আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

স্বাস্থ্য পরামর্শ-১০১: জিব (জিহ্বা ) দেখে স্বাস্থ্যের অবস্থা বোঝার উপায়

No Comments

 



জিব দেখে স্বাস্থ্যের অবস্থা বোঝার উপায়


আপনি জেনে অবাক হবেন যে, মানুষের জিব শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক আশ্চর্যজনক বিষয় প্রকাশ করতে পারে। পুষ্টির ঘাটতি থেকে দুর্বল রক্ত সঞ্চালন পর্যন্ত অনেক কিছুই নির্দেশ করতে পারে।


জেনে নিন জিব দেখে স্বাস্থ্যের অবস্থা বোঝার উপায়—


ফোলা


আপনি জানেন কি মানুষের জিব ফুলে যাওয়া আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে? এই সমস্যা জিবে পুষ্টি ও অক্সিজেনের অপর্যাপ্ত সরবরাহ নির্দেশ করে, যার ফলে এটি ফোলা দেখায়। বিটরুট-আমলকির রস পান করলে উপশম হয় জিভের ফোলা। বিটরুট এবং আমলকি একসঙ্গে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে। এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে এবং আয়রনের মাত্রা পূরণ করার শরীরের ক্ষমতাকে উন্নত করে।


সাদা আবরণ

মানুষের জিবে হঠাৎ সাদা রঙের হয়ে গেলে, সেটি জিবের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে। এই আকস্মিক পরিবর্তন খারাপ মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি, ডিহাইড্রেশন এবং মুখের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণেও হতে পারে। তাই জিহ্বায় সাদা আবরণ পড়লে একদমই অবহেলা করবেন না। এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়মিত আদা চা পান করতে পারেন।


লাল বিন্দু

জিবের আরেকটি সাধারণ সমস্যা হলো লাল বিন্দু। সাধারণ হলেও এটিকে হালকাভাবে নেবেন না। কারণ, এটি শরীরে অতিরিক্ত তাপ নির্দেশ করতে পারে। এই বিন্দুগুলো খুব গরম খাবার ও পানীয় গ্রহণের ফলেও হতে পারে। এটি সমাধানের জন্য পান্তা ভাত খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এতে শীতল করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা জিব এবং পাচনতন্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই তাপ কমাতে সহায়তা করবে।


নীল-বেগুনি রং

জিবে হঠাৎ নীল-বেগুনি রঙে পরিণত হলে এটি শরীরের রক্তের স্থবিরতা এবং দুর্বল সঞ্চালন নির্দেশ করতে পারে। এটি দুর্বল মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি এবং ভিটামিন বি২ এর অভাবের কারণেও হতে পারে। এক্ষেত্রে জিরা, ধনিয়া এবং মৌরি দিয়ে তৈরি চা পান করতে পারেন। এই চা রক্তনালীতে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, রক্তের স্থবিরতা প্রতিরোধ করে এবং টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে।


এনএ/আওয়ার ইসলাম ২৪.কম

জিজ্ঞাসা-১৩১৬০: একজন আলেম ৪০জন ব্যক্তিকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিতে পারবেন, এর দলিল কী

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১৩১৬০: 

আসসালামু আলাইকুম। আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, সম্মানিত শায়েখ, আমার জানার বিষয় কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক একজন আলেমকে এমন ৪০ জন ব্যাক্তিকে সুপারিশ করে জান্নাতে নেয়ার অনুমতি দিবেন জাহান্নাম যাদের জন্য ওয়াজিব। এই ক্ষেত্রে শরয়ী দলীল কি?

তারিখ:৩১/১২/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  নেছার উদ্দিন থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, একজন আলেম ৪০জন ব্যক্তিকে সুপারিশ করতে পারবে, সরাসরি এই হাদিস নেই। তবে কিয়ামতের দিনে বা আখেরাতে কয়েক শ্রেণীর ব্যক্তি (নবি-রাসূল, ফেরেশতা, শহিদ, হাফেজ, হাজি, মুমিনগণ, সাথী প্রমুখ) শাফায়েত/ সুপারিশ করার ক্ষমতা লাভ করবেন, তাদের মধ্যে আলেম এক শ্রেণীর। দলিল- 

হাদিস নং-০১

يَشْفَعُ يومَ القيامةِ ثلاثةٌ : الأنبياءُ ثم العلماءُ ثم الشهداءُ.

الراوي : عثمان بن عفان | المحدث : الوادعي | المصدر : الشفاعة للوادعي

الصفحة أو الرقم : 205 | 

التخريج : أخرجه البزار (372) بنحوه، والعقيلي في ((الضعفاء الكبير)) (3/367)، وابن عدي في ((الكامل في الضعفاء)) (5/262) واللفظ لهما

أخرجه ابن ماجه (2/1443، رقم 4313) قال البوصيرى (4/260) : هذا إسناد ضعيف. وأخرجه أيضًا: البيهقى فى شعب الإيمان (2/265، رقم 1707) .

অর্থ: কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর ব্যক্তি সুপারিশ করবে। নবিগণ অতঃপর আলেমগণ অতঃপর শহিদগণ। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-৪৩১৩; মুসনাদে বাজ্জার-৩৭২

নোট: আল্লামা বুছিরি রহ. বলেন, হাদিসটির সনদ জয়িফ বা দুর্বল।


হাদিস নং-০২

قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم : " يجاء بالعالم والعابد ، فيقال للعابد : ادخل الجنة ، ويقال للعالم : قف حتى تشفع للناس " .

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "(কেয়ামতের দিন) আলেম ও ইবাদতগুজার বান্দাকে ডেকে আনা হবে। তারপর আবেদকে বলা হবে, "তুমি জান্নাতে প্রবেশ করে ফেলো।" অন্যদিকে আলেম ব্যাক্তিকে বলা হবে, " তুমি মানুষের জন্য সুপারিশ করার নিমিত্তে খানিক অপেক্ষা করো।"

সূত্র: তাখরিজু আহাদিস ইয়াহউল উলূমুদ্দীন-১ম খণ্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা


হাদিস নং-০৩

وأخرج الديلمي من حديث ابن عمر - رضي الله عنهما - مرفوعا " يقال للعالم : اشفع في تلامذتك ، ولو بلغ عددهم نجوم السماء " .

