জিজ্ঞাসা-১৩১৫৫:
আসসালামু আলাইকুম। তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত উত্তোলন করার হুকুম কী? রাসূল (ﷺ) কখনো হাত তুলেনি এরকম কোন হাদিস আছে কি?
তারিখ:২৫/১২/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জয়নুল আবেদীন চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত উত্তোলন করা ইমামদের সর্বসম্মতভাবে সুন্নত। যেমন,
رفعُ اليدينِ عند تكبيرةِ الإحرامِ سنَّةٌ، وذلك باتِّفاقِ المذاهبِ الفِقهيَّةِ الأربعةِ: الحنفيَّةِ، والمالكيَّةِ، والشافعيَّةِ، والحنابلةِ، وحُكِيَ الإجماعُ على ذلك الشرح الكبير)) للدردير (1/418)، ((حاشية الصاوي على الشرح الصغير)) (1/323).
হানাফী, মালেকী, শাফেঈ ও হাম্বলী মাযহাবের চারটি মাযহাবের ঐক্যমতে তাকবীর তাহরিমের সময় হাত উঠানো সুন্নত এবং এ বিষয়ে ইজমা বর্ণনা করা হয়েছে। সূত্র: আশশারহুল কাবির-১/৪১৮
قال ابنُ المنذِر: (أجمع كلُّ مَن نحفظ عنه من أهل العلم على أن النبي صلَّى اللهُ عليه وسلَّم كان يرفع يديه إذا افتتح الصلاة، وإن من السنَّة أن يرفع المرء يديه إذا افتتح الصلاة) ((الأوسط)) (3/300).
ইবনুল মুনজির রহ. বলেন: আমরা যাদের কাছ থেকে শিখেছি তাদের সকল আলেম সর্বসম্মতভাবে একমত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শুরু করার সময় হাত উঠাতেন এবং এটি একজন ব্যক্তির জন্য সুন্নত। নামায শুরু করার সময় হাত উঠান) ((আল-আওসাত)) (৩/৩০০)।
দ্বিতীয় কথা হলো, তাকবিরে তাহরিমার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উত্তোলন করেনি এরকম কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। অন্যান্য সময় হাত উত্তোলন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা এসেছে, তাই ইমামদের মধ্যেও উত্তমতা নিয়ে মতভেদ হয়েছে।
প্রশ্ন: ক। নামাজের মধ্যে রফউল ইয়াদাইন কতবার?
উত্তর: ক।
735 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ: " أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ، رَفَعَهُمَا كَذَلِكَ أَيْضًا، وَقَالَ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ، وَكَانَ لاَ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِي السُّجُودِ "
৬৯৯। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রাহঃ) ......... সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন নামায শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর রুকুতে যাওয়ার জন্য যখন তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপভাবে দু’হাত উঠাতেন* এবং سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ও رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরূপ করতেন না।
*তাহরীমা বাঁধার তাকবীর দানকালীন হাত উত্তোলন বা 'রাফয়ে' ইয়াদাইন' প্রশ্নে কারো দ্বিমত নেই। তবে রুকূতে যাওয়াকালীন ও রুকু' হতে উঠাকালীন হানাফীগণ হাত উত্তোলন করেন না। এ দু' ক্ষেত্রে তাঁরা কুরআন-হাদীসের অপরাপর দলীল, প্রবীণ সাহাবীগণের বাস্তব আমল, যুগ-পরম্পরায় চলে আসা উরফ’ বা ‘তা'আমুল' ও প্রিয়নবী (ﷺ)-এর ২৩ বছরের নবূওয়াতী জীবনের পূর্বাপরের আমলকে যুক্তির কষ্টি পাথরে যাচাই করে অগ্রগণ্য ও বিলম্বে গণ্যরূপে শ্রেণিবিন্যাস করে, উক্ত দু’ ক্ষেত্রে হাত না উঠানোকে উত্তম মনে করে সেটিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। উদাহরণত উল্লেখ করা যেতে পারে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নামাযের মত নামায আদায় করবো না ? অতঃপর তিনি নামায আদায় করলেন এবং তাতে প্রথমবার ছাড়া আর কখনো হাত তুললেন না।” ( তিরমিযী : হাদীস নং ২৫৭; আবু দাউদ : ৭৪৮; নাসাঈ : ১০৫৮; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : মূল আরবী সংস্করণ বুখারী : খ-১, পৃ-১০২-এর ১ নং টীকা; তিরমিযী : খ-১, পৃ-৫৯ এবং তাহাভী শরীফ ইত্যাদি)
Narrated Salim bin `Abdullah:
My father said, "Allah’s Messenger (s) used to raise both his hands up to the level of his shoulders when opening the prayer; and on saying the Takbir for bowing. And on raising his head from bowing he used to do the same and then say "Sami`a l-lahu liman hamidah, Rabbana wa laka l-hamd." And he did not do that (i.e. raising his hands) in prostrations.
