জিজ্ঞাসা-১৩১৩৯:
আসসালামু আলাইকুম। ফেরেস্তার গা থেকে ঝরে পড়া প্রতিটি বিন্দু হতে এক একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন। এই অসংখ্য-অগণিত ফেরেশতা দরূদ পাঠকারী ব্যক্তির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত গুনাহ্-মাফীর দো'আ করতে থাকে।' এই হাদিস শরিফটির রেফারেন্স ও সনদের মান
তারিখ:০২/১২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মাদ মনজুরুর রহমান ঢাকা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিসটি নিম্নরূপ:
عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: إن الله تعالى خلق ملكاً له جناح في المشرق وجناح في المغرب ورأسه تحت العرش ورجلاه تحت الأرض السابعة وعليه بعدد خلق الله ريش فإذا صلى رجل أو امرأة من أمتي علي أمره الله تعالى أن ينغمس في بحر من نور تحت العرش فينغمس فيه ثم يخرج وينفض جناحه فيقطر من كل ريشة قطرة فيخلق الله من كل قطرة ملكاً يستغفر له إلى يوم القيامه
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: 'আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন, যার বিরাটকায় দেহের এক বাহু দুনিয়ার পূর্ব প্রান্তে এবং অপর বাহু দুনিয়ার পশ্চিম প্রান্তে। মাথা আরশের সন্নিকটে এবং পদদ্বয় যমীনের সপ্তম তবককেও অতিক্রম করেছে। তাকে সমগ্র জগতে বিস্তৃত সৃষ্টির সমপরিমাণ পর-পাখা দেওয়া হয়েছে। আমার উম্মতের মধ্যে কোন পুরুষ বা নারী যখন আমার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা সেই ফেরেশতাকে এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করেন যে, সে যেন আরশের নীচে অবস্থিত 'নূরের সাগরে' ডুব দেয়। আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশ অনুযায়ী সে দরিয়াতে নিমজ্জিত হয়ে বাহির হয় এবং সর্ব শরীর ঝাড়া দেয়। ফলে, তার অসংখ্য পাখনা হতে অগণিত পানি- বিন্দু ঝরে পড়ে। তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কুদরতের দ্বারা ফেরেস্তার গা থেকে ঝরে পড়া প্রতিটি বিন্দু হতে এক একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন। এই অসংখ্য-অগণিত ফেরেশতা দরূদ পাঠকারী ব্যক্তির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত গুনাহ্-মাফীর দো'আ করতে থাকে।' সূত্র: মুকাশাফাতুল কুলূব-১৪ পৃষ্ঠা
সনদের মান:
فلم نقف فيما اطلعنا عليه من دواوين السنة على هذا الحديث، ولعله لا يصح... فإن من علامات الحديث الموضوع -عند المحدثين- أن يتضمن الحديث ثواباً عظيماً مقابل عمل قليل، أو وعيداً شديداً على صغيرة... قال السيوطي في ألفية الحديث:
ومَا به وَعُدٌ عَظِيم أو وَعيِدْ * عَلَى حَقيِرٍ وَصَغيرةٍ شَديد
অর্থাৎ হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসম্ভার হতে এজাতীয় কোন হাদীসের উৎস আমরা খুঁজে পাইনি। সম্ভবত হাদীসটি শুদ্ধ নয়। কারণ কোন হাদীসের মূলভাষ্যে যদি স্বল্প আমলের বিনিময় হিসেবে কল্পনাতীত বিশাল সাওয়াবের কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে হাদিসবিশারদগণের নিকট এটিও মাওযু বা বানোয়াট হাদীস শনাক্ত করার অন্যতম একটি মাধ্যম। এপ্রসঙ্গে আল্লামা সুয়ুতী (রাহি.) আলফিয়াতুল হাদীস গ্রন্থে জাল হাদীস শনাক্ত করার ছন্দমালায় বলেন- জাল বা বানোয়াট হাদীস চেনার অন্যতম একটি উপায় হলো- হাদীসে কোন সামান্য আমলের প্রতিদান স্বরূপ বিশাল সাওয়াবের বর্ণনা থাকবে, কিংবা লঘু অপরাধের শাস্তি হিসেবে গুরুদণ্ডের কথা উল্লেখ থাকবে।
সুতরাং কৃতকর্ম ও তার প্রতিফলের মধ্যকার এই অস্বাভাবিক রকমের বৈশাদৃশ্যতাই একথা প্রমাণ করে যে, হাদীসটি বাস্তবতা বিবর্জিত ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নির্জলা মিথ্যাচার বৈ আর কিছু নয়।
সুতরাং এর প্রচার-প্রসার সুনিশ্চিতভাবেই গর্হিত অন্যায় ও সর্বাংশেই পরিত্যাজ্য। সূত্র: উলূমুল হাদিস, মিন আলামাতিল হাদিসিল মাউজু-৯৮১৯১
নোট: দরুদ শরীফের বিভিন্ন ফজিলত সহিহ দ্বারা প্রমাণিত।
والله اعلم بالصواب