✅মানবজীবনে গুনাহের কুপ্রভাব: পর্ব ৩
🟢পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়া :
মানুষের গুনাহের কারণে দুনিয়াতে বিভিন্ন রকমের বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এই বিপর্যয় হতে পারে স্থলভাগে, হতে পারে জলভাগে (সাগর-নদীতে), হতে পারে আকাশে, হতে পারে ফল-ফসলে, হতে পারে বাসস্থানে। এই বিপর্যয়ের কথাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন : ‘‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’’[সূরা আর্ রূম ৩০ : ৪১।]
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, ‘‘হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন।’’[সুনান ইবনু মাজাহ : ৪০১৯, হাদীসটির সনদ হাসান।]
🟢সবসময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা ও মনস্তাত্বিক রোগে ভোগা :
গুনাহগার ব্যক্তি সবসময় জানা-অজানা ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। তাকে দেখেই বোঝা যায় যে, সে ভীত, নিরাপত্তাহীন। যখন কেউ গুনাহ করে তখন সে আল্লাহর নিরাপত্তা থেকে বের হয়ে যায়। আর আল্লাহর আনুগত্য হচ্ছে এমন এক নিরাপত্তা যার ভিতরে কেউ ঢুকলে সে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে।
আর যে আল্লাহর আনুগত্যের নিরাপত্তা থেকে বের হয়ে যাবে সে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। সে মনে মনে ভাববে, কখন না জানি মৃত্যু চলে আসে, কখন না জানি শাস্তি চলে আসে। সে মৃত্যুকে ভয় পাবে। কারণ সে জানে যে, মারা গেলে পরেই তার প্রাপ্য শাস্তি শুরু হয়ে যাবে। আর মৃত্যুকে ভয় পাবার কারণে সে ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে। এভাবে সারাক্ষণ সে ভয়ের মধ্যে কাটাবে, হীনমন্যতায় ভুগবে। একটা পর্যায়ে তাকে ‘‘ভয়রোগ’’ গ্রাস করে ফেলবে, যা আজকাল পৃথিবীর সবচেয়ে মহামারী রোগ হিসেবে চিহ্নিত। ফলে সে কোন সৃজনশীল কাজ করতে পারবে না।
🟢মুসলিমদের শক্তি বিনষ্ট হওয়া :
গুনাহের প্রভাবে মুসলিমদের শক্তি বিনষ্ট হয়। কাফিররা আর মুসলিমদেরকে ভয় পায় না। বর্তমানেও এমন অবস্থাই সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এই মুসলিমরাই ইসলামের প্রথম যুগে অস্ত্রশক্তিতে দুর্বল হওয়ার পরও শুধু ঈমানের ও ‘আমলের বলে বলিয়ান হয়ে কাফিরদের পরাজিত করেছিল। কিন্তু আজ মুসলিমরা গুনাহে নিমজ্জিত হয়ে নিজেদের ঈমান ও ‘আমলের শক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে।
যে মুসলিমরা শত্রুর অস্ত্রের আঘাতে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলেও মৃত্যু পর্যন্ত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছে সেই মুসলিমরাই আজ পায়ে একটি কাঁটা বিধঁলে ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না।
মুসলিমরা আজ ইতিহাসের যে কোন সময়ের তুলনায় সংখ্যায় বেশি হলেও তাদেরকে আজ কাফির-মুশরিকরা পাত্তা দিচ্ছে না। এর কারণ কী? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মৃত্যুভয়। আর মৃত্যুভয় তৈরি হয় গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকলে, যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন :‘‘অদূর ভবিষ্যতে অন্য জাতির লোকেরা তোমাদের ওপর বিজয়ী হবে, যেমন খাদ্য গ্রহণকারী বড় পাত্রের দিকে আসে। তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে, আমাদের সংখ্যা কি তখন কম হবে? তিনি বলেন, না, বরং সে সময় তোমরা সংখ্যায় অধিক হবে। কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে সমুদ্রের ফেনার মত। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের ভীরুতা দূর করে দেবেন। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! ‘আল ওয়াহ্ন’ কী? তিনি (সা.) বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।[সুনান আবূ দাঊদ : ৪২৯৯, মুসনাদে আহমাদ : ২২৩৯৭, হাদীসটি সহীহ।]
- - শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল (রহ.)