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৯ (আন্তর্জাতিক নং ৭৩৫)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রফয়ে ইয়াদাইন কত জায়গায় ছিল?
সহীহ হাদীসসমূহে দেখা যায়, নামাযে রফয়ে ইয়াদাইন একবার থেকে শুরু করে প্রত্যেক ওঠানামায় ছিল। খোদ হযরত ইবনে উমর রা. এর হাদীসে এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ উদ্ধৃত হয়েছে। নিম্নে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।
ক. শুধু এক জায়গায় অর্থাৎ নামাযের শুরুতে। যেমনটি পেছনের হাদীসগুলো থেকে জানা গেল।
খ. দুই জায়গায়, অর্থাৎ শুরুতে এবং রুকু থেকে ওঠার পর। হযরত ইবনে উমর রা. থেকে ইমাম মালেক র. মুয়াত্তায় এটি উদ্ধৃত করেছেন। আবূ দাউদ হযরত ইবনে উমর রা. থেকে (৭৪২), ইবনে মাজা র. হযরত আনাস রা. থেকে (৮৬৬)।
গ. তিন জায়গায়, অর্থাৎ নামাযের শুরুতে এবং রুকুর পূর্বে ও পরে। হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বুখারী ও মুসলিমসহ অনেকে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
ঘ. চার জায়গায়, অর্থাৎ উপরোক্ত তিন জায়গায় এবং দুরাকাত শেষ করে দাঁড়ানোর সময়। ইবনে উমর রা. থেকে বুখারী (৭৩৯), আবূ দাউদ(৭৪৩)। আবূ হুমায়দ রা. থেকে ইবনে মাজা (৮৬২) ও তিরমিযী (৩০৪), তিনি এটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। হযরত আলী রা. থেকে আবূ দাউদ (৭৪৪), ইবনে মাজাহ (৮৬৪), ও তিরমিযী (৩৪২৩)। তিনি এটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে আবূ দাউদ(৭৩৮)।
ঙ. পাঁচ জায়গায়, উক্ত চার জায়গা ছাড়াও সেজদায় যাওয়ার সময়। বুখারী, ‘জুযউ রাফইল ইয়াদাইন গ্রন্থে’, (পৃ ২৬); এবং তাবারানী ‘আল আওসাত’ গ্রন্থে। হায়ছামী র.বলেছেন, এর সনদ সহীহ। নাসাঈ র. মালেক ইবনুল হুয়ায়রিছ রা. থেকে (১০৮৫) । এর সনদও সহীহ। ইবনে মাজাহ র. হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে (৮৬০)। আবূ ইয়ালা র. হযরত আনাস রা. থেকে (৩৭৪০)। এর সনদও সহীহ। (দ, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/২২০)। দারা কুতনী র. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে। এর সনদও সহীহ। (দ, আছারুস সুনান)
এছাড়া হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. এর বর্ণনায় ২য় রাকাতের শুরুতে - আবূ দাউদ (৭২৩), এবং হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনায় দুই সেজদার মাঝে - আবূ দাউদ (৭৪০), নাসায়ী (১১৪৩)- রফয়ে ইয়াদাইনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
চ. প্রত্যেক ওঠানামার সময়। অর্থাৎ রুকু, সেজদা, কেয়াম (দাঁড়ানো), কুউদ (বসা) এবং উভয় সেজদার মাঝখানে রফয়ে ইয়াদাইন। তাহাবী মুশকিলুল আছার গ্রন্থে হযরত ইবনে উমর রা. থেকে (৫৮৩১) । এর রাবীগণ সকলে বিশ্বস্ত। ইবনে মাজাহ র. উমায়ের ইবনে হাবীব থেকে (৮৬১) এর সনদ দুর্বল। প্রত্যেক ওঠানামায় হাত তোলার হাদীসকে ইমাম আহমাদ সহীহ বলেছেন। (দ. মুগনী, ১/৩৬৯) আবুল হাসান ইবনুল কাত্তানও তার বায়ানুল ওয়াহাম ওয়াল ঈহাম গ্রন্থে এটিকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। (৫/৬১২) ইবনে হাযমও (মৃত্যু-৪৫৬হি) আল মুহাল্লা গ্রন্থে এটিকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। একটু পরেই তার বক্তব্য আসছে।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় সহীহ সনদে হযরত ইবনে উমর রা.এর দুই সেজদার মাঝেও রফয়ে ইয়াদাইন করার কথা উল্লেখ আছে। এমনিভাবে হযরত আনাস রা., নাফে র., তাউস র., হাসান বসরী র., ইবনে সীরীন র. ও আইয়ুব সাখ্তিয়ানী সকলেই দুই সেজদার মাঝখানে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (দ.মুসান্নাফ, ৩খ.,৫০৯পৃ. ২৮১০-২৮১৫ নং হাদীস)