অর্থাৎ, ইমাম দায়লামী ( রাহি.) হজরত ইবনে উমর (রাযি.) থেকে মারফু' সনদে বর্ণনা করেন যে, " (কেয়ামতের দিন) আলেমকে ডেকে বলা হবে, তোমার ছাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকারাজির সমান হলেও তাদের প্রত্যেকের জন্য তুমি সুপারিশ করে যাও।" তাখরিজ: দায়লামি-৭৭৩৯


সারকথা হলো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক একজন আলেমকে এমন ৪০জন ব্যাক্তিকে সুপারিশ করে জান্নাতে নেয়ার অনুমতি দিবেন জাহান্নাম যাদের জন্য ওয়াজিব। সরাসরি এই হাদিস নেই। তবে হাফেজে কুরআন সম্পর্কে এ জাতীয় বর্ণনা রয়েছে। যেমন,

عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَاسْتَظْهَرَهُ فَأَحَلَّ حَلاَلَهُ وَحَرَّمَ حَرَامَهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِ الْجَنَّةَ وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلُّهُمْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَلَيْسَ إِسْنَادُه

ইবনে আবু তালেব রা: হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং উহা মুখস্থ করেছে অতঃপর কুরআন যা হালাল করেছে সে নিজের জন্য তা হালাল করেছে এবং কুরআন যা হারাম করেছে সে নিজের জন্য তা হারাম করেছে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন দশজনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে। যাদের পরিণাম জাহান্নাম অবধারিত ছিল।’ তাখরিজ: তিরমিজি-২৯০৫, ইবনে মাজাহ-২১৬


নোট: ইমাম তিরমিজি রহ বলেন, হাদিসটির

 সনদ গরিব। 





  والله اعلم بالصواب

বিজ্ঞবচন-২০: বান্দার জীবনে সবচেয়ে ফযিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে---- ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.)

No Comments

 



"বান্দার জীবনে সবচেয়ে ফযিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে, যেদিন সে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে এবং আল্লাহও বান্দার তাওবাহ কবুল করে নেন।"


— ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.)

সূত্র: যাদুল মাআদ, ৩/৫১২

জিজ্ঞাসা-১৩১৫৯: নামাজে সালাম ফিরানোর সময় নজর কোথায় থাকবে।

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১৩১৫৯: 

আসসালামু আলাইকুম। নামাজে সালাম ফিরানোর সময় নজর কোথায় থাকবে।

তারিখ:৩০/১২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

  জনৈক মাওলানা  বান্দরবান থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, নামাজে সালাম ডানে-বামে  ফিরাবে, তবে এ সময়  নজর কোথায় থাকবে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বর্ণনা নেই। ফিকহি হানাফির মতে, সালাম ফিরানোর সময় নিজ  কাঁধের দিকে তাকাবে। যেমন,

(نظره إلى موضع سجوده حال قيامه، وإلى ظهر قدميه حال ركوعه، وإلى أرنبة أنفه حال سجوده، وإلى حجره حال قعوده، وإلى منكبه الايمن والايسر عند التسليمة الاولى والثانية) لتحصيل الخشوع 


الدر المختار شرح تنوير الأبصار وجامع البحار ١/‏٦٦ — علاء الدين الحصكفي (ت ١٠٨٨)

অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় সিজার জায়গায়, রুকুর সময় দুপায়ের মাঝখানে, সিজদার সময় নাকের দিকে, বৈঠকের সময় নিজ কোলের দিকে এবং  সালাম ফিরানোর ডান ও বাম কাঁধের দিকে তাকাবে, নামাজে খুশু-খুজু হাসিলের জন্য। সূত্র: দুররুল মুখতার-/৬৬


নিম্নের হাদিসদ্বয় থেকে ফিকহি হানাফি দলিল গ্রহণ করেছে।

হাদিস নং-০১ 

وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كُنْتُ أَرَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ حَتَّى أَرَى بَيَاضَ خَدِّهِ .

১১৯৩। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... সা’দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে তার ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম করতে দেখতাম। এমনকি সালাম করাকালীন তাঁর গণ্ডদেশের ওভ্রতাও দেখতাম।


’Amir b. Sa’d reported:

I saw the Messenger of Allah (may peace be open him) pronouncing taslim on his right and on his left till I saw the whiteness of his cheek.

—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৯৩ (আন্তর্জাতিক নং ৫৮২)


হাদিস নং -০২

أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ يَعْقُوبَ، قَالَ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ شَقِيقٍ، قَالَ أَنْبَأَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ وَاقِدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، وَالأَسْوَدِ، وَأَبِي الأَحْوَصِ، قَالُوا حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ " السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ " . حَتَّى يُرَى بَيَاضُ خَدِّهِ الأَيْمَنِ وَعَنْ يَسَارِهِ " السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ " . حَتَّى يُرَى بَيَاضُ خَدِّهِ الأَيْسَرِ .

১৩২৮। ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার ডান দিকে সালাম ফিরাতেন ’আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে তখন তার চেহারার ডান দিকের শুভ্রতা দেখা যেত। অনুরূপভাবে বাম দিকে ’আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম ফিরালে তার চেহারার বাম দিকের শুভ্রতা দেখা যেত।


’Abdullah bin Mas’ud narrated that:

The Messenger of Allah (ﷺ) used to say salam to his right:As-salamu ’alaykum wa rahmatullah (peace be upon you and the mercy of Allah) , until the whiteness of his right cheek could be seen, and to his left: As-salamu ’alaykum wa rahmatullah (peace be upon you and the mercy of Allah) until the whiteness of his left cheek could be seen.

—সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩২৫ (আন্তর্জাতিক নং ১৩২৫)


সারকথা হলো,  নামাজে সালাম ফিরানোর সময় নজর নিজ কাঁধের উপর রাখা খুশু-খুজুর অধিক নিকটবর্তী।



  والله اعلم بالصواب

জিজ্ঞাসা-১৩১৫৮: গায়ে পা লাগলে তার গা ছুয়ে চুমু খাওয়া/সালাম করা এই বিধান টা কি শরিয়ত সম্মত?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১৩১৫৮: 

আসসালামু আলাইকুম। আমার একটা প্রশ্ন ছিল: কারো গায়ে পা লাগলে তার গা ছুয়ে চুমু খাওয়া এই বিধান টা কি শরিয়ত সম্মত?

তারিখ: ৩০/১২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  আব্দুর রহমান সাভার থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, মানুষ হিসেবে প্রতিটি মানুষের সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। তাই তাদের সম্মানহানি হয়, এমন কাজ-কর্ম জায়েজ নেই।  যেমন আল্লাহ বলেন, 

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي 

নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। সূরা বানী ইসরাঈল-৭০


দ্বিতীয় কথা হলো, শরীরে পা লাগলে অপমানের বিষয়, এটা সামাজিক উরফ বা প্রথা। ফিকহে ইসলামীর প্রধান চার মাজহাবের ইমামরা উরফ ও আদতকে আইনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হানাফি মাজহাবে কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস ও ইস্তেহসানের পর উরফের স্থান। উরফের দলিল-


Surah Al-Baqara, Verse 236:

لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ

স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত (সামাজিক মানদণ্ড অনুপাতে) রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব। সূরা বাকারা-২৩৬


5364 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ المُثَنَّى، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ هِشَامٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ هِنْدَ بِنْتَ عُتْبَةَ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيحٌ وَلَيْسَ يُعْطِينِي مَا يَكْفِينِي وَوَلَدِي، إِلَّا مَا أَخَذْتُ مِنْهُ وَهُوَ لاَ يَعْلَمُ، فَقَالَ: «خُذِي مَا يَكْفِيكِ [ص:66] وَوَلَدَكِ، بِالْمَعْرُوفِ»

৪৯৭৩। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না (রাহঃ) ......... ‘আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, হিনদা বিনতে ‘উতবা বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবু সুফিয়ান একজন কৃপন লোক। আমাকে এ পরিমাণ খরচ দেন না, যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট; তবে তার অজান্তে যা আমি (চাই) নিতে পারি। তখন তিনি বললেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য নিয়মানুসারে (প্রথামাফিক) যা যথেষ্ট হয়, তা তুমি নিতে পার।

Narrated `Aisha:

Hind bint `Utba said, "O Allah’s Messenger (ﷺ)! Abu Sufyan is a miser and he does not give me what is sufficient for me and my children. Can I take of his property without his knowledge?" The Prophet (ﷺ) said, "Take what is sufficient for you and your children, and the amount should be just and reasonable.

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৭৩ (আন্তর্জাতিক নং ৫৩৬৪)


তৃতীয় কথা হলো, শরীরে পা লাগলে সালাম বা চুমু খাওয়া, এটা সামাজিক উরফ বা প্রথা। আর সামাজিক  প্রথা মানতে অসুবিধা নেই।

- ألا يخالف القرآن والسنة ومبادئه. وأي عادات وممارسات تتعارض مع الكتاب والسنة تعتبر باطلة ولاغية. (المدخل الفقه عم ص 897)

 যদি কোরআন-সুন্নাহ ও তার মূলনীতির বিরোধী না হওয়া। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী যেকোনো প্রথা ও রীতি বাতিল ও বর্জনীয়। (আল-মাদখালুল ফিকহিল আম, পৃষ্ঠা ৮৯৭)


সারকথা হলো,  কারও গায়ে পা লাগলে তার গা ছুয়ে চুমু খাওয়া বা সালাম করা জরুরি নয়।  কাজটি অনিচ্ছায় ঘটেছে, আপনি এ কারণে লজ্জিত সেটায় বুঝানো উদ্দেশ্য।

মোখিকভাবে এইভাবে বলা উত্তম হবে। যেমন,  'আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত' , 'খেয়াল করতে পারিনি' বা 'মাফ করবেন' , ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এজাতীয় শব্দ বলাই শ্রেয়।

আর কেউ যদি সামাজিক উরফ বা প্রথা হিসেবে (ইবাদত হিসেবে নয়) গা ছুঁয়ে চুমু বা সালাম করে, এতে কোনো অসুবিধা নেই।


  والله اعلم بالصواب

১৩১৫৭: ইমাম সাহেব দুআর আগে সূরা ফাতিহা-ইখলাস ইত্যাদি লাউড স্পিকারে পাঠ করবে না চুপে চুপে পাঠ করবে

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১৩১৫৭: 

আসসালামু আলাইকুম। অনেক সময় দেখা যায়, মুনাজাতের আগে আমরা সবাইকে সুরা ফাতিহা সুরা ইখলাস দরূদ পাঠ করতে বলি-

           তারপর নিজে লাউড স্পিকারে এগুলো পড়তে থাকি। এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি ? মনে মনে পড়বো নাকি লাউড স্পিকারে পড়বো ? দয়া করে জানাবেন। ধন্যবাদ

তারিখ:২৯/১২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী নাটোর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ইমাম কোন কিছু শিখানোর উদ্দেশ্যে জোরে জোরে বলা উত্তম।


তবে বর্ণিত ছুরতে সূরা ফাতিহা/ইখলাস শিখানোর কিছু নেই। বরং উচ্চস্বরে পাঠ করলে অন্যের পাঠে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অন্যের ইবাদতে/ঘুমে বিঘ্নিত ঘটনো ইসলামি শরিয়াতে জায়েয নেই। দলিল- 


باب فِي رَفْعِ الصَّوْتِ بِالْقِرَاءَةِ فِي صَلاَةِ اللَّيْلِ

حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أُمَيَّةَ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ : اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَسْجِدِ فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُونَ بِالْقِرَاءَةِ، فَكَشَفَ السِّتْرَ وَقَالَ : " أَلاَ إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ فَلاَ يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلاَ يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْقِرَاءَةِ " . أَوْ قَالَ : " فِي الصَّلاَةِ " .

