কাউকে হাসিমুখে দেখলে পড়বে
اَضْحَكَ اللّٰهُ سِنَّكَ
আয হাকাল্লাাহু সিন্নাকা।
আল্লাহ পাক আপনাকে চির হাসিমুখ রাখুন।
বুখারী হাদীস নং-৩২৯৪
Al-burhan আল বুরহান, নিয়মিত প্রশ্নোত্তর, আমল ও দুআ, আমলের ফজিলত, দৈনন্দিন জীবনে সুন্নাত, নির্বাচিত হাদিস-প্রবন্ধ-ঘটনা, আর্টিকেল-প্রবন্ধ, স্বাস্থ্য পাতা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কুরআনি ভাষা শিক্ষা, পিডিএফ বই ডাউনলোড, পর্দানশীন (মহিলা বিষয়ক),আত্মশুদ্ধি-আল্লাহর প্রেম-ভালবাসা, দ্বীনি সচেতনতা; পরকালীন ভাবনা, মুসলিম মনীষীদের ঘটনা-জীবনী-চরিত, হাদিস শরিফ অনুসন্ধান-যাচাই-বাছাই এ সম্পর্কে নিয়মিত পোস্ট পেতে নিচের হোয়াটসঅ্যাপ লিঙ্ককে জয়েন্ট করুন https://chat.whatsapp.com/BbcRMpJEv5b5U
কাউকে হাসিমুখে দেখলে পড়বে
اَضْحَكَ اللّٰهُ سِنَّكَ
আয হাকাল্লাাহু সিন্নাকা।
আল্লাহ পাক আপনাকে চির হাসিমুখ রাখুন।
বুখারী হাদীস নং-৩২৯৪
জিজ্ঞাসা-১৩০৪৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হচ্ছে কোন নাতনি তার নানির সৎ ভাইকে বিবাহ করতে পারবে কিনা? অগ্রিম জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
তারিখ: ০৯/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মনিরুল হক হাফি. আমেরিকা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নাতনি তার নানির সৎ ভাইকে বিবাহ করতে পারবে না, মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। দলিল-
وإذا كان القصد أن جدة الفتاة المذكورة هي أختك من الأب وليست شقيقة ولا أختا لك من الأم، فالجواب أنه لا يحل لك الزواج بتلك الفتاة لأنها تدخل في بنات الأخوات المحرمات، قال تعالى: حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ. {النساء:23}.
قال القرطبي: والأخت اسم لكل أنثى جاورتك في أصليك أو في أحدهما.. وبنت الأخ اسم لكل أنثى لأخيك عليها ولادة بواسطة أو مباشرة، وكذلك بنت الأخت. الجامع لأحكام القرآن.
وراجع المحرمات من النساء في الفتوى رقم: 9441.
অর্থাৎ উল্লিখিত যুবতীর নানী যদি আপনার সহদোরা কিংবা বৈপিত্রেয় বোন না হয়ে বরং বৈমাত্রেয় বোনও যদি হয়ে থাকে, সেক্ষত্রেও সেই তরুণীকে বিবাহ করা আপনার জন্য বৈধ হবেনা। কারণ সে নিজ বোনের সন্তানদের শ্রেণিভুক্ত নারী। আর এই শ্রেণীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আল্লাহ তা'আলা বলেন :
যেসকল ব্যক্তিবর্গের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা তোমাদের জন্য হারাম, তারা হলেন- তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, তোমাদের ভাতিজি ( ভাইয়ের কন্যা), তোমাদের ভাগ্নী ( বোনের কন্যা), তোমাদের দুধমাতা, তোমাদের দুধবোন। ( সূরা নিসা-২৩)
আল্লামা কুরতুবি ( রাহি.) বলেন, " তোমার বোন বলা হবে তাকে, যে তোমার মাতা-পিতার যুগল সম্পর্কের মাধ্যমে কিংবা তাদের একক সম্পর্কে মাধ্যমে ( পিতার কিংবা মাতার অন্য ঘরের সন্তান) তোমার সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। আর ভাইয়ের মেয়ে বা ভাতিজি বলা হবে তাকে, যাকে তোমার ভাই সরাসরিভাবে কিংবা বিধানগতভাবে জন্মদান করেছেন। বোনের মেয়ে বা ভাতিজির ক্ষেত্রেও একই কথা। অর্থাৎ, বোনের মেয়ে বা ভাগ্নী বলা হবে তাকে, যাকে তোমার বোন সরাসরিভাবে কিংবা বিধানগতভাবে জন্মদান করেছেন। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত- ৯৪৪১
সারকথা হলো, কোন নাতনি তার নানির সৎ ভাইকে বিবাহ করতে পারবে না, হারাম।
والله اعلم بالصواب
জিজ্ঞাসা-১৩০৪৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। করণাকালীন সময়ে সালাত আদায়ের জন্য ৭ ফিট করে দূরত্বে দাঁড়াতে হবে এই অথরিটির হাদীস কী
তারিখ: ০৬/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক ঝালকাঠি থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ৬ থেকে ৮ ফিট দুরে থাকার হাদীটি দেখুন- কুষ্ঠু, মহামারী আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলার পদ্ধিতিঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ، حَدَّثَنِي أَبُو إِبْرَاهِيمَ التَّرْجُمَانِيُّ، حَدَّثَنَا الْفَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ عُثْمَانَ، عَنْ أُمِّهِ فَاطِمَةَ بِنْتِ حُسَيْنٍ، عَنْ حُسَيْنٍ [ص: ٢21١] ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا تُدِيمُوا النَّظَرَ إِلَى الْمُجَذَّمِينَ، وَإِذَا كَلَّمْتُمُوهُمْ، فَلْيَكُنْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ قِيدُ رُمْحٍ (مسند احمد ـ581)
অর্থঃ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা যখন কোনো কুষ্ঠি রোগী তথা মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলবে, তবে তোমাদের মধ্যে এক বল্লম বা বর্ষা পরিমাণ দুরত্ব নিশ্চিত করবে। (মুসনাদে আহমদ-৫৮১; ইবনে হাম্বল)
উল্লেখ্য এই হাদীসটিতে এক বল্লম বা বর্ষা হলো ৬থেকে ৮ফিট পর্যন্ত লম্বাকে বুঝিয়েছেন। এখানে এই হাদীছটি দিয়ে নামাজে দুরত্বের কথা ওলামায়কেরামগণ বলেন।
والله اعلم بالصواب
জিজ্ঞাসা-১৩০৪২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
শায়েখের কাছে আমার জানার বিষয় হলো-পত্রিকায় আলোচিত নিউজ গুলো নিয়ে কয়েকজন মিলে আলোচনা করলে কি গিবত হবে?