যারা সহীহ হাদীস অনুসরণের দাবী করে থাকেন, তাদের সহীহ হাদীস অনুসরণের দাবী ঠিক রাখতে চাইলে এসবগুলো অনুযায়ী আমল করতে হবে। ইবনে হাযম জাহেরী ও আলবানী সাহেব তাই করেছেন।
হানাফী উলামায়ে কিরামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, রাফয়ে ইয়াদাইন অনেক জায়গায়ই ছিল, তবে কমে কমে একবারের মধ্যে এসে ঠেকেছে, যা পূর্বোল্লিখিত হাদীসগুলি থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। এ দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বনের কারণ হলো, প্রথম দিকে নামাযে চলাফেরা, সালাম-কালাম অনেক কিছুই বৈধ ছিল। কমান্বয়ে স্থিরতা ও কম নড়াচড়ার নির্দেশ কুরআন ও হাদীসে আসতে থাকে। হানাফীগণ মনে করেন পূর্বোল্লিখিত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, রাফয়ে ইয়াদাইনও স্থিরতার পরিপন্থী। তাই কমে কমে এটিকে কমানো হয়েছে। অন্যথায় হযরত আলী রা., ওয়াইল ইবনে হুজ্ রা.ও আবু মূসা আশ্আরী রা. প্রমুখ সাহাবীগণ রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করা সত্ত্বেও তদনুযায়ী আমল না করার কোন কারণ থাকতে পারে না।
শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় রফয়ে ইয়াদাইনের দলিল:
১. আলকামা র. বলেন,
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ أَلاَ أُصَلِّى بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ في أول مَرَّة. أخرجه أبو داود (٧٤٨) والترمذي (٢٥٧) والنسائي (١٠٥٨) وقال الترمذي : حديث حسن وصححه ابن حزم في المحلى ٤/٨٨ وقال أحمد شاكر في تعليقه على الترمذي : هذا الحديث صححه ابن حزم وغيره من الحفاظ وهو حديث صحيح وما قالوا في تعليله ليس بعلة.
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের মত নামায পড়বনা? একথা বলে তিনি নামায পড়লেন, এবং তাতে শুধু প্রথম বারই হাত তুললেন। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৪৮, তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৫৭, নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১০৫৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৬, মুসনাদে আহমদ, ১খ, ৩৮৮পৃ।
ইমাম তিরমিযী র. এ হাদীসকে ‘হাসান’ বলেছেন, ইবনে হাযম জাহিরী (যিনি কোন মাযহাব অনুসরণ করতেন না) এটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিযী শরীফের টীকায় শায়খ আহমদ শাকের (তিনি মিসরের কাজী ছিলেন) বলেছেন, এ হাদীসটিকে ইবনে হাযমসহ অনেক হাফেজে হাদীস সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। আসলেও এটি সহীহ হাদীস। অনেকে এর যেসব ত্রুটির কথা বলেছেন সেগুলো বাস্তবে কোন ত্রুটি নয়।
আহমদ শাকের রহ. অন্যদের উত্থাপিত যে ত্রুটির প্রতি ইংগিত করেছেন তন্মধ্যে একটি হলো; কেউ কেউ বলেছেন, এ হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী র. বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক র. বলেছেন :
ولم يثبت حديث ابن مسعود أن النبي صلى الله عليه وسلم لم يرفع إلا في أول مرة.
