জিজ্ঞাসা-১২৩৫৭:
আসসালামু আলাইকুম। আমার জানার বিষয় হলো মসজিদে হিন্দু লেখকদের বা মুসলমানদের উপন্যাস জাতীয় কোন বই রাখা যাবে কি না? তারিখ: ২১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিফুল ইসলাম খাগড়াছড়ি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হিন্দু লেখকের বই যদি শিক্ষাণীয়/ভাল/উপকারি/গিরিশ চন্দ্রের অনুবাদকৃত বাংলা কুরআন শরিফ হয়, তাহলে মসজিদ লাইব্রেরিতে রাখতে দোষ নেই। আর যদি কুফর/শিরক/বাতিল আকিদা সংক্রান্ত হয়, তাহলে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ বাতিল আকিদা/কুফর-শিরক হাকিকতান (প্রকৃত) অপবিত্র। দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَٰذَا وَإِنْ خِفْتُمْ عَيْلَةً فَسَوْفَ يُغْنِيكُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ إِن شَاءَ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্রে? আশংকা কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা তওবা -২৮
তাফসির: কোন কোন মুফাসসির বলেন, কাফেরগণ ব্যহ্যিক ও আত্মিক সর্ব দিক থেকেই অপবিত্র। কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর তবে অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, এখানে নাপাক বলতে তাদের দেহ সত্তা বুঝানো হয়নি, বরং দ্বীনী বিষয়াদিতে তাদের অপবিত্রতা বোঝানো হয়েছে। সে হিসেবে এর অর্থ, তাদের আকীদাহ-বিশ্বাস, আখলাক-চরিত্র, আমল ও কাজ, তাদের জীবন — এসবই নাপাক। সূত্র: ইবন কাসীর অবলম্বনে
দ্বিতীয় কথা হলো, মুসলমানদের উপন্যাস জাতীয় বই যা দ্বীনের চেতনা জোগায়, তা রাখতে সমস্যা নেই। তবে প্রেম কাহিনীযুক্ত উপন্যাস মসজিদ লাইব্রেরিতে না ঠিক হবে না। আমার জানামতে, প্রেম কাহিনী ছাড়া কোন উপন্যাস নেই। (দামেস্কের কারাগারে, ইরান দুহিতা, লৌহ মানব ইত্যাদি)
পরামর্শ : এ জাতীয় বই মসজিদ লাইব্রেরিতে না রেখে ইউনিট লাইব্রেরিতে স্থান্তারিত করা যেতে পারে।
শেষ কথা হলো, যদি মসজিদ লাইব্রেরিতে রাখতেই হয়, সর্বাবস্থায় খেয়াল রাখতে হবে। কিতাবের (মলাটের,পেজ কভারের ) ছবি মসজিদে দৃশ্যমান না থাকে। কেননা ছবিযুক্ত/ ছবিওয়ালা ঘরে/মসজিদে নামাজ আদায় করা মাকরুহে তাহরিমি। সূত্র: ইমদাদুল ফাতওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১৬৭ ; ফতোয়ায়ে শামী, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৫২০
দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ ـ رضى الله عنهم ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ - رواه البخارى
আবু তলহা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, ফিরিশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে। বুখারি-৫৯৪৯ কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২১০৬; মিশকাত-৪২৯০
হাদিস নং-০২
«أَنَّهَا اشْتَرَتْ نُمْرُقَةً فِيهَا تَصَاوِيرُ، فَلَمَّا رَآهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ عَلَى البَابِ فَلَمْ يَدْخُلْ، فَعَرَفَتْ فِي وَجْهِهِ الكَرَاهِيَةَ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتُوبُ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ، مَاذَا أَذْنَبْتُ؟ قَالَ: «مَا بَالُ هَذِهِ النُّمْرُقَةِ» فَقَالَتْ: اشْتَرَيْتُهَا لِتَقْعُدَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَيُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ " وَقَالَ: «إِنَّ البَيْتَ الَّذِي فِيهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُهُ المَلاَئِكَةُ»
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন। তাতে ছবি আঁকা ছিল। ঘরে প্রবেশের সময় রাসূল (ﷺ)এর দৃষ্টি এতে পতিত হলে তিনি আর ঘরে প্রবেশ করলেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর মুখমণ্ডল দেখেই তা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট তাওবা করছি। আমি কি গোনাহ করেছি? রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন: এ ছোট বালিশটি কোথায় পেলে? তিনি বললেন: আমি এটা এ জন্য খরিদ করেছি যাতে আপনি এতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন: যারা এ সমস্ত ছবি অংকন করেছে কিয়ামতের মাঠে তাদেরকে ‘আযাব দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে: তোমরা যাদের সৃষ্টি করেছিলে তাদের জীবিত কর। অতঃপর তিনি বললেন: যে ঘরে ছবি আছে সে ঘরে ফিরিশতাগণ প্রবেশ করেন না।” বুখারী-৫৯৬১
হাদিস নং-০৩
عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان قر ام لعائشة سترت به جانب بيتها , فقال النبى صلى الله عليه وسلم اميطى عنى لا تزال تصاوير. تعرض لى فى صلاتى.
অর্থঃ হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, হযরত আয়িশা উনার একখানা (প্রাণীর ছবিযুক্ত) পর্দা ছিল, যা তিনি উনার ঘরের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন| হুযূর (ﷺ) উনাকে বললেন, “হে আয়িশা পর্দাটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে নাও| কারণ এর ছবিগুলো নামাযে আমার দৃষ্টি ও মন আকৃষ্ট করে|”
والله اعلم بالصواب