ছিল সেটি কোথায়? ওটাই ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দাও। সাহাবী হযরত আলী (রা.) নির্জনবাসে যাওয়ার পূর্বেই বর্মটি ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দেন।’ তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৩৩৭৬; আবু দাউদ-২১২৬
প্রশ্ন: গ। মহরে ফাতেমির পরিমাণ কত বর্তমান বাজারে?
উত্তর: গ। মোহরে ফাতেমির পরিমাণ পাঁচ শ দিরহাম তথা ১৩১.২৫ ভরি (এক কেজি ৫৩০.৯০০ গ্রাম) খাঁটি রুপা অথবা এর বাজারমূল্য। সতর্কতামূলক ১৫০ তোলা খাঁটি রুপার কথা বলা হয়ে থাকে। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২৭৪২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৩/২১৫; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া : ৮/২৩১)
১৫০ ভরি রৌপ্য
আজকের বাজারে মহরে ফাতিমির সমমূল্য হলো,১৫০*১৫১৬=২২৭৪০০ টাকা
প্রশ্ন: ঘ। মহর কত প্রকার?
উত্তর: ঘ। আমাদের মধ্যে দুই ধরনের মোহরের প্রচলন রয়েছে। এক. مهر معجل (মোহরে মু‘আজ্জাল) বা নগদ মোহর। দুই.مهر مؤجل (মোহরে মুয়াজ্জাল) বা বাকি মোহর। এ শব্দগুলো যেহেতু বিয়ের মজলিস ছাড়া সচরাচর শোনা যায় না তাই অনেকে এ শব্দ দুটির অর্থ বুঝে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে মোহরে মু‘আজ্জাল হল সেই মোহর, যা বিয়ে সম্পন্ন হওয়ামাত্র নগদ আদায় করা অপরিহার্য হয়ে যায়। হয়তো সে বিয়ের সময়ই তা পরিশোধ করে দিবে অথবা বিয়ের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর তা দাবি করার অধিকার আছে। যেহেতু আমাদের সমাজে নারীরা সাধারণত মোহর দাবি করে না তাই এরূপ মনে করা উচিত হবে না যে, সেটা পরিশোধ করা আমাদের জন্য জরুরি নয়; বরং কর্তব্য হল স্ত্রীর চাওয়ার অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব এই ফরয দায়িত্ব হতে মুক্ত হওয়া।
প্রশ্ন: ঙ। স্ত্রী যদি স্বামীকে মহর মাফ করে, তাহলে জায়েজ হবে কি?
উত্তর: ঙ। স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে (প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চাপ ব্যতিত) নিজ মহরানা ছেড়ে দেয়, তাহলে সেটা স্বামীর জন্য বৈধ। দলিল:
Surah An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। সূরা নিসা -০৪
والله اعلم بالصواب