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা. এর এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু প্রথমবারই হাত তুলেছেন। এর জবাব এই যে, ইবনে মাসউদ রা. থেকে এ ব্যাপারে দুটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। একটি মৌখিক বর্ণনারূপে, অপরটি নিজে আমল করে দেখানোর মাধ্যমে। ইবনুল মুবারক র. প্রথমটি সম্পর্কে ঐ মন্তব্য করেছেন। উপরে উদ্ধৃত তার বক্তব্য থেকেও তাই প্রমাণিত হয়। দ্বিতীয় বর্ণনা সম্পর্কে তিনি ঐ মন্তব্য করেননি। এর প্রমাণ তিনি নিজেও দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যা নাসায়ী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে। হাদীস নং ১০২৬।
২. হযরত বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত:
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا افتتح الصلاة رفع يديه إلى قريب من أذنيه ثم لا يعود. أخرجه أبو داود (٧٥٢) وابن أبي شيبة (٢٤٥٥) وعبد الرزاق في المصنف (২৫৩১) والدارقطني (১/২৯৩، رقم ২১) فرواه عن البراء ثقتان عدي ين ثابت عند الدارقطني وعبد الرحمن بن أبي ليلى عند غيره وعنهما يزيد بن أبي زياد والحكم بن عتيبة وعيسى ، والحكم وعيسى ثقتان ويزيد صدوق عند البخاري ومسلم وصحح حديثه الترمذي (৭৭৭،১১৪) وعن يزيد ابن أبي ليلى والسفيانان وشريك و اسرائيل واسماعيل بن زكريا والإمام أبو حنيفة وغيرهم.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করার সময় কানের কাছাকাছি হাত তুলতেন। এরপর আর কোথাও হাত তুলতেন না।
আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৫২, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৫। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (২৫৩১), দারাকুতনী (১খ, ২৯৩ পৃ.) হাদীস ২১।
৩. হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ترفع الأيدي في سبعة مواطن، افتتاح الصلاة واستقبال البيت والصفا والمروة والموقفين وعند الحجر، أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٦٥) موقوفا والطبراني (١٢٠٧٢) مرفوعا.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হয়। ১. নামাযের শুরুতে, ২. কাবা শরীফের সামনে আসলে, ৩. সাফা পাহাড়ে উঠলে, ৪. মারওয়া পাহাড়ে উঠলে। ৫. আরাফায় ৬. মুযাদালিফায় ৭. হাজরে আসওয়াদের সামনে।
তাবারানী, মুজামে কাবীর(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যরূপে) নং ১২০৭২। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬৫ (সাহাবীর বক্তব্যরূপে)। সুনানে বায়হবাকী, ৫খ, ৭২-৭৩ পৃ। হায়ছামী র. হযরত ইবনে উমর রা. থেকেও মারফূরূপে এটি উল্লেখ করেছেন।(দ. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২খ, ২২২ পৃ) এখানে উদ্ধৃত হাদীসটি এই শব্দে মুসনাদে বাযযারের বরাত দিয়ে হায়ছামী তার কাশফুল আসতারে উল্লেখ করেছেন। (হা. ৫১৯)
৪. হযরত ইবনে উমর রা. বলেছেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرفع يديه إذا افتتح الصلاة ثم لا يعود. رواه البيهقي في الخلافيات من حديث محمد بن غالب ثنا أحمد بن محمد البرتي ثنا عبد الله بن عون الخراز ثنا مالك عن الزهري عن سالم عن ابن عمر. قال الحافظ مغلطائي: لا بأس بسنده. وقال الشيخ عابد السندي: هذا الحديث عندي صحيح لا محالة رجاله رجال الصحيح.(راجع- الإمام ابن ماجه وكتابه السنن صـ ٢٥٢) قلت: ويؤيده أيضا عمل ابن عمر على وفقه كما عند الطحاوي ١/١١٠ وابن أبي شيبة (٢٤٦٧) والبيهقي في المعرفة عن مجاهد قال: صليت خلف ابن عمر فلم يكن يرفع يديه إلا في التكبيرة الأولى من الصلاة. وأخرجه الإمام محمد في الموطا عن محمد بن أبان بن صالح عن عبد العزيز بن حكيم قال: رأيت ابن عمر يرفع يديه حذاء أذنيه في أول تكبيرة افتتاح الصلاة ولم يرفعهما فيما سوى ذلك.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। এর পর আর করতেন না। (বায়হাকী, আল খিলাফিয়াত) । হাফেজ মুগলতাঈ র. বলেছেন, এর সনদে কোন সমস্যা নেই। শায়খ আবেদ সিন্ধী র. বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে এটি অবশ্যই সহীহ। ইমাম মালেক র. থেকে ইবনুল কাসেম ও ইবনে ওয়াহব র. একবার হাত ওঠানোর যে বর্ণনা পেশ করেছেন, যা আল মুদাওয়ানা’য় বিদ্ধৃত হয়েছে, তা এই বর্ণনার সমর্থন করে। এমনিভাবে হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসটি এবং তাঁর আমলও এর সমর্থক।
ইবনে আবী শায়বা র. স্বীয় মুসান্নাফে ও তাহাবী র. শরহে মাআনিল আছার গ্রন্থে মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি হযরত ইবনে উমর রা. এর পেছনে নামায পড়েছি। তিনি নামাযের সূচনায় ছাড়া আর কোথাও হাত তোলেন নি। এর সনদ সহীহ। ইমাম মুহাম্মদ র.ও মুয়াত্তায় হযরত ইবনে উমর রা.এর অনুরূপ আমলের কথা উদ্ধৃত করেছেন।
৫. আসওয়াদ র. বলেছেন,
رأيت عمر بن خطاب رض يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود. أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٦٩) والطحاوي ١/١١١ وصححه الزيلعي وقال الحافظ ابن حجر في الدراية : وهذا رجاله ثقات. وقال المارديني في الجوهر النقي ٢/٧٥: هذا سند صحيح على شرط مسلم.