যেমন -রাজস্বের মতিউর রহমানের দুর্নীতি কাণ্ড।
তারিখ: ০৩/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম কক্সবাজার থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পবিত্র কোরআন-সুন্নায় গিবাত হারাম এর বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা নির্দেশনা দিয়েছেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, আবার ক্ষেত্রবিশেষে গীবত করা জায়েজের সরাসরি বা ইশারাতুন পাওয়া যায়। বিখ্যাত তাফসীর কারক আল্লামা সৈয়দ আলুসি বাগদাদি রহ. সূরা হুজুরাতের ১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
হুজরাত-১২}
وقد تجب الغيبة لغرض صحيح شرعي لا يتوصل إليه إلا بها وتنحصر في ستة أسباب الأول : التظلم فلمن ظلم أن يشكو لمن يظن له قدرة على إزالة ظلمه أو تخفيفه . الثاني : الاستعانة على تغيير المنكر بذكره لمن يظن قدرته على إزالته . الثالث : الاستفتاء فيجوز للمستفتي أن يقول للمفتي : ظلمني فلان بكذا فهل يجوز له أو ما طريق تحصيل حقي أو نحو ذلك؛ والأفضل أن يبهمه .الرابع : تحذير المسلمين من الشر كجرح الشهود والرواة والمصنفين والمتصدين لإفتاء أو إقراء مع عدم أهلية فتجوز إجماعاً بل تحب ، وكأن يشير وإن لم يستشر على مريد تزوج أو مخالطة لغيره في أمر ديني أو دنيوي ويقتصر على ما يكفي فإن كفى نحو لا يصلح لك فذاك وإن احتاج إلى ذكر عيب ذكره أو عيبين فكذلك وهكذا ولا يجوز الزيادة على ما يكفي ، ومن ذلك أن يعلم من ذي ولاية قادحاً فيها كفسق أو تغفل فيجب ذكر ذلك لمن له قدرة على عزله وتولية غيره الخالي من ذلك أو على نصحه وحثه للاستقامة ، والخامس : أن يتجاهر بفسقه كالمكاسين وشربة الخمر ظاهراً فيجوز ذكرهم بما تجاهروا فيه دون غيره إلا أن يكون له سبب آخر مما مر . السادس : للتعريف بنحو لقب كالأعور . والأعمش . فيجوز وإن أمكن تعريفه بغيره (روح المعاني في تفسير القرآن العظيم والسبع المثاني، سورة حجرات- 12)
অর্থাৎ ছয়টি কারণে গীবত করা জায়েজ আছে। যথা-
১- জুলুম থেকে নিচে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে। এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।
২- খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।
৩- বিষয়টি সম্পর্কে শরয়ী সমাধান জানতে গীবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন বলা যে, আমাকে অমুক ব্যক্তি আমার উপর জুলুম করেছে, তাই আমারও কি তাকে আঘাত করা জায়েজ আছে? ইত্যাদি
৪- সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী ধোঁকা ও খারাবী থেকে বাঁচাতে গীবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদীস, আসার ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা ইত্যাদি সম্পর্কে দোষ জনসম্মুখে বলে দেয়া, যেন তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। উদাহরণতঃ মতিউর রহমান মাদানী, তাউসীফুর রহমান এমন ভ্রান্ত মানসিকতা ও মিথ্যাচারকারী ব্যক্তিদের দোষ মানুষের কাছে বলা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আমল হিফাযতের জন্য জায়েজ।
৫- প্রাকাশ্যে যদি কেউ শরীয়তগর্হিত করে, তাহলে তার খারাবী বর্ণনা করা এমন ব্যক্তির কাছে যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সরাসরি বদনাম করা জায়েজ আছে। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।
৬- কারো পরিচয় প্রকাশ করতে। যেমন কেউ কানা। তার পরিচয় দেয়া দরকার। কিন্তু নাম কেউ চিনতেছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত হলেও এটা বলা জায়েজ আছে। এতে গীবতের গোনাহ হবে না। সূত্র: তাফসীরে রুহুল মাআনী- ১৪/২৪২, সূরা হুজরাত-১২
তৃতীয় কথা হলো, কারো ব্যক্তিগত দোষ বর্ণনা করা অবশ্যই গিবতের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে দোষটা যদি জাতীয় পর্যায়ে, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে তার গিবত করা যাবে। যেহেতু তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরণ করেছেন, আর রাষ্ট্রের সম্পদের মালিক আমরা সকলে, সেই হিসেবে আমরা মজলুম, তাই তার গঠনমূলক সমালোচনা করা যাবে। দলিল-
Surah An-Nisa, Verse 148:
لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا
আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ। সূরা নিসা-১৪৮
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتِ اسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا عِنْدَهُ فَقَالَ " بِئْسَ ابْنُ الْعَشِيرَةِ أَوْ أَخُو الْعَشِيرَةِ " . ثُمَّ أَذِنَ لَهُ فَأَلاَنَ لَهُ الْقَوْلَ فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ لَهُ مَا قُلْتَ ثُمَّ أَلَنْتَ لَهُ الْقَوْلَ . فَقَالَ " يَا عَائِشَةُ إِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ أَوْ وَدَعَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ فُحْشِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
২০০২। ইবনে আবু উমর (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসার অনুমতি প্রার্থনা করল। আমি সে সময় তাঁর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, ’‘কবীলার এই লোকটি বড় খারাপ’’। যা হোক এর পর তিনি তাঁকে আসতে অনুমতি দিলেন এবং তার সাথে নম্রতার সাথে কথা-বার্তা বললেন। লোকটি বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই লোকটি সম্পর্কে তো আপনি যা বলার বলেছিলেন অথচ পরে তার সাথে নম্রতার সঙ্গে কথা-বার্তা বললেন। তিনি বললেন, হে আয়িশা! লোকদের মধ্যে সবচে খারাপ হল সেই ব্যক্তি যার অশ্লীল কথা থেকে আত্মরক্ষা পাওয়ার জন্য লোকেরা তাকে ত্যাগ করে।
Aisha narrated:
"A man sought permission to enter upon the Messenger of Allah while I was with him, so he said: ’What an evil son of his tribe, or brother of his tribe.’ Then he admitted him and spoke with him. When he left, I said: ’O Messenger of Allah! You said what you said about him. Then you talked politely with him?’ He said: ’O ’Aishah! Indeed among the evilest of people are those whom the people avoid, or who the people leave, fearing his filthy speech.’"
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ১৯৯৬ (আন্তর্জাতিক নং ১৯৯৬)
নোট: হাদীসটি হাসান-সহীহ।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত রাজস্বের মতিউর রহমানের দুর্নীতি কাণ্ডের আলোচনা হবে। তবে একান্তর প্রয়োজন না হলে পরিহার করাই উচিত। মুমিনের সিফাত হলো,
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত। সূরা মুমিনূন-০৩
শেষ কথা, সর্বপ্রকার গিবত থেকে বাঁচার জন্য হাকিমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভি রহ এর কথা খুবই স্মরণযোগ, স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত,
তিনি বলেছেন, গিবত থেকে বাঁচা সর্বত্র পন্থ হলো একান্তর প্রয়োজন ছাড়া মানুষের ভালো-মন্দ কোন বিষয়ে আলোচনা করার দরকার নেই। একজন ভালো বললে আরেকজন মন্দ বলে আলোচনা শুরু করবে। এভাবে গিবতে জড়িয়ে পড়বে।
والله اعلم بالصواب
জিজ্ঞাসা-১৩০৪১:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নিচের হাদিসটি কি সহিহ?
আলী রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আলী! তুমি পাঁচটি কাজ না করে ঘুমাবে না। কাজ পাঁচটি হল :
১. চার হাজার দিনার ছদকা দিয়ে ঘুমাবে।
২. এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করে ঘুমাবে।
৩. জান্নাতের মূল্য দিয়ে ঘুমাবে।
৪. দু’ ব্যক্তির মাঝের বিবাদ মিটিয়ে ঘুমাবে।
৫. একটি হজ্ব আদায় করে ঘুমাবে।
এ কথা শুনে আলী রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল! এ তো আমার জন্য দুঃসাধ্য কাজ। আমি কীভাবে এগুলো করতে পারি?
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
(১) ঘুমের সময় চার বার সূরা ফাতেহা পাঠ করলে তোমার আমলনামায় চার হাজার দিনার ছদকা করার সওয়াব লেখা হবে।
(২) তিন বার কুলহুওয়াল্লাহ সূরা পড়লে তোমার আমলনামায় এক খতম কুরআন পড়ার সওয়াব লেখা হবে।
(৩) তিন বার দরূদ শরীফ পাঠ করলে জান্নাতের মূল্য আদায় হয়ে যাবে।
(৪) দশবার ইসতেগফার পড়লে বিবাদ মিটানোর সওয়াব লাভ হবে।
(৫) চার বার কালেমায়ে তামজীদ পাঠ করলে এক হজ্বের সওয়াব পাওয়া যাবে।
একথা শুনে আলী রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমি প্রতিদিনই এই আমল করে ঘুমাবো- ইনশাআল্লাহ!