৩২০. রাতের (নফল) নামাযে কিরাতের স্বশব্দে পাঠ করা সম্পর্কে।

১৩৩২. হাসান ইবনে আলী (রাহঃ) ..... আবু সাঈদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে “ইতিকাফ” করাকালীন সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে কিরা’আত পাঠ করতে শুনে পর্দা উঠিয়ে বলেনঃ জেনে রাখ। তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের রবের সাথে গোপন আলাপে রত আছ। অতএব তোমরা (উচ্চস্বরে কিরা’আত পাঠের দ্বারা) একে অন্যকে কষ্ট দিও না তোমরা একে অন্যের চাইতে উচ্চস্বরে কিরা’আত পাঠ কর না।

Narrated AbuSa’id al-Khudri:


The Messenger of Allah (ﷺ) retired to the mosque. He heard them (the people) reciting the Qur’an in a loud voice. He removed the curtain and said: Lo! every one of you is calling his Lord quietly. One should not trouble the other and one should not raise the voice in recitation or in prayer over the voice of the other.

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৩২ (আন্তর্জাতিক নং ১৩৩২)


সারকথা হলো,  লাউড স্পিকারে জোরে জোরে পাঠ করা ঠিক হবে না, তবে প্রত্যেক সূরা বা তাসবিহর শুরুতে উচ্চস্বরে পাঠ করা যেতে পারে, মুসল্লিদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য।



  والله اعلم بالصواب

জিজ্ঞাসা-১২৩৮৪: জনাব আসসালামু আলাইকুম। সত্তর হাজার ফেরেস্তাসহ জানাজা হয়েছে এমন সাহবা কে? দয়া

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৩৮৪:

জনাব আসসালামু আলাইকুম। সত্তর হাজার ফেরেস্তাসহ জানাজা হয়েছে এমন সাহবা কেদয়া করে জানাবেন।  তারিখ: ২০/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

 

মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর আপনার প্রশ্নের আলোকে উক্ত সাহাবির সম্পর্কে হাদিস উল্লেখ করা হলো,

 

أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدٍ الْعَنْقَزِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " هَذَا الَّذِي تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ وَفُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَشَهِدَهُ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنَ الْمَلاَئِكَةِ لَقَدْ ضُمَّ ضَمَّةً ثُمَّ فُرِّجَ عَنْهُ " . 

أخبرنا إسحاق بن إبراهيم، قال حدثنا عمرو بن محمد العنقزي، قال حدثنا ابن إدريس، عن عبيد الله، عن نافع، عن ابن عمر، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال " هذا الذي تحرك له العرش وفتحت له أبواب السماء وشهده سبعون ألفا من الملائكة لقد ضم ضمة ثم فرج عنه " .

অর্থ:  ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ... ইবনে উমর (রা.) সূত্রে রাসূলুল্লাহ () থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনসেই ব্যক্তি যার জন্য আরশ কেঁপে উঠেছিল এবং যার জন্য আকাশের দ্বারসমুহ খূলে গিয়েছিল এবং যার জানাযার সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়েছিল তার কবরও সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ীহাদীস নং ২০৫৫

তাহকীক: হাদিসটির সনদ ছহিহ/বিশুদ্ধ

 

ব্যাখ্যা:

‏ ‏قَوْله ( هَذَا الَّذِي تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ ) ‏ ‏زَادَ الْبَيْهَقِيُّ فِي كِتَاب عَذَاب الْقَبْر يَعْنِي سَعْد بْن مَعَاذ وَزَادَ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة قَالَ الْحَسَن تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ فَرَحًا بِرُوحِهِ وَرَوَى أَحْمَد وَالْبَيْهَقِيُّ مِنْ حَدِيث عَائِشَة عَنْ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ لِلْقَبْرِ ضَغْطَةً لَوْ كَانَ أَحَدٌ نَاجِيًا مَا نَجَا مِنْهَا سَعْد بْن مَعَاذ.

حاشية السندي على سنن النسائي: أبو الحسن، محمد بن عبد الهادي نور الدين السندي (المتوفى: 1138هـ)

অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি/ সাহাবির নাম হলো সাদ বিন মুয়াজ (রা.) । সূত্র; হাশিয়াতুল সানাদি আলা সুনানিন নাসায়ি


শেষ কথা হলো, কবরের সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া এটা আযাবের আলামত মোটেই নয়এটা মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকলের সাথে কবরের প্রাথমিক আচরণএজন্যেই কবর থেকে এতো বেশী আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে  অর্থাৎ  সাদ বিন  ‍মুয়াজ (রা.) কে কববের চাপ দিয়েছে, এটা সত্য নয়।  


والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা-১২৩৮৩: একজন হাফেজ দশ ব্যক্তির জান্নাতের সুপারিশ করতে পারবে। দয়া করে রেফারেন্স সহ হাদীসটি জানাবেন।

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৩৮৩:

জনাব আসসালামু আলাইকুম। একজন হাফেজ দশ ব্যক্তির জান্নাতের সুপারিশ করতে পারবে। দয়া করে রেফারেন্স সহ হাদীসটি জানাবেন। তারিখ-২১/১২/২০২২

 মাওলানা মোঃ ছমির উদ্দিন ঘাটাইল টাঙ্গাইল থেকে


জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। 

نجده و نصلي على رسوله الكريم

তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিসটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো,


عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَاسْتَظْهَرَهُ فَأَحَلَّ حَلاَلَهُ وَحَرَّمَ حَرَامَهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِ الْجَنَّةَ وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلُّهُمْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَلَيْسَ إِسْنَادُه