অর্থ: আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রা.কে দেখেছি, তিনি প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন; পরে আর তুলতেন না।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬৯; তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১১পৃ।
যায়লাঈ র. এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. আদদিরায়া গ্রন্থে লিখেছেন, এর বর্ণনাকারীরা সবাই বিশ্বস্ত। আল্লামা আলাউদ্দীন মারদীনী র. আল জাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলেছেন, এসনদটি ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।
ইমাম তাহাবী এই হাদীসটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন,
وفعل عمر رضي الله عنه هذا وترك أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم إياه علي ذلك دليل صحيح أن ذلك هو الحق الذي لا ينبغي لأحد خلافه
অর্থাৎ উমর রা. কর্তৃক এই আমল করা এবং সাহাবীগণের তার উপর কোন আপত্র্তি না করা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, এটাই এমন সঠিক পদ্ধতি, যার ব্যতিক্রম করা কোন ব্যক্তির জন্য উচিৎ নয়।
৬. আসিম ইবনে কুলায়ব র. তার পিতার সূত্র্রে বর্ণনা করেছেন,
أن عليا رضـ كان يرفع يديه في أول تكبيرة من الصلاة ثم لا يرفع بعد. أخرجه ابن أبي شيبة ٢٤٥٧ والطحاوي ١/١١٠ والبيهقي ٢/٨٠ وصححه الزيلعي وقال الحافظ في الدراية : رجاله كلهم ثقات وقال العيني : صحيح على شرط مسلم.
অর্থ: হযরত আলী রা. নামাযে শুধু প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন। এরপর আর কোথাও তুলতেন না।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৭; তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১০পৃ।
যায়লাঈ র. এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. আদদিরায়া গ্রন্থে লিখেছেন, এর বর্ণনাকারীরা সবাই বিশ্বস্ত। আল্লামা আয়নী র. বলেছেন, এটি মুসলিম শরীফের সনদের মানসম্পন্ন।
ইমাম তাহাবী র. এটি উল্লেখ করার পর বলেন,
فإن عليا لم يكن ليرى النبي صلى الله عليه و سلم يرفع ثم يترك هو الرفع بعده إلا وقد ثبت عنده نسخ الرفع
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাত তুলতে দেখেও তাঁর ইন্তেকালের পর আলী রা.তো শুধু একারণেই হাত তোলা ছেড়ে দিতে পারেন যে, তার নিকট হাত তোলার বিধান রহিত হওয়ার কোন প্রমাণ বিদ্যমান ছিল।
৭. ইবরাহীম নাখায়ী র. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সম্পর্কে বর্ণনা করেন,
أنه كان يرفع يديه في أول ما يفتتح ثم لا يرفعهما . أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٥٨) والطحاوي ١/١١١ وعبد الرزاق ٢/٧١ وإسناده صحيح.
অর্থ: তিনি নামায শুরু করার সময় হাত তুলতেন। পরে আর কোথাও হাত তুলতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৮; তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১১পৃ; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২খ, ৭১পৃ। এটির সনদ সহীহ।
৮. হযরত আব্বাদ ইবনুয যুবায়র থেকে বর্ণিত:
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا افتتح الصلاة رفع يديه في أول الصلاة ثم لم يرفعهما في شيئ حتى يفرغ. أخرجه البيهقي في الخلافيات. كما في نصب الراية ١/٤٠٤
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন, তখন শুধু নামাযের শুরুতেই উভয় হাত তুলতেন। এর পর নামায শেষ করা পর্যন্ত আর কোথাও হাত তুলতেন না। বায়হাকী তার ‘আল-খিলাফিয়াত’ গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
এ হাদীসটির সনদ সম্পর্কে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী র. বলেছেন, এর বর্ণনাকারীরা সকলেই বিশ্বস্ত।
৯. আবূ ইসহাক সাবিয়ী র. বলেন,
كان أصحاب عبد الله وأصحاب علي لا يرفعون أيديهم إلا في افتتاح الصلاة. قال وكيع: ثم لا يعودون. أخرجه ابن أبي شيبة بسند صحيح جدا (٢٤٦١)
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর শাগরেদগণ এবং হযরত আলী রা. এর শাগরেদগণ কেবল মাত্র নামাযের শুরুতে হাত ওঠাতেন। ওয়াকী র. বলেন, এর পর আর হাত ওঠাতেন না।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬১। এর সনদ অত্যন্ত সহীহ।
হযরত ইবনে উমর রা. থেকেই সাত রকম আমলের বর্ণনা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত জায়গায় রফা করতেন, সে সম্পর্কে অন্য সাহাবীগণের বর্ণনা আমরা তুলে ধরেছি। স্বয়ং ইবনে ইমর রা. থেকেও সাত রকম আমলের হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা যাচ্ছে :
১. শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময়। এ হাদীস বায়হাকীর খিলাফিয়াত গ্রন্থের বরাতে একটু পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এরই প্রমাণ হলো ইবনে উমর রা. এর শীর্ষ ছাত্র মুজাহিদ রহ. এর হাদীসটি। যদিও ইবনুল কায়্যিম রহ. বাদায়েউল ফাওয়াইদ গ্রন্থে (৩/৮৮) মুজাহিদের বর্ণনাটি সম্পর্কে ইমাম আহমদের এই মন্তব্য উল্লেখ করেছেন.