তারিখ: ০২/০৭/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা খন্দকার মনজুরুর রহমান থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিসটির আরবি ইবারত নিম্নরূপ:
قال الرسول صلى الله عليه وسلم لعلي بن أبي طالب : يا علي لا تنم قبل أن تاتي بخمسة أشياء هي : قراءة القرآن كله والتصدق بأربعة آلاف درهم وزيارة الكعبة وحفظ مكانك في الجنة ورضاء الخصوم . فقال علي كرم الله وجهه : كيف ذلك يا رسول الله : قال أما تعلم أنك إذا قرأت ( قل هو الله أحد ) ثلاث مرات فقد قرأت القرآن كله ، وإذا قرأت سورة الفاتحة أربع مرات فقد تصدقت بأربعة آلاف درهم ، وإذا قلت ( لا إله إلا الله يحيي ويميت وهو على كل شي قدير ) عشر مرات فقد زرت الكعبة ، وإذا قلت ( لا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم ) عشر مرات فقد حفظت مكانك في الجنة وإذا قلت أستغفر الله العظيم الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه ) فقد رضيت الخصوم
নোট: হাদিসটি মাওজু এবং বানোয়াট। এ বিষয়ে শায়েখ উসাইমিন রহ. কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন,
فهذا الحديث لم نجده فيما بين أيدينا من المصادر الحديثية، وقد سئل عنه الشيخ بن محمد بن صالح العثيمين فقال حفظه الله: هذا الحديث الذي ذكره أن النبي صلى الله عليه وسلم، أوصى علي بن أبي طالب رضي الله عنه بهذه الوصايا: كذب موضوع على النبي صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ আমাদের নিকট বিদ্যমান প্রচলিত প্রামাণ্যগ্রন্থগুলোতে এই হাদিসটির উৎস অনুসন্ধান করে খুঁজে পাইনি। এই হাদীস প্রসঙ্গে শায়েখ বিন মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন ( রাহি.) এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আলী(রাযি.) কে উদ্দেশ্য করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের করা উপদেশবাণী সম্বলিত হাদীসটি নবীজির উদ্বৃতি দিয়ে করা জঘন্যতম নির্জলা মিথ্যাচার। উলূমে হাদীসের শাস্ত্রীয় বিবেচনায় যার সনদগত কোন ভিত্তি নেই। সূত্র: আলফাতাওয়াল ইসলামিয়া-৪/১১১
সারকথা হলো, উপরোক্ত রেওয়ায়েতটি জাল, তবে অন্যান্য সহিহ রেওয়ায়েত দ্বারা দুআগুলোর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
সন্তান ভাবনা
কুরআন মাজীদের একটি আয়াতের বার্তা
মাওলানা হুজ্জাতুল্লাহ
দায়িত্বশীল বাবা-মা মাত্রই সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করেন। সন্তানের জন্যে দায়িত্বশীল পিতা-মাতার এই চিন্তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি নন্দিত। কেবল নন্দিত নয় শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে সন্তানের সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে চিন্তা-ভাবনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ পিতা-মাতার অনিবার্য দায়িত্ব।
মুসলিম সন্তানের জীবনের বিভাগ দু’টি : দ্বীনী জীবন ও পার্থিব জীবন। পার্থিব জীবন নিয়ে চিন্তা তো প্রায় সবাই করে থাকে। কিন্তু দ্বীনী জীবনের ক্ষেত্রে অনেকের মাঝে অবহেলা লক্ষ্য করা যায়।
সন্তানের দ্বীনী ও দুনিয়াবি উভয় জীবন সুন্দর করার লক্ষ্যে পিতা-মাতার কী কী দায়িত্ব ও করণীয় তা দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। সংক্ষিপ্ত এই প্রবন্ধে যার সুযোগ নেই। কিন্তু এটুকু কথা এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সঠিক উৎস থেকে জ্ঞানলাভ অতঃপর যথাযথ চর্চা-অনুশীলন ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তার সঠিক প্রয়োগ খুবই জরুরি। গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধির অভাবে মানুষ যে বড় বড় বিষয়গুলোতে অবহেলার শিকার হয় এই বিষয়টি তার অন্যতম।
সন্তানের সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে পিতা-মাতার করণীয় একটি বিষয়ে হেদায়াত আছে কুরআন মাজীদের সূরা কাহফে। সেই হেদায়াত নিয়েই আজকের আলোচনা। কুরআন মজীদ আমাদেরকে একজন ‘মহান পিতা’র সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। যিনি নিজ সন্তানদের দেখাশোনা করার তেমন সুযোগ পাননি। কারণ তার সন্তনরা বড় হওয়ার আগেই তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। তিনি যখন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তখন তারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর পক্ষে সন্তানদের বেশি দূর এগিয়ে দিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তিনি এমন এক কীর্তির অধিকারী ছিলেন যা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য জামিন হয়ে যায়।
কুরআন মজীদে খাযির আলাইহিস সালামের সঙ্গে মুসা আলাইহিস সালামের সফরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সেই ঘটনায় আছে, চলতে চলতে একসময় খাযির আলাইহিস সালাম ও মুসা আলাইহিস সালামের প্রচণ্ড খিদে পেয়ে যায়। তাই এক জনপদে পৌঁছে তারা সেই জনপদবাসীকে মেহমানদারির অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা মেহমানদারি করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমন ক্ষুধার্ত দু’জন লোককে খাবার দিতে অস্বীকৃতি জানানো ছিল অমানবিকতা।
তারা সামনে চলতে থাকেন। পথিমধ্যে দেখতে পান, জনপদের একটি প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ছে। খাযির আলাইহিস সালাম প্রাচীরটি ঠিকঠাক করে দেন।
জনপদবাসীর অমানবিক আচরণের কারণে মুসা আলাইহিস সালাম একটু রুষ্ট ছিলেন, বিনা তলবে প্রাচীর ঠিক করতে দেখে তিনি বললেন, আপনি চাইলে প্রাচীর ঠিক করার বদলে এদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। অর্থাৎ এরা তো এমনিতে ভদ্র ও মানবিক নয়। ক্ষুধার্ত মানুষকেও খাবার দিতে রাজি হয় না। তাই পারিশ্রমিক বাবদ এদের কাছ থেকে কিছু নেওয়া যেত।
খাযির আলাইহিস সালাম তখন মুসা আলাইহিস সালামকে জানালেন, এই প্রাচীর জনপদবাসীর কল্যাণে ঠিক করা হয়নি। তা করা হয়েছে দুই এতিম বালকের জন্য! তিনি তা নিজের মর্জিতেও করেননি। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁকে এই প্রাচীর ঠিক করার আদেশ করেছেন!
দুই এতিম বালক কোত্থেকে এল? এই প্রাচীর ঠিক করার সাথে তাদের কী সম্পর্ক? কেন আল্লাহ তাআলা তাঁকে এই প্রাচীর ঠিক করার নির্দেশ দিলেন? এই সব প্রশ্নের জবাব শুনুন খাযির আলাইহিস সালামের জবানিতে-
وَ اَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلٰمَیْنِ یَتِیْمَیْنِ فِی الْمَدِیْنَةِ وَ كَانَ تَحْتَهٗ كَنْزٌ لَّهُمَا وَ كَانَ اَبُوْهُمَا صَالِحًا فَاَرَادَ رَبُّكَ اَنْ یَّبْلُغَاۤ اَشُدَّهُمَا وَ یَسْتَخْرِجَا كَنْزَهُمَا رَحْمَةً مِّنْ رَّبِّكَ .