ইবনে আবু তালেব রা: হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং উহা মুখস্থ করেছে অতঃপর কুরআন যা হালাল করেছে সে নিজের জন্য তা হালাল করেছে এবং কুরআন যা হারাম করেছে সে নিজের জন্য তা হারাম করেছে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন দশজনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে। যাদের পরিণাম জাহান্নাম অবধারিত ছিল।’ তাখরিজ: তিরমিজি-২৯০৫, ইবনে মাজাহ-২১৬


নোট: ইমাম তিরমিজি রহ বলেন, হাদিসটির সনদ গরিব। 


আর কতক মুহাদ্দেস হাদিসটির সনদ দুর্বল বলেছেন।



و الله اعلم بالصواب


দ্বীনি সচেতনতা-৫৫: থার্টি ফার্স্ট নাইট' নামক একটি রাত আমাদেরকে একইসাথে ১০ টি গুনাহের ধামাকা প্যাকেজ অফার করছে!!

No Comments

 



*'থার্টি ফার্স্ট নাইট' নামক একটি রাত আমাদেরকে একইসাথে ১০ টি গুনাহের ধামাকা প্যাকেজ অফার করছে!! বলতে গেলে একের ভিতর দশ!!*


১. আতশবাজি ও উচ্চ আওয়াজে গানের ব্যবস্থা করে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার গুনাহ।

২. অপচয় ও অপব্যায় করার জন্য গুনাহ।

৩. বেহায়াপনা ও বেলাল্লাপনা করার গুনাহ।

৪. মদ পান করার গুনাহ।

৫. মানুষ কষ্ট পেয়ে হয়ত এই কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের অভিশাপ দিবে, সেই অভিশাপের প্রভাব।

৬. গান, বাজনা ও নাচ করার গুনাহ।

৭. কু-নজরের গুনাহ। 

৮. যিনা করার গুনাহ।

৯. আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল ও শয়তানের অনুসারী হওয়ার গুনাহ।

১০. কাফেরদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অনুসরণ এবং সাদৃশ্য গ্রহণ করার গুনাহ।


নববর্ষ পালনের বিধানঃ


খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড় দিন তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন। মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হতো ২৫শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ্য ছিল, ঐ দিন খ্রিষ্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট এ মর্মে ঐশী বাণী প্রেরিত হয় যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্র জন্ম দিতে যাচ্ছেন।


পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এ দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন ‘সাবাত’ হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলরে মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। 


সুতরাং নববর্ষ পালন অমুসলিমদের সংস্কৃতি তাই এসব পালন করা হারাম। কেননা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যক্তি অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”

[সুনানে আবূ দাউদ:৪০৩৩]


আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত:

 *قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا ، فَقَالَ : مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ ؟ قَالُوا : كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا : يَوْمَ الْأَضْحَى ، وَيَوْمَ الْفِطْرِ )*

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি(সা.) বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন: ইয়াওমুল আদ্বহা ও ইয়াওমুল ফিতর।

[সুনান আবু দাউদঃ১১৩৪; সুনানে নাসায়ীঃ১৫৫৬- হাদিসটির মান সহীহ]


এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, নববর্ষের বিপরীতে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন। ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: 

"প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।”

[সহীহ বুখারী: ৯৫২; সহীহ মুসলিম: ৮৯২]


ইমাম যাহাবী তার সনদে, ইমাম সয়মারী তার সনদে ও ইমাম খত্বীবে বাগদাদি তার সনদে বর্ণনা করেন(রহিমাহুমুল্লাহ)-


ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোযের দিন (নববর্ষের দিন) আলী রা.-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোয উপলক্ষ্যে) ফলে আলী রা. বললেন,

*نَوْرِزُوْنَا كُلَّ يَوْم*

"আমাদের(মুমিনের) প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ।"

[সিয়ারু আ'লামিন নুবালা ৬/৩৯৫; তারীখে বাগদাদ ১৫/৪৪৪; আত ত্ববাক্বাতুস সানিয়্যাহ ফি তারাজিমিল হানাফিয়্যা ১/২৫; আখবারু আবি হানিফা, সয়মারী]


অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলীর (রাদ্বি.) এ ফতোয়া দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, নববর্ষ উপলক্ষ্যে পরষ্পরে উপহার বা প্রেজেন্টশন আদান প্রদান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় নাজায়িয।


ইমাম ফখরুদ্দীন উসমান বিন আলী আয যাইলায়ী রহ. বলেন,- 

নওরোজ (নববর্ষ) ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরং কুফরী।

[তাবইনুল হাকায়েক : ৬/২২৮]


ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান (রহ.)'র ছাত্র ইমাম আবু হাফস আল কাবীর (রহ.) বলেন, . ‘‘কোনো ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করলো। এরপর সে নববর্ষের দিনে এ দিনকে সম্মান ও ভালোবাসা দেখিয়ে কোনো মুশরিককে একটি ডিমও যদি উপহার দেয়, তাহলে সে কুফরি করলো। তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।’’


 *لَوْ أَنَّ رَجُلًا عَبَدَ اللَّهَ خَمْسِينَ سَنَةً ثُمَّ جَاءَ يَوْمُ النَّيْرُوزِ، وَأَهْدَى لِبَعْضِ الْمُشْرِكِينَ بَيْضَةً يُرِيدُ بِهِ تَعْظِيمَ ذَلِكَ الْيَوْمِ فَقَدْ كَفَرَ، وَحَبِطَ عَمَلُهُ* .