هذا خطأ نافع وسالم اعلم بحديث ابن عمر وان كان مجاهد اقدم فنافع اعلم منه.
অর্থাৎ এটা ভুল। নাফি‘ও সালিম রহ. ইবনে উমর রা. এর হাদীস সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখতেন। যদিও মুজাহিদ তাদের তুলনায় পবীন। কিন্তু নাফি‘ অধিক জ্ঞাত।
কিন্তু যদি সমন্বয়ের পথ ধরে এভাবে বলা যায় যে, ইবনে উমর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও বিভিন্নভাবে আমল করতে দেখেছেন, তাই নিজেও বিভিন্নরূপে আমল করতেন, তাহলে মুজাহিদের চাক্ষুস দেখাকে ভুল বলার প্রয়োজন হয় না। মুজাহিদ শুধু একা নন। মুয়াত্তা মুহাম্মদে ভিন্ন সনদেও এটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মদ বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবনে আবান ইবনে সালিহ থেকে, তিনি আব্দুল আযীয ইবনে হাকীম রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
رأيت ابن عمر يرفع يديه حذاء اذنيه فى اول تكبيرة افتتاح الصلاة ولم يرفعهما فيما سوى ذلك
আমি ইবনে উমর রা. কে নামাযের শুরুতে প্রথম তাকবীরের সময় কান বরাবর হাত তুলতে দেখেছি । এরপর আর কোথাও তিনি হাত তোলেন নি।
এ বর্ণনার একজন রাবী মুহাম্মদ ইবনে আবানকে মুহাদ্দিসগণ যঈফ আখ্যা দিয়েছেন। তবে ইমাম আহমাদ বলেছেন, তিনি মিথ্যা বলতেন না। আবূ হাতেম রাযী বলেছেন, তিনি মজবুত নন। তার হাদীস লেখা যাবে তবে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা যাবে না । ইবনে আদী আল কামিলে তার কিছু বর্ণনা তুলে ধরে বলেছেন,
وله غير ماذكرت من الحديث وفى بعض ما يرويه نكرة لا يتابع عليه ومع ضعفه يكتب حديثه
অর্থাৎ আমি যা উল্লেখ করলাম, এ ছাড়াও তার অনেক হাদীস রয়েছে। তার বর্ণিত কিছু কিছু হাদীস সম্পর্কে সামান্য আপত্র্তি রয়েছে. তবে দুর্বলতা সত্ত্বেও তার হাদীস লিপিবদ্ধ করা যাবে।
এ ধরনের দুর্বল রাবীর বর্ণনা অন্য আরেকটি বর্ণনার সমর্থকরূপে গ্রহণ করা মুহাদ্দিসগনের স্বীকৃত নীতি। দারাকুতনী রহ. দুই জায়গায় তার বর্ণনাকে সমর্থকরূপে উদ্ধৃত করেছেন। এর একটি সামনে হযরত আলী রা. এর হাদীসে আসছে। অপরটি সুনানে দারাকুতনীতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর তাশাহহুদ সংক্রান্ত হাদীসের আলোচনায় উদ্ধৃত হয়েছে। (১/৩৫২)
সুত্ররাং পূর্বের মজবুত ও সহীহ সনদের হাদীসটির সঙ্গে এ বর্ণনাটিকে মেলালে ইবনে উমর রা. এর আমলটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাই এটাকে ভুল বলার সুযোগ নেই।
২. তাকবীরে তাহরীমা ও রুকু থেকে ওঠার সময়। এ সম্পর্কিত হাদীসটি ইমাম মালেক রাহ. তার মুয়াত্তা গ্রন্থে সরাসরি সালিমের সূত্র্রে তদীয় পিতা ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। এতে মাত্র দু’বার রফা করার কথা এসেছে। হাদীসটি এইঃ
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا افتتح الصلاة رفع يديه حذو منكبيه واذا رفع رأسه من الركوع رفعهما كذلك ايضا وقال : سمع الله لمن حمده ربنا لك الحمد
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকু থেকে উঠতেন তখনো অনুরূপ্রভাবে হাত তুলতেন এবং বলতেন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, রব্বানা লাকাল হামদ। (মুয়াত্তা মালেক, ১৬; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২৫১৭)