আর প্রাচীরটি ছিল এই শহরে বসবাসকারী দুই এতিম বালকের। এর নিচে তাদের গুপ্তধন ছিল। আর তাদের পিতা ছিল নেক লোক। সুতরাং আপনার প্রতিপালক চেয়েছেন, ছেলে দু’টো যেন প্রাপ্তবয়সে উপনীত হয় এবং তাদের গুপ্তধন বের করে নিতে পারে। -সূরা কাহফ (১৮) : ৮২
প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছার আগে প্রাচীর ভেঙ্গে পড়লে অন্যরা গুপ্তধন নিয়ে যাবে। তাই আল্লাহ তাআলা খাযির আলাইহিস সালামকে প্রাচীর ঠিক করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বালকদ্বয়ের পিতা ধনসম্পদ তো সঞ্চয় করেছিলেন কিন্তু সন্তানদের প্রতিপালন করার সুযোগ তিনি পাননি। তাদের হাতে সম্পদ বুঝিয়েও দিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু তার মাঝে একটি বিশেষ গুণ ছিল। ব্যক্তি জীবনে তিনি নেককার ছিলেন। তাই তাঁর অবর্তমানে খোদ আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর সন্তানদের সম্পদের যিম্মাদারি নিয়েছেন, হেফাযতের ব্যবস্থা করেছেন।
এ ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে অন্যতম করণীয় হল, খোদ বাবা-মা নেককার হওয়া। পিতা-মাতা সত্যিকারার্থে নেককার হলে তাদের অবর্তমানেও আল্লাহ তাআলা সন্তান-সন্ততির দেখভালের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
এ ঘটনা থেকে আমরা এও বুঝতে পারি, আগত প্রজন্মের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে সম্পদ সঞ্চয় করা জায়েয। কিন্তু পার্থিব সম্পদ আগত প্রজন্মের জন্য আসল সম্পদ নয়। আসল সম্পদ হল, নেককাজ। নেককাজ এমন এক ধন, যার সুফল কেবল নেককারগণই ভোগ করেন না, বরং পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত এর সুফল ভোগ করে। এমনকি কখনো তা পরবতী প্রজন্মের পার্থিব ধনসম্পদের সুরক্ষা পর্যন্ত নিশ্চিত করে।
আল্লাহ তাআলার রহম ও করুণার ধারা বর্ষিত হোক কুরআনে উল্লেখকৃত সেই ‘মহান পিতা’র প্রতি যিনি আপন নেককাজ দিয়ে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের পথ সুগম করার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে গেছেন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের। আপনিই তাওফীকের মালিক হে আল্লাহ!
.
[ মাসিক আলকাউসার || সফর ১৪৪৪ || সেপ্টেম্বর ২০২২ ]
#আনওয়ারুল_কুরআন_মাসিক_আলকাউসার
বিনা ওজরে জামাত পরিত্যাগকারীর নিন্দায় নবীজী কঠোর কথা বলেছেন। রাসূল সা: বলেন, ‘আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৮)।
তবে কিছু অপারগতার কারণে জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি আছে। যথা
১. যদি মুষলধারে বৃষ্টি হয় (বুখারি : ১১২৬)।
২. প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হওয়ার অবকাশ আছে (বুখারি : ৬২৬)।
৩. রাস্তায় বেশি কাদা হলে (বদরুল মুনির : ৪/৪১৯)।
৪. অতি আঁধার হওয়া (জমউল জাওয়ামে : ১/৩০৫৮)।
৫. রাতে যদি অতিমাত্রায় মেঘ হয় (মুসনাদে আহমাদ : ৫৩০২)।
৬. অসুস্থ হলে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
৭. দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জন্য (সহিহ বুখারি : ৬২৭)।
৮. এমন বৃদ্ধ, যিনি মসজিদে আসতে সক্ষম নন (ইবনে মাজাহ : ৭৮৫)।
৯. কোনো রোগীর সেবাশুশ্রুষায় আত্মনিয়োজিত থাকলে (প্রাগুক্ত)।
১০. ঘন ঘন প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে (তিরমিজি : ১৩২)।
১১. বন্দী অবস্থায় (ইবনে মাজাহ: ৭৮৫)।
১২. এক পা বা উভয় পা কর্তিত হলে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
১৩. এমন রোগ হওয়া, যার কারণে চলতে অক্ষম। যেমন অর্ধাঙ্গ রোগ ইত্যাদি (প্রাগুক্ত)।
১৪. খানা সামনে, সেও ক্ষুধার্ত, মনের আকর্ষণ খানার দিকে। এমন অবস্থায় জামাতে না গেলেও চলবে (সহিহ বুখারি : ৬৩১)।
১৫. সফরের প্রস্তুতি গ্রহণের সময় (সহিহ বুখারি : ৩/৬৭)।
১৬. জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে কোনো সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জামাত ত্যাগ করতে পারবে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
১৭. জামাতে যাওয়ার কারণে ট্রেন, ফ্লাইট বা গাড়ি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে জামাতে শরিক না হওয়ার অনুমতি আছে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
উল্লেখ্য, মহিলাদের জন্য মসজিদ থেকে ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম।
মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়বে। এটাই নবীজীর পছন্দ। সুতরাং মহিলারা বাড়িতে আদায় করবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
অন্তরের ১০টি রোগের বর্ণনা যার চিকিৎসা করা জরুরী:-
🖋️- মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
⬛প্রধান মুফতী ও শাইখুল হাদীস,
⬛জামিয়া রহমানিয়া,মুহাম্মাদপুর,ঢাকা
🔸ভূমিকাঃ অন্তরের ১০টি রোগের চিকিৎসা করে অন্তরের ১০টি গুণ হাসিল করার নাম তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি। যা শরী‘আতের দৃষ্টিতে ফরযে আইন এবং এর জন্যে কোন ইজাযত প্রাপ্ত শাইখের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক করাও ফরযে আইন। বাইআত হওয়া ফরয বা ওয়াজিব নয় বরং এটা মুস্তাহাব, এর উপর আত্মশুদ্ধি নির্ভর করে না। আত্মশুদ্ধি অর্জন হলে সমস্ত জাহেরী গুনাহ বর্জন করা এবং জাহেরী ইবাদত-বন্দেগী করা সহজ হয়ে যায় এবং সেই বন্দেগীকে তাকওয়ার যিন্দেগী বা সুন্নতী যিন্দেগী বলে এবং সে ব্যক্তি তথন আল্লাহর ওলী হয় এবং তার হায়াতে তাইয়িবা তথা পবিত্র জীবন নসীব হয়। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে এ দৌলত নসীব করেন, আমীন।
🔸অন্তরের ১০টি রোগের বর্ণনা
১. বেশী খাওয়া এবং ভাল খানার প্রতি লোভী হওয়া
বেশি খাওয়া এবং উদর পূর্তি করে খাওয়া অসংখ্য গুনাহের মূল। এজন্য হাদীসে পাকে ক্ষুধার্ত থাকার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “মানুষের জন্য পূর্ণ করার ক্ষেত্রে পেটের থেকে খারাপ কোন পাত্র নেই।” (বুখারী হা: নং ৪৩৪৩)
🔸খানা কম খাওয়ার উপকারসমূহ
১. অন্তরে স্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়। ২. দিল নরম হয় এবং মুনাজাতে স্বাদ অনুভূত হয়। ৩. অবাধ্য নফস অপদস্থ ও পরাজিত হয়। ৪. নফসকে শাস্তি দেওয়া হয়। ৫. কুপ্রবৃত্তি দুর্বল হয়ে যায়। ৬. বেশী নিদ্রা আসে না এবং ইবাদত কষ্টকর হয় না। ৭. দুনিয়াবী চিন্তাভাবনা কমে আসে এবং জীবিকা নির্বাহের বোঝা হাল্কা হয়ে যায়।