[আল বাহরুর রায়েক, তাকমিলাতুত তুরী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৫৫৫, প্রকাশনায় : দারুল কিতাবিল ইসলামী; তাবঈনুল হাক্বায়েক ৬/২৮৮]


ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ তার লিখিত রিসালা "আত তামাসসুক বিস সুনানি ওয়াত তাহযির মিনাল বিদয়ি "- তে নববর্ষ পালনকে বিদআত, নিন্দনীয় জাহেলদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন -


*" أما مشابهة الذِّمة في الميلاد ، والخميس ، والنيروز ، فبدعة وحشة.فإن فَعلها المسلم تديُّناً فجاهل ، يزجر وُيعَلَّم ، وإن فعلها حُبّاً [لأهل الذِّمة] وابتهاجاً بأعيادهم فمذموم أيضاً، وإنْ فعلها عادةً ولعباً، وإرضاءً لعياله، وجبراً لأطفاله فهذا محل نظر، وإنما الأعمال بالنيَّات، والجاهل يُعذر ويبين له برفق، والله أعلم "*


আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে এই গুনাহ থেকে হিফাযত করুন। *(আমীন)*

প্রবন্ধ-৭৩: আপনি যখন জীবনে আল্লাহর জন্য সময় বের করতে পারবেন না, তখন জীবনের কোন কিছুই ঠিক মতন হবে না। এমনভাবে বাঁচুন যেন যারা আল্লাহকে চেনে না কিন্তু আপনাকে চেনে তারা যেন আপনাকে দেখে আল্লাহকে চিনতে পারে।

No Comments

 


যে মানুষটার সাথে আমরা ভালো হবার প্রতিযোগিতা করতে পারি সে হলো আমাদের গতকালকের আমি।


জ্ঞানী মানুষেরা সবসময় চুপ থাকেন না, কিন্তু তারা জানেন কখন চুপ থাকতে হয়।


যে আল্লাহর সামনে হাঁটু গেঁড়ে সিজদাহ করতে পারে সে সবার সামনে দৃঢ় হয়ে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।


দুশ্চিন্তা আপনার আগামীকালের সমস্যা দূর করতে পারবে না, বরং আজকের শান্তিটুকু দূর করে দিবে।


দু’আ করার সময় তাদেরকে স্মরণ রাখুন যারা আপনাকে একজন উন্নত মুসলিম হবার পথে সাহায্য করেছেন, করছেন।


কেবলমাত্র বোকারাই অস্থায়ী পৃথিবীতে স্থায়ী বাড়ি/গাড়ি/সম্পর্ক খুঁজে হয়রান হয়…


আপনার ভাঙ্গা হৃদয় কখনো জোড়া লাগবে না যদি তা আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে না পারেন।


আমি আল্লাহর কাছে অনেককিছু চেয়েছি এবং তিনি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমি হয়ত যা চেয়েছি তা পাইনি কিন্তু তা-ই পেয়েছি যা আমার প্রয়োজন ছিলো।


ছোট ছোট কিছু কাজ মিলে বিশাল অর্জন আর সফলতাকে তৈরি করে। ছোট কাজগুলো কখনই কম মূল্যবান নয়।


সালাতকে বোঝা মনে করা উচিত নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে সলাত দিয়েছেন যেন আমরা আমাদের উপরের বোঝাকে হালকা করতে পারি।


এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও সৌভাগ্যময় মূহুর্তগুলোর একটি হলো সিজদাহ।


হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়ার কষ্ট আর মন খারাপ হারিয়ে গিয়ে প্রশান্তিতে পরিণত হয় যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে স্মরণ করা হয়, তাঁর কাছে দু’আ করা হয়।


যখন সমস্যা সমাধানের কোন উপায়ই আর দেখা যায় না, তখন আল্লাহ তা থেকে বের হবার পথ করে দেবেন। দোয়া করতে থাকা উচিত সবসময়।


আপনার জীবনে মানুষ আসবে এবং যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবকিছুর শেষে একটা সত্যিকারের ভালোবাসার গল্প থাকবে, সেটা হবে আপনার এবং আল্লাহর মাঝে!


জান্নাতের পথে এগিয়ে গেলে তো কষ্ট হবেই। যেকোন ভালো জিনিস পেতে তো কষ্ট করতেই হয়।


আপনি যখন জীবনে আল্লাহর জন্য সময় বের করতে পারবেন না, তখন জীবনের কোন কিছুই ঠিক মতন হবে না।


এমনভাবে বাঁচুন যেন যারা আল্লাহকে চেনে না কিন্তু আপনাকে চেনে তারা যেন আপনাকে দেখে আল্লাহকে চিনতে পারে। 


দোয়া করা ছাড়বেন না। যতই আশাহীন আর কঠিন লাগুক সময়। বিশ্বাস রাখুন। আল্লাহ নিশ্চয়ই প্রশান্তি লাভের ব্যবস্থা করে দেবেন।


~ সংগৃহীত

জিজ্ঞাসা ১২৩৮২: "দুনিয়া আখেরাতের শস্য ক্ষেত্র" এটা হাদিস কিনা?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৩৮২:

الدنياء مزرعة الاخرة ("দুনিয়া আখেরাতের শস্য ক্ষেত্র" )
এটা হাদিস কিনা? কাইন্ডলি রেফারেন্স সহ জানালে খুশি হব। তারিখ-২০/১২/২০২২ 

মাওলানা আব্দুল হালিম রাজেন্দ্রপুর থেকে



বাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। نحمده و نصلي على رسوله الكريم

তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এটা সরাসরি হাদিস নয়, বরং মনীষীর বাণী। তবে এটা কুরআন সুন্নাহর নির্যাস কথা। 

এ বিষয়ে হানাফি মাজহাবের অন্যতম ফকিহ-মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারী রহ. বলেছেন। যেমন,

فإن هذا الحديث ذكره الملا علي القاري في الموضوعات ونقل عن السخاوي أنه قال: لم أقف عليه. وذكر الملا علي القاري أن معناه صحيح يقتبس من قوله تعالى: مَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ {الشورى:20}.

