জিজ্ঞাসা-১৩০৩৩:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম আমার জানার বিষয় হলো যে মহররম মাসে বিবাহ শাদী করা যায় না এমন কোন বিধি-বিধান কি শরীয়াতে আছে
তারিখ: ২০/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আমিনুর রহমান যশোর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মহররম মাসে বিবাহ শাদী করা যায় না এমন কোন বিধি-নিষেধ ইসলামি শরিয়তে নেই। এটা কুসংস্কার, সম্ভবত কিছু শিয়াদের প্রোপাগান্ডা, যেহেতু ১০ মহররম তারিখে ইমাম হোসাইন রা. শাহাদাত বরণ করেছেন।
এ বিষয়ে শায়েখ সালেহ আল-মুনজিদ হাফিজাহুল্লাহুকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
لا حرج في الزواج أو الخطبة في شهر الله الحرام ( محرَّم ) الذي هو بداية السنة القمرية ، وليس ذلك من المكروهات ولا من المحرمات ، وذلك لأدلة كثيرة ، منها :
أولا :
أصل الإباحة والبراءة الذي لم يرد ما ينقله ويغيّره ، والقاعدة الشرعية المتفق عليها بين العلماء : أن الأصل في العادات والأفعال الإباحة ، ما لم يرد دليل التحريم ، ولمّا لم يَرد في الكتاب ولا في السنة ولا في الإجماع والقياس والآثار شيء يدل على المنع من الزواج في شهر محرّم ، كان العمل والفتوى مبنيا على حكم الإباحة الأصلي .
ثانيا :
إجماع العلماء على الجواز ، إجماعا سكوتيا على الأقل ، حيث لم نجد أحدا من العلماء المتقدمين أو المتأخرين ، من الصحابة والتابعين والأئمة المرضيين وأتباعهم إلى يومنا هذا ، يحرّم ، أو حتى يكره : الزواج أو الخطبة في شهر محرم .
ومَن منع مِن ذلك : كفاه دليلا على نكارة قوله وبطلانه : أن يفتي بما لم يدل عليه دليل ، أو يقل به أحد من العلماء
إن بعض المؤرخين يرجحون أن زواج علي بن أبي طالب رضي الله عنه من فاطمة رضي الله عنهما ، إنما وقع في أوائل السنة الثالثة للهجرة .
يقول ابن كثير رحمه الله :
" نقل البيهقي عن كتاب "المعرفة" لأبي عبد الله بن منده ، أن عليا تزوج فاطمة بعد سنة من الهجرة ، وابتنى بها بعد ذلك لسنة أخرى ، فعلى هذا يكون دخوله بها في أوائل السنة الثالثة من الهجرة " انتهى من " البداية والنهاية " (3/419)
অর্থাৎ মুহররম' মাসে তথা যে মাসটি চন্দ্র বছরের প্রথম মাস; সে মাসে বিয়ে করতে বা বিয়ের প্রস্তাব দিতে কোন অসুবিধা নাই। এটি মাকরূহও নয়; হারামও নয়। এ সংক্রান্ত অনেক দলিলের কারণে:
এক:
বৈধতা ও দায়মুক্ততার মূল বিধানের ভিত্তিতে; যে ক্ষেত্রে এমন কোন দলিল উদ্ধৃত হয়নি যা মূল বিধানকে পরিবর্তন করতে পারে। আলেমদের মাঝে মতৈক্যপূর্ণ একটি নীতি হল: "অভ্যাস ও কর্মগুলোর মূল বিধান হল বৈধতা; যতক্ষণ না নিষিদ্ধতার দলিল উদ্ধৃত হয়"। যেহেতু কুরআন-হাদিসে, আলেমদের ইজমা-কিয়াসে এবং সলফে সালেহীনদের উক্তিতে এমন কিছু উদ্ধৃত হয়নি যা 'মুহররম' মাসে বিয়ে করতে বাধা দেয়; সুতরাং মূল বৈধতার বিধানের উপর আমল করা হবে ও ফতোয়া দেওয়া হবে।
দুই:
বৈধতার পক্ষে আলেমগণের ইজমা রয়েছে; নিদেন পক্ষে সেটা ইজমা সুকুতী (নিরবতামূলক ইজমা)। যেহেতু আমরা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, গ্রহণযোগ্য ইমাম এবং আমাদের যামানা পর্যন্ত তাদের অনুসরণকারী পূর্বসূরি ও উত্তরসূরি এমন কোন আলেম পাইনি যিনি 'মুহররম' মাসে বিয়ে করাকে বা বিয়ের প্রস্তাব দেয়াকে' হারাম বলেছেন কিংবা মাকরূহ বলেছেন।
যে ব্যক্তি এ মাসে বিয়ে করা থেকে বারণ করেন তার কথা বাতিল ও অশুদ্ধ হওয়ার জন্য দলিল হিসেবে এটাই যথেষ্ট যে এটি এমন ফতোয়া যেটার পক্ষে কোন দলিল নাই এবং কোন আলেমের বক্তব্য নাই।
তিন:
কোন কোন ঐতিহাসিক ফাতিমা (রাঃ) এর সাথে আলী (রাঃ) এর বিবাহ হিজরী তৃতীয় সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
"ইবনে মানদা" রচিত 'আল-মারিফা' গ্রন্থ থেকে বাইহাকী উদ্ধৃত করেছেন যে, আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) কে বিয়ে করেছেন হিজরতের এক বছর পর এবং তার সাথে ঘর সংসার শুরু করেছেন অন্য বছর। অতএব, আলী (রাঃ) ফতিমা (রাঃ) এর সাথে বাসর করেছেন তৃতীয় হিজরীর প্রথম দিকে (মহররম মাসে)।"["আল-বিদায়া আন্-নিহায়া" (৩/৪১৯) সূত্র: সুওয়াল ওয়া জওয়াব-১৯৩২৮১; শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনজিদ
সারকথা হলো, মহরম মাসে বিবাহ-শাদি করা যাবে না এই মর্মে পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, সাহাবা -তাবেঈ ইমামদের কোন মতামত/নস নেই।
আর হযরত আলী রা. এবং ফাতেমা রা. মহররম মাসে বিবাহ আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
والله اعلم بالصواب