উল্লেখ্য বর্তমান যামানার লোকেরা পূর্বের তুলনায় অনেক কমজোর হওয়ায় তাদের খানার মুজাহাদার ব্যাপারে হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. লিখেছেনঃ এ যমানায় খানার মুজাহাদার অর্থ হলো পেট পূর্ণ হতে ২/৪ লুকমা বাকী থাকা অবস্থায় খানা শেষ করা এবং নফস বা শরীর দিয়ে খুব কাজ নেয়া।
২. অধিক কথা বলা
যবান হল অন্তরের দূত, অন্তরের যাবতীয় নকশা ও কল্পনাকে যবানই প্রকাশ করে। এজন্য যবানের ক্রিয়া বড় মারাত্মক হয়।
এজন্যই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকটা কথাই সংরক্ষণ করা হয়। (সূরা কাফ-১৮)
হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ যে ব্যক্তি নিজের লজ্জাস্থান এবং জিহবাহর ব্যাপারে আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারবে আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। (বুখারী হা: নং ৬৪৭৪)
🔸কথা বেশী বলার ক্ষতিসমূহ
১. মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া। ২. গীবতে জড়িয়ে পড়া। ৩. অনর্থক ঝগড়া করা। ৪. অতিরিক্ত হাসাহাসি করা, যাদ্দরুন দিল মরে যায়। ৫. অন্যের অযাচিত প্রশংসা করা।
🔸চুপ থাকার উপকারিতা
১. মেহনতবিহীন ইবাদত। ২. সাম্রাজ্যবিহীন দাপট। ৩. দেওয়ালবিহীন দূর্গ। ৪. অস্ত্রবিহীন বিজয়। ৫. কিরামান কাতবীনের শান্তি। ৬. আল্লাহভীরুদের অভ্যাস। ৭. হেকমতের গুপ্তধন। ৮. মূর্খদের উত্তর। ৯. দোষসমূহ আবৃতকারী। ১০. গুনাহসমূহ আচ্ছাদনকারী।
৩. অহেতুক রাগ/গোস্বা করা
এটা অত্যন্ত খারাপ একটি আত্মিক ব্যাধি। রাগ দোযখের আগুনের একটি টুকরা এজন্য রাগান্বিত ব্যক্তির চেহারা লাল হয়ে যায়। এর কারণে মারামারি ঝগড়াঝাটি, গালাগালী, এমনকি খুনাখুনী পর্যন্ত সংঘটিত হয়।
এমনকি অনেকে বৃদ্ধি বয়সে এসে তুচ্ছ ঘটনায় বিবিকে তিন তালাক দিয়ে পস্তাতে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ঐ ব্যক্তি বাহাদুর নয় যে যুদ্ধের ময়দানে দুশমনকে নীচে ফেলে দেয় বরং ঐ ব্যক্তি বাহাদুর যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। (বুখারী হাদীস নং ৬১১৪)
🔸গোস্বার চিকিৎসা
দুইভাবে গোস্বার চিকিৎসা করা হয়। ১. ইলমী বা জ্ঞানগত পদ্ধতিতে ২. আমলী বা কার্যগত পদ্ধতিতে।
ইলমী চিকিৎসা হলঃ গোস্বার সময় চিন্তা করতে হবে গোস্বা কেন আসে? গোস্বা আসার কারণ তো এটাই যে, যে কাজটি আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে সে কাজটি আমার মনের মোতাবেক কেন হয়নি? কেন এটা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হল? তার মানে আমি আল্লাহর ইচ্ছাকে আমার ইচ্ছার অনুগত বানাতে চাই? নাউযুবিল্লাহ! এভাবে চিন্তা করলে গোস্বার বদ অভ্যাস দূর হয়ে যাবে।
আর আমলী চিকিৎসা হলঃ
গোস্বা আসলে ১ (أعُوْذ ُبِاللهِ مِنَ الشيْطَانِ الرَّجِيْمِ) পড়বে, ২. নিজ অবস্থা পরিবর্তন করবে। অর্থাৎ, দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়বে, বসে থাকলে শুয়ে পড়বে। ৩. যার প্রতি গোস্বার উদ্রেক হয় তার সামনে থেকে সরে পড়বে। ৪. তারপরও গোস্বা ঠান্ডা না হলে উযু করবে, নিজ গালকে মাটিতে লাগিয়ে দিবে। এভাবে আমল করলে গোস্বা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৪. হিংসা করা
হিংসার সংজ্ঞাঃ কোন ব্যক্তিকে আরাম আয়েশ বা প্রাচুর্যপূর্ণ অবস্থায় দেখে তার সে নেয়ামত দূরীভূত হয়ে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাংখা করা। হিংসা অত্যন্ত জঘন্য একটি ব্যাধি।
আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেনঃ আমার বান্দার উপর নেয়ামত দেখে হিংসাকারী কেমন যেন আমার ঐ বন্টনের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট যা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে করেছি। নাউযুবিল্লাহ। (এহয়াউ উলুমুদ্দীন-৩/২৯২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “হিংসা নেকী সমূহকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয় যেমন আগুন শুকনো লাকড়ীসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়”। অবশ্য অন্যের কোন নেয়ামত দেখে সেটা তার মধ্যে বহাল থেকে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাংখা করা যাকে “গিবতা” বা “ঈর্ষা” বলে সেটা জায়েয। (আবূ দাউদ হাদীস নং-৪৯০৩)
৫. কৃপণতা ও সম্পদের মোহ
সম্পদের মোহই মূলতঃ কৃপণতার মূল আর সম্পদের মুহব্বাত মানুষকে দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট করে। যে কারণে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুহব্বাত দুর্বল হয়ে যায়।
এ কারণেই কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ যার ভাবার্থ হল: আল্লাহর দেয়া সম্পদে কৃপণতাকারীদের জন্য পরকালে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। (সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৮০)
হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ তোমরা লোভকে নিয়ন্ত্রণ কর কারণ এটা তোমাদের পূববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং-২৫৭৮)
বাস্তবিক পক্ষে সম্পদের মোহ মানুষকে আল্লাহ পাক থেকে উদাসীন করে দেয়। এই সম্পদ মুসলমানদের জন্য ভয়াবহ এক ফেতনা।
অবশ্য শুধু সম্পদ কোন নিন্দনীয় ব্যাপার নয়। বিশেষতঃ যদি সে সম্পদ দীনী কাজে ব্যয় করা হয়। নতুবা জরুরত পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোন অসুবিধা নেই, যাতে কারো নিকট ভিক্ষার হাত বাড়াতে না হয়। এবং আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা যায়।
৬. খ্যাতি ও পদের মোহ
খ্যাতি ও পদের মোহ অত্যন্ত নিকৃষ্ট একটি আত্মিক ব্যাধি। এর দ্বারা অন্তরে নিফাক সৃষ্টি হয়। এজন্য নিজেকে সব সময় লুকিয়ে রাখা চাই, খ্যাতির পিছনে পড়া অনুচিত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। (সূরা কিসাস-৮৩)
হাদীসে পাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “যদি কোন বকরীর পালের মধ্যে দুটি নেকড়ে প্রবেশ করে তাহলেও সেটা এত ক্ষতি করে না যতটা সম্পদ ও পদের মুহাব্বত দীনদার মুসলমানদের দীনের ক্ষতি করে।” (তিরমিযী হা: নং ২৩৮১, মুঃ আহমাদ হাঃ ১৫৭৯০)
অবশ্য যদি কামনা-বাসনা ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলা কাউকে সুখ্যাতি দান করেন হবে সেটা দোষণীয় নয়। যেমন নবীগণ আ. সাহাবীগণ রাযি. তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ রহ. তাঁদের প্রত্যেকেরই দুনিয়াতে খ্যাতি ছিল কিন্তু তাঁরা কেউ দুনিয়াতে খ্যাতি কামনা করেননি।
৭. দুনিয়া প্রীতি
