আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১৪৮: নামাজে দাঁড়ানো, রুকু, বৈঠক এবং সিজদা এর কোন অবস্থায় চোখ কোথায় রাখতে হবে

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১৪৮: 

আসসালামু আলাইকুম। নামাজে দাঁড়ানো, রুকু,  বৈঠক এবং সিজদা এর কোন অবস্থায় চোখ কোথায় রাখতে হবে এ মর্মে দলিল প্রত্যাশা করছি

তারিখ:১৩/১২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  আব্দুর রহমান সাভার থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।


ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত, ১/২৮) তবে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে। দলিল- 


দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায়:

استحَبَّ الجمهورُ- مِن الحنفيَّةِ والشافعيَّةِ والحنابلةِ- للمُصلِّي أن ينظُرَ إلى موضعِ سجودِه حالَ القيامِ، وهو قولُ بعضِ السَّلفِالمبدع)) لبرهان الدين ابن مفلح (1/379)، ((كشاف القناع)) للبهوتي (1/334)، وينظر:

হানাফী, শাফিঈ এবং হাম্বলী সহ অধিকাংশ - এর মতে   নামাজী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তার সেজদার স্থানের দিকে তাকাবে এবং এটি কিছু সালাফের মত। সূত্র: কাশশাফুল কনা-১/৩৩৪


وحُكِىَ عن شَرِيكٍ، أنَّه قال: يَنْظُرُ في حالِ قِيَامِه إلى مَوْضِعِ سُجُودِهِ، وفي رُكُوعِهِ إلى قَدَمَيْهِ، وفي حالِ سُجُودِهِ إلى أَنْفِهِ، وفي حالِ التَّشَهُّدِ إلى حِجْرِه. وقد رَوَى أبُو طَالِبٍ العُشَارِىِّ (37)، في "الأفْرَادِ"، [عن بعضِ الصَّحابةِ](38)، قال: قلتُ: يا رَسُولَ اللهِ، أينَ

শারীক রহ. বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন: দাঁড়ানোর সময় সে তার সিজদার স্থানের দিকে তাকায়, রুকু করার সময় দুপায়ের মাঝে, সেজদা করার সময় তার নাকের দিকে তাকায় এবং তাশাহহুদ পড়ার সময় তার কোলের দিকে তাকায়। সূত্র: আরশিফু মুলতাকি আহলিল হাদিস-৭৩/২১৮


বসা তথা তাশাহুদ অবস্থায়:

أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ - عَنْ مُسْلِمِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَعَافِرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ رَأَى رَجُلاً يُحَرِّكُ الْحَصَى بِيَدِهِ وَهُوَ فِي الصَّلاَةِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ لاَ تُحَرِّكِ الْحَصَى وَأَنْتَ فِي الصَّلاَةِ فَإِنَّ ذَلِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ وَلَكِنِ اصْنَعْ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ . قَالَ وَكَيْفَ كَانَ يَصْنَعُ قَالَ فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ الَّتِي تَلِي الإِبْهَامَ فِي الْقِبْلَةِ وَرَمَى بِبَصَرِهِ إِلَيْهَا أَوْ نَحْوِهَا ثُمَّ قَالَ هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله علي وسلم يَصْنَعُ .

১১৬৩। আলী ইবনে হুজর (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে নামাযে থাকা অবস্থায় তার হাত দ্বারা পাথরের টুকরা নাড়ছেন। তার নামায শেষ হলে তাকে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) বললেন, তুমি নামাযে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নেড়ো না। কেননা, তা শয়তানের কাজ, বরং ঐরূপ কর যেরূপ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) করতেন। 

সে ব্যক্তি বলল, তিনি কি করতেন? আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) তাঁর ডান হাত ডান উরুর উপর রাখলেন। আর তার ঐ আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করলেন যা বৃদ্ধা আঙ্গুলীর নিকটবর্তী (অর্থাৎ তর্জনি আঙ্গুল দ্বারা) আর তার দৃষ্টি তার প্রতি রাখলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে এরূপই করতে দেখেছি।

—সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১১৬০ (আন্তর্জাতিক নং ১১৬০)


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا ابْنُ عَجْلاَنَ، عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ، بِهَذَا الْحَدِيثِ قَالَ لاَ يُجَاوِزُ بَصَرُهُ إِشَارَتَهُ . وَحَدِيثُ حَجَّاجٍ 

তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করতেন, তবে ইশারার দিকে তিনি দৃষ্টিপাত করতেন না।’

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৯০ (আন্তর্জাতিক নং ৯৯০)

ব্যাখ্যা: ইমাম নববি রহ. বলেন,

قال النووي في شرح مسلم: والسنة أن لا يجاوز بصرُه إشارتَه، وفيه:

অর্থাৎ সুন্নাত হলো শাহাদাত আঙ্গুলের সামনে দৃষ্টিপাত না এবং এর মধ্যে থাকা (অর্থাৎ তাশাহুদ পাঠের সময় কোলের দিকে নজর রাখা।) সূত্র: শারহু মুসলিম-৫/৮১


সিজদা অবস্থায়: 

باب السُّجُودِ عَلَى الأَنْفِ

812 - حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ عَلَى الجَبْهَةِ، وَأَشَارَ بِيَدِهِ عَلَى أَنْفِهِ وَاليَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ، وَأَطْرَافِ القَدَمَيْنِ وَلاَ نَكْفِتَ الثِّيَابَ وَالشَّعَرَ»

নাক দ্বারা সিজদা করা 

৭৭৫। মু’আল্লা ইবনে আসাদ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় না গুটাই।

Narrated Ibn `Abbas:

The Prophet (s) said, "I have been ordered to prostrate on seven bones i.e. on the forehead along with the tip of the nose and the Prophet (s) pointed towards his nose, both hands, both knees and the toes of both feet and not to gather the clothes or the hair."

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭৫ (আন্তর্জাতিক নং ৮১২)


প্রশ্ন: ক। জামাতে নামাজে কোথায় নজর রাখবে?

উত্তর: ক। অধিকাংশ আহলে এলেমদের মতে সিজদার জায়গায় তাকাবে কিন্তু ইমাম মালেক রহ. বলেছেন ইমামের দিকে তাকিয়ে থাকবে।

জমহুরের দলিল-

ما رواه ابن حبان ( 4 / 332 ) والحاكم ( 1 / 652 ) عن عائشة رضي الله عنها قالت : " دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم الكعبة ما خلف بصره موضع سجوده حتى خرج منها " صححه الألباني في " صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم "

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন কা‘বা ঘরে ঢুকে ছালাত আদায় করলেন, তখন তাঁর দৃষ্টি ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সিজদার স্থান থেকে সরেনি (হাকেম হা/১৭৬১; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩০১২; ছি


ইমাম মালিকের দলিল-

Surah Al-Baqara, Verse 149:

وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِنَّهُ لَلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও। সূরা বাকারা-১৪৯



সারকথা হলো,  ফিকহি হানাফির মতে নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায়, রুকু অবস্থায় রাখতে হবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় রাখতে হবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় রাখতে হবে নাকের দিকে নজর রাখা মুস্তাহাব। 

অবশ্যই অন্যান্য ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজ সিজদার জায়গায় নজর রাখবে এবং বৈঠকের সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে নজর রাখবে।



  والله اعلم بالصواب