জিজ্ঞাসা-১৩১৯২:
আসসালামু আলাইকুম। আরসিও১২১৯৮ রমজান মাসে সূরা তারাবিহ হলে ২০ এর পরিবর্তে ১০ রাকা'ত পড়লে গুনাহ হবে কিনা। জানালে খুশি হব।
তারিখ:১৭/০২/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা এম ইসমাইল হেলালী নোয়াখালী থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জমহুরের নিকট ২০ রাকাত তারাবিহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
দ্বিতীয় কথা হলো, ইচ্ছে করে অলসতার সাথে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে কিনা, এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে রয়েছে। তবে ফিকহি হানাফির মতে, ইচ্ছা করে বা অলসতায় কোন সুন্নতকে নিয়মিত পরিত্যাগ করা গুনাহের কাজ। ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন,
সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে।
وحكمها كالواجب—- إلا أن تارك الواجب يعاقب وتاركها لا يعاقب- (التعريفات للجرجانى-138
ফরজ নামাযের আগে পরের সুন্নতে মুআক্কাদার অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন যে, যদি কেউ সুন্নতকে হক মনে না করে এটাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে এ কর্ম তাকে কুফরী পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
رجل ترك سنن الصلاة ان لم ير السنن حقا فقد كفر، لأنه تركها استخفافا (رد المحتار-2/492، بدائع الصنائع- 1/644
তবে কেউ যদি সুন্নতকে সহীহ তো মনে করে, কিন্তু অলসতা করে ছেড়ে দেয়। তাহলে সে গোনাহগার হবে।
وان رآها حقا فالصحيح أنه يأثم، لأنه جاء الوعيد بالترك، كذا فى محيط السرخسى، (الفتاوى الهندية- 1/112
ফুকাহায়ে আহনাফের দলিল:
আয়াত নং-০১
Surah Al-Hashr, Verse 7:
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা হাশর-০৭
আয়াত নং-০২
Surah Muhammad, Verse 33:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না। সূরা মুহাম্মাদ-৩৩
হাদিস নং-০১
مَن أطاعني فقد أطاع اللهَ ومَن عصاني فقد عصى اللهَ ومَن أطاع الأميرَ فقد أطاعني ومَن عصى الأميرَ فقد عصاني
الراوي : أبو هريرة | المحدث : ابن حبان | المصدر : صحيح ابن حبان | الصفحة أو الرقم : 4556 | خلاصة حكم المحدث : أخرجه في صحيحه من
অর্থ- হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য করলো আর যে আমার নাফরমানি করলো সত্যিকারে সে যেন আল্লাহরই নাফরমানি করলো৷ তাখরিজ: সহিহ ইবনে হিব্বান-৪৫৫৬
হাদিস নং-০২
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدخُلُونَ الجَنَّةَ إلاَّ مَنْ أبَى قيلَ : وَمَنْ يَأبَى يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أبَى رواه البخاري
অর্থ: রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে যাবে কিন্তু যে উম্মত অস্বীকার করলো সে ব্যতিত। হযরত সাহাবা কেরাম (রা:) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল কারা অস্বীকার করল? এরপরে রাসুল বললেন -যে আমার সুন্নাতের অনুসরণ করল সে জান্নাতে যাবে। এবং যে সুন্নাতে অনুসরণ করলো না সে অস্বীকার করলো। তাখরিজ: বুখারি-৭২৮০
হাদিস নং-০৩
، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
অর্থ: সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। তাখরিজ: বুখারি-৫০৬৩
সারকথা হলো, অসুস্থতা-ব্যস্ততা-অসুবিধার কারণে মাঝে মাঝে সুন্নাত ত্যাগ করলে, ২০ রাকাতের পরিবর্তে ১০ রাকাত আদায় করলে কোন গুনাহ হবে না। ইচ্ছে করে, অলসতা করে ছেড়ে দিলে ফিকহির হানাফির মতে গুনাহ।
হজরতে সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণের ক্ষেত্রে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নফল ভাগ করতেন না। তখন তখন এগুলো শ্রেণীবিন্যাসও ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল করতে বলেছে কিনা সেটাই ছিল মূল বিষয়।
শেষ কথা: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। তাখরিজ: তিরমিজি-২৭২৬
আমরা প্রিয় রাসূল (ﷺ) কে মনের ভালবাসার সাথে আমলের ভালবাসাও প্রকাশ করবো। রুওয়াইম ইবনে আহমাদ আল বাগদাদী রাহ. মহব্বতকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন,
المحبة الموافقة في جميع الأحوال (كلمة الإخلاص للحافظ ابن رجب ص৩২)
অর্থাৎ, ভালোবাসা হল প্রেমাষ্পদের সাথে সর্বাবস্থায় একাত্ম থাকা। সূত্র: কালেমাতুল ইখলাস ৩২ পৃ.হাফেজ ইবনে রজব রহ.
হাকীম মাহমূদ ওয়াররাক রাহ. বলেছেন,
لو كان حبك صادقا لأطعته
إن المحب لمن يحب مطيع
অর্থাৎ, যদি তোমার প্রেম খাঁটি হতো তবে তো তুমি তার অনুগত হতে। কারণ প্রেমিক তো প্রেমাষ্পদের অনুগত থাকে। সূত্র: শরহুয যুরকানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ, পৃ. ১১৮
والله اعلم بالصواب