দুনিয়াপ্রীতি শুধু সম্পদ ও পদের মুহব্বাতকেই বলেনা বরং ইহজীবনে যে কোন অবৈধ কামনাকে পূর্ণ করার প্রচেষ্টা ও খাহেশকেই দুনিয়াপ্রীতি বলে। অবশ্য দীনী ইলম, মারিফাতে ইলাহী এবং সৎকর্ম যেগুলোর ফলাফল মৃত্যুর পর পাওয়া যাবে, সেগুলো যদিও দুনিয়াতেই সংঘটিত হয় কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে এসবের মুহব্বাতকে দুনিয়ার মুহব্বাত বলে না বরং এগুলো হলো আথেরাতের মুহব্বাত।
দুনিয়ার জীবনের নিন্দাবাদ করে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন “দুনিয়ার জীবনের সবকিছুই ধোঁকার সামান।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত- ১৮৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে যে, “দুনিয়ার সামানপত্র, রং তামাশা ও খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই নয়।” (সূরায়ে হাদীদ, আয়াত-২০)
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ দুনিয়া হল একটি মরা জন্তু যারা এটাকে লক্ষবস্তু বানিয়েছে তারা হল কুকুরের দল। দুনিয়ার ভোগ বিলাসকে উদ্দেশ্য না করে দুনিয়াকে আখেরাতের প্রস্তুতির হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে কামিয়াব হওয়া যাবে।
৮. অহংকার করা
তাকাব্বুর বা অহংকার এর অর্থ হলঃ প্রশংসনীয় গুণাবলীর মধ্যে নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করা এবং অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, হক ও সত্যকে অস্বীকার করা। বলা বাহুল্য যে, যখন মানুষ নিজের ব্যাপারে এরূপ ধারণা পোষণ করে এবং আল্লাহর দেয়া গুণসমূহকে নিজের কৃতিত্ব মনে করে তখন তার নফস ফুলে উঠে, অতঃপর কাজকর্মে এর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতে থাকে, উদাহরণস্বরূপ: রাস্তায় চলার সময় সাথীদের আগে আগে চলা, মজলিসে সদরের মাকামে বা সম্মানিত স্থানে বসা। অন্যদেরকে তাচ্ছিল্যের সাথে দেখা বা আচরণ করা অথবা কেউ আগে সালাম না দিলে তার উপর গোস্বা হওয়া, কেউ সম্মান না করলে তার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া, কেউ সঠিক উপদেশ দিলেও নিজের মর্জির খেলাফ হওয়ায় সেটাকে অবজ্ঞা করা। হক কথা জানা সত্ত্বেও সেটাকে না মানা। সাধারণ মানুষকে এমন দৃষ্টিতে দেখা যেমন গাধাকে দেখা হয় ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অনেক আয়াতে ‘অহংকার’ এর নিন্দাবাদ করা হয়েছে, অহংকারের কারণেই ইবলীস বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। অহংকারের কারণেই আবূ জাহাল মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সত্য জেনেও অস্বীকার করেছে।
৯. আত্মতুষ্টি
আত্মতুষ্টি বা নিজেকে নিজে সঠিক মনে করা মূলত: এটা অহংকারেরই ভূমিকা বা প্রাথমিক রূপ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, অহংকারের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় নিজের নফসকে বড় মনে করা হয় আর আত্মতুষ্টির মধ্যে অন্যদের সাথে তুলনা করা ছাড়াই স্বীয় নফসকে নিজ খেয়ালে কামেল মনে করা হয়। এবং আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহকে নিজের হক মনে করা হয়, অর্থাৎ, এটাকে আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ মনে করা হয় না এবং সেটা যে কোন মুহূর্তে ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে সে ব্যাপারে শংকাহীন হয়ে পড়া। এটাকেই তাসাওউফের পরিভাষায় “উজুব” বা “খোদপছন্দী” বলে। এটার চিকিৎসা করা না হলে এটাই কিছু দিন পরে অহংকারে পরিণত হয়ে বান্দাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
১০. লোক দেখানো (রিয়া বা প্রদর্শনী)
রিয়া বলা হয় নিজ ইবাদত ও ভাল আমলের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে বড়ত্ব ও মর্যাদার আকাংখা করা।
এটা ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাপার। কেননা ইবাদতের দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখন যেহেতু এই আমলের উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্য শরীকও চলে এসেছে, বিধায় একে “শিরিকে আসগার” বা ছোট শিরক বলা হয়।
কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ মানুষকে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছে। (সূরায়ে বায়্যিনাহ আয়াত-৫)
হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ “কিয়ামতের দিন সবপ্রথম যে তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তারা সবাই হবে রিয়াকার।” তারা সারা জীবন দীনের পথে থেকেও অন্তরের একটি রোগের কারণে সকলের পূর্বে জাহান্নামে যাবে। রিয়াকে “শিরকে খফী” বা গোপন শিরকও বলা হয়।
রিয়ার সূরতসমূহঃ
মোট ছয় ভাবে রিয়া হতে পারে। ১। শরীরের দ্বারা ২। অঙ্গভঙ্গির দ্বারা ৩। আকৃতি অবলম্বনের দ্বারা ৪। কথাবার্তার দ্বারা ৫। আমলের দ্বারা ৬। নিজ মুরীদ ও ভক্তের আধিক্য ও নিজের ইবাদত বন্দেগীর বর্ণনার দ্বারা।
সামর্থ থাকার পরও বিনয়ের সাথে মূল্যবান পোশাক পরিহার করার ফজিলত
حَدَّثَنَا عَبَّاسُ بْنُ مُحَمَّدٍ الدُّورِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ الْمُقْرِئُ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي مَرْحُومٍ عَبْدِ الرَّحِيمِ بْنِ مَيْمُونٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ الْجُهَنِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ تَرَكَ اللِّبَاسِ تَوَاضُعًا لِلَّهِ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ دَعَاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ مِنْ أَىِّ حُلَلِ الإِيمَانِ شَاءَ يَلْبَسُهَا " . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَمَعْنَى قَوْلِهِ " حُلَلِ الإِيمَانِ " . يَعْنِي مَا يُعْطَى أَهْلُ الإِيمَانِ مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ .
২৪৮৩. আব্বাস ইবনে মুহাম্মাদ দূরী (রাহঃ) ...... সাহল ইবনে মুআয ইবনে আনাস যুহানী তার পিতা মুআয ইবনে আনাস যুহানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিনয়ে মূল্যবান পোশাক পরা পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সকল সৃষ্টির সম্মুখে তাকে ডাকবেন এবং ঈমানদারদের যে কোন লেবাস তিনি পরিধান করতে চান তাকে পরিধান করার ইখতিয়ার দেওয়া হবে।
Sahl bin Mu’adh bin Anas Al-Juhani narrated from his father, that the Messenger of Allah (s.a.w)said:
"Whoever leaves(valuable) dress out of humility to Allah while he is able to (afford it), Allah will call him before the heads of creation on the Day of Judgement so that he can chose whichever Hulal of faith he wishes to wear."