অর্থাৎ এই হাদিসটি মুল্লা আলী আল-কারি আল-মাওজুআতে (জাল) উল্লেখ করেছেন এবং তিনি আল-সাখাভির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন: আমি এটি খুঁজে পাইনি। 

এবং মোল্লা আলী আল-কারী বলেছেন যে এর অর্থ সঠিক। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি পরকালের ফসল কামনা করে, আমরা তার চাষাবাদে তার জন্য বৃদ্ধি করব।  সূরা আল-শুরা-20

সূত্র: মাকাতাবাতুশ শামেলা,ফাতওয়াশ শাবকাতুল ইসলামিয়া -১০৭৯৭ পৃ.



و الله اعلم بالصواب
No Comments



حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْوَاسِطِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ غَالِبٍ الْعَبَّادَانِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زِيَادٍ الْبَحْرَانِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ يَا أَبَا ذَرٍّ لأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ آيَةً مِنْ كِتَابِ اللَّهِ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ مِائَةَ رَكْعَةٍ وَلأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ بَابًا مِنَ الْعِلْمِ عُمِلَ بِهِ أَوْ لَمْ يُعْمَلْ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ أَلْفَ رَكْعَةٍ ‏"‏ ‏.‏

২১৯। 'আব্বাস ইবন 'আব্দুল্লাহ ওয়াসিতী (রাহঃ) ....... আবু যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেনঃ হে আবু যার! সকালে কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা করা তোমার জন্য একশো রাক'আত (নফল) সালাতের চাইতে উত্তম। সকালবেলা জ্ঞানের কোন অনুচ্ছেদ শিক্ষা করা তোমার জন্য এক হাজার রাক'আত সালাতের চাইতে উত্তম, চাই তুমি তদনুযায়ী আমল কর কিংবা না কর।


It was narrated that Abu Dharr said:

"The Messenger of Allah said to me: ’O Abu Dharr! For you to come out in the morning and learn one Verse from the Book of Allah is better for you than praying one hundred Rak’ah, and for you to come out and learn a matter of knowledge, whether it is acted upon or not, is better for you than praying one thousand Rak’ah.’"


—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২১৯ (আন্তর্জাতিক নং ২১৯)


তাহকীক: তাহকীক চলমান


হাদীসের বর্ননাকারী: হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ) (মৃত্যু ৩২ হিজরী)

শিক্ষার্থীদের পাতা-১৬: ১১ কারণে আলেমদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি

No Comments

 


১১ কারণে আলেমদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি

যোবায়ের ইবনে ইউসুফ।।


নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইবাদতের ফজিলতের চেয়ে ইলমের ফজিলত অধিক বেশি। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ১/১৭১।) এই ইলম যারা বহন করেন তাদেরকে আলেম বলে। অন্যদের থেকে আলেমদের মর্যাদাও অধিক বেশি। জেনে নেয়া যাক, ঠিক কী কী কারণে তাদের মর্যাদা এতো বেশি: -


এক. জ্ঞানী এবং মূর্খ সমান নয়। ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক মহামূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদ যার আছে, সে আলেম। যার নেই, সে জাহেল। আলেম এবং জাহেল সমান নয়। যা আমরা জেনেছি কুরআন মাজিদ থেকে।


এরশাদ হয়েছে, 'বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান? বোধসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।' (যুমার: ০৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অথবা আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?' (রা‘দ: ১৬)।


দুই. নবীদের উত্তরাধিকারী। ওহী প্রেরণ করার মাধ্যমে নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়ত বা জ্ঞানের নাম ওহী। নবী-রাসূলগণের সেই ইলমে ওহীর উত্তরাধিকারী হলেন আলেমগণ।


নবীজি (সা.) বলেছেন, 

من سلك طريقًا يطلبُ فيه علمًا ، سلك اللهُ به طريقًا من طرقِ الجنةِ ، وإنَّ الملائكةَ لتضعُ أجنحتَها رضًا لطالبِ العِلمِ ، وإنَّ العالِمَ ليستغفرُ له من في السماواتِ ومن في الأرضِ ، والحيتانُ في جوفِ الماءِ ، وإنَّ فضلَ العالمِ على العابدِ كفضلِ القمرِ ليلةَ البدرِ على سائرِ الكواكبِ ، وإنَّ العلماءَ ورثةُ الأنبياءِ ، وإنَّ الأنبياءَ لم يُورِّثُوا دينارًا ولا درهمًا ، ورَّثُوا العِلمَ فمن أخذَه أخذ بحظٍّ وافرٍ

'আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যান নি। বরং তারা রেখে গিয়েছেন কেবল ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিশাল অংশ গ্রহণ করেছে।' (আবু দাউদ: ৩৬৪১)।


তিন. সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। আলেমদেরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এবং আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম বা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিবেন। (সূরা মুজাদালা: ১১)।


নবীজি সা. বলেছেন, 'যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, এবং আলেমদের বা জ্ঞানীদের মর্যাদা-অধিকার বুঝে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।' (মুসনাদে আহমদ: ৫/৩২৩)।


চার. আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি। আলেমগণ ইলমে ওহীর বাহক। এই ইলম বা জ্ঞান যে কেউ অর্জন করতে পারে না। আল্লাহ যার কল্যাণ চান এবং যাকে মনোনীত করেন, কেবল সে-ই তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান বা বুঝ দান করেন। (মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৭)।


কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বস্তুত, জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না' (বাকারা: ২৬৯)।


পাঁচ. সমগ্র সৃষ্টি দোয়া করে। আলেমদের জন্য সমগ্র সৃষ্টিকুল দোয়া করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য সমগ্র সৃষ্টি; এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করে। (ইবনে মাজাহ: ১৯৭)


ছয়. আলেমের মর্যাদা আবেদের চেয়ে বেশি। আলেমের মর্যাদা ইবাদতকারীর চাইতে অধিক বেশি। নবীজি (সা.) আলেম কে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে তুলনা করে বলেছেন, আলেমগণের মর্যাদা আবেদগণের উপর তেমন, যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকাসমূহের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮২)। অন্য হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর তেমন, যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮৬)।