আমরা হারামাইন শরীফাইনে অনেককে এভাবে আমল করতে দেখেছি।
৩. আরেক হাদীসে তিন জায়গায় রফার কথা এসেছে। প্রথম তাকবীরের সময়, রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময়। এটা প্রসিদ্ধ সব হাদীসের কিতাবেই উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ এটাকেই সুন্নত বলেছেন।
৪. এক হাদীসে চার জায়গায় রফার কথা এসেছে। উপরের হাদীসের তিন জায়গা, আর চতুর্থ জায়গা হলো দুই রাকাত পড়ে ওঠার পর। এটা তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযের ক্ষেত্রে। এ হাদীসটি নাফি’ রহ. ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এটি সম্পর্কযুক্ত করেছেন। (বুখারী ৭৩৯, আব্দুর রাযযাক, ৭৪৩) এছাড়া মুহারিব ইবনে দিছার (নাসাঈ কুবরা, ১১০৬) ও সালিম রহ. (মুশকিলুল আছার ৫৮৩০) ইবনে উমর রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫. আরেক হাদীসে পাওয়া যায়, সেজদায় যাওয়ার সময়ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফা করতেন। সে হিসাবে পাঁচ জায়গায় রফা করা প্রমাণিত হয়। এ হাদীসটি ইবনে উমর থেকে তাবারানী তার আওসাত গ্রন্থে এই শব্দে উল্লেখ করেছেন, وعند التكبير حين يهوى ساجدا অর্থাৎ যখন তিনি সিজদায় যাওয়ার জন্য তাকবীর দিতেন, তখনও রফা করতেন। হায়ছামী মাজমাউয যাওয়াইদে এটি উল্লেখ করে বলেছেন, واسناده صحيح এর সনদ সহীহ। (২/১০২) তাছাড়া ইমাম বুখারী রহ. তার জুযউ রাফইল ইয়াদাইনে নাফি’র সূত্র্রে ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
عن النبى صلى لله عليه وسلم انه كان يرفع يديه اذا ركع واذا سجد.
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু করতেন ও সেজদা করতেন তখন রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (পৃ.২৬)
৬. আরেক হাদীসে উপরে বর্ণিত সকল স্থান ছাড়াও দুই সিজদার মাঝে বসার সময়ও রফার কথা পাওয়া যায়। হাদীসটি আব্দুল আ‘লা রাহ. উবায়দুল্লাহ থেকে তিনি নাফি’র সূত্র্রে ইবনে উমর রা. থেকে নিম্নরূপ বর্ণনা করেছেন,
انه كان يرفع يديه فى كل خفض ورفع وركوع وسجود وقيام وقعود وبين السجدتين ويزعم ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يفعل ذلك
অর্থাৎ ইবনে উমর (নামাযে) প্রত্যেক ওঠা-নামার সময়, রুকু ও সেজদার সময়, দাঁড়ানোর সময় ও দুই সেজদার মাঝে বসার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং বলতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমনটি করতেন। তাহাবী, মুশকিলুল আছার (৫৮৩১)
উল্লেখ্য এ হাদীসটির সনদ সহীহ। শুআয়ব আরনাউত বলেছেন, رجاله ثقات رجال الشيخين এর রাবীগন বিশ্বস্ত , বুখারী ও মুসলিম শরীফের রাবী। তবে এরপর শুআয়ব যে বলেছেনلكن هذه الرواية شاذة كما سيذكر المؤلف তবে এটি শায বা বিচ্ছিন্ন বর্ণনা, যেমনটি একটু পরেই গ্রন্থকার বলবেন। এটি আসলে শুআয়বের বুঝের ভুল। ইমাম তাহাবী আসলে বলেছেন وكان هذا الحديث من رواية نافع شادّا لما رواه عبيد الله অর্থাৎ নাফি’র এ বর্ণনাটি উবায়দুল্লাহর পূর্বোক্ত বর্ণনাকে আরো শক্তিশালী করে। এই شادا শব্দটি (দাল অক্ষরে) শুআয়বের সম্পাদনায় মুদ্রিত কপিতে"شاذا" (যাল অক্ষরে) ছাপা হয়েছে। পূর্বাপর বক্তব্য চিন্তা করলে এ ভুলটি পরিস্কার ধরা পড়ে।