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৮১ (আন্তর্জাতিক নং ২৪৮১)
.আহমদ- ১৫২০৪
নোট:
(আবু ঈসা বলেন) এ হাদীসটি সহীহ। হাদীসটির মর্ম হল, তাঁদের কাপড়-চোপড় ছিল পশমের। বৃষ্টিতে ভিজলে তা থেকে ভেড়ার গণ্ধ আসত।
*আমাদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর কাছে আসা নারীদের বলতেন,* “তোমরা তোমাদের স্বামীদের নিকট আমার বর্ণনা দিও না।”
*📚 ইবন আবী শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ ১৭৯২৪*
এ হচ্ছে আমাদের ও উম্মতের সকলের মায়ের বাণী। *এটা থেকে আমরা যেসব শিক্ষা পাই তা হচ্ছে,*
১- নারীদের উচিত নিজেদেরকে জাহির না করা।
২- আমাদের নারীদের উচিত তাঁকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা।
৩- আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীর জন্য পবিত্রা নারীদেরকেই স্ত্রী হিসাবে বাছাই করেছেন।
৪- কোনো নারীর উচিত নয় অপর কোনো নারীর বিবরণ তার স্বামীকে জানানো।
৫- আমাদের নারীরা যেভাবে যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রচার করে বেড়াচ্ছে সেটা কোনো জান্নাতী নারীর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
৬- একজন নারীর ওপর কর্তব্য হচ্ছে এমন স্থানে না যাওয়া যেখানে তার পর্দা লঙ্ঘিত হবে।
৭- একজন নারীর ওপর কর্তব্য হচ্ছে অপর নারীদেরকে তার বিষয়ে বাইরে কারো কাছে না বলার ব্যাপারে অসিয়ত করা।
৮- যারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে বাজে কোনো মন্তব্য করে, যেমন শিয়া সম্প্রদায় তারা জগতের সর্বনিকৃষ্ট লোকদের অন্তর্ভুক্ত।
৯- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্নাম স্বয়ং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ফযীলত বর্ণনা করেছেন।
১০- *দীনের অনেক মাসআলা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছ থেকে নিতে হয়েছিল তারপরও তিনি কোনো তালীমে বের হতেন না, পরামর্শ সভায় যোগ দিতেন না, রাষ্ট্রীয় পদ-পদবী গ্রহন করতেন না।*
একজন সাহাবী বিয়ে করেন ১১ বছর বয়সে আর বাবা হন ১২ বছর বয়সে!
বাবা-ছেলে দুজনই সাহাবী হবার মর্যাদালাভ করেন। বাবার আগ্রহ ছিলো রাজনীতি, ছেলের আগ্রহ জ্ঞানার্জন। দুজন দুজনের জায়গায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। বাবা হন মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, সেনাপতি, ছেলে হন মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস।
বাবার নাম আমর ইবনুল আ'স রাদিয়াল্লাহু আনহু, ছেলের নাম আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ'স রাদিয়াল্লাহু আনহু।
বাবা ছেলের বয়সের ব্যবধান মাত্র ১২ বছর!
তথ্যসূত্র:
ইমাম আয-যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা: ৩/৮০
*ফিরিশতার দোয়া লাগবে?*
আমরা মা-বাবার কাছে দোয়া চাই। পীর-বুযুর্গ-শায়খের কাছে দোয়া চাই। ময়মুরুব্বি, ওস্তাদের কাছে দোয়া চাই। আমি চাইলে ফিরিশতাগনেরও দোয়া লাভ করতে পারি। অত্যন্ত সহজেই।
*আট সময়ে ফিরিশতাগন আমার জন্য দোয়া করতে থাকেন।*
১) আমি যখন প্রথম কাতারে নামাজে দাঁড়াই। যতক্ষণ এই কাতারে থাকব, ততক্ষণ ফিরিশতাগনের দুর্লভ দোয়া পেতে থাকব। (সহীহ তারগীব তারহীব ৪৯১)
২) আমি যখন সলাতের অপেক্ষায় মসজিদে বা জায়নামাজে বসে থাকি। আমি যখন ফরজ নামাজের পর মসজিদে বসে থাকি। যতক্ষণ বসে থাকব, ততক্ষণ ফিরিশতাগন আমার জন্য দোয়া করতে থাকবেন। (মুসলিম ৬৪৯)
৩) অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে। ঘর থেকে বের হওয়ার পর থেকে, অসুস্থ্যকে দেখে ঘরে ফেরা পর্যন্ত নিষ্পাপ ফিরিশতাগন আমার জন্য দোয়া করতে থাকবেন। (সিলসিলা সহীহাহ ৩৪৭৬)
৪) শুধু আল্লাহর জন্য, আল্লাহকে রাজিখুশি করার জন্য, কোনও মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে। বাড়ি ছেড়ে বের হওয়া থেকে শুরু করে, বাড়ি ফেরা পর্যন্ত আমি ফিরিশতাগনের বরকতময় দোয়ায় শামিল থাকব। (মুসলিম ২৫৬৭)
৫) মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপুস্থিতিতে দোয়া করার সময় ফিরিশতাগন আমার জন্য দোয়া করতে বসে যান। বিশ্ব মুসলিমের জন্য, নিজের ভাই-বেরাদরের জন্য দোয়া করার সময় খেয়াল রাখব, আমি যত বেশি সময় তাদের জন্য দোয়ায় মশগুল থাকব, তত বেশি সময় আমি ফিরিশতাগনের দোয়ার চাদরে মোড়ানো থাকব। (মুসলিম ২৭৩২)
৬) মানুষকে কল্যাণের শিক্ষা দেয়া সময়। সেটা হতে পারে একটি ভাল কথা, একটি ভাল কাজ, একটি উপকারী তথ্য, একটি দরকারি টিপস। সুযোগ পেলেই ফিরিশতাগনের দোয়া নেয়ার চেষ্টা করতে ত্রুটি করব না। (জামে সগীর ৫৮৪১)
৭) ওজু বা পবিত্র অবস্থায় ঘুমুলে। ঘুমের আগে ওজু করতে অলসতা লাগে? উপকারটা একটু চিন্তা করে দেখি? সামান্য কষ্ট করে ওজু করলে, একটানা চার-পাঁচ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে ফিরিশতাগন আমার জন্য দোয়া করেই যাবেন। দোয়া করেই যাবে। কী অসাধারণ সুযোগ। (তারগীব তারহীব ৫৯৯)
৮) সাহরী খাওয়ার সময়। ফিরিশতাগনের দোয়ার আশায় হলেও সাহরী খাওয়ার সময়টা যথাসম্ভব দীর্ঘ করব। দীর্ঘ করার প্রক্রিয়াটা এভাবেও হতে পারে, সাহরির মূল খাবার গ্রহনের বেশ আগে, সাহরির নিয়তে একঢোঁক পানি পান করে নিলাম। তারপর মূল খাবার খেলাম। তারপর একেবারে শেষ সময়ে একটা খেজুর খেলাম। তাহলে দীর্ঘ সময় দোয়া পাবো। (জামে সগীর ১৮১০)
রাব্বে কারীম বেশি বেশি ফিরিশতাগনের অমূল্য দোয়া হাসিল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
উস্তাদ আতিক উল্লাহ
জিজ্ঞাসা-২০৩: মোনাজাতে হাত কিভাবে কতটুকু উপরে উঠাতে হবে,হাত ফাঁকা থাকবে নাকি দুহাত মিলিত থাকবে, জানতে চাই হযরত। (তারিখ- ২৪/০৬/২০২২ ঈসায়ি)
মাওলানা সাইফুল ইসলাম ভোলা থেকে-
জবাব: শুরুতে আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে, আপনার জবাব দিতে দেরি হলো। কারণ আমি যে এলাকায় ছিলাম (ছুটিতে) নেটের প্রবলেম ছিল। যাই আপনার প্রশ্নের উত্তর নিম্নে হলো:
(ক) উভয় হাত সিনা (বুক) বরাবর উঠানো। দলিল: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হা. নং- ৩২৩৪
(খ) হাতের আঙ্গুল সমূহ স্বাভাবিক ফাঁক রাখা। দলিল: হিসনে হাসিন-২৭
(গ) দু হাতের মাঝখানে সামান্য ফাঁক রাখা। দলিল: তহাবি শরিফ-২০৫
(ঘ) হাতের তালু আসমানের দিকে প্রশস্ত করে রাখা। দলিল: তাবরানী কাবীর, হাঃ নং ৩৮৪২
والله اعلم بالصواب
প্রতি দিনের কথা ও কাজ সাজিয়ে তুলুন দশটি সহজ জিকির দ্বারা |
بسم الله الرحمن الرحيم
Ø ১-বিসমিল্লাহ: বিসমিল্লাহ শব্দের অর্থ, আল্লাহর নামে শুরু করছি। কাজের শুরুতে (بسم الله) বিসমিল্লাহ বলার অভ্যাস করুন।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
كُلُّ كَلَامٍ أَوْ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا يُفْتَحُ بِذِكْرِ اللهِ فَهُوَ أَبْتَرُ – أَوْ قَالَ : أَقْطَعُ ‘
প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি আল্লাহকে স্মরণ না করে শুরু করা হয়, তাহলে তা লেজ কাটা (বরকতহীন) হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ ১৪/৩২৯)
Ø ২-সুবহানাল্লাহ: সুবহানাল্লাহ (سبحان الله)শব্দের অর্থ আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান। আশ্চর্যজনক ভালো কোনো কাজ হতে দেখলে কিংবা বিস্ময়কর ভালো কোনো কথা শুনলে এটি বলার অভ্যাস করুন। যেমন, সুবহানাল্লাহ! আগুনে পুরো ঘর পুরে গেলেও কুরআন শরীফ অক্ষত আছে!