সাত. ইলম বিতরণের সওয়াব। ইলম বিতরণকারী, তার উপর আমলকারীর সমপরিমাণ নেকী লাভ করবেন। এই কারণে আমলকারীর থেকে কোনো সওয়াবও কমানো হবে না।


নবীজি (সা.) বলেছেন, যদি কেউ কোনো ইলম শিক্ষা দেয়, তবে সেই শিক্ষা অনুসারে যত মানুষ আমল করবে, সকলের সমপরিমাণ সওয়াব ঐ ব্যক্তি লাভ করবে, কিন্তু এতে তাদের সওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে না।' (ইবনে মাজাহ: ১/৮৮)। অন্য এক হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম শিক্ষা দিবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় সওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করবে। তবে আমলকারীর ছওয়াব থেকে সামান্যতমও কমানো হবে না' (ইবনে মাজাহ: ২৪০)


আট. সর্বোত্তম ব্যক্তি

আলেমরা মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। কেননা তারা দ্বীনি ইলম শেখেন এবং অন্য কে শিক্ষা দেন। এই জন্যই নবীজি বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে কুরআন মাজীদ শিখে এবং শিক্ষা দেয়।' (তিরমিজি: ২৯০৭)


নয়. সমাধান জেনে নেওয়ার নির্দেশ

আলেমদের মর্যাদা আল্লাহতালা সমুন্নত করেছেন। কোনো বিষয় না জানলে, আলেমদের নিকট জেনে নিতে বলেছেন। এরশাদ হয়েছে, 'অতএব আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করো; যদি তোমাদের জানা না থাকে।' (নাহাল: ৪৩)


দশ. আল্লাহর প্রশংসার পাত্র। আলেমদের প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা করেছেন। কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে, মূলত আলেমগণই তাঁকে ভয় করে' (ফাতির: ২৮)।


অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (আলে ইমরা: ১৮)


অন্য আয়াতে এসেছে, পক্ষান্তরে যারা জ্ঞান ও বিদ্যায় অভিজ্ঞ, তারা বলে, আমরা তার প্রতি ইমান এনেছি, সবই আমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে। সত্য কথা এই যে, কোনো জিনিস হতে প্রকৃত শিক্ষা কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরাই গ্রহণ করে (আলে ইমরান: ৭)।


এগার. মৃত্যুর পরেও চালু থাকবে সওয়াব। আলেমের ইলম দ্বারা যতো মানুষ উপকৃত হবে, তিনি সে অনুযায়ী সওয়াব পেতে থাকবেন। এমনকি মৃত্যুর পরেও তার সওয়াব বন্ধ হবে না।


নবীজি সা. বলেছেন, যখন কোনো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের সওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসলিম: ৩/১২৫৫)।


মুহাদ্দিস: আল জামিয়াতু সাকিনাতুল উলুম মহিলা মাদ্রাসা। শিবচর, মাদারিপুর। খতিব: ফুকুরহাটি মধ্যপাড়া জামে মসজিদ। ভাঙ্গা, ফরিদপুর।


-এটি, আওয়ার ইসলাম 




আমলের উপকারিতা-১৩: আল্লাহ তাআলার জিকিরের শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা

No Comments

 


যিকির (আল্লাহর স্মরণ) করার ফলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, যার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:


১. যিকির এবং মানসিক শান্তি

যিকির করার সময় মস্তিষ্কে এক ধরনের ধ্যান বা মেডিটেশনের প্রভাব সৃষ্টি হয়, যা কোর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।


স্ট্রেস কমলে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ হ্রাস পায় এবং এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।


গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত যিকির বা ধ্যান করেন, তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন এবং সেরোটোনিন (সুখের হরমোন) বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তারা মানসিকভাবে প্রশান্তি অনুভব করেন।


২. হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা

যিকির করার সময় ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়া হয় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়। এটি প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় করে, যা হৃদযন্ত্রকে শিথিল করে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে।


নিয়মিত যিকির হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


৩. রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি

যিকির করার সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেনেটেড রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এতে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।


৪. ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটি দূর করে

যিকির করার ফলে মস্তিষ্কে গামা-অ্যামিনোবিউট্রিক অ্যাসিড (GABA) নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা উদ্বেগ এবং হতাশা দূর করতে সাহায্য করে।


যিকিরের সময় মন আল্লাহর প্রতি কেন্দ্রীভূত থাকায় মস্তিষ্ক নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে, যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।


৫. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক

গবেষণায় দেখা গেছে, যিকির বা ধর্মীয় প্রার্থনা হৃদরোগীদের মধ্যে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।


ধীর গতিতে উচ্চারণ করা যিকিরে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র একসাথে শিথিল হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।


বৈজ্ঞানিক উদাহরণ:

American Heart Association এর গবেষণা অনুযায়ী, ধ্যান বা কোনো নির্দিষ্ট শব্দের পুনরাবৃত্তি করার মাধ্যমে স্ট্রেস কমে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। যিকির এই ধ্যানের মতোই কাজ করে।


Harvard Medical School এর মতে, প্রার্থনা বা মেডিটেশন কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।


কুরআন ও বিজ্ঞান সমন্বয়

কুরআনে বলা হয়েছে:

> "নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্ত হয়।" (সূরা রাদ: ২৮)


এই আয়াতের সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণা মিলে যায়, যা প্রমাণ করে যে আল্লাহর স্মরণ (যিকির) হৃদয়ের প্রশান্তি এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।


উপসংহার:


নিয়মিত যিকির করা শুধু আত্মিক শান্তি নয়, হৃদরোগ, স্ট্রেস এবং অন্যান্য মানসিক ও শারীরিক সমস্যার বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এটি হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দীর্ঘ জীবন নিশ্চিত করতে সহায়ক।

Stylo

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের ওয়েব সাইটে আপনাকে স্বাগতম। পোষ্ট গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে করে যোগাযোগ করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর