জিজ্ঞাসা-২১৩: হযরত মুফতি সাহেবের নিকট প্রশ্ন শুক্রবার হজ হলে একে হজ্জে আকবার বলে, শরিয়তে এর কোন প্রমান আছে? তারিখ-০৩-০৭-২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতারুজ্জামান মিরপুর, ঢাকা থেকে-----
জবাব: প্রথম কথা হলো, শুক্রবারে হজ হলে একে হজ্জে আকবার বলে, শরিয়তে এর কোন প্রমাণ নেই। নবী (ﷺ) থেকে অথবা কোন সাহাবী কিংবা কোন তাবেয়ী থেকে এ ধরনের কোন বর্ণনার ভিত্তি নেই। সূত্র: যাদুল মাআদ-১/৬০-৬৫
প্রশ্ন: ক। মানুষের মুখে মুখে শুক্রবারে হজ হলে একে হজ্জে আকবার বলে, এর কোন কারণ আছে কি?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, মানুষের মুখে মুখে শুক্রবারে হজ হলে একে হজ্জে আকবার বলে, এর কারণ আছে। প্রথম কারণ হলো, আল্লাহ তাআলার বানী- وَ اَذَانٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖۤ اِلَی النَّاسِ یَوۡمَ الۡحَجِّ الۡاَکۡبَرِ অরথ: আর মহান হজের দিনে(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি এটা এক ঘোষণা যে, নিশ্চয় মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ দায়মুক্ত এবং তার রাসূলও। সূরা তওবা-০৩
এ আয়াতে কারিমায় যে হজে আকবর বলা হয়েছে, অনেকে এটা দ্বারা মন গড়া জুমা/শুক্রবার ব্যাখ্যা করেছেন, এ কারণেই শুক্রবার হজ হলে, হজে আকবর বলে।
এখানে মহান হজের দিনে বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, উমর, আবদুল্লাহ ইবন ওমর এবং আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রা. প্রমুখ সাহাবা বলেনঃ এর অর্থ আরাফাতের দিন। [ইবন কাসীর] কারণ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) হাদীস শরীফে এরশাদ করেছেন “হজ হল আরাফাতের দিন”। [তিরমিযী: ৮৮৯] পক্ষান্তরে আলী, আবদুল্লাহ ইবন আবি আওফা, মুগীরা ইবন শুবাহ, ইবন আব্বাসসহ সাহাবায়ে কিরামের এক বড় দল এবং অনেক মুফাসসির বলেন, এর অর্থ কোরবানীর দিন বা দশই যিলহজ। [ইবন কাসীর] এর সপক্ষে বেশ কিছু সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর দিন প্রশ্ন করেছিলেন, “এটা কোন দিন? লোকেরা চুপ ছিল এমনকি মনে করেছিল যে, তিনি হয়ত: অন্য কোন নামে এটাকে নাম দিবেন, শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এটা কি বড় হজের দিন নয়?” [বুখারী ৪৪০৬; মুসলিম: ১৬৭৯
عن ابن عمر- رضى الله عنهما- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوم النحر: [أي يوم هذا] ؟ قالوا: يوم النحر، قال: «هذا يوم الحج الأكبر».رواه أبو داود وصححه الألباني
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোনো দিন? সাহাবিগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন। রাসূলে করীম (ﷺ) বললেন: এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। আবু দাউদ: ১৯৪৫
ইমাম সুফিয়ান সওরী রাহিমাহুল্লাহ এবং অপরাপর ইমামগণ এ সকল উক্তির সমস্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে বলেন, হজের দিনগুলো হজ্জে আকবরের দিন। এতে আরাফাত ও কোরবানীর দিনগুলোও রয়েছে। [ইবন কাসীর]
দ্বিতীয় কারণ হলো এই জাল হাদিস:
“সর্বোত্তম দিন হচ্ছে- যদি শুক্রবারে আরাফা হয়। সে হজ্জ শুক্রবারে হজ্জ নয় এমন ৭০ টি হজ্জের চেয়ে উত্তম।”
নোট: হাদিস বিশারদগণ এটিকে বাতিল বলে অভিহিত করেছেন। যেমন, ইবনুল কায়্যিম রহ.; ইবনে আবেদনী ‘হাসিয়া’; হাফেয নাসের উদ্দিন আল-দিমাশকি । সূত্র: যাদুল মাআদ-১/৬৫; মুনাবি ফাতহুল কাদির-২/২৮
প্রশ্ন: খ। বুঝলাম এ বিষয়ে কোন সহিহ দলিল নেই, তবে শুক্রবারে হজ হলে কি কোন বিশেষত্ব আছে কিনা?
উত্তর: খ। কথা ঠিক, এ বিষয়ে কোন সহিহ দলিল না থাকলেও, শুক্রবারে হজ হলে বিশেষত্ব আছে। দলিল:
(১) এই হজ্জ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্জের সাথে মিলে যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লামের আরাফায় অবস্থান জুমার দিনে ছিল।
(২)
إنَّ في الجُمُعَةِ لَساعَةً، لا يُوافِقُها مُسْلِمٌ، يَسْأَلُ اللَّهَ فيها خَيْرًا، إلَّا أعْطاهُ إيَّاهُ، قالَ: وهي ساعَةٌ خَفِيفَةٌ. وفي رواية: ولَمْ يَقُلْ: وهي ساعَةٌ خَفِيفَةٌ.
الراوي : أبو هريرة | المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم | الصفحة أو الرقم : 852 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
অর্থ: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। মুসলিম-৮৫২; আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮
(৩) আরাফার দিন ঈদ ও জুমার দিনও ঈদ। সুতরাং দুই ঈদের একত্রিত হওয়াটা কল্যাণকর। দলিল: “মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন।” ইবনে মাজাহ-১০৮৪
আরও দেখুন: ফাতহুল বারী (৮/২৭১) ও তুহফাতুল আহওয়াজি (৪/২৭)।
উপরোক্ত কারণে আলেমগণ বলেন: জুমার দিনে হজ্জ হওয়াটা উত্তম।
সারকথা: চূড়ান্ত কথা হলো শুক্রবারে হজ হলে তাকে হজ্জে আকবার বলা যাবে না। তবে বিশেষত্ব অবশ্যই আছে। বরং উত্তম হজ বলা যাবে।
والله اعلم