Ø ৩-আল হামদুলিল্লাহ: আল হামদুলিল্লাহ (الحمد لله) শব্দের অর্থ, সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। যে কোন সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে সাধারণত এটি বলার অভ্যাস করুন। । যেমন, ভাই আপনি কেমন আছেন? জবাবে বলুন, আল হামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
أَفْضَلُ الْكَلَامِ أَرْبَعٌ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ
‘সর্বোত্তম (মর্যাদাপূর্ণ) বাক্য হলো চারটি– (১) সুবহানাল্লাহ (سبحان الله), (২) আল হামদুলিল্লাহ( الحمد لله), (৩) লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ (لا اله الا الله) (৪) আল্লাহু আকবার (الله اكبر)।’ (মিশকাত ২২৯৪)
Ø ৪-মাশা আল্লাহ: মাশা আল্লাহ (ما شاء الله) শব্দের অর্থ, আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। এটি আল হামদুলিল্লাহ ও সুবহানাল্লাহ শব্দের মতোই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে কোনো সুন্দর এবং ভালো ব্যাপারে এটি বলুন। যেমন, মাশা আল্লাহ তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
من رأى شيئاً فأعجبه فقال : ما شاء الله لا قوة إلا بالله : لم تصبه العين ‘
যে ব্যক্তি কোনো বিস্ময়কর বস্তু দেখার পর মাশা আল্লাহ লা-ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলবে, তবে তাকে কুদৃষ্টি স্পর্শ করবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ ৫/২১)
Ø ৫-নাউযুবিল্লাহ: নাউযুবিল্লাহ (نعوذ بالله) শব্দের অর্থ, আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় চাই। যে কোনো মন্দ ও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে এটি বলুন।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ
‘তোমরা ভয়াবহ বিপদ, হতভাগ্যের অতল গহবর, মন্দ তাকদীর এবং শত্রুর আনন্দ প্রকাশ থেকে আল্লাহ তা’আলার কাছে আশ্রয় প্রর্থনা কর।’ (সহীহ বুখারী ৬১৬৩)
Ø ৬-ইনশা আল্লাহ: ইনশা আল্লাহ (ان شاء الله) শব্দের অর্থ, যদি আল্লাহ চান। কোনো ভালো কাজ ভবিষ্যতে করতে চাইলে এটি বলুন।
Ø আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًاإِلَّا أَن يَشَاء اللَّه
‘আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব; ‘যদি আল্লাহ চান‘ বলা ব্যতিরেকে। (সূরা কাহফ ২৩)
Ø ৭-আসতাগফিরুল্লাহ: আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অনাকাঙ্খিত কোন অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে আমরা এটি বলবো।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
وَاللّٰهِ إِنِّىْ لِأَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً
‘আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন সত্তরবারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই ও তাওবাহ্ করি।’ (সহীহ বুখারী ৬৩০৭)
Ø ৮-জাযাকাল্লাহু খায়রা: এর অর্থ, আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন। কেউ আপনার কোন উপকার করলে তাকে থ্যাংক ইউ না বলে বলুন, জাযাকাল্লাহু খায়রা ।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন
,مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ، فَقَالَ لِفاعِلهِ: جَزَاكَ اللهُ خَيراً، فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ
‘যে ব্যক্তির জন্য কোন উপকার করা হল এবং সে উপকারকারীকে ‘জাযাকাল্লাহু খায়রা’ বলে দো‘আ দিল, সে নিঃসন্দেহে (উপকারীর) পূর্ণাঙ্গরূপে প্রশংসা করল।’ (তিরমিযী ২০৩৫)
Ø ৯-ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউন: (ان لله و ان اليه راجعون) অর্থ, নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাবো। যে কোনো দু:সংবাদ বা বিপদের সময় আমরা এটি বলবো।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ وَلَا مُسْلِمَةٍ يُصَابُ بِمُصِيْبَةٍ فَيَذْكُرُهَا وَإِنْ طَالَ عَهْدُهَا فَيُحْدِثُ لِذلِكَ اسْتِرْجَاعًا إِلَّا جَدَّدَ اللّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالى لَه عِنْدَ ذلِكَ فَأَعْطَاهُ مِثْلَ أَجْرِهَا يَوْمَ أُصِيْبَ بِهَا
‘কোন মুসলিম নর-নারী কোন বিপদাপদে পড়ার যত দীর্ঘ সময় পর মনে জেগে ওঠে আর সে নতুনভাবে ‘‘ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউন’’ পড়ে তাহলে আল্লাহ তাকে নতুনভাবে সে সাওয়াবই দিবেন যে সাওয়াব সে বিপদে পতিত হওয়ার প্রথম দিনই পেয়েছে।’ (মুসনাদ আহমাদ ১৭৩৪)
Ø ১০-লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ: অর্থ, মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোন আশ্রয় ও সাহায্য নেই। শয়তানের কোন ওয়াসওয়াসা বা দূরভিসন্ধিমূলক কোন প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য বেশিহারে আমাদের এটি পড়া উচিত।
Ø রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
أَكْثِرْ مِنْ قَوْلِ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ فَإِنَّهَا كَنْزٌ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ’
তুমি “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বেশি বেশি বল। কেননা তা জান্নাতের রত্নভাণ্ডারের অন্তর্ভুক্ত।
Ø মাকহুল রহ. বলেন, যে লোক “লা হাওলা ওয়াল কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ওয়ালা মানজায়া মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি” পাঠ করে, আল্লাহ তা’আলা তার হতে সত্তর প্রকারের অনিষ্ট অপসারণ করেন এবং এগুলোর মাঝে সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিপদ হল দরিদ্রতা। (তিরমিজি ৩৬০১)
miMinute Madrasha থেকে সংগ্রহিত