ইবনে উমর রা. এর এই শেষোক্ত বর্ণনাটিকে ইবনে হাযম জাহিরীও সহীহ বলেছেন। আলবানী সাহেবও এসব জায়গায় রফা করাকে সুন্নাত সাব্যস্ত করেছেন এবং এই বর্ণনাকে সহীহও আখ্যা দিয়েছেন। (দ. সিফাতুস সালাহ, পৃ. ১৫১, ১৫৪) সুত্ররাং যারা তিন বা চার জায়গায় রফা করাকে সুন্নত বলেন, এসব সহীহ হাদীস তাদের বিপক্ষে যায় কি না সেটা তাদেরকে ভাবতেই হবে।
এ আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ইবনে উমর রা. যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন স্থানে রফা করার হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিজে আমলও করেছেন তদনুরূপ। তাই একবার রফা করার হাদীসকে ফেলে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়:
আমাদের পূর্বসূরিগণের যুগেও এ মাসআলা নিয়ে দ্বিমত ছিল। তবে বাড়াবাড়ি ছিল না। এখানে দু’জন বড় আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। একজন ইবনে হাযম জাহেরী এবং অপরজন ইবনুল কায়্যিম হাম্বলী। তারা দু’জনই আরব উলামায়ে কিরামের অত্যন্ত আস্থাভাজন।
ইবনে হাযম জাহিরী আল মুহাল্লা গ্রন্থে হযরত ইবনে মাসউদ রা.এর হাদীসটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন-
فَلَمَّا صَحَّ أَنَّهُ عليه السلام كَانَ يَرْفَعُ فِي كُلِّ خَفْضٍ وَرَفْعٍ بَعْدَ تَكْبِيرَةِ الإِحْرَامِ ، وَلاَ يَرْفَعُ , كَانَ كُلُّ ذَلِكَ مُبَاحًا لاَ فَرْضًا , وَكَانَ لَنَا أَنْ نُصَلِّيَ كَذَلِكَ , فَإِنْ رَفَعْنَا صَلَّيْنَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي , وَإِنْ لَمْ نَرْفَعْ فَقَدْ صَلَّيْنَا كَمَا كَانَ يُصَلِّي. المحلى ٣/٢٣٥
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার পর প্রত্যেক ওঠা-নামার সময় হাত তুলতেন বলে যখন সহীহ হাদীসে প্রমাণিত, তখন এর সব ধরণই মুবাহ বা বৈধ হবে, ফরজ হবে না। আমরা এর যে কোন পদ্ধতি অনুসারেই নামায পড়তে পারি। আমরা যদি রফয়ে ইয়াদাইন করি তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের মতো আমাদের নামায পড়া হবে। আর যদি রফয়ে ইয়াদাইন না করি তবুও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের মতো আমাদের নামায পড়া হবে। (মুহাল্লা, ৩ খ., ২৩৫ পৃ.)
হায়! যদি আমাদের বাড়াবাড়িপ্রবণ ভাইয়েরা ইবনে হাযম (তিনিও কোন মাযহাব অনুসরণ করতেন না)এর উপরোক্ত বক্তব্য গ্রহণ করে নিতেন তাহলে ফেতনা অনেকাংশেই কমে যেত।
আল্লামা ইব্নুল কায়্যিম র. (মৃত্যু-৭৫০হি.)ও তাঁর ‘যাদুল-মাআদ’ গ্রন্থে ফজরের নামাযে কুনুত পড়া হবে কি না, সে প্রসঙ্গে লিখেছেন,
وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يُعنَّف فيه من فعله، ولا مَنْ تَركه، وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه، وكالخلاف في أنواع التشهدات، وأنواع الأذان والإِقامة، وأنواع النسك من الإِفراد والقِران والتمتع،
অর্থাৎ এটা এমন বৈধ মতপার্থক্যের অন্তর্ভুক্ত, যে ব্যক্তি এটা করলো এবং যে করলো না কাউকেই দোষারোপ ও নিন্দা করা যায় না। এটা ঠিক তেমনই যেমন নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা, তদ্রুপ তাশাহহুদ বিভিন্ন শব্দে পড়া,আযান-ইকামতের বিভিন্ন নিয়ম অবলম্বন করা, এবং হজ্জের তিনটি নিয়ম-ইফরাদ,কিরান ও তামাত্র্তু বিষয়ে মতানৈক্যের মতোই। (দ. ১/২৬৬)
তথ্য সহায়তায়: মুসলিম বাংলা অ্যাপস থেকে