জিজ্ঞাসা-১৩১৫৬:
আসসালামু আলাইকুম। রাসূল (ﷺ) ফরজ নামাজের পরের সুন্নাত মসজিদে আদায় করছেন, এরূপ কোন হাদিস বা দলিল আছে কি
তারিখ:২৫/১২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জয়নুল আবেদীন হাটহাজারী চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, সুন্নাত ও নফল নামাজ ঘরে আদায় করা উত্তম। দলিল-
731 - حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى بْنُ حَمَّادٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ، عَنْ سَالِمٍ أَبِي النَّضْرِ، عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّخَذَ حُجْرَةً - قَالَ: حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ مِنْ حَصِيرٍ - فِي رَمَضَانَ، فَصَلَّى فِيهَا لَيَالِيَ، فَصَلَّى بِصَلاَتِهِ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَلَمَّا عَلِمَ بِهِمْ جَعَلَ يَقْعُدُ، فَخَرَجَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ: «قَدْ عَرَفْتُ الَّذِي رَأَيْتُ مِنْ صَنِيعِكُمْ، فَصَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّ أَفْضَلَ الصَّلاَةِ صَلاَةُ المَرْءِ فِي بَيْتِهِ إِلَّا المَكْتُوبَةَ» قَالَ عَفَّانُ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا مُوسَى، سَمِعْتُ أَبَا النَّضْرِ، عَنْ بُسْرٍ، عَنْ زَيْدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
৬৯৫। আব্দুল আ'লা ইবনে হাম্মাদ (রাহঃ) ......... যায়দ ইবনে সাবিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রমযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি [বুসর ইবনে সাঈদ (রাহঃ)] বলেন, মনে হয়, [যায়দ ইবনে সাবিত (রাযিঃ)] কামরাটি চাটাইর তৈরী ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত নামায আদায় করেন। আর তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাঁর সঙ্গে নামায আদায় করতেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পরে তিনি তাঁদের কাছে এসে বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই নামায আদায় কর। কেননা, ফরজ নামায ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে নামায আদায় করে তা-ই উত্তম।
আফফান (রাহঃ) ......... যায়দ ইবনে সাবিত (রাযিঃ) সূত্রেও নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ বলেছেন।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৫ (আন্তর্জাতিক নং ৭৩১)
দ্বিতীয় কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম ফরজ নামাজের আগে এবং পরের সুন্নাতগুলো মসজিদে নববিতে আদায় করেছেন। দলিল-
হাদিস নং-০১
1172 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَسَجْدَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ، وَسَجْدَتَيْنِ بَعْدَ المَغْرِبِ، وَسَجْدَتَيْنِ بَعْدَ العِشَاءِ، وَسَجْدَتَيْنِ بَعْدَ الجُمُعَةِ، فَأَمَّا المَغْرِبُ وَالعِشَاءُ فَفِي بَيْتِهِ»
১১০৩। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) এর অনুসরণে আমি যোহরের আগে দু’রাকআত, যোহরের পর দু’রাকআত, মাগরিবের পর দু’রাকআত, ইশার পর দু’রাকআত এবং জুম’আর পর দু’রাকআত নামায আদায় করেছি। তবে মাগরিবের ও ইশার পরের নামায তিনি তাঁর ঘরে আদায় করতেন।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১০৩ (আন্তর্জাতিক নং ১১৭২-১১৭৩)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ أَبِي الْوَزِيرِ الْبَصْرِيُّ، ثِقَةٌ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُوسَى، عَنْ سَعْدِ بْنِ إِسْحَاقَ بْنِ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي مَسْجِدِ بَنِي عَبْدِ الأَشْهَلِ الْمَغْرِبَ فَقَامَ نَاسٌ يَتَنَفَّلُونَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الصَّلاَةِ فِي الْبُيُوتِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . وَالصَّحِيحُ مَا رُوِيَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي بَيْتِهِ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَقَدْ رُوِيَ عَنْ حُذَيْفَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَلَّى الْمَغْرِبَ فَمَا زَالَ يُصَلِّي فِي الْمَسْجِدِ حَتَّى صَلَّى الْعِشَاءَ الآخِرَةَ . فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ دِلاَلَةٌ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي الْمَسْجِدِ .
ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ রাসূল (ﷺ) তাঁর গৃহে বাদ মাগরিব দুই রাকআত নামায আদায় করতেন। হুযাইফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদিন রাসূল (ﷺ) মাগরিবের নামায আদায় করলেন এবং পরে এশার নামায পর্যন্ত মসজিদেই (নফল) নামায আদায় করতে থাকলেন। এই হাদীসটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ﷺ) বাদ মাগরিব মসজিদে দুই রাকআত (সুন্নত) আদায় করেছেন।
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৬০৪ (আন্তর্জাতিক নং ৬০৪)
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْجَرْجَرَائِيُّ، حَدَّثَنَا طَلْقُ بْنُ غَنَّامٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي الْمُغِيرَةِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُطِيلُ الْقِرَاءَةَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ حَتَّى يَتَفَرَّقَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ نَصْرٌ الْمُجَدَّرُ عَنْ يَعْقُوبَ الْقُمِّيِّ وَأَسْنَدَهُ مِثْلَهُ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ حَدَّثَنَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ عِيسَى بْنِ الطَّبَّاعِ حَدَّثَنَا نَصْرٌ الْمُجَدَّرُ عَنْ يَعْقُوبَ مِثْلَهُ .
১৩০১. হুসায়েন ইবনে আব্দুর রহমান (রাহঃ) ..... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাগরিবের ফরয নামায আদায়ের পর দুই রাকআত সুন্নত নামাযের কিরাআত এত দীর্ঘ করতেন যে, মসজিদে আগত লোকেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে যেত।
Narrated Abdullah ibn Abbas:
The Messenger of Allah (ﷺ) used to prolong the recitation of the Qur’an in the two rak’ahs after the sunset prayer until the people praying in the mosque dispersed.
Abu Dawud said: This has been reported by Nasr al-Mujaddir from Ya’qub al-Qummi with the same chain of narrators.
Abu Dawud said: Muhammad b. ’Isa b. al-tabba’ transmitted from Nasr al-Mujaddir from Ya’qub in like manner.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০১ (আন্তর্জাতিক নং ১৩০১)
হাদিস নং-০৪
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، وَعَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ لَيْثٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ " . قَالَ عَنْ عَبْدِ الْوَارِثِ " أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ أَوْ عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ " . زَادَ فِي حَدِيثِ حَمَّادٍ " فِي الصَّلاَةِ " . يَعْنِي فِي السُّبْحَةِ .
মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ যদি তোমাদের কারও পক্ষে ফরয নামায আদাযের পর ডানে, বামে সম্মুখে বা পশ্চাতে গমন করা সম্ভব না হয়, তবে সে ফরয নামায আদায়ের স্থানে দাঁড়িয়ে নফল আদায় করতে পারে। নচেৎ ফরয নামায আদায়ের স্থান হতে সরে গিয়ে অন্যত্র নফল নামায আদায় করা শ্রেয়।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০০৬ (আন্তর্জাতিক নং ১০০৬)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০৫
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ حَجَّاجِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ إِذَا صَلَّى أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ أَوْ عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ " يَعْنِي السُّبْحَةَ .
আবু বকর ইবন আবু শায়বা (রাহঃ)... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন (ফরয) সালাত আদায় করে, তখন তার একটু সামনে এগিয়ে বা পেছনে হটে, অথবা সে তার ডানে বা বামে সরে (নফল) সালাত আদায় করতে কি অপারগ? তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ১৪২৭ (আন্তর্জাতিক নং ১৪২৭)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
নোট: উপরোক্ত ৪ নম্বর ও ৫ নম্বর হাদিস দ্বারা বোঝা যায় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম ফরজ নামাজের পর সুন্নাত গুলো মসজিদে আদায় করতেন।
সারকথা হলো, সুন্নাত ও নফল নামাজ ঘরে আদায় করা উত্তম। অবশ্য ফরযের পরের ছুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ না পড়ে বের হয়ে গেলে যদি এমন আশঙ্কা থাকে যে, উক্ত নামায হয়তো আর পড়া হবে না তাহলে মাসজিদ থেকে ছুন্নাত পড়ে বের হবে।
والله اعلم بالصواب